ঢাকা শহরের শব্দ দুষণ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৬/০৮/২০০৯ - ১:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাজারো সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা শহরে শব্দ দূষণ অন্যতম একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অনান্য জেলায় এই সমস্যা থাকলেও ঢাকা শহরের মত এত মারাত্মক অবস্থা কোথাও ধারণ করেনি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, শব্দ দূষনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সমস্যা ঢাকা সহ সারাদেশেই উপেক্ষিত। শব্দ দূষণ রোধে সরকারী সামান্য নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে সে আইনের গ্রয়োগ নেই বললেই চলে।

প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষ, রাস্তায় নামছে নতুন নতুন গাড়ী, তৈরী হচ্ছে নতুন স্থাপনা। এই বাড়তি মানুষের চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে বাড়ছে শব্দ দুষণের মাত্রা এবং বাড়তে বাড়তে এক অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁচেছে। আবাসিক/অনাবাসিক এলাকা, অফিস পাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অলিগলি এমনকি হাসপাতলের আশেপাশেও শব্দ দূষণের তীব্রতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

শব্দ দুষণ শারিরিক ও মানষিক নানবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে। এই দুষণের কারনে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ বধির হওয়া থেকে শুরু করে হার্ট এ্যাটা কের মত মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে । বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে স্কুলগামী শিশুরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি তিন বছর বা তার কম বয়সী শিশু যদি খুব নিকট থেকে ১০০ ডেসিবেল শব্দ শুনে তাহলে সেই শিশুটি চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে । ঢাকা শহরে প্রতিদিন অসংখ্য স্কুলগামী শিশু শব্দ দুষণের ফলে তাদের শ্রবণ শক্তি হারাচ্ছে বা হারাতে বসেছে । উচ্চ শব্দ শিশুদের শুধু শ্রবণশক্তিই নষ্ট করেনা সৃষ্টি করে আরও অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার । এমনকি রেডিও, টিভির উচ্চ শব্দ বা উচ্চশ্বরে চিৎকার শিশুদের শ্রবণ শক্তি এবং মানসিক বিকাশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ঢাকা শহরে শব্দ দুষণের অন্যতম কারণ হল গাড়ীর হাইড্রলিক হর্ণ ও ঊচ্চশব্দে মাইক বাজানো, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র বিশেষ করে ইট ভাঙ্গার যন্ত্র । গাড়ীর হাইড্রলিক হর্ণ মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর । অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রসস্ত রাস্তার কারণে ঢাকা শহরের যান জট দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার ফলে বাড়ছে শব্দ দূষণের মাত্রা এবং ঘটছে শব্দ দুষণের মত মারাত্মক পরিবেশে বিপর্যয়ের। ঢাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের শব্দ দূষণের মাত্রা; সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ১০৬ ডেসিবেল, যাত্রাবাড়ী ১০০ ডেসিবেল, বাংলা মটর ১০৬ ডেসিবেল, সোনরগাঁও হোটেল ১০৪ ডেসিবেল, ফার্মগেট ১০৪ ডেসিবেল, মহাখালী রেল ক্রসিং ১০৩ ডেসিবেল, মগবাজার ১০৩ ডেসিবেল, মৌচাক ১০৩ ডেসিবেল, গাবতলী ১০২ ডেসিবেল, তেজগাঁও শিল্প এলাকা ৯৭ ডেসিবেল, মিরপুর-১ নম্বও ৯৭, কাকরাইল ৯২ ডেসিবেল, গুলশান ৯০ ডেসিবেল, মতিঝিল শাপলা চত্বর ৯২ ডেসিবেল, সদরঘাট ৮৭ ডেসিবেল, বারডেম হাসপাতাল ৮১ ডেসিবেল, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা ৭৮ ডেসিবেল, শাহীন কলেজ ৮৩ ডেসিবেল, মতিঝিল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ৮৩ ডেসিবেল, ধানমন্ডি সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যলয় ৮০ ডেসিবেল, ।আজিমপুর মহিলা কলেজ ৮০ ডেসিবেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয় ৮২ ডেসিবেল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৮০ ডেসিবেল, মিডফোর্ড হাসপাতাল ৭৬ ডেসিবেল এবং শিশু হাসপাতাল দিনে ৭২ ডেসিবেল
। (সূত্র: Society for Assistance to Hearing Impaired Children)

পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, একটি শহরের শব্দের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা আবাসিক এলাকার জন্য দিনে ৪৫ এবং রাতে ৩৫ ডেসিবেল , মিশ্র এলাকায় (আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক) দিনে ৬০ ডেসিবেল এবং রাতে ৫০ ডেসিবেল এবং শিল্পাঞ্চলের জন্য ৭০ ডেসিবেল । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দ মানুষের সাময়িক শ্রবণ শক্তি নষ্ট করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে মানুষ চিরতরে শ্রবণ শক্তি হারাতে পারে । একটি বাড়ীর শয়ন কক্ষের শব্দের সহনীয় মাত্রা ২৫ ডেসিবেল, শ্রেনীকক্ষে ৩০-৪০ ডেসিবেল, অফিসে ৩৫-৪০ ডেসিবেল, হাসপাতালে ২০-৩৫ ডেসিবেল, রেষ্টুরেন্টে ৪৫ ডেসিবেল এবং রাতের ঢাকাতে ৪৫ ডেসিবেল । কিন্তু আমাদেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরিত। আবাসিক এলাকা থেকে শুরু কওে ঢাকা শহরের সর্বত্র শব্দ দূষণের মাত্রা অত্যাধিক। কোন কোন এলাকায় দ্বিগুন বা তারও বেশী।

শব্দ যখন উপরোক্ত মাত্রা অতিক্রম করে তখনই তা শব্দ দুষণে পরিণত হয় । মাত্রাতিরিক্ত শব্দ মানুষের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমনকি মানষিক ভারসাম্যহীণতার কারণও হতে পারে । । পরিবেশ অধিদপ্তরের রিপের্টি অনুযায়ী, শব্দ দুষণের কারণে উচ্চ রক্ত চাপ, মাথাধরা, অজীর্ণ, পেপটিক আলসার, অনিদ্রা ও ফুসফুসের ক্ষতি সহ নানা রকম মানষিক ও শারিরিক সমস্যার সৃষ্টি হয় । অতিরিক্ত শব্দ দুষণ শিশুদের বুদ্ধিমত্তানষ্ট করা সহ পড়ালেখার ব্যাপারে অমনযোগী করে তোলে। দীর্ঘদিন উচ্চ শব্দের কলকারখানায় কাজ করার ফলে মানুষ চিরতরে শ্রবণ শক্তি হারাতে পারে । সন্তান সম্ভবা মায়েদের জন্য যে কোন ধরনের উচ্চ শব্দ মারত্মক ক্ষতিকর । এক সমীক্ষায় দেখা গেছে এয়ারপোর্টের আশেপাশে উচ্চ শব্দের কারণে বধির , বিকলাঙ্গ এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক শিশু জন্মগ্রহন করে ।

শব্দ দূষণ রোধে নাগরিক সচেতনতা খুবই জরুরী। গাড়ীর ড্রাইভারদের মাঝে অযথা হণ বাজানোর প্রবনতা দেখা যায় । আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতলের মত সংবেদনশীল জায়গাতেও কোন নিষেধাজ্ঞার তেয়াক্কা না করে ড্রাইভাররা সমানে হর্ণ বাজাতে থাকে। এমনকি ট্রাফিক সিগনালেও ড্রাইভাররা হর্ণ বাজায়।

বিগত তত্বাবধায়ক সরকার শব্দ দূষণ রোধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন। বেশ কয়েকটি রাস্তায় গাড়ীর হর্ণ বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিলেন । কিছুদিন আমরা এর সুফলও পেয়েছি। কিন্তু এখন আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। শব্দ দূষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও নাগরিক সমস্যা। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই দূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেদ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেদ গ্রহণ না করলে আগামীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে শিশুরা। আগামী প্রজন্মকে সুষ্ঠু এবং স্বাবাভিক পরিবেশে বেড়ে উঠার পবিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এখনই। তার জন্য প্রয়োজন সুনিদিষ্ট সরকারী নীতিমালা এবং তার সঠিক প্রয়োগ।

rjpbd@yahoo.com


মন্তব্য

স্বপ্নহারা এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। লেখাটা ভাল হয়েছে...কিন্তু এত বানান ভুল থাকলে পড়ার আগ্রহ চলে যায়...মন খারাপ

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। বানানের ব্যাপারে খেয়াল রাখবো।

ফিরোজ জামান চৌধুরী এর ছবি

শব্দদূষণ ঢাকার জন্য মারাত্ম্যক সমস্যা। ভালো লেখা।

'নাম হীন গোত্রহীন' অতিথি লেখককে ধন্যবাদ।
শুধু ইমেইল কেন? নাম কই?

ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ ফিরোজ জামান চৌধুরী আপনার বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতার জন্য।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চলুক

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্বাগতম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

স্বাগতম। দরকারী একটি বিষয় নিয়ে লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ। নিয়মিত লিখুন।

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

চেষ্টা করবো নাগরিক সমস্যা নিয়ে ধারাবাহিক লিখতে। ভালো থাকবেন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।