সিলেট ভ্রমন: ১ম দিন(১৮.৫.০৯-সোমবার)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১০/০৬/২০০৯ - ১০:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মিরাজ আমিন

আজ খুব ভোরে উঠলাম। প্রায় ৪:৪৫ টায়। ৬:৪০টায় ট্রেন ধরতে হবে। রাতে মোটামুটি গোজগাজ করে রেখেছিলাম। তাই ঘুম থেকে উঠে নামাজ আর হাল্কা নাস্তা সেরেই ট্রেন ধরার জন্য ৫:৪৫টায় বেরিয়ে পড়লাম। এতো সকালে কিভাবে যাব তা বুঝতে না বুঝতেই বাসার সামনে একটা রিক্সা পেয়ে গেলাম। এতো দূরের রাস্তার পুরোটা রিক্সা যাবেনা বলেই ধরে নিয়েছিলাম। কিন্তু রিক্সার ড্রাইভার এক কথাতেই কেন যেন রাজি হয়ে গেল। ঠিক ৩৫ মিনিট লাগলো ধানমন্ডি থেকে কমলাপুর যেতে। যেতে যেতে একবার মনে হলো আহারে ঢাকা শহর যদি সবসময় এমন থাকতো। কোন জ্যাম নেই, ফাঁকা রাস্তা, নেই গাড়ির হর্ণের বিকট শব্দ আর কালো বিষাক্ত ধোঁয়া।

রেল স্টেশনে সবাই(কায়েস,নাসিফ ও হাসিব)ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। এবার ট্রেনে সিট খোঁজার পালা। আমাদের ক নং বগি। ট্রেনের একদম সামনে, ইঞ্জিনের পাশে। এটা নিয়ে প্রাথমিকভাবে সবাই মোটামুটি বিরক্ত বলা যেতে পারে। তবে খুব একটা আফসোস নেই। কারণ ২য় শ্রেণীর টিকেট। যেকোন বগিতেই সিট পড়তে পারে। সময়মত ট্রেন ছাড়ল। চলছে ট্রেন,চলছে কায়েসের ফটোগ্রাফি। তার প্রধান বিষয়বস্তু সে নিজে। অবশ্য তাতে আমাদেরও যথেষ্ট ছবি থাকে। কিছুক্ষণ পর আমরা নাস্তা করার জন্য অন্য একটি বগিতে গেলাম। নাস্তা পেলাম বটে কিন্তু ওখানকার চেয়ারগুলোতে যাত্রীরা বসে আছে, যদিও চেয়ারগুলো কেন্টিনের জন্য নির্ধারিত। যাই হোক ওদের কাউকেই কোনোরূপ দোষারোপ না করে আমরা দাড়িয়েই নাস্তা করতে লাগলাম। হাসিব অবশ্য একটু ব্যতিক্রম,কারণ সে একটি সিট কিভাবে যেন জোগাড় করে ফেলেছে। আমাদের ট্রেন চলতে লাগল। ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে থামে, যাত্রী নামায়, যাত্রী তোলে, আমি আর কায়েস তখন ট্রেন থেকে নেমে স্নাকস কিনতাম আর ছবি তুলতাম। দুপুর ২টায় ট্রেন আমাদের সিলেটে নামিয়ে দিল। ওইখান থেকে রিক্সা যোগে চলে গেলাম আম্বরখানা। ২-১টা হোটেল ঘুরে অবশেষে সিন্ধান্ত হলো আমরা 'কায়কোবাদ হোটেল' এই থাকবো। মূলতো কায়কোবাদ স্যারের নামের সাথে হোটেলটির নামের মিল থাকাতে শুরুতেই হোটেলটি আমাদের নজরে কাড়ে। কাউন্টারে বুকিং দেয়ার সময় জিজ্ঞাসা করলাম 'কায়কোবাদ' কে? উত্তরটা শুনে খানিকটা হতাশ হলাম 'কায়কোবাদ মালিকের ছেলের নাম', যদিও হোটেলটি কায়কোবাদ স্যারের হওয়ার সম্ভাবনা ছিল খুবই ক্ষীণ। সেই ক্ষীণ সম্ভাবনা নিয়েই হয়তো আশার বীজ বুনেছিলাম। হোটেলের নিচেই খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। দুপুরের আহার পর্ব ওখানেই চলল। এরপর বিকেলের(৫:০০) দিকে আমরা শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে গেলাম। নাসিফের এক মামা শাবিপ্রবির শিক্ষক। নাসিফের বাসা থেকে বলা হয়েছে মামার সাথে দেখা করে যেতে। প্রাথমিক সিন্ধান্তে নাসিফ একা যাওয়ার কথা থাকলেও পরে ওর সাথে কায়েসও গেল। ওদের ঐখান থেকে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসার কথা, কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে ওরা ঘণ্টাখানেক পরে আসল। এদিকে আমি আর হাসিব ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। ২-১টি ছোট ছোট পাহাড়েও উঠলাম। সামার ভ্যাকেশনে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে তরুণ-তরুণীদের জোড়ায় জ়োড়ায় উপদ্রপ মোটেও থেমে নেই। কোন এক পাহাড়ের উপরে একটি সুন্দর শহীদ মিনার রয়েছে। আমি আর হাসিব তাতে আরোহণ করলাম। সাময়িকভাবে কিছু তরুণীর আমাদের ঠিক সামনে অবস্থানপূর্বক তাদের ছবি তোলা আমাদের দুদন্ড বিনোদন দিয়েছিল। এরপর কায়েস আর নাসিফ যখন এলো তখন সন্ধা হয়ে গেছে। নাসিফ পুরোপুরি আর কায়েস আংশিক হতাশ। কারণ নাসিফের সাথে তার ১৭-১৮বছর বয়সী কাজিন(মামার মেয়ে)এর কথা বা দেখা কোনটাই হয়নি আর কায়েসের উক্ত কাজিনটিকে দেখার ক্ষীণ আশা থাকলেও আশাটি পূরণ হয়নি। যাইহোক আমরা কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে আবার হোটেলের দিকে রওনা দিলাম।

নাসিফের মামা কায়েসকে একটি বই উপহার দিয়েছে। বইয়ের নাম 'আমি আল্লাহর কথা বলছি', নাসিফের মামার নিজের লেখা। নাসিফও একটি বই ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছে, নির্মলেন্দু গুণের কবিতা সমগ্র। রাতে বই দুটির অধ্যয়ন চলল। নির্মলেন্দু গুণের যে কয়টি কবিতা পড়লাম তাতে মনে হলো এইগুলো অপ্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগি নয়। পাশাপাশি চলছে বিটিভি দেখা। হোটেলের এক লোক বলল, 'পুরো সিলেট শহরে আজ ডিশ নেই'। তাই বিটিভি দেখা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আজকের মতো বিটিভি হয়তো আমরা কেউই আগে কখনো দেখেনি। রাতে হঠাৎ নাসিফ কি মনে করে ডিশের লাইনের তারটি ধরল। সাথে সাথে ডিশের লাইন চলে আসল। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে কারণ iplএর রাতের খেলাটিও শেষ। সুতরাং কিছুটা আফসোস নিয়েই কিছুক্ষণ টিভি দেখে সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম।

চলবে


মন্তব্য

অফলাইনার এর ছবি

সিরাম হৈছে মামা সিরাম। ২ নামাও।

... [অতিথি] এর ছবি

সাময়িকভাবে কিছু তরুণীর আমাদের ঠিক সামনে অবস্থানপূর্বক তাদের ছবি তোলা আমাদের দুদন্ড বিনোদন দিয়েছিল।

ঠিক বুঝলাম না, কী বোঝাতে চাইলেন।

guest_writer এর ছবি

হেহ! সবকিছু বুজতে চান ক্যান।

তরুনীরা আমাগো সামনে ছবি তোলায় আমরা তাগো নানান এঙ্গেল থেইকা দেখছি।

আর কে না জানে তরুনী দর্শন ২৪ বছরের যুবকদের অন্যতম বিনোদন। হাসি

নিবিড় এর ছবি

চলুক ভ্রমণ কাহিনী


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

হাসান [অতিথি] এর ছবি

ভাল হয়ছে, লিখে যান...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ছবি না দিলে পড়বনা।
...............................
নিসর্গ

তানবীরা এর ছবি

মিরাজ আমিন ভাইয়ের বানানের দশা আমার থেকেও খারাপ দেখছি। হিমু কোথায়য়য়???
সচলে স্বাগতম আপনাকে। মিরাজ ভাই, আপনার ভ্রমন কাহিনীটা গল্প কম কিন্তু রচনা লাগছে বেশী। আশাকরি আমার কথায় আহত হবেন না, পজিটিভ স্পিরিট থেকে বলছি

---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।