দুটি কৌতুক অথবা গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৮/০৫/২০০৯ - ৬:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কৌতুকের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এরা খুব বেশি ছুটাছুটি করে বেড়ায়। এর কান হতে ওর কান; ওর কান হতে তার কান। ফলে কেউ শোনে নি এমন কৌতুক বলা অসাধ্য না হলেও দুঃসাধ্য। তবে এগুলো ঠিক কৌতুক নয়, কিছুটা গল্পের মত। এই গল্পগুলো আমি শুনে বেশ মজা পেয়েছিলাম। হয়ত বলার গুণে, নয়ত বিষয়ের গুণে, তবে সবার ভাল লাগা এক নয়, তাই সবার ভাল লাগবে এমনটা আশা করছি না। তবে আমার এই লেখাগুলো যদি কারো পূর্বেই শোনা হয়ে থাকে তবে সেজন্য আমাকে দোষারূপ করবেন না সে আশা করছি।

দেখি না কি হয়..............
এক রাতে এক ভদ্রলোকের বাড়িতে চুরি হলো, পরদিন খবর পেয়ে পুলিশ আসলো। বাড়িতে ভদ্রলোক ব্যতিত তেমন কেউ থাকে না। তাই তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো রাতের চুরি সম্পর্কে।

আপনি কি বলতে পারেন ঠিক কখন চুরিটা হয়?

হ্যাঁ, তখন তো আমি জেগেই ছিলাম, ঠিক ১২টা পাঁচ মিনিটে চোর ঘরে ঢুকল। আমার ঘুমও ভেঙে গেল তার ঘরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই, আমি টের পেলাম আমার ঘরজুড়ে কেউ হাঁটছে। বাড়িতে যেহেতু অন্য কেউ নেই চোর ছাড়া আর কারো হাঁটার কথা নয়।

তারপর আপনি কি করলেন?

কি আর করব? শুয়ে ছিলাম টিপ মেরে আর ভাবছিলাম দেখি কি হয়, মাত্র তো চোর ঘরে ঢুকল আরো একটু অপেক্ষা করি, দেখি না কি হয়।

সে সারা ঘর ঘুরে এসে আমার মাথার কাছ থেকে আলমারির চাবিটা নিয়ে গেল, আমি টের পেলাম, তাকে বাধা দিলাম না, চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইলাম। ভাবলাম দেখি না কি হয়।

চোর আমার আলমারি খুলল, এক এক করে তার ভিতর থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র বের করতে লাগল, আমি টের পেলাম কিন্তু কিছু বললাম না,ভাবলাম দেখি না কি হয়।

আলমারির জিনিস নেয়ার পর চোর আস্তে আস্তে ঘর থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস তার ঝোলায় ভরলো, আমি টের পেলাম, কিছু বললাম না, ভাবলাম দেখি না কি হয়।

তারপর আস্তে আস্তে সে সব জিনিসপত্র নিয়ে চোর ঘরের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেল আমি স্পষ্ট টের পেলাম, কিছু বললাম না, ভাবলাম দেখি না কি হয়।

এই বার চটে উঠে পুলিশ অফিসার জিজ্ঞাসা করে- চোর আপনার সামনে আপনার ঘরের সমস্ত জিনিস নিয়ে দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল আর আপনি ভাবতেই থাকলেন?

তার চেয়ে দ্বিগুণ উত্তেজনায় উত্তর দেয় ভদ্রলোক- চোর আমার জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, আমি ভাববো না তো কি আপনি ভাববেন?

তারপর..........

ধরুণ আপনি একটা গল্প বলছেন, আপনার গল্প বলার মাঝখানে একজন বলে উঠছেন- তারপর? একবার দুবার নয়, একটু পর পরই- আপনার কেমন লাগবে বলুন তো? ঠিক এরকম স্বভাবের একটি ছেলের কথা বলছি, যে একটু পরপরই বিনা কারণে জিজ্ঞাসা করতো, তারপর?

ধরুণ মামুন ভাই তাইওয়ানের কোন একটি রূপকথা কোন এক রাতে ঐ ছেলেটির সাথে বলছেন। শুরুটা এরকম- এক দেশে ছিল এক কৃষক। তার জমিজমা খুব বেশি ছিল না, আয়ের অন্য কোন উপায়ও ছিল না, কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে তার অভাবও ছিল না। তার ছিল দুইটি সন্তান আর স্ত্রী। কিন্তু সে সবচেয়ে ভালবাসত তার ঘরের পোষা পাখিটাকে। পাখিটা তার সাথে কথা বলত এবং সকল কাজের পরামর্শ দিত। পাখিটির নাম শুকপাখি। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

শুকপাখির কথামত সে বছরে একবার জমি চাষ করতো। তবে ধান কিংবা গমের মত কোন সাধারণ ফসলের চাষ করতো না। সে চাষ করতো এক ধরনের তিলের চাষ। এই তিল থেকে তেল হতো না, এই তিল পরিপক্ক হয়ে মাঠে ঝরে পড়ত, আর গাছগুলো রোদে শুকিয়ে যেত। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

তারপর শুকপাখির বন্ধুরা দূর দেশে থেকে এসে মাঠে পড়ে থাকা সেই তিল খেত আর বিষ্ঠা ত্যাগ করত সেই জমিতে। পাখিরা উড়ে গেলে জমিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হতো, গাছগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যেত আর পাখিদের বিষ্ঠাগুলো সোনার দানা হয়ে ভেসে উঠতো। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

এবার একটু বিরক্ত হলো মামুন ভাই, মনে মনে ভাবলেন-এত তারপর তারপর করার দরকারটা কি, আমি তো গল্প বলছিই। তবু তিনি বলতে লাগলেন- সেবার বর্ষা খুব প্রবল হলো, জমি থেকে সহজে পানি নামছিল না, তাই কৃষক সময় মত জমিতে চাষ দিতে পারলো না, সে পাখিকে জিজ্ঞাসা করলো, এবার কি করা যায় বলো তো আমার শুকপাখি। শুকপাখি বলল, ধৈর্য ধর। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

মামুন ভাই আরো বিরক্ত হলেন, কিন্তু তবু মুখে কিছু প্রকাশ করলেন না। তিনি বলেই চলেছেন- তারপর কৃষক জিজ্ঞাসা করল প্রতিবার তো আমরা আশ্বিন মাসেই বীজ বপন করি, এবার তো কার্তিক মাস এসেই পড়ছে, তবু কি তিল চাষ করা ঠিক হবে? পাখি বলল- অবশ্যই। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

এবার মামুন ভাই ভাবলেন ছেলেটাকে শিক্ষা দেয়া দরকার। কিন্তু তাকে বুঝতে দিলেন না তার পরিকল্পনা, তিনি বলতে লাগলেন- পাখির কথামত কার্তিক মাসেই তিল বপন করলো কৃষক, কিন্তু দু’দিনের মাথায় দেখা গেল এক ঝাঁক অতিথি পাখি তার জমিতে নেমে বপন করা তিল খেয়ে যাচ্ছে। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

কৃষক ভাবলো কি করা যায়, শুকপাখি বলে উঠলো আমাকে মুক্ত করে দিন আমি দেখছি। মুক্ত করে দিতেই পাখিটি উত্তর দিকে রওনা করল। পরের দিন যখন অতিথি পাখিগুলো জমি থেকে তিল কুড়িয়ে খাচ্ছে তখন দেখা গেল উত্তর আকাশ কালো করে আরও এক ঝাঁক পাখি উড়ে আসছে। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

দেখতে দেখতে পাখির ঝাঁকটি জমির উপর চলে এলো এবং একটি জাল ফেলে দিল উপর থেকে, অতিথি পাখিরা সব বন্দী হয়ে রইল জালের ভিতর। আর শুকপাখিটি তার বন্ধুদের ধন্যবাদ জানিয়ে আবার এসে তিল খাবার আমন্ত্রণ জানালো। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

এদিকে আটকে পড়া পাখিগুলো নড়তে পারছে না, উড়তে পারছে না। পালাবার পথও খুঁজে পাচ্ছে না। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

হঠাৎ করে একটা পাখি আবিষ্কার করলো জালের একটা মাথা একটু ছেঁড়া, সে ঐ ছেড়া অংশটুকু দিয়ে ফুরুৎ করে উড়ে গেল। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

তারপর আরেকটা পাখি ঐ ছিদ্র দিয়ে ফুরুৎ করে উড়ে গেল। ছেলেটি বলে উঠলো- তারপর?

আরেকটা পাখি ফুরুৎ করে উড়ে গেল?
তারপর?
আরেকটা পাখি ফুরুৎ
তারপর?
আরেকটা ফুরুৎ
তারপর?
ফুরুৎ
তারপর?
ফুরুৎ..........

সালাহউদদীন তপু


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

২ নাম্বারটা কী বলার জোকস না পড়ার ?

অতিথি লেখক [অতিথি] এর ছবি

লেখার দায়িত্ব লেখকের, কিন্তু তা ব্যবহারের দায়িত্ব পাঠকের। আপনি যদি পড়ে আনন্দ পান, তবে পড়ার আর যদি বলে আনন্দ পান, তবে বলার।

সালাহউদদীন তপু

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দারুণ! দু'টোই খুব ভাল্লাগল। আরো লিখুন।

অতিথি লেখক [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার উৎসাহদায়ক মন্তব্যের জন্য।
আপনাদের ভাল লাগা মানেই আমার উপর আরো একবার লেখার দায়িত্ব চাপা। অতএব লিখতে তো হবেই।

সালাহউদদীন তপু

কীর্তিনাশা এর ছবি

মজা পাইলাম দেঁতো হাসি

যদি জিগান কেমন মজা ?

তাইলে আমার জবাব হইলো - ফুরুৎ ! হো হো হো

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে মন্তব্য করার মত নয়। গল্পটি পড়লাম।

শাহিদুর রহমান শাহিদ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমার এক ভাগ্নে ছিলো ভয়ানক গল্পশুনিয়ে। সুযোগ পেলেই আমার কাছে গল্প শোনার মামুর বাড়ির আব্দার কতো। গল্প বলিয়ে হিসেবে আমার কুখ্যাতি দুনিয়াজুড়া। তবুও ভাগ্নে বলে কথা, তারে স্বরচিত গল্প শোনাই। মাঝে মাঝে প্রচলিত গল্প রিমেক করি। তো তারে এরকম গল্প শোনাতে শোনাতে আমি টায়ার্ড! আর কতো ভালো লাগে! একদিন যথারীতি ধরলো গল্প শোনাতে। তো আমি এক সওদাগরের গল্প বলা ধরলাম। গল্প শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সওদাগর তার তরী নিয়ে চৌদ্দ সমুদ্দুর ছাব্বিশ নদীতে নেমে গেলো। এখন এই সমুদ্দুর আর নদী তো যে সে সমুদ্দুর আর নদী না, একেকটা প্রস্থে প্রশান্তের সমান। আর সওদাগরেরও তো ইঞ্জিনচালিত তরী না, খেয়া নৌকার মতো। তো এই নদীতে তো আর কোনো কাহিনী নাই। আমি বল্লাম, নৌকা চলে... ভাগ্নে বলে তারপর কি হলো মামা? আমি জবাব দেই, নৌকা চলছে তো চলছেই... ভাগ্নে বলে, তারপর কি হলো বলো! আমি বলি সওদাগরের নৌকা তীরে তো ভিড়ুক আগে, তারপর গল্পের বাকীটা বলা যাবে। এখন বললে তো মজা পাবা না। তো ভাগ্নে এর পর যতোবারই দেখা হতো, ততোবারই জিজ্ঞেস করতো, মামা সওদাগরের নৌকা কি তীরে ভিড়লো? আমি জবাব দেই, নারে চান্দু। এখনও মাঝ নদীতেই আসে নাই। এই করে করে ভাগ্নে গেলোগা আমার কানাডা চলে, আর আমিও পাড়ি জমালাম কোন দূরদেশে! বেচারা ভাগ্নে এতোদিনে সওদাগরের কথা নিশ্চই ভুলেই গেছে। কারণ সেই গল্প হতে আজোবধি প্রায় বছর পাঁচেক গড়িয়ে গেলো, সওদাগরের নৌকা এখনো নদীগুলোই পার হতে পারলো না, তীরে ভিড়বে কী!

আর বলাই বাহুল্য, এক গল্প শেষ না করে অন্য গল্প শুরু করাটা ঠিক প্রফেশনাল গল্পবলিয়েকে দিয়ে হয় না! চোখ টিপি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক [অতিথি] এর ছবি

গল্প বলিয়ে হিসেবে আমার দুনিয়াজুড়া কুখ্যাতি না থাকলেও আমার পরিচিত মহলে একটি খ্যাতি আছে। তাই এমন বিব্রতকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেই হয়। বিশেষ করে ভাগ্নে ভাগ্নি এবং খালাতো ভাই বোন যারা এখনো স্কুল পার করেনি বা সদ্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে তাদের অত্যাচার অসহনীয়। আমার গল্পের ভাণ্ডার শেষ হলেও তাদের আগ্রহ ফুরায় না। তখন কি আর করা, কৌশল অবলম্বন ছাড়া?

আপনার কৌশলটিও অবলম্বণ করেছি, কিন্তু তারা তখন অন্য গল্প বলার আবদার করে, একের পর অন্য গল্প বলার আবদারে রাজী হতেই হয়, কারণ আমি তো প্রফেশনাল গল্প বলিয়ে নই। তাই বাঁচার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বণ করতে হয়। এটা আমার সর্বশেষ পদ্ধতি এবং সর্বাপেক্ষা উপযোগীও বলতে পারেন।

তারা বলে- গল্প বল
আমি বলি- গল্প
আবার বলে- গল্প বল
আমি বলি- গল্প
-আরে এভাবে না, গল্পের কাহিনী বল
আমি বলি- গল্পের কাহিনী
-এভাবে না, এক দেশে ছিল এক রাজা-এভাবে
আমি বলি- এক দেশে ছিল এক রাজা

এভাবে তারা যা বলে আমি তাদের তাই বলে শোনাই। একসময় তাদের ধৈর্য্য ফুরিয়ে যায়, কিংবা প্রসংগ পরিবর্তন হয়ে যায় কিন্তু গল্প আর বলা হয় না।

সালাহউদদীন তপু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।