উল্টো রথে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ৩০/০৬/২০১০ - ৮:৩৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কফিরুমে সবসময় কিছু না কিছু থাকে। হয়তো কারো বাগানের চেরী (আমার প্রিয় ফল, তবে সময়ের অভাবে খাওয়া হয় না), কারো বাগানের স্ট্রবেরী (ভালো লাগে না)। যার কিছুই নিয়ে আসার উপায় নেই উনি সাধারনত কেক নিয়েই আসে। অন্য ডিপার্টমেন্টের তুলনায় আমাদের কপাল এইদিক দিয়ে মোটামুটি ফাটা বলা যায় (মেয়ে কলিগ একটাও নাই। তাই সবাই সুপারমার্কেট থেকে নিয়ে আসে)। কেকের প্রতি আমার দূর্বলতা নেই। জিনিসটা খুব একটা আমাকে টানে না। মা, ভাবী সবাই যে কোন অযুহাতে নানান কিসিমের কেক বানায়। না খেলে খারাপ দেখায় ভেবে কষ্টে একটু গলহধরকন করি। মাঝে মাঝে মা তো ক্ষ্যাপে গিলে সবগুলো বিনে ফেলে দেয়। আমরাও দেখে না দেখার ভান করি।

তাপমাত্রায় একটু গরমের ভাব এসেছে। ঘরে বসে টের পাওয়া যায় না। বাইরে গেলে একটু ঘাম হয়। তবে বাতাস মোটামুটি থাকায় ২৯/৩০ ডিগ্রীতেও কিছুক্ষন পর ঠান্ডা লাগে। নতুনত্ব নিয়ে আসতে অনেকগুলো আইসক্রিম নিয়ে এসে ফ্রিজে রেখে সবাইকে খেতে বল্লাম। হিসেবের থেকে বেশী নিয়ে এসেছিলাম। সবার খাবার পর থেকে যাবে যা পরবর্তিতে আমিই খাবো এই ভেবে। এই গরমে আইসক্রিম না খেলে ওদের মতো শীতকালে খাওয়া সম্ভব নয়। একদিন পর ফ্রিজ খুলে দেখি আসক্রিম তো দুরের কথা, কোন খোশাও অবশিষ্ট নেই। মনের দু.খে আরো অনেকগুলো নিয়ে এসে স্টক করে রাখলাম। রোজ এখন তিন/চারটা করে আইসক্রিম খাবো।

বাসায় মা/বাবার অবসর সময় কাটানোর জন্য স্যাটালাইট চ্যানেল নিয়ে আসা হয়েছিলো। বাংলা নাটক, খবর, লন্ডন থেকে সম্প্রচারিত বিভিন্ন চ্যানেলও দেখা যেতো। বছরখানেক বেশ ভালোই গেলো। যদিও আমার রুমের টিভি তে ঐটার কানেকশন নেইনি। আমার কার্টুন চ্যানেলই ভালো। গত কয়েকমাস থেকে ড্রয়িংরুম দিয়ে আসতে যেতে হিন্দি চ্যানেল উপস্হিতি লক্ষ্য করতেছিলাম। মা'কে জিঞ্জেস করলে বলেন এই তো একটু দেখতেছি। কয়েকদিন পর লক্ষ্য করলাম মা বাবা যখন হিন্দি চ্যানেলে ঢুকেন তখন ছোটবোনও দেখতে বসে। প্রতি লাইনে উনাকে বুঝাতে হয় কি ঘটনা ঘটতেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই উনারা আর কি দেখবে। মনে মনে ভাবলাম এইরকম ডিসটার্বের কারনে যদি এইসব বস্তাপচা চ্যানেলগুলো দেখা বাদ যায়।

নিয়মের বাইরে কিছু করবো করবো করেও কিছু করা হচ্ছে না। একটা ফার্ম হাউজ লিজ নেওয়ার ইচ্ছে আছে। সামারে ফুল/ফল/সবজি করবো। কিন্তু কাজের শেষে একাএকা মেইনটেইন করা মুশকিল। ভাইদের এইসব ব্যাপারে মাথাব্যাথা নেই। পুরনো গাড়িটা বিক্রি করে বেশ ঝামেলা হলো। প্রতিদিন অফিসে আসতে যেতে ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল আর ডিজেলের দাম দেখে হতাশ হই। ২০০-২৫০ ডলার ব্যারেলে যে দাম ছিলো এখনো ৭০-৮০ ডলারে প্রায় একই অবস্হা। মার্সিটিজ, বি-এম-ডব্লিউ, অডি পানির মতো তেল খায়। ঐগুলো কেনা বাদ। পেট্রোলের তুলনায় ডিজেলের দাম যদিও একটু কম। ৩-৪ বছরের পুরনো ডিজেলের গাড়িতে হলুদ স্টিকার, টেক্স বেশী, কয়েকবছরের মধ্যে ফিল্টার বদলাও না হয় ফেলে দাও। ভাইকে বল্লে বলে নতুন একটা নিয়ে নাও। বলি টাকা দিবো কে? উনি বলে, তোর মতো জব থাকলে আমি কবেই নিতাম। আমি বলি, তুমি কম কিসে? এখনো যা কামাও তাইতো যথেষ্ট। আর ভাবী তো ডাক্তারী শেষ করেছে। কয়েকবছরের মধ্যে প্রাইভেট জেট নিয়ে ঘুরবে। উনি বলে, স্বপ্ন দেখ ভালো। তবে ডাক্তার মেয়ে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিস না। বলি, কেন? তোমরা তো দিব্যি সুখে-শান্তিতেই আছো। উনি দীর্ঘশ্বাস দিয়ে বলে, ৮/১০ ঘন্টা অফিস করে এসে নিজের খাবারটা এখনো নিজেকেই বানাতে হয়। বাজার সওদাই তো আছে। উল্টো তোর ভাবিকেও বানিয়ে দিতে হয়। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই পড়াশোনার। এখন নাকি আরো বড়ো ডাক্তার হওয়ার ধান্ধায় আছে। ভাইয়ার চেহারায় পুরো বিরক্তির ছাপ। নিজের চিন্তা রেখে উল্টো সান্তনা দিতে হয়।
অন্যদিকে ছোটভাই সবার আগে বিয়ে করে ২টা পিচ্চি নিয়ে ঘুরতেছে।
পড়াশোনা করে কি হলো? এখনো দৌড়ের উপর থাকতে হয়। ভাইয়া বলে, চল ব্যবসা করি। আমি বলি, এতো ক্যাশ কোথায় পাবে? ব্যাংকে আমি যেতে পারবো না। সুদ দেওয়া নেওয়াতে আমি নাই। এইসব দৌড়াদৌড়ি আমাকে দিয়ে হবে না। আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। পকেটে থাকলো খাবো, না থাকলে বাকিতে আমার দ্বারা হবে না। উনি বলে, তাহলে টাকা জমা। আমি বলি ঐগুলোর জাকাত তুমি দিলে আমি জমাবো। আর এতো জমাতে গেলে এমনিতেই বুড়ো হয়ে যাবো। তাই যেরকম আছো তাতেই সুখ খুজে নাও।

গ্রীষ্মের স্কুল ছুটির ফলে বাসে-ট্রামে-ট্রেনে একটু ফাকা জায়গা পাওয়া যায়। ট্রামগুলোও সময়মতো আসে যায়। ট্রাম স্টেশনে সাইকেলটা কোনমতে পার্ক করে দৌড়ে ট্রাম ধরলাম। মনেমনে ভাবতেছি আগেরটা ধরলে ভালো হতো। ট্রেনটা পাওয়া প্রায় নিশ্চিত ছিলো। ট্রাম থেকে নেমে দৌড়ে গিয়ে দেখলাম ট্রেনের দরজাটা মাত্র বন্ধ হয়েছে। মানে, আরো ১৫ মিনিটের অপেক্ষা। ট্রেন থেকে নেমে বাসটা সময়মতো পেয়ে গেলাম। অফিসে এসে আবারো দৌড়ের উপর। বিকেলে কিছুটা ফ্রি হয়ে নিজের চিন্তাভাবনাকে হালকা করতে টয়লেটে। ঐটাই শান্তির জায়গা। ভবিষ্যত পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বর্তমানের পোগ্রামিংয়ের জট ছোটানোর জন্য এর থেকে উপযুক্ত জায়গা আর নেই। মিনিমান ৩০ মিনিটের যাত্রা। সর্বোচ্ছ আনলিমিটেড। গবেষনাগারে নিচে থাকিয়ে দেখি আন্ডারওয়্যার উল্টো করে পরা হয়েছে।

সব চিন্তা ছাপিয়ে এইটাই আপাতত মাথায় ঢুকে গেছে। জীবনে কি হতে চাইলাম, কি হলাম, কি হলে কি হতো…সবকিছুই মনেহয় উল্টো হচ্ছে।

ফ্রুলিক্স


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

জীবনে কি হতে চাইলাম, কি হলাম, কি হলে কি হতো

______________________________________
বর্ণ অনুচ্ছেদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।