কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন

দিনমজুর এর ছবি
লিখেছেন দিনমজুর [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৩/০৩/২০০৮ - ১:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

dinmojur@yahoo.com
**********দিনমজুর**************
সেদিন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি আলোচনায় দেখলাম কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনকে সময়োপযোগী হিসাবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, "পরের প্রতিটি শিক্ষা কমিশনই ভূমিকা ও প্রারম্ভিক আলোচনায় কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের আলোকে তাদের রিপোর্ট প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেগুলো কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের চেতনা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেছে"। লেখক স্বভাবতই এটা প্রতীয়মান করার চেস্টা করেছেন যে, খুদা কমিশনই সর্বোৎকৃষ্ট অন্য সকল শিক্ষা কমিশনের তুলনায় এবং এর আলোকেই আমাদের শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন!!

খুদা কমিশন যতখানি পড়েছি, আমার কিন্তু মনে হয়েছে- যে লাউ সেই কদু।

আমরা ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন যে কারণে করেছি- সেই শরীফ কমিশন বা হামদুর রহমান কমিশন, সেই শিক্ষার আর্থিক দায়ভারের প্রশ্নে খুদা কমিশনের অবস্থান কিছিল? সার্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক একই ধারার শিক্ষাব্যবস্থা কি খুদা কমিশনে প্রস্তাবিত হয়েছিল???
যদিও সে সময়ে সিপিবি বা ছাত্র ইউনিয়ন ও কিছু বাম সংগঠন খুদা কমিশনকে সমর্থন জানিয়েছিল- এবং পরবর্তিতে এমন প্রচারণা চালানো হয়েছিল- এই খুদা কমিশন ই একমাত্র আমাদের সত্যিকারের জনমানুষকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো শিক্ষা কমিশন; তারপরেও আমার মনে হয়, এটিকে আরো ভালো করে পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
বিষয়টি প্রথমে পরিষ্কার করি।

১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করাচীতে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে 'পাকিস্তান শিক্ষা কনফারেন্স' অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫১ সালে আবার ২য় দফা শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৫২ সালে মৌলানা আকরাম খাঁর নেতৃত্বাধীন শিক্ষা পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৫৯ সালের শরীফ কমিশন, ১৯৬৬ সালের হামদুর রহমান কমিশন, ১৯৬৯ সালের নূর খান কমিশন - সবকটিতেই পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর শিক্ষা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গী ও উদ্দেশ্য প্রকাশ পায় এবং এর বিরুদ্ধে আমাদের ছাত্র-জনতার প্রতিরোধও স্মরণযোগ্য। শরীফ কমিশনের বিরুদ্ধে ৬২ এ এবং হামদুর রহমান কমিশনের বিরুদ্ধে ৬৬ এর শিক্ষা আন্দোলন আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের ইতিহাসেই বিশেষ জায়গায় অবস্থান করছে। পাকিস্তানী শাসকদের এই শিক্ষা-দৃষ্টিভঙ্গীর মূলে যেটি ছিল এবং যাকে আমাদের ছাত্র-জনতা কখনও মেনে নিতে পারেনি- সেটি হলো তাদের শিক্ষা সংকোচন নীতি।

শরীফ কমিশনের রিপোর্ট থেকে দেখিঃ

"দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের সম্পদ সীমাবদ্ধ বলিয়া কিছুকাল পর্যন্ত সর্বজনীন শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব হইবে না। ....... যাহারা শিক্ষার দ্বারা উপকৃত হইবার সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত তাদের জন্য বৃত্তি, পুরস্কার ও সরকারি সাহায্যের বন্দোবস্ত করিতে হইবে- দেশের বেশির ভাগ লোকই যেখানে আর্থিক অভাবগ্রস্ত তেন পরিস্থিতিতে এই বন্দোবস্ত সকলের জন্য করা সম্ভব নহে।"

"শিল্পে মূলধন বিনিয়োগকে আমরা যে নজরে দেখি অনেকটা সেই নজরে শিক্ষা বাবদ অর্থ ব্যয়কে দেখার যৌক্তিকতা প্রতীয়মান হয়"।

"শিক্ষা সস্তায় পাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষত বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি ও কারিগরি বিদ্যা ব্যয়বহুল"।

"মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে আমরা সুপারিশ করিয়াছি যে, উহার ব্যয়ের শতকরা ৬০ ভাগ বেতন হইতে আদায় করা হউক এবং স্কুলের পরিচালক ও সরকার প্রত্যকে ২০ ভাগ করে বহন করুন"।

"এ ক্ষেত্রে পিতামাতাদের ত্যাগ স্বীকারের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাইবে। উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রেও আশা করা যায় যে আমাদের সুপারিশ অনুযায়ী ছাত্রবেতন বর্ধিত করা হইবে এবং জনসাধারণকেও সেই অনুপাতে ত্যাগ স্বীকার করিতে হইবে"।....... প্রভৃতি।

এবারে খুদা কমিশনের দিকে একটু দেখিঃ

"যারা উচ্চশিক্ষা থেকে লাভবান হবার যোগ্যতা প্রমান করতে পারবে, শুধুমাত্র তাদের জন্যই উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন"।

"শিল্পে মূলধন বিনিয়োগকে আমরা যে নজরে দেখি অনেকটা সেই নজরে শিক্ষাবাবদ অর্থ ব্যয়কে দেখার যৌক্তিকতা প্রতীয়মান হয়"।

"মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষা সম্পর্কে আমরা সুপারিশ করি যে, এর ব্যয়ের শতকরা ৫০ ভাগ ছাত্র বেতন হতে আদায় করা হোক এবং অন্যান্য উৎস থেকে যা পাওয়া যাবে তা সহ সরকার বাকী ৫০ ভাগ বহন করুক"।

"বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার ক্ষেত্রেও আশা করা যায় যা, ছাত্র বেতন বর্ধিত করা হবে"।

"জনসাধারণকেও সে অনুপাতে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে"।
..... প্রভৃতি।

মজার ব্যাপার হলো, ৬২-৬৬ এর শিক্ষা আন্দোলনের মূল শ্লোগানই ছিলো- শিক্ষার ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্ব অস্বীকার করা যাবে না- অর্থাৎ শরীফ কমিশনের (পরবর্তিতে হামদুর রহমান কমিশনেও একই প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল) উপরের প্রস্তাবগুলোর বিরুদ্ধেই ছাত্রজনতা তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল; আর অন্যদিকে- আজতক আমরা খুদা কমিশনকে বেদ জ্ঞান করে- এর আলোকে শিক্ষা নীতি প্রণয়নের দাবি তুলি!!!!!!!!!!!!

---------------- (চলবে)


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

হমম । ভালো টপিক । চলুক ।

হিমু এর ছবি

বিস্ময়বোধক চিহ্নের বাহুল্য দেখে বিস্মিত হলাম। কুদরাত-ই-খুদা কমিশন কি শুধু শিক্ষার ব্যয় নিয়েই কথাবার্তা বলেছিলো, নাকি আরো কোন নির্দেশনা ছিলো সাথে?

শতভাগ খাঁটি পরামর্শ কি আদৌ কেউ দিতে পারেন? খুদা কমিশনের প্রস্তাবিত নির্দেশনার ইতিবাচক দিকগুলোর কারণেই নিশ্চয়ই সবাই খুদা খুদা করে গলা শুকান।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের ঘাড়ে বেতনের চাপ না বাড়িয়ে গবেষণাক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ানোর ব্যাপারটি অধিক যুক্তিসঙ্গত। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় যদি তার জ্ঞানভান্ডার কাজে লাগিয়ে আয় করে, তাহলে ছাত্রদের ইসকুরু টাইট দিয়ে পয়সা আদায়ের দোহাই দেয়া লাগে না, বরং ছাত্ররাও বিভিন্ন প্রকল্পে যোগ দিয়ে অভিজ্ঞতার সাথে যৎসামান্য অর্থ আয় করতে পারেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

গৌতম এর ছবি

এই বিতর্কটা অন্যভাবেও চলতে পারে। যে কোনোকিছুই সময়ের সাথে পুরনো হতে বাধ্য। কুদরাত-এ-খুদা কমিশন হয়েছে সেই ১৯৭৪ সালে, আর এটা ২০০৮ সাল। স্বভাবতই এ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে খুদা কমিশন সময়োপযোগী নয়। তবে কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের পর যে কমিশনগুলো গঠিত হয়েছিলো, সেগুলোর কোনোটিই খুদা কমিশনকে অতিক্রম করতে পারেনি। বরং সেগুলো আরো বিভ্রান্তিকর ছিলো। সে হিসেবে অর্থাৎ তুলনামূলক বিচারে অন্য কমিশনগুলোর তুলনায় খুদা কমিশন ভালো।

বর্তমানে যদি মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতিকে ভিত্তি ধরে আরেকটি কমিশন গঠন করা হয়, তাদের রিপোর্ট স্বভাবতই খুদা কমিশনের চাইতেও গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ১৯৭৪-এর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে খুদা কমিশনের রিপোর্ট সাহসী ছিলো, যে সাহস পরবর্তী কমিশনগুলো দেখাতে পারেনি।

আলোচনাটি যথেষ্ট উদ্দীপক। এ ধরনের আলোচনা বেশি বেশি হওয়া দরকার। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অতিথি লেখক এর ছবি

খুদা কমিশনের গুরুত্বটা এভাবে বোঝানো যায়: পৃথিবীর সবগুলো দেশে সময়ের স্রোতে স্বাভাবিকভাবেই প্রগতিই ঘটে। স্বাভাবিক বলতে বুঝাচ্ছি, কেউ অনন্যসাধারণ কোন অবদান রাখতে না পারলে ভীড়ের ঠেলায় যেটুকু প্রগতি হওয়ার কথা সেটিকে। দেশটি তখনই গতি অর্জন করে যখন স্রোতের টানে না গিয়ে নিজেরা টানতে শুরু করে। কুদরত-এ খুদা শিক্ষা কমিশন তেমনই ছিল। বিশ্ব শিক্ষার নকল করে কেবল সময়ের প্রয়োজনে না বানিয়ে তাতে অনেক নতুনত্ব ও চ্যালেঞ্জের কথা আনা হয়েছে। এ ধরণের যুগান্তকারী কোন শিক্ষা কমিশন এর পরে আর কেউ দিতে পারে নি।

কিন্তু কোন কিছুকেই বেদবাক্য মেনে নেয়া যায় না। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে যেমনটি করলে ভালো হয় তেমনটিই হতে হবে শিক্ষানীতি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, তাতে অভিনবত্ব ও যুগান্তকারী কিছু থাকতে হবে। এমন কিছু যা বিশুদ্ধ বাংলাদেশী সূত্রে করা। আর এই শিক্ষানীতিতে সবার উপস্থিতি থাকতে হবে। যার যার ক্ষেত্রে পরামর্শ দেবে সে-ই।

সময়ের স্রোতে ভেসে থাকতে হয় না, সময়ই সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্রগতি বলতে স্রোতের গতির চেয়ে বেশী গতি অর্জনকেই বুঝায়। খুদার সময়ের চেয়ে এখন প্রগতির চাহিদা নিশ্চয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।

-------------------------
মুহাম্মদ

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু লিখেছেন:
বিস্ময়বোধক চিহ্নের বাহুল্য দেখে বিস্মিত হলাম। কুদরাত-ই-খুদা কমিশন কি শুধু শিক্ষার ব্যয় নিয়েই কথাবার্তা বলেছিলো, নাকি আরো কোন নির্দেশনা ছিলো সাথে?

হিমু,
বিস্মিত হওয়া দেখেও বিস্মিত হতে হয় বৈকি!!
খুদা কমিশন শিক্ষার ব্যয় ছাড়াও অন্য অনেক বিষয় নিয়েই কথা বলেছিল। যেমনটি শরীফ কমিশন বা হামদুর রহমান কমিশনেও অনেক বিষয় অনেক নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এদেশের ছাত্র-জনতা সেই শিক্ষা আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল- রাষ্ট্রের আর্থিক দায়ভারের প্রশ্নটিতেই।
ফলে, যে বিষয়টিকে কেন্দ্র আমার দেশের মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিল, সেই একই ঘটনা যদি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে অবস্থান পায়- সেটা তো অবাক ও তুঘলকি কাণ্ড বলতেই হবে। আর- সেই কমিশন নিয়ে যখন মাতামাতি হয়- তখন তো শুধু বিস্ময় চিহ্নের আধিক্য নয়- লজ্জা সূচক চিহ্নও দেয়া আবশ্যক বলেই মনে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু লিখেছেন:
শতভাগ খাঁটি পরামর্শ কি আদৌ কেউ দিতে পারেন? খুদা কমিশনের প্রস্তাবিত নির্দেশনার ইতিবাচক দিকগুলোর কারণেই নিশ্চয়ই সবাই খুদা খুদা করে গলা শুকান।

শতভাগ খাঁটি পরামর্শ দেয়া সম্ভব নয় এ ধরণের অজুহাত টানাটা সবসময়ই পলায়নপরতারই নামান্তর বা কৃতকর্মকে আড়াল করার চেস্টা। অবশ্যই এটা পরিহারযোগ্য।

আর, যারা খুদা খুদা করে গলা শুকান- তারা কেন গলা শুকান- সে সম্পর্কে আমার আলোচনাটি পরের সংখ্যার মন্তব্যে কিছুটা করেছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু লিখেছেন:
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের ঘাড়ে বেতনের চাপ না বাড়িয়ে গবেষণাক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ানোর ব্যাপারটি অধিক যুক্তিসঙ্গত। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় যদি তার জ্ঞানভান্ডার কাজে লাগিয়ে আয় করে, তাহলে ছাত্রদের ইসকুরু টাইট দিয়ে পয়সা আদায়ের দোহাই দেয়া লাগে না, বরং ছাত্ররাও বিভিন্ন প্রকল্পে যোগ দিয়ে অভিজ্ঞতার সাথে যৎসামান্য অর্থ আয় করতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে যেটি সামনে এনেছেন, সেটিকেও সঠিক মনে করিনা।

বিশ্ববিদ্যালয় কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে- বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি আয়ের কথা ভাবতে হয়- তবে সমস্যা। অর্থয়ানের পুরো দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং একমাত্র রাষ্ট্রেরই মনে করি। ইউনেস্কোর সুপারিশ মোতাবেক জাতীয় আয়ের ৮ ভাগ বা জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ বরাদ্দ দিতে হবে শিক্ষা খাতে। এবং অবশ্যই এই ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে যেতে হবে। এখন- কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বিষয়ে গবেষণা বা কনসালটেন্সির মাধ্যমে কিছু আয় হতে পারে, কিন্তু- সে আয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনার কথা ভাবা বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্টেরই পরিপন্থী।

আপনার আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

গৌতম লিখেছেন:
এই বিতর্কটা অন্যভাবেও চলতে পারে। যে কোনোকিছুই সময়ের সাথে পুরনো হতে বাধ্য। কুদরাত-এ-খুদা কমিশন হয়েছে সেই ১৯৭৪ সালে, আর এটা ২০০৮ সাল। স্বভাবতই এ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে খুদা কমিশন সময়োপযোগী নয়। তবে কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের পর যে কমিশনগুলো গঠিত হয়েছিলো, সেগুলোর কোনোটিই খুদা কমিশনকে অতিক্রম করতে পারেনি। বরং সেগুলো আরো বিভ্রান্তিকর ছিলো। সে হিসেবে অর্থাৎ তুলনামূলক বিচারে অন্য কমিশনগুলোর তুলনায় খুদা কমিশন ভালো।

গৌতম,
আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

তবে আমি দ্বিমত করি এই জায়গায় যে, আমার কাছে মনে হয়েছে ১৯৭২-৭৪ এর প্রেক্ষিতেই এই কমিশন মানুষের আকাঙ্খাকে ধরতে ব্যর্থ হয়ছে। আমি যখন বিশ্লেষণ করছি- তখন আজকের ২০০৮ কে ধরে তাকে বিচার করতে বসি নি। এবং আজ কেউ যদি- শরীফ কমিশন নিয়ে বলে- ১৯৫৯ এর তুলনায় ঠিক আছে, সেটা কি সমীচীন হবে??

আর, যে তুলনামূলক বিচারের কথা বলেছেন- সেটাতেও একটা বড় ফাঁক থেকে যায়। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে মানুষের চেতনার লেভেলটা থাকে উচ্চ, দেশকে কেন্দ্র করে আবেগ থাকে অশেষ, এবং রাষ্ট্র কেন্দ্রিক নীতিসমূহ নিয়েও আকাঙ্খাও থাকে বিশাল। ফলে- তার প্রতিফলন যুদ্ধ পরবর্তী সরকারের বিভিন্ন নীতিমালায় থাকতে বাধ্য (যেমন আমাদের সংবিধান)। ফলে- আমাদের প্রথম কমিশনের রিপোর্টে কিছু ভালো কথা- কিছু ভালো সুপারিশ থাকাটাই স্বাভাবিক। আপনি সেটাকে যদি বলেন সাহসী উদ্যোগ- তবে বলতেই হয়, আপনি আজকের ২০০৮ এর আলোকে এ চিন্তা কথা বলছেন। ৭১ পরবর্তীতে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা বা সমাজতন্ত্রের নীতিগুলো স্থান পাওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক ও কাম্য। তখন এটা নিয়ে কোন প্রশ্নের অবতারণাই ছিল অস্বাভাবিক।

আর, তৎপরবর্তী কোন সরকারকে সে রকম আকাঙ্খার মুখোমুখি হতে হয়নি বলে- তাদের অতখানি অভিনয় করারই প্রয়োজন হয়নি। তারপরেও কিন্তু তাদেরও কিছু কিছু অভিনয় করতে হয় বৈকি!! আপনি মনিরুজ্জামান বা শামসুল কমিশন পড়লে দেখবেন- সেখানেও সূচনায়- শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে সমাজতন্ত্র/ধর্মনিরপেক্ষতার কথা সরাসরি বলা না হলেও- চমৎকার সব কথার ফুলঝুড়ি ছুটেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

অতিথি লেখক লিখেছেন:
........ দেশটি তখনই গতি অর্জন করে যখন স্রোতের টানে না গিয়ে নিজেরা টানতে শুরু করে। কুদরত-এ খুদা শিক্ষা কমিশন তেমনই ছিল। বিশ্ব শিক্ষার নকল করে কেবল সময়ের প্রয়োজনে না বানিয়ে তাতে অনেক নতুনত্ব ও চ্যালেঞ্জের কথা আনা হয়েছে। এ ধরণের যুগান্তকারী কোন শিক্ষা কমিশন এর পরে আর কেউ দিতে পারে নি।

মুহাম্মদ,
আপনাকে আলোচনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আমার কাছে মনে হয়েছে খুদা কমিশন স্রোতের টানেই গিয়েছে, নিজে টানার কোন ব্যাপারই ছিল না, সেখানে নতুনত্ব ও চ্যালেঞ্জের কথা খুঁজে পাইনি- যেটা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী একটা নবীন রাষ্ট্রের জন্য কাম্য ছিল। একে তাই যুগান্তকারী বলতে অনেক আপত্তি।

আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।