অভির গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৪/০৩/২০০৮ - ১১:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(খেকশিয়াল)

আমার খালাত ভাই অভি। আমার-ই বয়সী, এক ইয়ার এর ছোট। আমার খালু খালা দুইজনেই বরিশালে থাকে, মাঝে মাঝে আমরা ঘুরতে যেতাম, ওরাও ঢাকায় আসতো। অভি ওর বাবার সেইরকম ভক্ত, এইটা নিয়া আমি আর আমার বড়ভাই অনেক মজা করতাম। যেমন খাবার সময় অভি তার বাবার গ্লাসেই পানি খেত; ঐ গ্লাস কেউ ধরলে খবর আছে। আমি মাঝে মাঝে ধরে অনেকবার আহত হয়েছিলাম, অভি এমনিতেই অনেক গাট্টা-গোট্টা ছিল, মারামারি করা ছিল তার হবি ! আমার আরেক মামাত ভাই মিলুদা অভিদের সাথেই থাকতো, আর ডেইলী অভির কিল ঘুষি খেত। নিজে তো কিছু করতে পারত না তাই আমি থাকলে আমাকে উস্কে দিত ওর সাথে লাগতে। তার ফলস্রুতিতে আমি অনেক মার খেয়েছি আর অনেক দিয়েছিও, কিন্তু হান্ড্রেড পারসেন্ট মজাটা পেত মিলুদা, সে বিনা পয়সায় আমাদের মারামারি দেখে যে খুশি হত তা তার বিশ্রী মার্কা খেশখেশে টাইপ হাসিটা শুনলেই বোঝা যেত।
অভির সাথে অনেক ঘটনা আছে, লিখতে গেলে মহাভারত লেখা হয়ে যাবে, যে গুলি মনে পরলো তার থেকে কয়েকটা বলি ...

কাহিনী এক
..................

স্থান ঢাকা, আমাদের বাড়ীর খাবার ঘর, আমি আর অভি তখন ক্লাস ৩ কি ৪ -এ পড়ি; দুইজনে ভাত খাচ্ছি, অভি দুধ দিয়ে ভাত খাচ্ছে, আমি খেয়াল করলাম ওর ভাত এ একটা পিপড়া, মনে হয় গুড় থেকে আসছে।
অভি : অকি! মোর পাতে পিপড়া আইলো কা ? (বরিশাইল্লা ভাষায়)
আমি হাসতেসি কুটকুট করে, ওর পাতে পিপড়া পড়ায় যে আমি অনেক খুশি এইটা ওকে বুঝাইতেসি.., অভি এইটা মাইনা নিতে পারল না, সে দাত মুখ খিচাইয়া আমার প্লেট এ তার পিপড়া সহ কিছু ভাত ট্রান্সফার করলো। আমার তো রাগে মাথায় রক্ত উইঠ্ঠা গেসে, আমি আমার প্লেট থেকে আরো কিছু বেশি ভাত সহ আবার আভির পাতে আমার ভাত-বোমা নিক্ষেপ করলাম, এরপর যা হয় সচরাচর তাই হইল,অভি আর আমার মধ্যে লাইগা গেল ধুন্ধুমার গ্যাঞ্জাম, কই গেল ভাতের প্লেট, কই সবকিসু, আমরা উরাধুরা কিল-ঘুষিতে লিপ্ত হইলাম, পরে মা মাসির আরেক ধাপ মাইর খাইয়া দুইজনে শান্ত হইলাম।

কাহিনী দুই
.......................
স্থান বরিশাল, অভিদের পাশের বাসার এক ছাঁদ এ সবাই ঘুরতেসি, ওই বাসার বাড়িয়ালার ছেলের একটা পোষা বানর ছিল, ওইটাকে দেখতেই যাইতাম। তো ওইদিন ছাঁদ এ ঘুরতেসি সবাই হঠাৎ অভির তারস্বরে চিৎকারে সবাই ছুটে গেলাম, দেখি বান্দরমামা অভির পায়ে কামড় দিয়া রইসে আর ঘো-ঘো করতেসে, সীন দেইখা ত আমরা টাশকি, বান্দরটা ছুটানোর জন্যে আমরা লাঠি-মাঠি কিছু একটা খুজতেসি আর তখন আমি অভির কির্তি দেইখা আরো টাশকি খাইলাম, যারে বলা যায় টাশকি-স্কয়ার খাইলাম। দেখি অভি চিৎকার থামায়া দিয়া ভদ্রলোকের মত আসন কাইটা বইসা নিজের একটা সেন্ডেল খুইলা কামড়-দেয়া-থাকা বান্দরমামার মুখে একমনে ধুম-ধাম মারতেসে, এররকম আর কিছুক্ষন বাড়ির পরে বান্দরটা ছুটে , আর অভিরে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

কাহিনী তিন
.....................
স্থান ঢাকা, আমাদের বাড়ী, আমার দাদা মানে বড়ভাই অভিকে জ্বালাইতেসে... এই ঘটনাটা আমার বড়ভাই অনেক সুন্দর করে বলতে পারে।
দাদা : অভি আমি দেখি কি তোর বাপেরে পুলিশ ধইরা নিয়া মাইর দিসে।
অভি (অবিশ্বাসী রাগতস্বরে): কা??! মোর বাপেরে পুলিশে পিডাইবে কা ?
দাদা : তোর বাপে দেখলাম সামনে মন্দির এর পাশে বসে হিশু করতেছিল তাই পিটাইসে।
আমি আর তখন থাকতে পারলাম না হাহাহা কইরা হাসতেসি আর দেখি ক্ষুব্ধ অভি দাদার উপর চড়াও হইয়া কিলাইতেসে, “মোর বাপেরে নিয়া খারাপ কতা কউ??!! মোর বাপেরে নিয়া খারাপ কতা কউ??!” দাদা ত হাসতেসে, তখন দেখি মাসি এসে পড়সে, রাইগা ফায়ার, “অভি তোর এত বড় সাহস, দাদার গায়ে হাত তোলো” বলে দিসে ধাম ধাম মাইর, আমি দেখি সীন সিরিয়াস, অভি দিসে ঘা-ঘা-করে কাইন্দা আর বলতেসে “কাআআআ, অ এডি বলবে কাআআআ , বাবারে নিয়া খারাপ কতা বলবে কাআআ ”
মাসিঃ যাও!! দাদার কাছে মাফ চাও!
অভি তখন দাদার কাছে মাফ চাইতেসে ঘা-ঘা-স্বরে কাইন্দা কাইন্দা “দাদাআআআআআ মোরে মাফ কইরে দাউ” দাদা তখন ইচ্ছা কইরা রাগ করার পার্ট নিতেসে, কথা বলে না, তখন আভি দেখি দাদার সাথে আল্লাদ করে কনভিন্স করার চেষ্টা করতেসে, আল্লাদ করে একটা গান গাইতেসে “অই সুরজো টারে দেখো, আকাশটারে দেহো (দেখ), দাদার মাথায় চড়ো...” বইলাই দিসে আল্লাদ কইরা দাদার মাথায় লাফ... হাহাহাহাহাহাহহা...

অভি এখন ডেন্টিস্ট । সিলেটে প্র্যাকটিস করে, আরো অনেক গল্প আছে, সময় পেলে আরেকদিন বলা যাবে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।