এই বেশ ভালো আছি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/০৬/২০১০ - ৬:৪১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোম্পানী হাতবদল হলো। গত বছরখানেক থেকে শুনে আসতেছি হাতবদল হবে। ক্রাইসিসের সময় সাধারনত বিক্রি হয়। আমাদেরটা হাতবদল হলো। ফ্রান্স সরকারের কোম্পানী সাধারনত বিক্রি হয়না। এগুলো হাতবদল হয়।
প্রায় ৪বছরের মতো বর্তমান কোম্পানীতে কামলা দেই। এখানেই শুরু কামলা জীবন। হাতবদলের ঘটনায় নিজের কামলা জীবনের ইতি হয়ে যায় নাকি সেটা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। কলিগদের অবস্হা দেখে মনে হলো এইসব ডাল-ভাত। জিঞ্জেস করলে বলে এক একজন প্রায় ৩০ বছর থেকে একই জায়গায় আছে। শুধু কোম্পানীর নামটাই বদলেছে। শুনে আমিও আশ্বস্ত হই।

মেইল খুললেই একগাদা মেইল দেখা যেতো। কে, কখন কিভাবে কোথায় বিডিং প্রসেস চলতেছে এইসব নিয়ে। সবার মতো আমরাও জানতাম যতো হোমরা-চোমরা বিডিং করতে আসুক, শেষ পর্যন্ত একটা ফ্রেন্স কোম্পানীর কাছেই যাবো। এবং তাই হলো।
বর্তমানে এতো টাকা হয়তো কোন ফ্রান্স কোম্পানীর নেই। তাই দুটো কোম্পানী এক হয়ে আমাদের কিনেছে। আমরা কার পাতে পড়ি এইটা দেখার বিষয় ছিলো। অধিকাংশ Alstom এর পক্ষে। Alstom মাত্র ৫ বছর আগে বর্তমান কোম্পানীর কাছে বিক্রি করেছে। এখন ও নিজেই আবার Schneider কে সাথে করে কিনতে এসেছে। ইউরোপের অনেক রকমের নিয়মকানুন শেষ করে উনারা আমাদের অভিভাবক হলেন। এখন আমাদের T&D কার সাথে যাবে সেইটা নিয়েই ঘাপলা। Schneider নিজেই কিছু ফিডার প্রটেকশন তৈরী করে। আমাদের তো আগে থেকেই Substation Aumation (protection & Control) নিয়ে কাজ। এতোদিন আমাদের কম্পিটিটর ছিলো Siemens, ABB । এখন নতুন করে Schneider এর পোডাক্ট নিয়ে কাজ করতে হবে হয়তো (!)। তবে সাধারনত এরকম হবে না। শুধু উপরের লগোটাই বদলাবে।

আমি ছোটখাটো কাজ করি। এইসব নিয়ে চিন্তা করে লাভ নাই। আমার কাজ থাকাটাই আপাতত জরুরী। আজ থেকে বিভিন্ন সেকশনে ওয়েলকাম মিটিং চলতেছে। সবাই শেম্পেনে চুমুক দিয়ে কতোক্ষন ব্লা ব্লা করে বিদায়। চান্সে অনেকদিন পর আমিও কোকা-কোলাতে চুমুক দেই (মটু হওয়ার ভয়ে অনেক আগেই সফট ড্রিংক্স খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। এমনকি ফ্রুইট ড্রিংক্সও না)।

আগের বসের সাথে মাঝে মাঝে লাঞ্চে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা চলে। ওর ডারলিংটা চলে গেছে। এইসব অভিযোগ শুনতে শুনতে মাথা খারাপ। মাঝে মাঝে একটু ঝাড়িও দেই। স্পীড লিমিট অতিক্রম করে ড্রাইভ করায় একমাসের জন্য ওর ড্রাইভিং লাইসেন্স গেছে। অনুরোধে মাঝে-মাঝে উনার গাড়ি নিয়ে বাজার সওদাই করে দিয়ে আসি।

অফিস বিল্ডিংয়ের পেছন খুব বড়ো একটি পার্ক। আছে গলফ খেলার জায়গা। লাঞ্চে আমাদের আড্ডা সাধারনত ওখানেই। প্রথমে দুজন ১৬ তলায় কাজ করতাম।পরে ১৭ তলায়। এখন আমি ১৮ তে আর ও ১৭ তেই রয়ে গেছে। এখন প্রজেক্ট ম্যানেজার। কি রকম দৌড়ের উপর থাকে সেই কষ্টের কথা বলে। আমরা যারা বসে কাজ করতেছি তারা কতো মজায় আছি সেই জন্য আফসোস করে। লিফটে উঠে বলে তুমি তো থাকো উপরের তলায়? ডেভোলপমেন্ট করো? আমরা তোমাদের পাছায় লাথ্থি দেই বিভিন্ন প্রবলেম বের করে। আমি বল্লাম জ্বি। আমরা উপর থেকে তোমাদের উপর মুতু করি।

ভাইদের সাথে ড্রাইভ করতে গেলে উনারা শুধু চাপের মধ্যে রাখে। আমি স্পীড লিমিটের চিহ্নটা যখন দেখি আনলিমিটেট, সাথে এক্সেলেটরে চাপটা দিয়ে ডাইরেক্ট ফিফথ গিয়ার। সাধারনত লং ড্রাইভে ভাড়া গাড়ি নিয়ে থাকি। নিজের গাড়ির কিলোমিটার বাড়ানোর কোন মানেই হয় না। ভাড়া গাড়ি যেমন ইচ্ছে ব্যবহার করো। নতুন মডেলের মার্সিটিজ, বি.এম.ডব্লিউ, অডি তো নিজের টাকায় চালানো যাবে না। সর্বোচ্চ ২২০ কিমি ড্রাইভ করা দেখে এক বন্ধু তো টাশকি। একবার তো ২৪ ঘন্টায় বিরামহীন ১৭ ঘন্টা ড্রাইভ করে রাতে স্টিয়ারিং হুইল ধরে গাড়ি আনলিমিটেট স্পিড দিয়ে ঘুম দিয়েছিলাম। পরে নিজেই ভয় পেয়ে গাড়ি থামিয়ে দুই ভাই মিলে ভালো করে কফি খেয়ে আবার ড্রাইভ শুরু। রাতে ড্রাইভের মজা আলাদা। দুই পাহাড়ের মধ্যখানে হালকা কুয়াশার মধ্যে আনলিমিটেড স্পীড.....

আজ প্লান করলাম উদ্যেশ্যহীন কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। সামার আসি আসি করেও আসতেছে না। এতো কষ্ট করে বর্শির লাইসেন্স করলাম। ঠান্ডার জন্য মাছ ধরতে যেতে পারি না। নদীর ধারে বসলে কয়েক মিনিটে ঠান্ডা লেগে যায়। দেশ থেক বন্ধু আসলে সুইস, ইতালি ট্যুরে যাবো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উনার আসা হবে না। এই বছর উনি ৫/৬ বার দেশের বাইরে যেতে হয়েছে। ভেবেছিলাম চান্সে একটু লঙ ড্রাইভ হয়ে যাবে।
ডে টাইম অনেক লম্বা হয়েছে ঠিকই কিন্তু রাতে ঘুমানোর পরিমান কমে গেছে। এশা নামায পড়ে বিছানায় যেতে রাত ১২টার উপর। এরমধ্যে ফজর কাযা ভোর ৫ টা। নামায পড়ে আবার বিছানায় গেলে অফিসে দেরী করে পৌছা। আর দেরী করে আসা মানে দেরী করে ঘরে ফেরা। অবশ্য ঘরে ফেরার কোন তাড়া নেই। তারপরও সূর্যের আলো থাকতে অফিসের বাইরে বের হতে চেষ্টা করি। কয়েকদিন পর তো রাতে অফিসে আসা আবার রাতে ফেরা। একনাগাড়ে অনেকদিন কম ঘুমানো ফলে অফিসে এসে ঝুমানো। ঘুম থেকে উঠে বিছানায় যাওয়া পর্যন্ত একই কাজ করতে করতে বোরিং। তাই উদ্যেশ্যহীনভাবে কোথায় কয়েক সপ্তাহের জন্য চলে যাওয়ার প্লান। কলিগ বল্লো উত্তর জার্মানীতে গাড়ি দিয়ে ট্যুর দিলে ভালো হবে। আমার প্লান অবশ্য গাড়ি, শীপে করে ফিনল্যান্ডে, নরওয়ে ঘুরতে যাওয়া। দেখা যাক, কি হয়।

সমস্যা আপাতত একটাই, আমার ছোটবোন। উনারও স্কুল ছুটি আগামী মাস থেকে। একটু পাম্প দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম কোন কিছুতে ভর্তি করিয়ে দিবো। দুই মাসে হাতের কাজ কিছু শিখবে। চান্সে আমরাও একটু শান্তিতে থাকবো (স্কুল ছুটি হলে যে বাচ্চারা কিরকম ডিসটার্ব করে তা ভুক্তভোগীই জানে)। কিন্তু ও রাজি না। এখন বাইরে যেতে চাইলে উনি পেছন পেছন আসবে। আমার সবকিছুতে পানি ঢালতে উনি উস্তাদ। এখন পর্যন্ত ৩টা ডিজিটাল ক্যামেরা খাইছেন।
কয়েকমাস আগে বন্ধুকে নিয়ে বার্লিন ঘুরতে যাবার সময় সবাই ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলতেছে। আমি ড্রাইভ করতেছি। হঠাত বল্লাম ক্যামেরা আমার কাছে দাও। আমিও তোমাদের কিছু ছবি তুলে দেই। ক্যামেরা হাতে নিয়ে আমি পুরো থ। ডিসপ্লেতে লিখা ম্যামোরি কার্ড নাই। দোস্ত তো জার্মান বুঝে না। উনি ফটো তুলেই যাইতেছিলেন। মেজাজ খারাপ করে উনাকে দিলাম ফোন। রাগে ঝাড়ি দেওয়া ভুলে গেলাম। মহা ডিসটার্ব।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার লেখা মজাই লাগল। একটু এলোমেলো - গন্তব্যহীন বক্তব্য। হাসি আরেকটু গুছিয়ে লেখলে নিশ্চয় আরো সুপাঠ্য হবে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।