ফাগুন বর্ষার নিমগ্ন সন্ধ্যায়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০২/০৬/২০০৯ - ৮:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বৃষ্টি থেমে যেতেই পুরোনো বাড়িটা থেকে বেড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি। স্থির গন্তব্যে পৌঁছানোর অস্থিরতায় দ্রুত পা চালাতে থাকে সে। হিমেল বাতাসে শরীরে একটু কাঁপন লাগছে যেনো। তবুও ভাল লাগছে, একটু আগেও কেমন এক অপূর্ব উত্তাপে ঘেমে উঠেছিল সে। আলোহীন সন্ধ্যায় ভুতুরে বাড়িটায় দীর্ঘ এক ঘন্টারও বেশি কাটাতে হয়েছে। ভালই কেটেছে বলেই সে বোধ করছে এখনও।

রোমান্টিক নাটকীয়তার নানা গল্প নিবিড়তায় রোমাঞ্চিত হচ্ছে সে। তবু কোন এক আড়ষ্ঠতায় গুটিয়ে যাচ্ছে তার মন।

হঠাৎই কঠিন হাতের বাধায় সে থেমে যায়। তার হাতে কবিরের শক্ত হাতের বাধা পড়ে। তাকে ধরে থামিয়ে দেয় তার পথ চলা। পথের ছোট গর্ত চোখে পরে। অন্ধকারেই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ একটু হাসে বৃষ্টি। তাতে কবিরও বেশ রোমাঞ্চিত হয়। সেও একটু হাসে। আবার তারা চলতে থাকে।

কিছু দূর এগুতেই আবার বিপত্তি। রাস্তা ভাঙ্গা বলে বর্ষার পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। যেনো ছোট খাটো নালা। পাড় হতে হলে ভিজতে হবে কোমর পর্যন্ত। কবির তাকে দাঁড়াতে বলবে। সে ব্যাগগুলো আগে পার করে আসে। তারপর বৃষ্টিকে অনুমতি ছাড়াই পাজা কোলে তুলে নেয়। দুজন দুজনের উজ্জল হাসিমুখ অবলোকন করতে করতে নালা পাড় হয়। আবার চলতে থাকে।

কবির আর বৃষ্টি পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা। ভার্সিটিতে তাদের পরিচয় ছিল না। হঠাৎ গোলমালে আজ দ্রুত হল ত্যাগ করে গ্রামে ফিরতে হচ্ছে দুজনকেই। নাটকীয় ভাবেই এ বাস ও বাস সব বাসেই দুজন যাত্রীর আরোহন সুত্রে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার নির্বাক পরিচয়। শেষমেশ শেষ বাসটায় পাশাপাশি বসে আসা। নিজ থানার উপ শহরগামী বাসটায় আরোহণ করে নিজেদের আপন ভাবতে আর দ্বিধা হয় নি।
পাশাপাশি বসেই পরিচয় পালা শেষ করে। তারপর গ্রামের দিকে চলতে শুরু করা। হঠাৎ অঝোর বৃষ্টির দ্রোহে থামতে হয়।দীর্ঘ ফসলের মাঠ, নেই কোন বাড়ি ঘর। বাড়ি ঘর বলতে একটিই অভিশপ্ত জমিদার বাড়ি। যেখানে শেয়াল কুকুরও থাকে না। থাকার মাঝে ইঁদুর তেলাপোকা থাকে।

তারই এক বাড়ান্দায় আধুনিক, শাহসী দু তরুণ তরুণী আশ্রয় নিতে দ্বিধা করে নি। দ্বীধা করে নি আরোও কিছু সংস্কার, বিধি রীতির ব্যতিক্রমী হতে।

বৃষ্টির গ্রামটাই আগে। তার পরের গ্রাম কবিরের। বৃষ্টিদের বাড়িতে বৃষ্টিকে পৌঁছে কবির চলে যায়। অনেক রাত বলে বৃষ্টির মা তাকে থেকে যেতে বলে, খেয়ে যেতে বলবে, কবির কোনটিই করে না। সে বিদায় নিয়ে চলে যায়।

বৃষ্টির বাবা ও ভাই একটু বিরক্ত। কেমন না কেমন ছেলে! এর সাথে আসা ঠিক হয় নি এমটিই তাদের আচরণে বৃষ্টি উপলব্ধি করতে পারে। তবু সে কিছু বলে না। মা বারবার রাস্তায় কোন সমস্যা হয়েছে কি না জানতে চায়। সমস্যা হয় নি এ কথাই স্পষ্ট সে জানিয়ে দেয়। নানা ভনিতা শেষে মা তার বাবা ও ভাইয়ের মনোভাবের কথা জানায়। তাদের দৃষ্টিতে ছেলেটার সঙ্গে আসাটা ঠিক হয় নি এবং তারা খুব রাগ করেছে জেনে বৃষ্টি এবার ক্ষেপে উঠে। তাহলে কী বাড়িতে না এসে রাস্তায় রাত কাটালে সবাই খুশি হতে? না তা না। তাহলে কী? ও আমাকে বাড়িতে পৌছে দেয়ায় কী অপরাধ হল বল তো? অপরাধ কী আর হাজার হলেও এমন একটা পুরুষের সাথে এত রাত করে আসাটা কেমন কেমন না? ভার্সিটির গোলমাল কী আমি বাধিয়েছি? আর যারা হল বন্ধ করে দিল তারা কী আমার নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে হল ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে? তারা কী জানে আমার গ্রামে পৌছাতে কত সময় লাগে?তারা কী জানে এই ঢাকায় আমার থাকবার মত কোন জায়গা নেই?

না আসলে তুই একবার ভেবে দেখ এমন একটা অপরিচিত ছেলের সাথে তোর বয়সী একটা মেয়ের আসাটা? মা ছেলেটা কি বাঘ না ভালুক? নাহ তুই কিছুই বুঝিস না। কিন্তু এমনটি আর করবি না। বুষ্টি কিছু বলে না । সে রেগে না খেয়েই শুয়ে পরে। সে শুয়েই অনুভব করে তার শরীর ব্যথায় টন টন করছে।

দু দিন পার হতেই অজানা র্দূভাবনা তার মাথায় ভর করে। কবে ভার্সিটি খুলবে, কবে সে শহরে যেতে পারবে। গ্রামের খোলাবাতাসেও তার দম বন্ধ হয়ে আসে।

কবিরের ভালই কাটছে। অনির্দিষ্টকালের এ বন্ধটা তার কাছে সাপে বর মনে হচ্ছে। তার ফিরে যাবার আকাঙ্খাটা তীব্র নয়। তবে কেমন এক আকাঙ্খা, উৎকন্ঠা তাকে তাড়িত করে চলেছে প্রতি মূর্হুতে। বৃষ্টির ছন্দ হিন্দোল বারবার চোখে ভাসে। আবার কবে একত্র হবে? আর হবে কী? গোলেমালে মোবাইল নম্বরটা নেয় হয় নি। ওর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা করাটা ঠিক হবে না হয় তো। সুতরাং ভার্সিটি খুললে খুঁজে বের করবেই করবে।

গোলমাল মিটে গেছে । এ খবরটা পেতেই লাফিয়ে উঠে বৃষ্টি। হলে ফিরে যাওয়া যাবে জেনে সে আর দেরি করে না। তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে মা বাবার বাধা সত্বেও বেরিয়ে পরে। কয়েক ঘন্টার মাঝেই তার মন চনমনে হয়ে উঠে। আসার পথে পুরোনো জমিদার বাড়িটার দিকে অনেকবার তাকিয়ে দেখেছে সে।

বিদায় দেবার কালে মা বাবা খুব সাবধানে যেতে বলে দেয় তাকে। সে চিন্তা না করতে বলে। মেয়ের সাহসিকতায় তারা একটু খুশিই হয়। অনেক আশাবাদী আস্থাশীল তারা তাদের মেয়ের উপর।

বৃষ্টি বাস থেকে নেমেই ঔষধের দোকানে যায়। গিয়ে কিছু বলতে পারে না। চলে আসে। দোকানী অবাক হয়। ঘড়ির দিকে তাকায়। ৭২ ঘন্টা পার হতে খুব বেশি দেরী নেই। দম বন্ধ করে এবার আর এক দোকানীর কাছে নির্দিষ্ট একটি ঔষধ সে চায়। দোকানী মাথা নেড়ে আছে বলে সম্মতি জানায়। তার চোখের কৌতুহল বৃষ্টিকে ফ্যাকাশে করে দেয়। তবু দামটা দিয়েই লোকটির দিকে না তাকিয়েই দ্রুত চলে আসে। ঔষধটা কিনতে পেরে সে হাফ ছেড়ে বাঁচে। ৫/৭ দিন পরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।

পান্থ মিয়া
pantha_miahAT yahooDOTcom


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

কিছু বুঝলাম না। ভূতের কামড়ে জলাতঙ্ক? তার ওষুধ?

অনেক বানান ভুল চোখে পড়লো। এই প্যারাটাই ধরা যাক:

তারই এক বাড়ান্দায় আধুনিক, শাহসী দু তরুণ তরুণী আশ্রয় নিতে দ্বিধা করে নি। দ্বীধা করে নি আরোও কিছু সংস্কার, বিধি রীতির ব্যতিক্রমী হতে।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বানান বিভ্রাট আর তাড়াহুড়া বাদ দিলে ভালোই লেগেছে।
বিকল্পধারার চলচ্চিত্র হতে পারে চোখ টিপি

কীর্তিনাশা এর ছবি

ভালো লেগেছে গল্প হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।