ধারাবাহিক রহস্য গল্প: সাধারণ দুর্ভেদ্য? (পর্ব-৩) {বাই-দলছুট)

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ৩০/০৮/২০০৯ - ১:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলা স্পেল চেকার দিয়ে বানান চেক করে পোষ্ট দিলাম। আশা করি বানান বিড়ম্বনা কম হবে।
পর্ব-৩:
সন্দেহ এমন এক জিনিস যা দেখা যায় না, ধরা যায়না, ছোঁয়া যায় না, তবু এর বৃদ্ধি আছে, গাছের মত ডালপালা ছড়ায়, মনের গভীরে শিকড় পোক্ত করে আঁক্ড়ে থাকে। যতই মন থেকে একে সরানোর চেষ্টা করা হোক সেটা সহজে সরেনা। কিছুটা বেহেয়ার মত যতই না বলবেন ততই আপনার পিছু নিবে। আপনি বকে, ধম্কাইয়া থামাতে পারবেন না। রাহির মনে সন্দেহের ডালপালা বিস্তৃত হতে লাগল। সন্দেহের তীর এখন কামরান আর দানার দিকে তাক করা। এর বাইরেও যে কেউ থাকতে পারে সেই সন্দেহটা মনের মাঝ থেকে বিতরিত করতে পারছেনা। সন্দেহের ঘূর্ণির আবর্তে নাগরদোলার মত পাক খাচ্ছে রাহি। এযেন কোন ভাবেই থামছে না। গত সাত দিন ধরে রাহি এই সন্দেহের বীজটা মনের ভেতর নিয়ে ঘুরছে আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করার জন্য। সে মোটামুটি একটা বিষয়ে মনে মনে একমত হয়েছে যে, এই কাজ বাইরের কেউ করেনা, এটা এই বাসার কেউ করে। এবং কে করতে পারে সেটা মনে মনে রাহি ঠিক করে রেখেছে, শুধু প্রয়োজন এখন প্রমাণের। তার জন্যই অপেক্ষা।

রাহি এই সাত দিন সন্দেহ ভাজন আরো কিছু লোকের সাথে কথা বলেছে। সিরাজুল হক সাহেবের বন্ধু মানুষ জলিল সাহেবের সাথেও কথা বলেছে। লোকটা নেহাত ভালো মানুষ। প্যাচগুছ কি জিনিস সেটা সে জানেও না, বুঝেও না। যেখান থেকে মাছের খাবারের জন্য খৈল, কুঁড়া, শুঁটকি মাছের গুঁড়া, মিট এন্ড বোন সংগ্রহ করে সেখানেও গিয়েছে রাহি বেশ কয়েক বার। যে সব খাবার আনা হয় তার গুণগত মানও পরীক্ষা করানো হয়েছে, সব ঠিক আছে। তাই বাহিরের মানুষের প্রতি সন্দেহটা ম্রিয়মাণ হয়ে যায় যখন সে এই নিয়ে ভাবনায় বসে।

রাহি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ এই ব্যাপারে প্রথমে কামরানকে চার্জ করবে। রাহির ধারণা যেই কাজটা করুক না কেন, সেটা কামরানের সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। তাই কামরানকে চার্জ করলে অনেক কিছু বের হয়ে আসবে। সে চার্জ করার জন্য বিকালের সময়টা বেছে নিল। কারণ এই সময় বাড়ির অন্য লোক গুলো ঘুমায় বা রুমে রেস্ট নেয়। এই কয়দিনে যা বুঝেছে তাতে রাহি নিশ্চিত হয়েছে যে দানা দুপুরের খাবারের পর ঘুমায়। তাই এই সময়টা নির্বিঘ্নে বিষয়টা নিয়ে কামরানকে চার্জ করা যাবে।

দুপুরের খাবারের পর রাহি অপেক্ষা করছিল কখন সবাই ঘুমাবে। বিকাল চারটার দিকে বাড়ি শান্ত হয়ে গেলো। এমনি ছায়া ঘেরা বাড়িটার নীরবতা বহমান সব সময়, তারপরও এই সময়টা দিনের অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশী শান্ত থাকে। রাহি বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে ছিল। চটজলদি চেয়ার থেকে উঠে এলো। নিজের আবাস স্থল ছেড়ে বের হয়ে পুকুর দিকে এলো। দেখে কামরান ফুল গাছে নিড়ানি দিচ্ছে। সে কাছে এসে কামরানকে ডাকল। কামরান কিছুটা ভয় পেয়ে কাছে এলো। সেই দিনের রাতের পর থেকে কামরান সবসময় একটা আতংকের মাঝে থাকে, ভাবে এই বুঝি চাচাকে বলে দিবে, নিজের সুন্দর চাকুরি হারাবে। রাহি কামরানের সংকুচিত স্বভাবটা কয়দিন ধরে লক্ষ্য করছে। কিছু বলেনি। রাহি জানে অপরাধীরা সব সময় নিজেদের মাঝে একটা নিষ্পাপ ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে, যদিও তারা জানেনা এটা মিনমিন স্বভাব এবং বিরক্তিকর।

রাহি কামরানকে নিয়ে নিজের রুমে এলো। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ঘরের লাইটটা জ্বালানোর জন্য সুইচ টিপ'ল। ভাগ্য ভালো ইলেক্ট্রিসিটি ছিল। কামরান কে একটা টুল এগিয়ে দিয়ে বসতে বলল। কামরান ভয়ে সংকুচিত হয়ে আছে। ব্যাপারটা রাহি লক্ষ্য করে- “ তুমি ভয় পাচ্ছোকেন? স্বাভাবিক হয়ে বসো। তোমার সাথে কিছু কথা বলবো।” কামরান তাতেও যে খুব একটা স্বাভাবিক হতে পারল না সেটা তার বসার ধরন দেখলেই বুঝা যায়। রাহি ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলো। ড্রয়ার খুলে পিস্তলটা টেবিলের উপর রাখল। নিজে একটা চেয়ার টেনে কামরানের মুখোমুখি বসল। তাদের কথোপকথনঃ
রাহিঃ কামরান আমি যা যা প্রশ্ন করবো, তার ঠিক ঠিক সত্যি জবাব দিবে, তানাহলে সেই রাতের ঘটনা আঙ্কেলকে বলে তোমার চাকুরি খাবো এবং পুলিস ডেকে জেলে পাঠাবো। পরের কথা গুলো বলল মূল কথাটা বের করার কৌশল হিসাবে।
কামরানঃ স্যার জি আপনার সব প্রশ্নের সঠিক ও সত্য জবাব দিমু।
রাহিঃ পানিতে কি বিষ মিশাও (সরাসরি চার্জ করল)
কামরানঃ স্যার বিশ্বাস করেন এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি নিজেও অবাক্ হই যখন দেহী মাছ গুলা মইরা ভাইসা উঠে।
রাহিঃ তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি সব জান। মাছের খাবার তুমি দাও। তুমি মাছের খাবার কিনে আনো। কি সত্যি না?
কামরানঃ জি স্যার সত্য। কিন্ত আমি কোন বিষ টিষ আনি না স্যার। আমি এর কিছু জানি না।
রাহিঃ তোমার আপা তোমাকে টাকা দেয়, আর তুমি রাতের আঁধারে এই গুলো নিয়ে এসে পানিতে মিশিয়ে দাও। কি বলো, দাও না? কথা গুলো জোর দিয়ে বলল।
কামরানঃ স্যার আমরা গরীব মানুষ যার নুন খাই তার সাথে নিমক হারামী করতে পারি না। স্যার বিশ্বাস করুন। দুহাত জোর করে ধরে কথা গুলো বলল।
রাহিঃ (টেবিলের দিকে তাকিয়ে, পিস্তলটা দেখিয়ে) সত্য বলো, তানাহলে গুলি করে মাথার খিলু উড়িয়ে দেবো, পুলিস ডেকে থানায় পাঠাবো, তখন পাছায় লোহার বাড়ি পরলে ঠিকি সব বলবে।
কামরানঃ (টুল থেকে উঠে এসে, রাহির পা দুটো ধরে) স্যার আপনি আমাকে মেরে ফেলুন, পুলিস দেন, আপনার যা ইচ্ছা তাই করেন, কিন্ত বিশ্বাস করুন মাছ মরার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
রাহিঃ (হাত দিয়ে পা থেকে কামরান কে সরিয়ে) যাও টুলে গিয়ে বসো। তুমি তোমার দানা আপুর সাথে মিলে এটা করো।
কামরানঃ জি না স্যার। আপা কেন এটা করতে যাবে। নিজের ক্ষেতের ফসল কি কেউ নিজে নষ্ট করে? (কথা গুলো একটু জোর দিয়ে বলল। যেন মনিবের নামে বদনাম বলাতে তার লেগেছে)
রাহিঃ তাহলে সেদিন কেন রাত ১২টার সময় দানার সাথে কথা বলতে গেছিলা?
কামরানঃ বুঝবার পারছি এর জন্য আপনে আমারে সন্দেহ করতাছেন? আমি তো গেছিলাম আপারে মোবাইলের কার্ড দিতে।
রাহিঃ রাত বারোটার সময় মোবাইলের কার্ড! আমাকে কি তুমি বোকা পাইছো?
কামরানঃ জি না স্যার। আপা রাত ১০ টার সময় কইল তার মোবাইলে টাকা নাই, একটা কার্ডের ব্যবস্থা করতে, আমি গিয়া দোকানদারকে বাসা থেইকা ডাইকা, দোকানে নিয়া দোকান খুলাইয়া তারপর কার্ড নিয়া আইছি, তাই দেরি অইয়া গেছিল। বিশ্বাস করেন আমি মাছের চাষে বিষের কিছু জানি না, আর আপা? তওবা তওবা, ওনি কেন নিজেদের পুকুরে বিষ দিবেন? (কামরান উল্টা রাহির দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল।)
রাহিঃ রাহি উঠে এসে দরজা খুলে দিয়ে বলল ঠিক, তুমি যাও, কিন্ত এই বিষয়টা নিয়ে কারো সাথে শেয়ার করবে না, তোমার আপার সাথেও না। তাইলে কিন্ত তোমাকে পুলিসে দিব।

ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে কামরান রাহির ঘর ত্যাগ করল। রাহি হতাশ হয়ে নিজের রুমে এসে খাটের মধ্যে শুয়ে পড়ল। কি করবে বুঝতে পারছে না। একটা মামুলি ঘটনা, অথচ সাত দিন হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত উদ্ঘাটন করতে পাড়ল না। এই নিয়ে আত্বসমালোচনায় মুখর হলো। সে বুঝতে পারছে এই বাড়ির কেউ কাজটা সুকৌশলে করে, কিন্তু ধরতে পারছেনা। ভাবতে ভাবতে বিছানায় ঘুমিয়ে গেলো।

সেই রাতে রাহির ভালো ঘুম হলো না। কামরানকে তার মনে হয়ে ছিল আসল কালপিট, কিন্ত কথা বলে বুঝা গেলো ও কিছুই জানে না। যদি ছেলেটা জড়িত থাকত তাহলে এত ভয় দেখানোর পরও চুপ থাকত না। কামরানের চেহারায় যতটা বদের ছায়া আছে, মনে ততটা নাই বলেই মনে হলো রাহির। সেই দিন রাতে যেটা দেখেছে সেটা বয়সে দোষ, শারীরিক সাময়িক উত্তেজনা। এটা পুরুষের চিরন্তন লুক্কায়িত বাসনা। যত ভালো পুরুষই হোক নারী দেহ ভোগের সুযোগ পেলে না করতে পারেনা।

দানা মেয়েটা বুদ্ধিমতী, চঞ্চল, কিছুটা স্বার্থপরও হতে পারে। নারী মাত্রই স্বভাবগত ভাবে স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের জন্য এরা দশ বছরের প্রেমিককে ছেড়ে যে কোন প্রতিষ্ঠিত ছেলেকে বিয়ে করতে পারে হাসি মুখে অবলীলায়। তাই নিজের স্বার্থের জন্য দানা পুকুরে সামান্য বিষ মিশানোর ঘটনা রাহির কাছে তুচ্ছ মনে হয়। দানা সৌখিন এবং ছোট বেলা থেকেই বাবা-মার আদরে বড় হয়েছে, নিজে কোন কাজ কোনদিন করেনি। বাড়ীর একমাত্র মেয়ে হওয়ায় কোন জিনিস কারো সাথে কোন দিন শেয়ার করতে হয়নি। তাই এই বয়সে এসে তার হল জীবন সয্য হচ্ছে না। আর এই কারণেই বাবা-মাকে গ্রামের জীবনে বিরক্তি আনার জন্য প্রতিবছর মাছ ছাড়ার মাস খানেকের মধ্যে বাড়ি এসে কাউকে দিয়ে সুকৌশলে কাজটি করে। এইটা এখন পর্যন্ত রাহির ধারণা। ধারণা সত্য প্রমাণের জন্য প্রয়োজন প্রমাণ, তথ্য, উপাত্ত আর সাক্ষী। রাহি সারা রাত তাই নিয়ে ভাবল। শেষ রাতের দিকে একটু ঘুম আসল।

সকালের নাস্তা সেরে রাহি চিন্তিত মনে বারান্দায় বসে ছিল। নানান চিন্তায় মাথাটা একটু ধরেছে মনে হয়। চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিল। মেয়ে মানুষের পায়ের আওয়াজে চোখ মেলে পেছন দিকে তাকাল। দেখে দানা রুমে ঢুকছে। কিছু না বলে চুপচাপ চেয়ারে বসে রইল। দানা রুমে ঢুকে দেখে রাহি নেই, কিছুটা হতাশ বদনে বারান্দায় এলো, এসেই দেখে রাহি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, দানা কাছে আসার সাথে সাথে চম্কে দেয়ার জন্য রাহি বলল-“চেয়ারটা নিয়ে বসুন। আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।” দানা চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসে-“আমি আপনার পঞ্চইন্দ্রের কার্যক্রমে অবাক্। যতবার আপনাকে চম্কিয়ে দেয়ার চিন্তা করে আপনার এখানে এসেছি, ততবার আমি নিজে চম্কে গিয়েছি। এইবার বলুন আমার সাথে আপনার কি কথা আছে।” আজ দানা সুন্দর করে শাড়ী পরেছে। নীল শাড়ী। নীল রঙটা রাহির অনেক পছন্দ। দানার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ মেরে গেলো। নীল শাড়ী, নীল চুরি, নীল টিপ, ঠোঁটে হালকা নীল লিপ লাইনারের কারুকার্য। এমনি সুন্দর, আজ নীল শাড়ীতে আরো সুন্দর লাগছে। সেই ছোট বেলা গল্পে পড়া নীল পরী। রাহি নিজেকে স্বাভাবিক করে বসল। দানা রাহির প্রশ্নের অপেক্ষায়। তাদের কথোপকথনঃ
রাহিঃ আপনি ঢাকা যাচ্ছেন কবে?
দানাঃ এইতো কাল অথবা পরের দিন।
রাহিঃ গ্রামে বেড়ানো শেষ?
দানাঃ হুম। তাছাড়া …… (থেমে গেলো)
রাহিঃ থামলেন কেন? তাছাড়া কি?
দানাঃ আপনাকে তো আমি আগেই বলেছি, গ্রামের আমার ভালো লাগে না, এখানে ৫/৬ দিন বেড়ানোর জন্য ভালো, দীর্ঘমেয়াদী থাকার জন্য না। আর এমনি আমার অনেক গুলো ক্লাস মিস হয়ে গেছে, আর মিস করতে চাইনা।
রাহিঃ আপনিতো আরো আগেই চলে যেতে পারতেন?
দানাঃ (একটু রাগের স্বরে) আমি যেতে পারতাম না থাকতে পারতাম সেটা নিয়ে আপনার এতো ভাবনা কেন?
রাহিঃ (একটু নরম হয়ে) আমি এমনি বললাম। আপনি কিন্তরেগে যাচ্ছেন। জানেনতো একটা কথা আছে -“রেগে গেলেনতো হেরে গেলেন।?
দানাঃ (আবার রাগের স্বরে) আপনার সাথে আমার হারা-জেতার কি আছে?
রাহিঃ না না , আমার সাথে না। এটা কোয়ান্টাম মেথোডের কোর্সের সময় বলা হয়।
দানাঃ আপনি এই সব তাত্ত্বিক কথা বাদ দিয়ে কি অন্য কথা বলতে পারেন না?
রাহিঃ অন্য কি কথা?
দানাঃ ন্যাকা বুঝে না।
রাহিঃ আসলেই আমি বুঝিনি।
দানাঃ আনাড়ী। রোমান্টিক কথা বলতে পারেন না?
রাহিঃ আমার প্রোফেশনে রোমান্টিকতা কমত তাই খুব একটা রপ্ত করতে পারিনি। আপনি বলেন না?
দানাঃ হুম। এই চার দেয়ালের টিনের চালার নিচে কি রোমান্টিক কথা বলা যায়? চলুন আপনার গাড়িটা নিয়ে একটু বাজারের দিক থেকে ঘুরে আসি। আমাদের স্কুল, কলেজ গুলো দেখে আসি।
রাহিঃ (রাহি যেন প্রাণহীন দেহে প্রাণের সঞ্চার পেল। মনে মনে এই রকম একটা সুযোগ খুঁজছিল।) ঠিক আছে, আপনি রেডি হয়ে নিন, আমি রেডি হয়ে আসছি।

গাড়ি গ্রামের সেই উঁচু নিচু গর্তে ভরা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দানা ডান-বাম করে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একটা শান্ত ছায়া ঘেরা কাঁঠাল বাগানের পাশে গাড়ি থামাতে বলল। রাহি গাড়ি থামাল। গাড়ি থেকে দুজনে নেমে এলো। একটু দূরেই গ্রামের স্কুল আর কলেজ। একটা গাছের নিচে দানা বসে রাহির দিকে তাকিয়ে -“বসুন”। রাহি অগত্যা চুপ চাপ বাধ্য বালকের মত বসে পড়ল। তবে যতটা কাছে বসবে দানা ভেবেছিল ততটা কাছে রাহি বসেনি। রাহি একটু ফাঁকা রেখেই বসল। রাহি অপেক্ষায় ছিল দানা কিছু বলুক। কিন্ত দানা চুপচাপ বসে আছে। হয়তো দানাও ভাবছে রাহি কিছু বলুক। দুজনে ভাবনার ফাঁকে অনেক সময় নীরবে চলে গেলো। রাহি আর চুপ থাকতে পারল না। নিজেই শুরু করল কথা বলা।
রাহিঃ আচ্ছা দানা আপনাদের মাছের পুকুরের বিষ মিশানো নিয়ে আপনার কি মত? মানে আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়? কথা গুলো বলে দানার দিকে তাকাল
দানাঃ (বিরক্তি আর রাগ দুটোকে মিশ্রণ করে) আপনি কি বলেন তো? এই পরিবেশে এসেও চোর ধরার বিষয় নিয়ে ভাবছেন?
রাহিঃ দেখুন আমিতো এখানে মন চুরি করতে আসিনি, এসেছি চোর ধরতে। তাই মাথার মধ্যে সারাক্ষণ ওটাই ঘুরপাক খায়, সরি, আপনি কিছু বলুন।
দানাঃ আপনি কি কি বেশী পছন্দ করেন?
রাহিঃ যে কোন ধরনের ডিটেকটিভ মুভি, ডিটেকটিভ গল্পের বই, মিউজিক আর নিজের প্রোফেশন। আমাদের প্রোফেশন্টা অনেক মজার তো তাই এর বাইরে কিছু ভালো লাগে না।
দানাঃ আপনার গার্ল ফ্রেন্ড নেই, বিয়েও করেন নি, একা একা বোরিং লাগে না।
রাহিঃ মানে?
দানাঃ না বলছিলাম যখন খুব একা ফিল করেন তখন কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে মন চায় না।?
রাহিঃ হা-হা-হা
দানাঃ এমন করে হাসছেন কেন? আমি কি হাসির কথা বলেছি?
রাহিঃ দেখুন আমিও আপনার মত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, দুই/ একটা বন্ধু কি আমার নেই? বোরিং লাগলে ওদের সাথে কথা বলি।
দানাঃ ও।
রাহিঃ আচ্ছা আপনার আব্বু-আম্মুতো আর ঢাকা ফিরে যাচ্ছে না, তাহলে আপনি লেখা পড়া শেষ হলে কোথায় থাকবেন, কি করবেন ভেবেছেন?
দানাঃ ঢাকা যাবে না? ঢাকা আমি নিয়েই ছাড়বো। ওষুধ একটা কাজ না হলে আরো দশটা ব্যবহার করবো।
রাহিঃ মানে? আপনি কিসের ওষুধের কথা বলছেন? কথাটা নোট করে নিলো।
দানাঃ (দানা কিছুটা সাবধানী হয়ে) না , তেমন কিছু না। এই মানে কান্না কাটি করবো, খাওয়া বন্ধ করে দিব। লেখা পড়া বন্ধ করে গ্রামে এসে পরে থাকবো, এই গুলা আর কি। বলে রাহির দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিল।
রাহিঃ ও
দানাঃ আপনি না বেরসিক মানুষ, কই একটু ভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন, না, ঘুরে ফিরে সেই রামের গীত।
রাহিঃ আচ্ছা আপনার বাবা পর পর দুই বছর লক্ষাধিক টাকার লোকসান করল, এই নিয়ে কি আপনার মধ্যে কোন দুশ্চিন্তা নেই?
দানাঃ দুশ্চিন্তা করে লাভ?
রাহিঃ মেয়ে হিসাবে কি আপনার কাছ থেকে সেটা আসা স্বাভাবিক না? বরং না এলেই অস্বাভাবিক মনে হয় না?
দানাঃ (একটু উত্তেজিত হয়ে) আপনি কি বলতে চান? আপনি কি আমাকে দায়ী করছেন?
রাহিঃ না এখনো বলতে পারছিনা, কারণ হাতে কোন প্রমাণ নেই, আর আমরা প্রমাণ ছাড়া সন্দেহ করতে পারি, দোষী সাব্যস্ত করতে পারিনা।
দানাঃ ও তাই, আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী যোগানের জন্য কামরানকে আজ টর্চার করছেন?
রাহিঃ (অবাক্ হয়ে গেলো। কামরান কি তাহলে বলে দিয়েছে, তারপর মিথ্যা ভাব নিয়ে বলল) মোটেও না। আমি কেন টর্চার করবো।
দানাঃ মিথ্যা বলেন কেন? গোয়েন্দাগিরি করতে এসে কি মিথ্যা বলতে হয় নাকি?
রাহিঃ (নিজেকে সাম্লে নিয়ে) আপনি মনগড়া কথা বলছেন, আমি কাউকে টর্চার করিনি।
দানাঃ তাহলে শেফালী ভুল দেখেছে, কামরানকে নিজের ঘরে নিয়ে চার্জ করেছেন, এটা ও ভুল শুনেছে?
রাহিঃ (একটু থতমত খেয়ে গেলো, কি বলবে দ্রুত ভেবে নিয়ে বলল) ও এরি মধ্যে আমার পিছনে স্পাই লাগিয়ে দিয়েছেন?
দানাঃ জী না। টিকটিকির পিছনে টিকটিকি লাগানোর কোন ইচ্ছা আমার নাই, শেফালী দেখেছে, তাই আমাকে বলেছে।
রাহিঃ (সরাসরি) আপনিতো কামরানকে দিয়ে পুকুরে বিষ মিশান যাতে আপনার বাবা বিরক্ত হয়ে গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে আসে।
দানাঃ (রাগে উঠে দাঁড়াল) প্রমাণ ছাড়া কাউকে অপরাধী বলা যে অবিবেচক মনের প্রকাশ পায়, সেটা কি আপনার প্রোফেশন শিখায়নি?
রাহিঃ (রাহিও দাঁড়ায় গেলো) প্রমাণের অপেক্ষায় আছি, অপরাধী যেই হোক তাকে না ধরে এই মদনপুর ছাড়ছি না।
দানাঃ (কি বলবে বুঝতে পারছিল না।) চলুন, এখানে আর ভালো লাগছে না।
রাহিঃ (কথা কেড়ে নিয়ে) নাকি আমার সঙ্গ অসয্য লাগছে?
দুজনে আর কোন কথা বলল না। নীরবে গাড়িতে উঠে বসল। গাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। দানা চুপ করে বসে আছে। একটু আগে যে আকাশে রোদ ছিল এখন যেন সেই আকাশে ঘন কালো মেঘ। গোমড়া মুখে নিথর হয়ে বসে আছে। রাহি গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড় চোখে দানাকে দেখছে। রাহি নিজে থেকে বলে -“যে নিজেকে অনেক চালাক ভাবে সে আসলে অনেক বোকা।” দানা চুপ করে ছিল, এই কথা শুনে রাহির দিকে তাকিয়ে -“এটা কি আপনার বেলায়ও প্রযোজ্য নয়?। রাহি ড্রাইভ করতে করতে বলে -“সময়ই বলে দেবে।” তারপর দুজনে চুপ হয়ে গেলো। গাড়ি ছুটে চলল বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বাড়ির গেঁটে গাড়ি থামল। কামরান গেট খুলে দিল। সকাল থেকে রাহি সুশীলকে দেখছে না। গাড়ি পার্ক করে দুজনে নামল। গাড়ি থেকে নেমে দানা বলল-“আমি কি আপনার ফোন নম্বর পেতে পারি?” রাহি চকিত চাহনীতে দানাকে দেখে নিয়ে -“অবশ্যই পেতে পারেন।” বলে পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে একটা ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে দিল। দানা হাত বাড়িয়ে নিয়ে-“ আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি।” এই রকম একটা প্রস্তাব রাহি এই মুহুর্তে আশা করেনি। মানুষের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে যেটার উপর মানুষের হাত থাকেনা, বা পূর্ব অনুমান কিম্বা কল্পনায়ও ভাবেনা, সেটাই হয়ে যায় চোখের নিমিষে। রাহি হাত বাড়িয়ে-“হুম।” দানা হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশ্যাক করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। রাহি সোজা নিজের রুমে এসে নোটবুকটা নিয়ে বসল। সন্দেহের তাকিলায় শেফালীর নামটা যোগ করল। এবং বেশ কয়েকবার নামটা ওভার রাইটিং করল। আর নিজের আনমনেই বলল-“শেফালী’। (চলবে)


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যাক... অনেক বলে কয়ে বানানকে অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে আনা গেলো। লেখাটা পোস্ট করার আগে পড়লে দেখবেন আরো ভুল চোখে পড়ছে।

গল্পটা নিয়ে কিছু বলবো না এখন। শেষ করেন। শিরোনামের বানানটা কি এটাই ঠিক?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

নজরুল ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমি আসলে অভ্র আর ফোনেটিক এর ঝামেলায় আছি। দেখুন অভ্রতে আমি লিখলাম আঁকড়ে আর এখানে পোষ্ট করার পর দেখলাম হয়ে আছে "আঁক্ড়ে"।

এই দুইটার ঝামেলায় পরে কিছু বানান ঠিক রাখতে পারছি না।
আর শিরোনাম তো আমার কাছে ঠিকি মনে হচ্ছে। স্পেল চেকার তাইতো বলে। আর আমি যেটা বুঝাতে চাচ্ছি যা দূর থেকে ভেদ করা যায় না, কাছ থেকে ভেদ করতে হয়।
তারপরও আপনার কোন সাজেশন থাকলে প্লিজ বলবেন।
আশা করি আজ লেখাটা শেষ করতে পারবো। সময় স্বল্পতার কারণে অনেক সময় ঠিক মত পড়া হয়ে উঠে না।
ধন্যবাদ আপনার ধর্য্যের জন্য। কষ্ট করে পড়ার জন্য আবারও ধন্যবাদ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

স্পেল চেকার ব্যবহার করার পরেও অসংখ্য ভুল আছে। আপনি পোস্ট করার আগে নিজে একবার দেখুন, প্লীজ। এতে বেশি কাজ হবে আশা করি।

সত্যি বলতে, গোয়েন্দা হিসেবে রাহিকে অতিশয় নিম্নমানের মনে হচ্ছে। হুটহাট করে সবাইকে ডেকে 'তুমিই অপরাধী' ধরনের কথা বলাটা চরম বোকামি। বিশেষ করে কামরানকে ডেকে যেভাবে কথা বলছিল রাহি, তাতে করে ওর গোয়েন্দাগিরি সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে নাকি, সন্দেহ হয়। এরপর দানার সাথেও যেভাবে কথা বলল ও, এবং তারপর ওর প্রতি দানার আচরণ খুব খাপছাড়া লেগেছে। যাই হোক, আপনি নিশ্চয়ই সেভাবে চিন্তাভাবনা করেই লিখছেন। দেখা যাক আগামীতে কী হয়।

চলুক।

সমুদ্র এর ছবি

ঠিক কথা। অনেক ব্যাপারেই রাহির "রিজনিং" খাপছাড়া এবং দুর্বল মনে হইছে আমার কাছে। যেমন, বাইরের কেউ না বরং ভেতরের লোকদের মধ্যেই কেউ অপরাধী এইটা নিশ্চিত হবার পেছনের কারণ কি? হয়তো আমি মিস করে গেছি; জানাবেন।
বর্ণনাও অনেক সরলরৈখিক, লেখার যা কলেবর সে অনুযায়ী পাঠক ধরে রাখতে হলে আপনাকে অনেক মুন্সিয়ানা দেখাতে হবে- ভাষায় এবং কাহিনীতে।
চলুক।

"Life happens while we are busy planning it"

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের মতামত আমাকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। আমি এরপর লেখার সময় বিষয় গুলো খেয়াল করবো। আর বানানের ব্যাপারটায় আমি কনশাস কিন্তু অভ্র আর ফোনেটিকের ঝামেলা সাথে আমার বাংলা টাইপিং অজ্ঞতা অনেকটা দায়ী। আশা করি শেষ পর্বে সেটা চেষ্টা করবো ঠিক রাখার। আমি নবীন লেখক, লেখার চেষ্টা করছি, এই গল্পের ভুল থেকে অনেক শিখলাম, পরবর্তী লেখায় অনেক কাজে দিবে। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য। দোয়া করবেন যেন ভালো লেখা লিখতে পারি। আপনাদের আবারও ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।

লেখক/দলছুট।
---------------------------------------------------------------------------
বন্ধু হবো যদি হাত বাড়াও।

বেগুনী-মডু এর ছবি

সচলায়তনে লেখকদের কাছ থেকে অনন্য লেখা প্রত্যাশা করা হয়। অন্য কোন প্ল্যাটফর্মে পূর্বপ্রকাশিত লেখা সচলায়তনে জমা না দেওয়ার অনুরোধ রইলো।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

বেগুনী-মডু: এই লেখাটিও অন্য প্লাটফর্মে প্রকাশিত হয়েছিল?!?
দলছুট: পোস্টে আপনার নাম নাই, কমেন্টে পাইসি. অনলাইন বেজড বাংলা স্পেল চেকার আছে নাকি? থাকলে আমাকে জানাবেন প্লিজ, আমার লেখাতে ক্লাস টু-য়ের পোলাপানের থেকে বেশি ভুল বানান থাকে মন খারাপ ইয়ে, মানে... ওঁয়া ওঁয়া

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ আপডেট এর জন্য। আর কোন পুরাতন লেখা দিয়ে বিরক্ত করবো না। ধন্যবাদ।

তিথীডোর এর ছবি

ঠোঁটে হালকা নীল লিপ লাইনারের কারুকার্য।

হো হো হো
বড় হয়ে নীল লিপস্টিক আর লিপ লাইনার কেনা লিস্টিতে ঢুকলো। শখের তোলা লাখ টেকা।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।