অনাকাঙ্ক্ষিত।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০৪/০৫/২০১০ - ৩:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হাঁটতে গিয়ে কয়েকটা মানুষের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা খেল দোলন। সে বুঝে উঠতে পারছিল না ধাক্কা খাওয়ার পেছনে তার দোষটা কোথায়? সেতো দেখে-শুনেই হাঁটছিল। তবে কি মানুষ গুলো উড়নচন্ডী হয়ে হাঁটছিল?

মনের ভেতর উদ্ভব হওয়া প্রশ্নের জবাবের আশা না করে আবার হাঁটতে লাগল। পেটে প্রচন্ড ক্ষুদা। কিছু একটা খেতে হবে। অগত্যা রোডের পাশে খাবারের হোটেলে প্রবেশ করল। দুপুর বেলা, হোটেলের ভেতর মহা গ্যাঞ্জাম। টেবিল ফাঁকা পাওয়া যেন রাজ্য জয় করার মত ব্যাপার।

মিনিট দশেক অপেক্ষা করে হাত-মুখ ধোয়ার জন্য বেসিনের দিকে পা বাড়াল। বেসিনে একটা মধ্যবয়সী লোক আপন মনে মুখমন্ডলে পানি ছিটাচ্ছিল। দোলন যথেষ্ট পরিমান সাবধানতা অবলম্বন করে লোকটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। টেপ ছেড়ে দিয়ে হাত ধোয়া শুরু করা মাত্র পাশ থেকে এক ঝাপাটা পানি এসে শার্ট ভিজে গেলো, কিন্তু পাশের লোকটির মধ্যে কোন প্রকার অপরাধবোধ বা অনুশোচনা কাজ করলো না। দোলন কিছুটা বিরক্তি নিয়ে লোকটির দিকে তাকালো কিন্তু কিছুই বলতে পারল না। আবার নিজের কাজে মনোনিবেশ করলো। কিন্তু এবার লোকটা হাত ঝাড়া শুরু করলো এবং তাতে দোলনের পাতলা সাদা শার্ট পুরোটাই ভিজে গেল। লোকটির কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ডে মেজাজ খারাপ করে হোটেল থেকে বের হয়ে গেল।

বিক্ষিপ্ত মন আর বিরক্তিকর মেজাজ নিয়ে কিছুক্ষণ হেঁটে ঘর্মাক্ত শরীরে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রবেশ করল। বাহিরে ফকফকা আলোর পরিবর্তে এখানে মিটমিটে অন্ধকার। দোলন একটা টেবিলে গিয়ে বসল। বদ্ধ রুম, কোন প্রকার ভেন্টিলেশন নেই। তার অস্বস্থি লাগছিল, একটা ওয়েটারকে ডাক দিয়ে জানতে চাইল-"এসি কি ছাড়া আছে?" ছোকরা গোছের ওয়েটার ঠোঁটে মৃদু হাসি এনে বলল-"স্যার আমাদের এসিটি কয়দিন ধরে কাজ করছে না।" ছেলেটি নির্বিকার, চেহারায় কোন প্রকার অপরাধবোধের ছাপ নেই। এই বদ্ধ ও অন্ধকার অস্বস্থিকর পরিবেশ যেন তাদের কাছে কাঙ্ক্ষিত। এখানেও বেশিক্ষণ বসা হলো না, সুতরাং খাওয়াও হলো না। পেটে ক্ষুদা নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলো।

বাসায় যাবার জন্য গুলশান-১ এর টিকেটিং বাস গুলোর স্ট্যান্ডে এসে টিকিট কাটার জন্য নিজের কাঙ্ক্ষিত বাসের টিকেটিং টেবিল খুঁজে বের করে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর একটা মোটামুটি যাত্রী ভরা বাস এসে দাঁড়ালো। অপেক্ষমান যাত্রীরা লাইন ধরে বাসে উঠছে, কোথা থেকে যেন দুইজন যুবক এসে টিকিট কেটে লাইন ভেঙে বাসে উঠার চেষ্টা করলো। দোলন বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কোন কাজ হলো না। লোক দুটি লাইনের লোক গুলোকে ধাক্কা দিয়ে গায়ের জোরে বাসে উঠে মেয়েদের সীটে বসে পড়ল। বিশ্ববিদ্যালয় ফেরত ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকল, তাতে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। নির্লজ্জের মত হাসতে হাসতে কথা বলতে লাগল। প্রচন্ড ভীরে যেখানে পুরুষদের দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রীদের জন্য মোটেও সুখর হওয়ার কথা না। দোলন দেখল, কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস পেলো না।

বাসায় গলির মুখে এসেই দেখে রাস্তা খোড়া হচ্ছে, একপাশ দিয়ে কোন রকমে রিকশা যাওয়া আসা করছে। সেখানেও আবার ময়লা পানি জমে আছে। রিকশা করেই মানুষের যাওয়া আসায় ভোগান্তির শেষ নেই, তার মধ্যে প্রাইভেট গাড়ি ঢুকেছে। ড্রাইভার গাড়ির উইন্ডো দিয়ে মাথা বের করে রিকশাওয়ালাদের গালাগালি করছে। পেছনে ভদ্রগোছের একজন মহিলা বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। রিকশাওয়ালারা অতি কষ্টে গাড়ি যাওয়ার জায়গা করে দিয়ে অপেক্ষা করছে। ড্রাইভার গাড়ি জোরে টান দেয়, কিন্তু যাওয়ার পথে গর্তে জমে থাকা পানি আশেপাশের মানুষকে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। দোলন রিকশায় বসে ছিলো, এক ঝাপটা ময়লা পানি তাকেও ভিজিয়ে দিয়ে গেল। গাড়ি চলে গেল, দোলন অসহায়ের মত গাড়ির দিকে চেয়ে রইলো ।

-----------------
টমটম


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পড়েছি। উপসংহার বিহীন বলে অতটা ভালো লাগেনি। তবে আপনার লেখার ভঙ্গী ঝরঝরে। নতুন লেখার আশায় থাকলাম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

দময়ন্তী এর ছবি

আমিও পড়লাম৷ কিন্তু লেখাটার কি দাবী, ঠিক বুঝলাম না৷ আরেকটু বিস্তারিত বলতে পারতেন৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অতিথি লেখক এর ছবি

মডারেট ভাইয়েরা, লেখাটা সরিয়ে সংশোধিত লেখা -"বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং বিপন্ন জীবন" দিলে খুশি হবো এবং আশা করি সংশোধিত লেখাটা উপরের প্রশ্ন গুলোর সমাধান পাওয়া যাবে। প্লিজ দয়া করে পরিবর্তন করুন । ধন্যবাদ।
-------টমটম।

========বহুদূর যেতে হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।