শিশু বিড়ালের কান্না

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০৫/২০০৮ - ২:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কে যেন বিড়ালের বাচ্চাটিকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে তার কোমর ভেঙে দিয়েছে। বাচ্চাটি এখন সামনের দু পায়ে ভর করে পেছনের অংশটি ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে চলে।
দৃশ্যটি দেখে হয়তো মায়ের ভালো লাগে না। বলেন, আরে কোন ডাহাইতে কামডা করছে রে? এমন কইরা পঙ্গু না কইরা মাইরা লাইলেও তো অইতো!

তিনি সন্দেহ করেন যে, কাজটা এলির বাপই করেছে। অনেকবারই এলির বাপ অভিযোগ করেছে যে, বিড়ালটি তাদের হাড়ি থেকে মাছ কিংবা ভাত খেয়ে ফেলে। একদিন কালো মত মোটা চকচকে লাঠি নিয়ে তেড়ে এসেছিলো লোকটি।

বেবি ক্লাস টুতে ইমতিয়াজ আকবর প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। তার বাংলা বইয়ে লেখা আছে আমার বিড়ালের নাম মিনি। তা থেকেই বিড়ালের বাচ্চাটিকে সে মিনি বলে ডাকতো। বাচ্চা বিড়ালটিও হয়তো বুঝতে পারতো যে, তার নাম রাখা হয়েছে মিনি। বেবি মিনি বলে ডাক দিলে বিড়ালটি কোত্থেকে যেন সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতো, ম্যাঁও!

এলির বাপ রেখাদের বাসায় থাকে। রেলওয়ের মূলী কেটে বেড়া বানায়। চালের ছানি বানায়। তার হাতে সবসময়ই একটি চকচকে আর ধারালো দা থাকে। কিন্তু বিড়ালটাকে যখনই দেখে তখনই সে কালো চকচকে লাঠিটা হাতে নেয়। কিন্তু আমরা কেউ নিশ্চিত নই যে এলির বাপই বিড়ালের বাচ্চাটিকে আহত করেছে। তাই আমার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে লোকটি বললো, তরা দ্যাখছস? ওই ছ্যাড়া!

তার দাপটে আমি চুপসে যাই। আড়ালে হয়তো মাও।

কাজেই বিড়ালের বাচ্চাটিকে পঙ্গু করার অপরাধে এলির বাপের কোনো শাস্তি হয় না। নির্বোধ আর অবলা প্রাণীটি তার পশ্চাদভাগ ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে উঠোনময় ঘুরে বেড়ায়। বেবি তা দেখে কাঁদে। চোখ মুছে আলতো করে ডাকে- মিনি!

ম্যাঁও! বলে সাড়া দিয়ে বাচ্চা বিড়ালটি পশ্চাদভাগ ছেঁচড়ে এগিয়ে আসে।

মা কৌটার আঠালো আর মিষ্টিদুধ পানিতে গুলিয়ে নারকেলের ছোট্ট খোলে ঢেলে এগিয়ে দেন। মিনি চুকচুকচুক করে মিষ্টি দুধ পান করে।

বিকট শব্দে ম্যাঁও ম্যাঁও করে আহত বিড়ালটি ঘুরে বেড়ায়। তার কষ্টে হয়তো মায়েরও কষ্ট হয়। তিনি অভিশাপের মত করে বলেন, এই অবোধ জানোয়ারডারে যে অ্যামন করছে, আল্লায় য্যান তারেও অ্যামন করে!

কিন্তু এলির বাপ আগের মতই মূলী কেটে বেড়া বানায়। চালের ছানি বানায়। আমি দূর থেকে তাকে লক্ষ্য করি যে, তার কোমরের কোনো ক্ষতি হলো কি না। কিন্তু একটিবারের জন্যও দেখতে পাই না যে লোকটি একবার কোমরে হাত রেখে উহ্ কিংবা আহ্ করেছে।

মিনি তার শরীরের অচলাংশ নিয়ে পুরো উঠোনে ঘুরে বেড়ায় আর যন্ত্রণায় ম্যাঁও ম্যাঁও করে কাঁদে। দিনরাত বিড়ালের কান্নায় অস্থির হয়ে মা বাবুলকে বললেন, বাবুলরে! এইডারে বাইরে কোনোহানো রাইখ্যা আয় চাই!

বাবুল মিনির টুঁটি ধরে গাছতলার পুকুর পাড়ে ফেলে আসে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পরই আবার মিনিকে উঠোনময় কেঁদে কেঁদে ঘুরতে দেখা যায়। বেবি খুশি হয়ে মিনি! বলে বিড়ালটির সামনে গিয়ে বসে। আর বিড়ালটিও যেন ম্যাঁও ম্যাঁও করে জানায়- বাবুল আমারে বাইরে ফালায় দিয়া আসছিলো। আমি তার পিছে পিছে রাস্তা চিন্যা আইয়া পড়সি!

মা শিংমাছ কুটছিলেন। বেবি উঠে গিয়ে শিং মাছের কানকো আর মাথা এনে মিনির সামনে রাখে। মিনি খাবারে মুখ না দিয়ে ম্যাঁও ম্যাঁও করতে থাকে।

বিকেলের দিকে দেখা গেল মিনি উঠোনের এখানে সেখানে মলত্যাগ করে বিচ্ছিরি অবস্থা করে ফেলেছে। মা আরো বিরক্ত হয়ে বললেন, বাবুলরে! এইডায় দেহি ঘরবাড়ি সব নষ্ট কইরা লাইলো!

বাবুল বললো, দিনের বেলা দেইখ্যা রাস্তা চিন্য আইয়া পড়সে! রাউতকা ব্যবস্থা কইরাম!

সত্যি সত্যিই রাতের বেলা একটি বাজারের চটের ব্যাগে মিনিকে পুরে পুকুর ছাড়িয়ে আরো দূরে ফুলশাহর মাজারের কাছে রাস্তায় রেখে এলো। আমরা ভাবলাম, এবার বুঝি বিড়ালের কান্না থেকে রক্ষা পেলাম। কিন্তু হায়, পরদিন আমাদের ঘুম ভাঙলো মিনির হাঁকডাকে। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি পশ্চাদভাগ ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে মিনি ঘুরে বেড়াচ্ছে আর দ্বিগুণ স্বরে ম্যাঁও ম্যাঁও করছে।

এর পর বাবুল আবার বিড়ালটিকে নিয়ে আরো দূরে কোথাও রেখে এসেছিলো। ফলে ওটা আর ফিরে আসতে পারেনি।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।