ঘরের ভেতর টেবিল ল্যাম্পের মোলায়েম আলো। সে আলোয় কবির চোখ চলে যায় বিছানার পাশে রাখা ছোট্ট টেবিলটার দিকে। ওকি! টেবিলের ওপর এখনো ঐ মূল্যবান কাগজটা পড়ে আছে! নাহ্ তার বউটার আর আক্কেল বলতে কিছু হলো না। বিকেলে জমির বায়নানামাটা করে ফিরে এসে সে পই পই করে বলেছে কাগজটা যাতে যত্ন করে সিন্দুকে রাখা হয়। আর তার বউ কিনা সেটা এখনো বিছানার পাশে ফেলে রেখেছে! কবি বিরক্ত চোখে তার ঘুমন্ত বউ-এর দিকে তাকায়। কিন্তু আবছা আলোয় সে দেখে তার বউ-এর মুখে একটা কেমন মৃদু হাসি লেপ্টে আছে। কবি বোঝে, বউ তার ঘুমের আগেও ঐ কাগজটা উল্টেপাল্টে দেখেছে। আর নতুন জমি পাওয়ার আনন্দে তার মুখে অমন হাসি ফুটে আছে। কবির মুখেও হাসি ফোটে। লক্ষী বউ আমার - মনে মনে ভাবে সে - সোনার ডিমপাড়া হাঁস আমার ! তুমি অত ভালো চাকরি না করলে, সংসারের হাল এতো কঠোর ভাবে না ধরলে আজ কী আর আমাদের জমি হতো ! সে আবার কবিতা লেখায় মন দেয়। এ নিয়ে মোট ক'টা কবিতা হলো গোনে। আগামি বই মেলায় একটা বই বের করতে হলে ক'টা কবিতা লাগবে হিসাব করে।
হিসাবে ব্যাঘাত ঘটায় তার মোবাইলটা। এতো রাতে সাইলেন্ট করা থাকলেও ভাইব্রেশনে ঘর্ ঘর্ করে কেঁপে ওঠে সেটা। স্ক্রীনে ভেসে ওঠে 'নিউক্লিয়াস ১'। এটা তার দু'জন ব্যবসায়িক পার্টনারদের একজন। সে দু'জনের নাম মোবাইলে সেভ করেছে নিউক্লিয়াস ১ আর নিউক্লিয়াস ২ নামে। এরা হচ্ছে তার ব্যবসার মূল পার্টনার। আরও কিছু ছুটকা পার্টনার ছিল তার ব্যবসায়। কিন্তু তারা তাকে বিশেষ কোন সুবিধা দিতে রাজি না হওয়ায় একেকটাকে লাথি মেরে তাড়িয়েছে সে। কবি ফোনটা রিসিভ করে আগ্রহের সাথে - হ্যালো দোস্ত কী খবর বল ?
- 'আরে দোস্ত খবর খুব ভালো। তেলের বড় চালানটা গোডাউনে তুইলা ফালাইছি।' ও পাশে হাসি মাখা কন্ঠ নিউক্লিয়াস ১-এর।
- সাব্বাশ ! তোরে দিয়া হইবো দোস্ত। আচ্ছা, প্যাকেটগুলা সব চেক করছোস তো ? আসল নকল বোঝা যায় না তো ?
- আরে না, সব ঠিকঠাক আছে। ১০০% ওকে।
- এক্সিলেন্ট ! শোন বাড়তিগুলার খবর নিউক্লিয়াস ২-রে কস নাই তো ?
- একদম না।
- গুড। ঐগুলা তোর আর আমার। এখন বাড়ি যা। ঘুমা।
- আরে শোন, ঠোলা মামা ফোন দিছিল। অফিসে আসতে চায়।
- ঐটা আমি দেখুমনে। কালকে একটা খাম নিয়া ধরায়া দিমুনে।
- আচ্ছা ঠিক আছে তাইলে। খোদা হাফেজ।
- খোদা হাফেজ।
হাসি মুখে কবি লাইন কাটে। আহা, মনটা তার ফুর্তিতে নেচে ওঠে। আগামি কয়টা দিন ভালো যাবে বোঝা যাচ্ছে। মনের ভেতর যদিও একটা খচখচানি মাথা চাড়া দেয়। কিন্তু সে মনকে প্রবোধ দেয় - ব্যবসায় আবার আসল নকল কী! টাকা ইনকামটাই বড় কথা। আর দুনিয়ার রীতিই হইলো 'মারো নয় তো মরো'। কবি আবার কবিতায় মনযোগী হয়। ব্য বসায়িক কথাবার্তায় আবেগের ঢল একটু কমে এসেছে। তবে কবির গভীর প্রচেষ্টায় তা আবার চক্ষু গলে বেরিয়ে আসে। আহারে লাইনগুলো কী মর্মভেদী হচ্ছে রে !
মোবাইল ফোনের ভাইব্রেটর আবার তার আবেগের রাশ টেনে ধরে। এবার স্ক্রীনে ভেসে উঠেছে 'মফিজ ১১'। এই মফিজগুলা হচ্ছে কবির ব্যবসার সাপ্লায়ার। সব মফিজের কাজ পাওয়ার শর্ত হচ্ছে কবিকে টু-পাইস বখড়া দেয়া। বখড়া না দিলে কাজ নাই। কবি মহা বিরক্তি ভরে ফোন ধরে - কী ব্যাপার, এতো রাতে ফোন দিছেন ক্যান ?
- স্যার, এই মাত্র আপনের গোডাউনে দুইশ কার্টন তুইলা দিয়া আইলাম। বিলটাও পাইছি নগদ নগদ।
- ভালো খবর। তা এইটা তো সকালে ফোন করেও বলতে পারতেন ?
- না স্যার, আমি ইকটু বিপদে আছি তো এই জইন্য ফোনটা দিলাম।
- কী বলবেন বলেন।
- স্যার, বলতেছিলাম কী, আপনের এইবারের ভাগের টাকাটা যদি আগামি বিলের লগে একবারে নিতেন, তাইলে ....
ওপাশের কথা শেষ হবার আগেই কবি ধমকে ওঠে - শোনেন মিঞা, কাজ করতে চান নাকি চান না? করতে চাইলে ভালোয় ভালোয় আমার ভাগ আগামি কাল ১০টার মধ্যে আমার এ্যাকাউন্টে জমা করবেন। তা না হইলে এমন লাত্থি মারুম উইড়া গিয়া বুড়িগঙ্গার ঐপাড়ে পড়বেন। বুঝছেন আমার কথা?!
- জ্বি স্যার, জিজ-জ্বি স্যার। ওপাশ থেকে তোতলানো শব্দ ভেসে আসে।
কবি লাইন কেটে দেয়। মোবাইলটাকে ঠকাস করে টেবিলে ফেলে। এই মফিজগুলারে লাথিগুতার উপর না রাখলে হয় না। সুযোগ পেলেই লাইন ছেড়ে বেলাইনে চলে যায়। সে টেবিলের কর্নারে রাখা কমলার জ্যুসের গ্লাসটা তুলে নেয়। চুমুক দেয়। কমলার সুমিষ্ট স্বাদে তার ক্রোধ প্রশমিত হয়। তার আবেগ আবার উথলে ওঠে। গ্লাস নামিয়ে রেখে সে কবিতার লাইন গোনে। দশ লাইন হয়েছে। বাহ্ আর চার লাইন হলেই একখানা সনেট হয়ে যাবে!
মন্তব্য
আমি কিন্তু এমন একজনকে চিনি। তিনি অবশ্য একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক এবং নাটক নির্মাতা। তিন/চার বছর ধরে প্রতি বইমেলাতে তার বই বের হয়।
লেখায়
আমার গল্পের চরিত্র পুরাই কাল্পনিক। জীবিত বা মৃত কারো সাথে কোন সম্পর্ক নাই। আপনি যে মিল পেয়েছেন তা পুরোপুরি কাকতাল। দয়করে পাঠকের পিন্ডি লেখকের ঘাড়ে চাপাইবেন না।
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কী ভাবলাম, আর কী দেখালেন!! মায়ের চিকিৎসা করতে না পারা দরিদ্র কবিদের দিন আর নাই; ঠিকই।

_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
ধন্যবাদ, তবে আমি বিশ্বাস করি সেরকম কবি নিশ্চই আছে, আর তাদের প্রতি আমার অশেষ শ্রদ্ধা!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বুঝতে পারিনি, আপনি কী বলতে চাইছেন।
আপনার লেখাটি পড়ে যে কথাটি মনে আসলো সেটাই লিখেছি, আপনার ঘাড়ে কিছু চাপাইতে চাইনি তো। 
কী মুশকিল, আপনি তো আমার ঠাট্টাও বুঝলেন না!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আপনার জন্য

আর ঠাট্টা বুঝতে পারিনি তাই এই আমার জন্য
আমার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কোনো কালেই আমার সন্দেহ ছিল না তবে এখন ভাবনাটা আরো পাকাপোক্ত হলো। আমার অবস্থা সেই গানের সখির মত, যে প্রেম বুঝে কিন্তু লীলা বোঝে না।
আর বুদ্ধিমত্তার স্কেলে আমার অবস্থানও বেশি উচ্চতায় নাই। আর ঐটা নিয়া ভাবিও না। আপনারও এত কাইন্দা কাম নাই তার চেয়ে আসেন প্রাণভরে দাঁত কেলাই
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
যাক্ ফ্যাক্টরী চালু হয়ে গেছে! গল্পের আকার আর রহস্যময়তা নিয়ে একটু আফসোস্ থেকে গেলো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ পান্ডু'দা ! আপনার ঠেলা না খেলে এতো তাড়াতাড়ি ফেরা হতো না ।
পরবর্তিতে চেষ্টা করবো আপনার আফসোস দূর করতে, পারবো কিনা জানিনা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কীর্তি তো অনেককাল যাবৎ নাশ অবস্থায় ছিলো বলেই মনে হচ্ছে ! এখন ফিরে এসে বুঝি কবিগো কীর্তি নাশে লেগে গেছে ! হা হা হা !!
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
রণদা আপনি কী যে বলেন, আমি আবার কার কী নাশ করলাম ? নিজের সর্বনাশ ঠেকাইতে গিয়াই ক্লান্ত হয়ে পড়লাম
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
বেশ ভালো লিখেছেন তো।
এইরকম কবি দেখি নি কখনো, তবে আমি নিশ্চিত, খুঁজলে পাওয়া যাবে ।
চলেন তাইলে দু'জন মিলে খোঁজা শুরু করি !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কোন কবির কীর্তি নাশ হইলো সেই সনেট কবিই বুঝবে, আমি আপাততঃ বুঝলাম কবিরাও ধাক্কাবাজ ব্যবসায়ী হতে পারে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শুধু কবিরা কেন ভাই ? এ জগতে খুব কম মানুষই আছে যাদের দ্বৈত চরিত্র নাই। আমার গল্পটা আসলে তাদের নিয়েই।
ধন্যবাদ সন্ধানী ভাই লেখাটা পড়ার জন্য ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ঠিকই তো আছে, কবিরা কি মানুষ না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ, ঠিকই তো
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ঠিকই আছে , আধুনিক ( ডিজিটাল আর কি ) দেশের কবি তো
এই তো আপনি বুঝছেন ব্যাপারটা
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আধুনিক যুগের কবিরা যেমন হয়
কত্তোদিন পর লিখলেন, সেই খেয়াল আছে!
এতো ফাঁকিবাজি করলে কেমনে কী!
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হ ঠিক কইসেন
আর ফাঁকিবাজির কথায় কান্দন ছাড়া গতি নাই
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
যাক ফাঁকিবাজ একজন লাইনে আইল
। মডুমামা রক্স।
জাউজ্ঞা এই ডিজিট্যাল কবির গপ্পো পুরাই সেরাম হৈছে। জোশ। আরও নামান কামান দাইগ্যা।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
facebook
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
নতুন মন্তব্য করুন