জেনারেল স্টেনলি'র বিদায়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৬/২০১০ - ৭:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জেনারেলদের নির্বুদ্বিতা বিষয়ে ইংরেজ কবি মিলটন তার পেরাডাইস লস্টে একটি সুন্দর উপমা ব্যবহার করেছেন । ইশ্বরের সাথে যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জানা সত্বেও শয়তানের জেনারেল মোলোক (Moloch) শয়তানকে যুদ্ধে প্ররোচিত করে ।ছল-ছাতুরিতে তার পারঙ্গমতা নেই স্বীকার করেই সে বলে-
My sentence is for open war. Of wiles,
More unexpert, I boast not: them let those
Contrive who need, or when they need; not now.

এবার আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন জেনারেলকে বিদায় নিতে হল তার সিভিলিয়ান নেতৃত্ব সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য । প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে রোলিং স্টোন সাময়িকিতে লেখে তিনি জেনারেল হিসেবে তার সীমা তা অতিক্রম করেন । ফলে, স্টেনলিকে তার পদ হারাতে হয় খোলামেলা মন্তব্যের জন্য। বেসামরিক নেতৃত্ব তথা তার সুপ্রিম কমাণ্ডার সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে বৃদ্ধিমানের পরিচয় দেননি এই মার্কিন জেনারেল ।

পদে থাকা অবস্থায় কোন কিছু লেখা জেরারেলদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে । তবে, তৃতীয় বিশ্বে এ ধরণের ঘটনায় পার পেয়ে যাওয়ার নজীর আছে । বাংলাদেশে সাবেক সেনাপ্রধান মইন গত সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বই লেখে বেশ সাড়া ফেলে দেন । জেনারেল থাকা অবস্থায় তিনি বই লিখতে পারেন কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠলেও সেসময় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ।

অবশ্য, জেনারেলদের বই লেখার খায়েশ বেশ পুরেনা । প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার উপর প্রভাব থাকলে এই খায়েশ চরিতার্থ করা সহজ হয় । এ প্রসংগে পাকিস্তানের জেনারেল পারভেজ মোশাররফের কথা বলা যায় । ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি 'লাইন অফ ফায়ার' নামে একটি বই লেখেন যাকে এক পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ আখ্যায়িত করেন 'লাইন অফ লায়ার' বলে । সাবেক এই জেনারেল এখন বেশ চিপায় আছেন বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং উচ্চ আদালতের কারণে ।

চিপায় আছেন তার্কি জনারেলরাও । আব্দুল্লাহ গুলেরা এক সময়কর প্রতাপশালি তুর্কি জেনারেলদের বেশ ভাল দমিয়ে রেখেছেন । বেসামরিক রাজনৈতিকদের সাথ্রে মতানৈকের জের ধরে সরকারের পতনের নাটক বেশ কয়েকবার মঞ্চায়িত হয়েছে তুরস্কে । তবে, এবার জেনারেলরা বেশী সুবিধা করতে পারছেন না । ইউ'র সদস্য হওয়ার মুলো দেখিয়ে জেনারেলদের বেশ একহাত দেখিয়ে নিচ্ছে তুরষ্কের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব ।

জেনারেলদের লেখালেখিতে আবার ফিরে যাই । তবে রোলিং স্টোনে নিবন্ধ নয়, কবিতা লেখে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশী জেনারেল হোমো এরশাদ । কিন্তু, তার কবিতার সাখে মনে হয় ক্ষমতার একটা যোগসুত্র আছে । ক্ষমতায় থাকার সময় কবিতা যেমন নিয়মিত বের হত, এখন তা কদাচিত বের হয় । ডাল মে কুছ কালা হে !

ওলি
oli


মন্তব্য

সিরাত এর ছবি

ম্যাকক্রিস্টাল ব্লোব্যাক সম্পর্কে অবগত হয়েই রোলিং স্টোনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আমার ধারণা পরিস্থিতি তার জন্য 'আনটেনেবল' ছিল, সুতরাং এই হারাকিরি। ম্যাকক্রিস্টালকে নির্বোধ বলার আগে একবার তার লাইফ প্রোফাইলটি দেখুন। চাইলে ফ্রিডম্যান বা সালিভানও পড়তে পারেন; বা এখনকার আফগান সিচুয়েশন। এই কিছুদিন আগেও ম্যাকক্রিস্টালের নিজস্ব আফপাক সার্ভে নিয়ে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। ম্যাকক্রিস্টাল নিভৃতে থাকার মানুষ নন, এটি ওবামাও জানেন।

এরশাদের সাথে ম্যাকক্রিস্টালের তুলনা আসলে হয় না ভাই। এই লোক দিনে একবার খায়, রাতে চার ঘন্টা ঘুমায়, বেসে এ্যালকোহল নিষিদ্ধ। আপনি রোলিং স্টোনের আর্টিকেলটা পড়ে এই লেখা লিখলে ভাল করতেন। চোখ টিপি

সিরাত এর ছবি

বাই দ্য ওয়ে, রোলিং স্টোনের আর্টিকেলটি ম্যাকক্রিস্টালের না, মাইকেল হ্যাস্টিংস-এর। রোলিং স্টোনে মার্কিন আর্মি নিয়ে খোলামেলা আর্টিকেল আজকে থেকে লেখা হচ্ছে না, ভিয়েতনাম আমল থেকেই। এটি একটি এস্টাবলিশড মিডিয়াম। আপনি পারলে জেনারেশন কিল দেইখেন বা পইড়েন। হাসি

ওলি এর ছবি

আপনার মন্তব্যটি পড়ে বেশ লাগলো । তবে স্টেনলি র প্রতি আপনার পক্ষপাতিত্ব মন্তব্যে বেশ পরিষ্কার ।
সিভিলিয়ান নেতৃত্বে র প্রতি দৃ'জনে র অনাস্থার জায়গায় দুজনই সমান । অবশ্য এরশাদ অনেক দুর গিয়েছেন বাড়াবাড়ি করে । স্টেনলি র সে সুযোগ নেই । আপনার ভাষায় ঝকমকে ক্যারি য়ার তার কাজে আসেনি । ওবামা তাকে সোজা রাস্তা দেখিয়েছে ।
আপনি আমেরিকান জেনারেলে ভক্তি দেখালে ও মিলটন কিন্তু স্বদেশী জেনারেলদের ব্যঙ্গ করেছেন তীর্যকভাবে ।
জেনারেলরা সোজা কথায় বেসামরিক কতৃত্ব মানতে বাধ্য । এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা তাদের এখতিয়ার বর্হিভূত ।
There is not to reason why..
সরকারী সিদ্বান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন তোলতে পারে কংগ্রেস কিংবা সিনেট কারণ তারা এই ম্যাণ্ডেট নিয়ে এসেছে ।
ধন্যবাদ ।

সিরাত এর ছবি

আমার উদ্দেশ্য ম্যাকক্রিস্টালের প্রতি সমর্থন যোগানো না আসলে, যদি তা মনে হয়ে থাকে দুঃখিত। এটাও মানি, যে একটা চেইন অফ কমান্ড এবং রোলস এ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিস এর ব্যাপার আছে। ম্যাকক্রিস্টাল ওভারজিলাস বলেই হয়তো আজকে তার এই অবস্থা।

যাহোক, লেখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনাকে রোলিং স্টোনের আর্টিকেলটি মেইল করে দিচ্ছি, পড়ে দেখতে পারেন।

পাঠক [অতিথি] এর ছবি

তবে স্টেনলি র প্রতি আপনার পক্ষপাতিত্ব মন্তব্যে বেশ পরিষ্কার ।

কেউ অপিনিওনেটেড লেখা লিখলে তার সাইকোলজি/পক্ষপাতিত্ব নিয়ে বিশ্লেষন না করে যুক্তি দিয়ে কথা বলাই ভালো।

উইকিপিডিয়া পড়ে বুঝলাম "ইচ্ছাকৃত" সে এটা করেছে কারন McChrystal's staff was contacted prior to release of the article and did not deny the validity of the article. Rolling Stone editor Eric Bates also spoke out about the article, affirming that all of McChrystal's quotes were on-the-record and adding that McChrystal didn't dispute a single quote in the article.

যদিও লেখক হ্যাস্টিংস বলেছেন "It was a sort of natural kind of recklessness that General McChrystal had, which has been with him through his entire career, as I understand it. And inviting me in, was a obviously a risk, as it always is when you invite a journalist in."

যদিও পরবর্তিতে সে 'দু:খ প্রকাশ' করে এস্টেটমেন্ট দিয়েছে, সেটাকে আমার 'পি আর' মনে হয়েছে আপনার সেটা সিনসিয়ার এপোলোজি মনে হতেই পারে। ম্যাকক্রিস্টালের এরকম আউটব্রাস্ট-এর রিপার্কাশন আগে থেকেই তার জানা ছিলো বলে মনে হচ্ছে। শেষে হাফপোষ্টের একটা কমেন্ট দিয়ে যাই

"This is actually a classic case of a man wanting out of a commitment but being too honorable to do it forthrightly. It may not have been consciously done but "self-sabotage" is written in big bold neon letters all over McCrystal's "interview"."

সিরাত এর ছবি

এক্স্যাক্টলি! হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।