একটি ভয়ঙ্কর ভৌতিক গল্প

কীর্তিনাশা এর ছবি
লিখেছেন কীর্তিনাশা (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৬/২০০৮ - ৩:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(এ গল্পটা আমার নিজের নয়। বহুকাল আগে শুনেছিলাম আমার এক খালাত ভাইর মুখে। প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলাম সে দিন। আসলে আবহটা এমন ছিল ভয় না পেয়ে উপায় ছিল না। গ্রামের বাড়ির উঠোনে রাতের বেলা শীতের পিঠা খেতে খেতে শুনেছিলাম গল্পটা। ভয় কেন পেয়েছিলাম তা বলছি গল্পের শেষে।)
------------------------------------
এক লোক রাতের অন্ধকারে একা জঙ্গলের পথ ধরে বাড়ি ফিরছিল। হাতে টিমটিম করে জ্বলা হারিকেন। চলতে চলতে হঠাত্ সে লক্ষ্য করলো - হারিকেনের আলো পড়ে রাস্তার পাশে কি যেন ঝিলিক দিয়ে উঠলো। কৌতুহলী হয়ে লোকটা এগিয়ে গেল সেই দিকে। গিয়ে দেখল এক তরুনী মেয়ের লাশ পড়ে আছে। সে ভয় পেলেও ঠিকই দেখলো মেয়েটির ডান হাতের মধ্যম আঙুলে একটি হীরার আঙটি জ্বল জ্বল করছে। একটু ইতস্তত করে সে হারিকেনটা পাশে নামিয়ে রেখে লাশের আঙুল থেকে আঙটিটা খোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু আঙুল ফুলে ওঠায় কিছুতেই ওটা খুললো না। লোকটা তখন তার পকেট থেকে একটি ছুড়ি বের করলো। তারপর সেই ছুড়ি দিয়ে পুচিয়ে পুচিয়ে লাশের আঙুলটা কেটে ফেলল। ঠিক তখনই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে কাছাকছি কোথাও একটা শেয়াল ডেকে উঠলো। লোকটা প্রচন্ড ভয় পেয়ে ঐ আঙুল সহ আঙটি পকেটে পুরে ছোটা শুরু করলো। এক ছুটে বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বলে সে ঐ রাতেই চুপে চুপে আঙুল থেকে আঙটি ছাড়ালো। তারপর আঙটিটা লুকিয়ে রেখে আঙুলটা পুঁতে ফেলল মাটিতে।

এরপর অনেক দিন কেটে গেছে। লোকটা সেই মেয়েটির কথা প্রায় ভুলে গেছে। এক অমাবস্যা রাতে সে তখন বাড়িতে একা। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। হঠাত্ বাইরে দরজার কড়া নড়ে উঠলো - খট্ খট্ খট্ খট্। সে একটু বিরক্তি নিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। দেখলো দরজার সামনে শাদা শাড়ি পড়ে এক তরুনী দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় ঘোমটা দেয়া থাকলেও তাতে তার রূপ ঢাকা পড়ছে না এতটুকু। লোকটা গদ গদ হয়ে প্রশ্ন করলো - কি ব্যাপার ? কাকে চান? তরুনী কেমন খসখসে গলায় বলল - ভাই আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। যাবো আপনাদের পাশের গ্রামে। কিন্তু এত রাতে অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলেছি। এদিকে প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে। আমাকে যদি আজ রাতে একটু আশ্রয় দিতেন, একটু খাবার দিতেন!

লোকটা যেন এমন সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। বাড়িতে সে একা তায় আবার এমন সুন্দরী মেয়ে। সে বলল - আসুন আসুন, কোন চিন্তা নেই। সব ব্যবস্থা হবে। সে মেয়েটিকে বসতে দিয়ে খাবার নিয়ে এল। মেয়েটি খাবারের থালা টেনে নিয়ে খাবার মাখাতে লাগলো। লোকটা তখন লোভাতুর চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাত্ সে চমকে উঠলো। দেখলো মেয়েটি যে হাত দিয়ে খাবার মাখাচ্ছে সে হাতে চারটি আঙুল। মধ্যমা আঙুলটা যেখানে থাকার কথা সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। লোকটির আত্মা কেঁপে উঠলো। সে ভয় পাওয়া গলায় জানতে চাইলো - আ.. আপনার হাতের আঙুলের কি হয়েছে!?
------------------------------------------------------
(আমার কাহিনী এখানেই শেষ। কারন আমার খালাতো ভাই এটুকুই বলেছিল। সে লোকটির ঐ প্রশ্ন করা পর্যন্ত বলে হঠাত্ আমার গলা চেপে ধরে বলেছিল - তুই নিয়েছিস! আর আমি পুরোপুরি তখন গল্পে ডুবে ছিলাম বলে ভয়ে - ওরে বাবা! বলে দে ছুট। আর আমার খালাতো ভাই সহ অন্যরা হেসে কুটি কুটি। এরপর আমি নিজে এই কাহিনী বলে এবং ঐ পদ্ধতি অনুসরন করে অনেককে ভয় দেখাতে সক্ষম হয়েছি। তবে গল্পটা বলার ঢং এবং পরিবেশ একটু ভৌতিকতার সাথে মানানসই হতে হবে।)

কীর্তিনাশা


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঘটেছিল একবার, আর একবার আমি নিজেই ঘটিয়েছিলাম! একবার ছুটিতে ঢাকা থেকে পাবনায় আমাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিল আমার চার বন্ধু। ঘুমাতে গিয়ে অবশ্য আড্ডাবাজিই বেশি করছিলাম আমরা। কারেন্ট ছিল না। আঁধো অন্ধকারে (মোমের আলোয়) এক বন্ধু প্রস্তাব করল ভূতের গল্প বলার। তখন এই গল্পটাই শুনেছিলাম। আর পরিবেশটাই এমন ছিল যে ভয় (চমকানো মনে হয় বেশি মানানসই হবে) পাওয়াটা অবধারিত ছিল। তবে থীম এক হলেও আপনার গল্পের চেয়ে ভার্সন আলাদা ছিল। ছুটি শেষে পরে ভার্সিটিতে গিয়ে এই গল্প শুনিয়ে আমি নিজেও ভয় পাইয়েছিলাম আরো কিছু বন্ধুদের। পুরোন কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

অ প্র ভাই, সন্ন্যাসী দা ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।

কীর্তিনাশা

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমি তো ভাবলাম আপনি আপনার খালাতো ভাইয়ের ভাগের পিঠা নিয়েছেন, সেটাই সে বলছে!

তবে গল্পটা খাইস্টা হোলেও হোতে পারতো! চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা। আপনি চাইলে খাইস্টা কইরা লেখতে পারি। লেখুম নি কন?

কীর্তিনাশা

দ্রোহী এর ছবি

দারুন গল্প। আমারও এমন কাহিনি আছে। ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ির উঠানে বসে রাতের বেলায় ভুতের গল্প শোনার সময় অন্য কারো পায়ের সাথে পা লেগে গিয়ে ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলাম।

খাইস্টা হইবো নাকি?


কি মাঝি? ডরাইলা?

খেকশিয়াল এর ছবি

হাহা এই গল্পটা যে কতবার কতরকমভাবে শুনছি, সবাইরে ফাপর দেয়া হইত শেষে 'তুই নিসস !!' বইলা, গল্পটা বলতে হয় পরিচিত মানুষদের নিয়া তাইলে আরো জমে ।

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অতিথি লেখক এর ছবি

মহা তালে পলাম দেহি! (মাগুরার ভাষা)
সবাই দেহি খাইষ্টা গল্প চায়। আইচ্ছা লেখুম নে একটা।
তয় সেন্সর বোর্ড আটকাইয়া দিলে কিন্তুক আপনাগো ছাড়ান লাগবো।

খেকশিয়াল ভাইরে - হুক্কা হুয়া! ধন্যবাদ।

কীর্তিনাশা

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

দারুন হয়েছে গল্পটা। এটা কি প্রচলিত গল্প নাকি কারো লেখা? আমিও শুনেছি গল্পটা আগে এবং প্রত্যেকবারই গা ছম ছম করেছে।

কীর্তিনাশা এর ছবি

প্রচলিত গল্প অবশ্যই। তবে কার লেখা বলতে পারছি না।
মনে খুব আনন্দ হচ্ছে রে - আজ থেকে আমি আধা সচল।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

sajjan এর ছবি

dhut chata golpo ta na sune uthe palate gelen keno dada.

চে এর ছবি

এই গল্পটা বলে একবার বিপদে পড়েছিলাম। আমার গল্পটা শুনে ভয়ে একজনের জর এসে গিয়াছিল!!!!!!!!!

monty bhai এর ছবি

কোম খারাপ লাগলো না গোলপোটা

Bishal Phenom এর ছবি

পালাতে গেলেন কেনো পরে গল্পটা শুনে নিলেই ত পারতেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।