যোজনগন্ধা : জলতরুদের বাঁশি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/০৫/২০১০ - ৯:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কুলদা রায়

autoবাঁশি কেনা হবে না। তবু মেলায় যাচ্ছি। ঈশ্বর বলছে, একটু দেখে শুনে কিনতে হবে। যেন সহজে বাজে।

মেলা তো নয়--লোক সমান লোক। কে একজন ঘোড়া কিনেছিল। হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে। হাহাকার করতে করতে আবার ছুটেছে। কিন্তু দোকানী আর খুঁজে পাচ্ছে না। চন্দন জরির ফিতে দেখতে দেখতে আঁতকে উঠেছে। পায়ের নিচে কারো শোলার ফুল দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে। শেফালি তক্ষুনি দুহাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেচে উঠল। তার চম্পকআঙুল থেকে--যোজনগন্ধা করতল থেকে টুপটাপ করে ঝরে পড়তে লাগল সদ্য ফোটা শেফালী ফুল। চন্দনের মুখে হাসি। এই ফুলগুলো ধরার জন্য হাত বাড়িয়েছে। কী এক পাগলা হাওয়া এসে উড়িয়ে নিল ফুলগুলোকে--দূরে--অনেক দূরে। চন্দন চেঁচিয়ে বলল, শেফালি, কোথায় তুমি? তোমাকে খুঁজে পাচ্ছি না কেন?

শেফালী হাসতে হাসতে বলছে, প্রকৃত ফুল কখনো ধরা যায় না। ছোঁয়া যায় না। কাঁদতে কাঁদতে শেফালী হাওয়ার মধ্যে মিশে যাচ্ছে।

ঈশ্বর তখন আমার হাত ধরে ছুটে চলেছে--ভীড় ঠেলে ঠেলে। বলছে, চল, চল। বাঁশি কিনি। ঈশ্বরের সঙ্গে ছুটে চলেছি মেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। ঈশ্বরের হাতের মধ্যে ঘেমে উঠেছে আমার হাত। বাঁশিওয়ালা নেই। তার সুর ছিল। যারা শুনেছে--তারাই পেয়েছে তার নতুন বাঁশিটি।

সেদিন একটু রাত্তিরে চাঁদ উঠেছে। ঈশ্বর আমাদের জন্য থাকে নি। একা একা ফিরে গেছে। মুখ লুকিয়ে। বলে গেছে, বাঁশি পেলে ডাক দিও।

সেদিন কোন বাঁশি কেনা হয় নি। শুধু আমাদের নতুন করে জল তেষ্টা এল। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। আকাশ ভেঙে ঝর ঝর করে বৃষ্টি নামল। চন্দন দুহাত তুলে দাঁড়াল হাওয়ার উপরে। চোখ দুটি ম্লান। মুখে গজিয়ে উঠেছে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। হাত থেকে ডাল পালা। সবুজ পাতা। হীরের ফুল। কোন এক অন্ধ পাখির মত গান গাইছে--

...বড়ো বেদনার মতো বেজেছ তুমি হে আমার প্রাণে,
মন যে কেমন করে মনে মনে তাহা মনই জানে।।
তোমারে হৃদয়ে ক'রে আছি নিশিদিন ধ'রে,
চেয়ে থাকি আঁখি ভ'রে মুখের পানে।।...

এই আমাদের জলতরু। জলের বাঁশি। পাথরের সুর।

....................................................................................
*চৈত্র সংক্রান্তি, ১৯৮৪। কেবি স্কুলের মাঠ। ময়মনসিংহ।

porimanob@gmail.com


মন্তব্য

সাদা-মডু এর ছবি

১.
সচলায়তনে নীড়পাতায় একজন লেখকের একাধিক পোস্ট প্রদর্শিত হয় না। আপনার এই পোস্টটি তাই আবারও অপ্রকাশিত করা হবে।

২.
আপনার অ্যাকাউন্ট সক্রিয়। সেটি ব্যবহার করুন।

কুলদা রায় [অতিথি] এর ছবি

'আপনার অ্যাকাউন্ট সক্রিয়। সেটি ব্যবহার করুন।'
এ কথার অর্থ বুঝি নি। একটু বুঝিয়ে বলুন।

সাদা-মডু এর ছবি

সচলায়তনে আপনি নিবন্ধন করেছেন, এবং আপনার নিবন্ধিত অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় করা হয়েছে। সেটিতে লগ ইন করে আপনি লিখতে পারবেন। লেখাগুলো তখন আপনার সেই অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত হবে। "অতিথি লেখক" অ্যাকাউন্ট আর ব্যবহার করতে হবে না।

অনিকেত এর ছবি

চমৎকার! চমৎকার !!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।