আলোর রেখা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৮/০৮/২০১০ - ৭:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[এটি একটি অ-নির্মিত ডকু-ড্রামা। বছর চারেক আগে উপরোধে ঢেঁকি গিলে লিখতে হয়েছিল। কিন্তু যা হয়, নানা জটিলতায় পরে আর আলোর মুখ দেখেনি আমার আলোর রেখা! এখন ভাবলাম সচলায়তনে প্রকাশ করি। ক্যান্সার সচেতনতা নিয়ে কাজ করা কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি চাইলে এটা নির্মাণ করতে পারেন।]

জহিরুল ইসলাম নাদিম

পাত্র-পাত্রী

জামাল: গ্রামের সুদর্শন যুবক, মাতববর আফতাব উদ্দিনের ছেলে
রাহেলা: জামালের প্রেমিকা, ক্যান্সার রোগী কফিল মিঞার মেয়ে
আফতাব উদ্দিন: জামালের পিতা
মোসলেম: ঘটক
কফিল মিঞা: রাহেলার অসুস্থ পিতা
আবু বকর: গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক
ডা: জসিম: উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক
আফাজ মিঞা: ডা: জসিমের রোগী
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার: ক্যান্সার হাসপাতালের রেডিওথেরাপিস্ট
আছিয়া: জামালের মা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর রোগী, অ্যাটেন্ডেন্ট, মহাখালী বাস স্ট্যান্ডের
রিকশা চালক, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের
নার্স, অ্যাটেন্ডেন্ট, দারোয়ান এবং রোগী ।

দৃশ্য -১

স্থান: গ্রামের নির্জন পুকুড় পাড়।
সময়: বিকেল।
পাত্র-পাত্রী: জামাল ও রাহেলা।

ক্যামেরা প্রথমে পুকুড়ে ফোকাস করবে।
একটু পর পর ছোট ছোট ঢিল এসে পুকুরে
হালকা আলোড়ন তুলবে। একটি নারী কণ্ঠ
ও একটি পুরুষ কন্ঠের সংলাপ শোনা যাবে।

রাহেলা: (কান্না জড়িত কন্ঠে) চুপ কইরা আছো যে জামাল ভাই--
জামাল: কি কমু তাই ভাবতাছি।
রাহেলা: আমি কই কিুতুমি আমারে ভুইলা যাও। এইটা
তোমার আমার সকলের লাইগা ভাল অইব--।
জামাল: এমন কথা আর কোনো দিন বলবা না। যাই
ঘটুক তোমারে আমার চাই।
রাহেলা: সেইটা যে হইব না এইটা তুমিও জানো আমিও
(ক্যামেরা এবার জামাল ও রাহেলাকে ধরবে) জানি, কেন মিছামিছি লোভ দেখাও!
জামাল: না কেন হইব না ? তোমার বাবার কি না কি
অসুখ তার জন্য আমাগো জীবন নষ্ট হইব!
রাহেলা: সবই ভাইগ্যের লেখা। না হইলে বাবার এই রকম
অসুখ কেন হইব?
জামাল: আচ্ছা, চাচাজানের অসুখটা কি?
রাহেলা: কি অসুখ এইটাতো আমরাও জানি না। খালি জ্বর
আসে বাবার। খুক খুক কাশে। মাঝে মইদ্যে রক্ত বমিও করে।
জামাল: শুনছি যক্ষ্মাতেও এমন হয়?
রাহেলা: না যক্ষ্মা না।
জামাল: তাইলে কি?
রাহেলা: লোকজন তো কয় বাবার ওপর আল্লার গজব পরছে--!
জামাল: ছি রাহেলা এইসব কথা কয় না--।
রাহেলা: (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) আমি না কইলে কি হইব--মানুষ তো কয়। জানো লোক জন আমাগো লগে কথা কয় না-----।

(ফেড আউট)

দৃশ্য ২
স্থান: গ্রামের মাতববর আফতাবউদ্দিন মেম্বারের বৈঠক খানা। তিনি জামালের পিতা।
সময়: সকাল।

পাত্র-পাত্রী: আফতাবউদ্দিন ও ঘটক মোসলেম।

আফতাবউদ্দিন: (পানের খিলি এগিয়ে দিতে দিতে) কি মোসলেম! এত সাত সকালে ? আমার পোলার জন্য কোনো লক্ষী মেয়ে দেইখা আইলা নাকি?
মোসলেম: আপনার পোলা লায়েক আইছে। বাবাজীর জন্য কি আর আমাগো মাইয়া দেখন লাগব! ও নিজেই ওর্মাইয়া ঠিক কইরা রাখছে দেইখেন....
আ: (বিরক্ত হয়ে) কি বলতাছ মোসলেম মিয়া!
মো: আমি কি আর কমু। আপনার ছেলে তো নিজেই ওর মাইয়া দেইখা রাখছে। গেরামের বেবাকেই এইটা জানে-

আঃ কার কথা কইতাছ ঘটক?
মোঃ আরে গত কাল বিকালেও দেখলাম। অসুইখ্যা কফিল মিয়ার দামড়া মেয়েটার লগে ঘাটলায় বইসা পিরিতের কথা কইতাছে .. ..।

আঃ (ক্রুদ্ধ হয়ে) কি কও এসব ঘটক ? কফিল মিয়ার তো শুনছি বান লাগছে। মুখ দিয়া খালি রক্ত আসে। তার মেয়ের লগে ভাব করতাছে আমার পোলা
মোঃ আপনি গেরামের মাথা। দশ জনের বিচার করেন। আপনার বাপার নিয়া আমরা কথা কওনের ক্যাঠা!
আঃ না মোসলেম- এই অনাচার আমি সহ্য করুম না। আমি আইজই জামালের লগে একটা ফয়সালা করুম। আর তুমি জলদি একটা মেয়ে খুঁইজা বাইর কর। যত তাড়াতাড়ি পারি জামালের বিয়া দিমু আমি।
মোঃ মাশাল্লাহ ! এইটা কইছেন কথার কথা। বয়স কালে পোলাপান একটু রং ঢ়ং করেই। বিয়াটা দিয়া দেন- দেখবেন সব ঠিক। যে রোগের যে অষুধ আর কি !

(ফেড আউট)

দৃশ্য - ৩
সহানঃ গ্রামের জঙ্গল
সময়ঃ গভীর রাত

পাত্র-পাত্রীঃ রাহেলার অসুসহ পিতা কফিল মিয়া ও গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু বকর স্যার।

মোটা পাকানো দড়ি নিয়ে কফিল
গভীর রাতে আত্মহত্যা করতে
চলেছে। তার পরনে ময়লা গেঞ্জী,
মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। একটা
গাছের মোটা ডালে দড়ি বেঁধে পরীক্ষা
করে নেয় কফিল মিয়া।

কফিলঃ (স্বাগতোক্তি) ইয়াল্লা ! আমার বউ আর মেয়েটারে তোমার হাতে তুইল্যা দিয়া গেলাম। তুমি তাগো দেইখ্যা রাইখো। আমি জানি আত্মহত্যা মহাপাপ। তবু নাচর হইয়া এই পাপ করতাছি মাবুদ। তুমি আমারে মাফ দিও। না জানি কুন পাপ করছিলাম যে এমন অসুখ আমার অইল। কাশি কমে না, মুখ দিয়া রক্ত পড়ে। স্বাসহ্যকর্মী কইল এইটা যক্ষ্মাও না। তাইলে এইটা আমার কি অইল? তুমি গজবই দিলা আমার উপর । গ্রামের সবাই আমাগো একঘরে করছে। আমার অসুখের কারনে আমার সোমত্থ মেয়েটার বিয়া ভাইঙ্গা যাইতেছে ,আমি কাজ কামও করতে পারি না। এ জীবন রাইখ্যা তামার কাম কি .. .. । লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ.. .. .. ।

কলেমা পড়ে নিয়ে গলায় দড়ি
বেঁধে ঝুলতে যাবে অমনি দুর
থেকে দৌড়ে এসে আবু বকর
স্যার কফিল মিয়াকে জাপটে
ধরেন।

আবু বকর স্যার: আরে আরে কি অলক্ষুনে কারবার! তুমি গলায় দড়ি
দিতাছ কেন?
কফিল: আমারে মরতে দেন মাস্টর। এ জীবন আমি রাখুম না।আমার ওপর আল্লার অভিশাপ লাগছে।
আবু বকর স্যার: এক চড় দিয়া দাঁত তুলে নেব মিয়া। তোমার ওপর
আল্লা নারাজ হইছে এইটা তুমি জানলা কেমনে?
কফিল: দেখেন না আমার কি রোগ হইছে। গেরামের বেবাকেই তো
আমারে একঘরে করছে....।
আবু বকর স্যার: আমি দুই মাস গেরামে ছিলাম না এর মধ্যেই এত কিছু ঘইটা গেল? তা কি হইছে তোমার ? ডাক্তার দেখাইছিলা?
কফিল: নাহ! ডাক্তার দেখানের টাকা কই? তাছাড়া এইসব ডাক্তার
ফাক্তারের কাম না। বান লাগছে।
আবু বকর স্যার: চুপ কর আহাম্মক! ডাক্তার দেখাইলেই পয়সা লাগে
না। সরকার গরিবের জন্য বড় বড় হাসপাতাল বানাইছে কেন? খবরদার আর যদি মরার কথা ভাবছ। ভাগ্যিস এই পথে স্টেশন থাইকা তাড়াতাড়ি হইব মনে কইরা যাইতেছিলাম। নাইলে এতক্ষণে তো নরকে চইলা যাইতা। কাউরে কইবা না যে তুমি গলায় দড়ি দিতে গেছিলা। মানুষ জন জানলে ছি ছি করব। কাল সকালে রেডি থাইকো। তোমারে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে লইয়া যামু। ওখানকার ডাক্তার সাহেব খুব ভাল মানুষ। আমার খুব পরিচিত। দেইখ সব ঠিক হইয়া যাইব।

কফিল মিয়া আশা-নিরাশার দোলাচলে
দুলতে থাকে। শূণ্য দুষ্টিতে তাকিয়ে থাকে
আত্মবিশ্বাসী আবু বকর স্যারের দিকে।
(ফেড আউট)

দৃশ্য -৪
স্থান: আফতাবউদ্দিন মেম্বারের ভিতর বাড়ি।
সময়: সকাল।
পাত্র-পাত্রী: আফতাবউদ্দিন ও তার ছেলে জামাল।

আফতাব সাহেব খানদানি চেয়ারে বসে
আয়েস করে হুকো টানছেন। তার সামনে
দিয়ে জামাল বেরিয়ে যাচ্ছে ।

আফতাব: দাড়াও। এত তাড়া নিয়া যাও কই?
জামাল: কোন হানে না বাজান-এই একটু বাজারে যামু।
আফতাব: শুনলাম আজকাল যার তার লগে ঘুরাঘুরি করতাছ?
জামাল: কার লগে আবার ঘুরলাম?
আফতাব: কথা ঘুরাইও না। আমি গেরামের মাতববর। সবারে চড়াইয়া
খাই আমি--এ্ইটা ভুইলা যাইও না। শোনো--সোজসুজি কই। ঐ
অভিশাইপ্যা কফিল মিঞার মাইয়ার লগে আজকের পর আর জানি না
দেহা যায় তোমারে।
জামাল: বাজান!
আফতাব: হ।
জামাল: কিন্তু..
আফতাব: কিন্তু কি?
জামাল: কিন্তু বাজান আমি যে রাহেলারে কথা দিছি---।
আফতাব: কি কথা?
জামাল: (কাঁচুমাচু করে) ওরে--ওরে বিয়া করনের কথা--।
আফতাব: খামোশ! বেয়াদপ ছেলে! তমিজ শিখে নাই। নিজের বাপের
সামনে পিরিতির কথা কয় ? শোনো বাপ! ঐ অসুইখ্যা বাপের মাইয়ারে
আমি পোলার বউ করতে পারুম না কোনমতেই--।
জামাল: কিন্তু রাহেলা তো কোনো দোষ করে নাই। ও লেখাপড়া পারে,
দেখতেও সুন্দর, স্বভাব চরিত্রও ভালা..
আফতাব: ওর পরধান দোষ ও অসুইখ্যা বাপের মাইয়া। ওদের উপর
আল্লার গজব পরছে। ও মাইয়া যে ঘরে যাইব সেই ঘরের উপরেও
গজব আইব--।
জামাল: তোমার এই কথাটা ঠিক না বাজান। বাপের অসুখের কারণে
মেয়ের বিচার হইতে পারে না। আল্লা না করুক তোমার যদি ঐ রকম
অসুখ হয় তাইলে লোকজন কি আমারেও একঘরে করব?
আফতাব: নাউজুবিললাহ! আমার ঐ রোগ হইতে যাইব কেন্?
জামাল: রোগ-বালাই তো কারো নিজ ইচ্ছায় অয় না। তবু কইতাছি
তুমি আরেক বার ভাব। আবু বকর স্যর কফিল চাচারে ডাক্তারের কাছে
নিয়া গেছে শুনছি। যদি চিকিৎসায় চাচার অসুখ পুরা ভালা অয় তহন
তুমি আমাগো বিয়ায় বাধা দিবা না তো?
আফতাব: ডাক্তারের কাছে নিছে ভালা কথা। আগে তো রোগ সারুক,
তখন দেখা যাইব। কিন্তু তোমারেও কইয়া রাখি যদ্দিন না রোগ ভালা
অইছে তদ্দিন ঐ বাড়ির ত্রি সীমানায়ও যাইবা না তুমি..। ঠিক আছে?

জামাল মাথা ওপর নিচ করে সম্মতি
জানায়।
(ফেড আউট)

দৃশ্য -৫
স্থান: উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেলক্সে মেডিকেল অফিসারের চেম্বার।
সময়: সকাল।

পাত্র-পাত্রী: কফিল মিঞা, আবু বকর স্যর, ডা: জসিম, অ্যাটেন্ডেন্ট ও একজন রোগী।

ডা: জসিম চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন। তার
পরনে সাদা অ্যাপ্রন। গলায় স্টেথোস্কোপ। বুক
পকেটের ওপর লাগানো নামের ব্যাজে লেখা
ডা: জসিমউদ্দিন।
জসিম: (পেটে চাপ দিয়ে) এখানে ব্যাথা করে?
রোগী: হ স্যার!
জসিম: (অন্যস্থানে চাপ দিয়ে) এখানে?
রোগী: জ্বী স্যার!
জসিম: আপনার দেখি পুরো পেটেই আলসার হয়ে গেছে----।
রোগী: কি কন স্যার! তাইলে আমি আর বাচুম না?
জসিম: বাঁচার ইচ্ছে তো ষোল আনা আবার ওদিকে বিড়ি খাওয়ার
বিরাম নেই। শোনেন আফাজ মিঞা যা খেয়েছেন খেয়েছেন আজ থেকে
আর কোনো দিন বিড়ি খেতে পারবেন না। যদি খান তাহলে তাহলে
আর ডাক্তারের কাছে আসার দরকার নেই।
রোগী: স্যর আমি জানতামই না বিড়ি শরীলের লাইগা এত খারাপ।
আমি আপনারে কথা দিতাছি জীবনে আর কুনু দিন বিড়ি মুখে তুলুম না!

(কফিল মিঞাকে নিয়ে আবু বকর স্যার
ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকতে ঢুকতে)
আবু বকর: আলহামদুলিল্লাহ! আফাজ মিঞার তোমার মত যদি দেশের
বেবাক মানুষ ধূমপানেরে খোদা হাফেজ জানাইতে পারত তাইলে হয়ত
আমাদের দেশের ডাক্তাররা একটু হাঁফ ছাইড়া বাঁচত। না কি কও
জসিম?
জসিম: স্লামালেকুম স্যার। আপনি ঠিকই বলেছেন। শুধু তামাক সেবন
বাদ দিয়েই আশি ভাগ ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা
যায়।
আবু বকর: বল কি বাবা? ধূমপান ক্ষতি করে এইটা জানা ছিল কিন্তু
এতট ক্ষতি করে সেইটা আজকে জানলাম।
জসিম: স্যার হঠাৎ আমার এখানে? শরীর খারাপ করেনি তো?
আবু বকর: না বাবা আমার শরীর ঠিকই আছে। আমি আসছি এই
কফিল বোকাটাকে নিয়া।
জসিম: কি হয়েছে উনার?
আবু বকর: আর বইলো না। জ্বর, কাশি, মাঝে মাঝে মুখ দিয়া রক্তও
নাকি পড়ে। প্রথমে মনে করছিল বুঝি রাজরোগই বুঝি হইছে। কিমত্মু
তোমাদের এক স্বাস্থ্যকর্মী ওর কফ পরীক্ষা কইরা বলছে ওর যক্ষ্মা না।
এ দিকে সমাজ তো ওরে একঘরে করে ফেলেছে। আমি কয় মাস গ্রামে
ছিলাম না -এর মধ্যেই এত ঝকমারি কান্ড! লোকে নাকি বলে যে ওর
উপর আল্লাহর গজব পড়ছে। আর এই জন্য বোকাটা গত রাতে গেছিল
গলায় দড়ি দিতে।
জসিম: বলেন কি স্যার!
আবু বকর: হ্যাঁ আর বলি কি? ভাগ্যিস আল্লাহপাক আমারে ঐ সময় ঐ
রাস্তায় পাঠাইছিলেন। তোমার কি মনে হয় অভিশাপের কারণে কারো
গলা দিয়া রক্ত পড়ে ?
জসিম: একদম না স্যার। প্রত্যেকটা ঘটনার পেছনেই যুক্তিগ্রাহ্য কারণ
থাকে। কিছু দেখা যায় কিছু দেখা যায় না। যা দেখা যায় না সেটাকে
দুর্বল মানুষ অতিলৌকিক বলে চালিয়ে দেয়। যক্ষ্মা ছাড়াও আরও
অনেক ফুসফুসের অসুখে মুখ দিয়ে কাশির সময় রক্ত আসতে পারে।
(কফিল মিঞাকে উদ্দেশ্য করে) আপনি এখানে শুয়ে পড়ুন। আপনাকে একটু পরীক্ষা করে দেখি।

ডাক্তার জসিম রোগীকে বিছানায়
শুইয়ে নানা পরীক্ষ করেন। স্টেথো
দিয়ে বুকের ডান দিকে বেশ কিছু
ক্ষণ কি যেন শোনেন।

জসিম: আমার মনে হচ্ছে ওর ডান ফুসফুসে একটা কনসলিডেশন বা
চাকা হয়েছে। রক্তটা আসছে সেখান থেকে। স্যার একটা কাজ করুন।
আমি বুকের এক্সরে আর রক্তের কিছু পরীক্ষা লিখে দিচ্ছি। এগুলো
আমাদের স্বাস্থ্য কমপেলক্সেই হবে। এক্সরের জন্য সরকারী একটা ফি
লাগবে। আর রক্ত পরীক্ষাটা বিনা মূল্যেই হবে। এগুলো একটু করিয়ে
আনুন।
আবু বকর: জ্বী বাবা। চলো কফিল---।

(ফেড আউট ও ফেড ইন)
আবু বকর: এই যে বাবা ওর রক্তের রিপোর্ট আর এক্সরে প্লেট।
জসিম: দিন স্যার।

ভিউ বক্সে এক্সরে ফিল্ম লাগিয়ে
মনোযোগ দিয়ে দেখেন ডা: জসিম।
ডান ফুসফুসের মাঝে একটা বড় প্রায়
গোলাকার কালো স্থান দেখা যায়। এর
পর তিনি রক্তের রিপোর্টও পড়েন।
সেখানে ই এস আর ১১০ দেখা যায়।

জসিম: যা ভেবেছিলাম। কফিল চাচার বুকে অর্থাৎ ফুসফুসে একটা
চাকা বা ঘায়ের মত জিনিস আছে। এটাকে টিউমার বলা যায়।
আবু বকর: মানে ক্যান্সার!
জসিম: টিউমার মাত্রই ক্যান্সার নয়। তবে এটা খারাপ টিউমার বা
ক্যান্সারও হতে পারে।
আবু বকর: নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই?
জসিম: অবশ্যই আছে। ফুসফুসের এই ক্ষত থেকে রস নিয়ে বিশেষ
একটা পরীক্ষা অর্থাৎ এফ এন এ সি করালেই বোঝা যাবে এই বৃদ্ধিটা
ক্যান্সার কিনা।
আবু বকর: যদি ক্যান্সারই হয় তাইলে উপায় কি ! শুনেছি ক্যান্সারের
কোনো অ্যান্সার নাই?
জসিম: ভুল ঠিক দুটোই শুনেছেন। ক্যান্সারের জবাব আছেও আবার
নেইও।
আবু বকর: বুঝলাম না ঠিক। একটু বুঝাইয়া কইবা ?
জসিম: অবশ্যই বলব। ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ। এতে আক্রামত্ম
হলে ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সারের কোষ ছড়িয়ে যায়।
তখন এই রোগ ভাল করা কঠিন। তবে সূচনায় এই রোগ ধরা পড়লে
অপারেশন, ইঞ্জেকশন বা মেশিনের মাধ্যমে বিশেষ রশ্মি দিয়ে চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব।
আবু বকর: বল কি বাবা ! ক্যান্সারও তাইলে ভাল হয় ?
জসিম: জ্বী অবশ্যই।
আবু বকর: সেইটা তো বাবা অনেক খরচের ব্যাপার। কফিল মিঞার
মত গরীব মানুষের কি সে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ আছে?
জসিম: এইটা খুবই সত্যি কথা যে ক্যান্সার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
যারা ধনী তারা সহজেই কেমোথেরাপীর দামী ওষুধ কিনতে পারে।
গরিবদের বেশ সমস্যা হয়। আমাদের সরকার গরিব মানুষদের কথা
চিন্তা করে ঢাকার মহাখালীতে গড়ে তুলেছেন দেশের সর্বাপেক্ষা বড় ও
সর্বাধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। সেখানে নাম মাত্র খরচে ক্যান্সারের সব ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে কেমোথেরাপী বা ইঞ্জেশন দিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু দামী ওষুধ রোগীদের কিনতে হয়। আমাদের গরিব দেশে সরকারের একার পক্ষে সব ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া সম্ভব না। সে জন্য সমাজের সম্পদশালীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই যদি একটু একটু করে সাহায্যের হাত বাড়াই তাহলেই অনেক বড় বাধাও বাধা থাকে না।
আবু বকর: এইটা বলছ কাজের কথা । দেখি কফিলের জন্য একটা
ফান্ড বানানো যায় কি না--।
জসিম: খুব ভাল চিমত্মা। আমিও কন্ট্রিবিউট করব স্যার।
আবু বকর: সে তো করবাই।
কফিল: (কাচু মাচু করে) আমি একটা কথা কমু মাস্টর?
আবু বকর: তো কও না। কে তোমারে আটকাইছে?
কফিল: মানে স্যারেরে জিগাইতে চাই এই ক্যান্সার হয় কি কারণে?
জসিম: খুবই চমৎকার প্রশ্ন। ক্যান্সার রোগের একটি নির্দিষ্ট কারণ নেই।
অনেক অনেক কারণ ধীরে ধীরে একত্রিত হয়ে দেহের কোষের
অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়্। এটাকেই বলে ক্যান্সার। বংশগতির মাধ্যমে
এই রোগ পিতা মাতা থেকে সন্তানের শরীরে আসতে পারে। খাদ্যাভাস,
শরীরচর্চার অভাব, কম বয়সে বিয়ে ও মেয়েদের ঘন ঘন মা হওয়া,
বাচ্চাকে বুকের দুধ না খাওয়ানো সহ নানা কারণে ক্যান্সার হতে পারে।
তবে আমাদের দেশে ক্যান্সারের প্রধান কারণ তামাক ও তামাক জাতীয় পদার্থ যেমন ধূমপান অর্থাৎ বিড়ি, সিগারেট বা হুক্কা খাওয়া। আবার
সাদাপাতা, জর্দ্দা, খৈনি, গুল, দোক্তাকিমাম এগুলোও ধোঁয়াহীন
তামাক।
আবু বকর: তাইলে দেখা যাইতেছে মানব সভ্যতার জন্য তামাকই
সব চেয়ে বড় শত্রু।
জসিম: তা কিছুটা বলা যায়।

(ফেড আউট)

দৃশ্য-৬

সময়: বিকেল
স্থান: নির্জন পুকুড় পাড়।

পাত্র-পাত্রী: জামাল ও রাহেলা

জামাল: কি ব্যাপার আজ তোমারে বেজায় খুশী লাগতাছে? কোনো
ঘটনা ঘটেছে নাকি?
রাহেলা: ঘটছেই তো-----।
জামাল: কি ঘটনা? বিয়া-টিয়া ঠিক হইছে নাকি?
রাহেলা: ঢঙ কইরো না জামাল ভাই!
জামাল: ঠিক আছে করুম না। এবার কও ঘটনা কি।
রাহেলা: আবু বকর স্যর বাবারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারের কাছে
লইয়া গেছিল। ডাক্তার বলছেন বাবার উপর আল্লার গজব টজব
কিছু পড়ে নাই।
জামাল: আলহামদুলিললাহ্! এইটা তো খুশীর খবর কিন্তু তুমি
কাদঁতাছ কেন?
রাহেলা: জামাল ভাই ডাক্তার বলছেন বাবার নাকি ক্যান্সার হইতে পারে
জামাল: ক্যান্সার!
রাহেলা: হ।
জামাল: তা অতো ভাইঙ্গা পড়ার দরকার কি? শুনছি আজকাল
ক্যান্সারের অনেক চিকিৎসা বাইর হইছে। ঠিকমত চিকিৎসা হইলে
পুরাপুরি সাইরা যায়।
রাহেলা: বাবা ভাল হইব তো?
জামাল: কেন ভাল হইব না। তুমি কাইন্দো না । তা ডাক্তার চিকিৎসার
ব্যপারে কিছু কয় নাই ?
রাহেলা: হ। ঢাকার মহাখালীতে নাকি ক্যান্সারের বিরাট সরকারী
হাসপাতাল আছে। সেখানে যাইতে কইছে।
জামাল: ভালইতো । তুমি জলদি যাওনের ব্যবস্থা কর। আমিও যামু
তোমাদের লগে।
রাহেলা: সত্যি তুমি যাইবা আমাগো লগে?
জামাল: কেন আমারে মিথ্যাবাদী লাগেনি?
রাহেলা: নাহ। কিন্তু তোমার বাজান----
জামাল: বাজানরে বুঝাইবো মায় । ধইরা লও আমিও যাইতাছি। কি
এবার খুশী?
রাহেলা: খুশী, ভীষণ খুশী হইছি আমি জামাল ভাই!
জামাল: রাহেলা!

(ফেড আউট)

দৃশ্য-৭

স্থান: ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল
সময়: সকাল

পাত্র-পাত্রী: কফিল মিঞা, রাহেলা, জামাল

বাস থেকে রাসত্মায় এসে রাহেলা অবাক বিস্ময়ে
ঢাকা দেখবে। জীবনে প্রথম বারের মহ ঢাকায়
এসে এর বিশালত্ব তাকে অভিভূত করবে।

রাহেলা: বাহ্ ! ঢাকা শহর এত্ত বড়! দেখ দেখ জামাল ভাই কত বড়
বড় বাড়ি!
জামাল: অমন হা কইরো না--মাছি ঢুকব!
রাহেলা: (লজ্জ্বাবনত হয়ে) যা!
কফিল: তাড়াতাড়ি চল বাবা। দেরী হইয়া যাইতাছে।
জামাল: জ্বী চাচাজান। আমি রিকশা ঠিক করতাছি।

এরপর ব্যাকগ্রাউন্ড সংগীতের সাথে দেখা যাবে
জামাল দুটো রিকশা ঠিক করছে। প্রথমটায়
কফিল মিঞা মেয়ে রাহেলাকে নিয়ে ওঠে। অন্য
টায় জামাল একাকি পথ দেখাতে দেখাতে চলে।
রাহেলা এক বার উঁচু অফিসগুলোর দিকে তাকায়
অন্যবার আড়চোখে জামালের রিকশাকে লক্ষ্য
করে। কিছ ক্ষণের মধ্যেই জাতীয় ক্যান্সার গবে
ষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে চলে
আসে তাদের রিকশা । ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে
আসে সবাই।
কফিল: হায় আল্লা এতো দেহি ম্যালা মানুষ।
জামাল: কোনো চিন্তা নাই চাচাজান। আগে ঐ কাউন্টার থাইকা
টিকেট কিনা আনি--আপনারা এই খানে বসেন।

ঘাড় দুলিয়ে সম্মতি জানায় কফিল মিঞা।

(কাট)

এবার দেখা যায় তিন জনেই ওয়েটিং রুমে
বসে আছে। একটু পরে ডাক্তারের অ্যাটেন্ডেন্ট
এসে ‘কফিল মিঞা কে?’ বলে ডাক ছাড়ে।
ওরা তিন জন দ্রুত লোকটিকে অনুসরণ করে
ডাক্তারের ঘরে যায়। মধ্যবয়সী চিকিৎসক
ভাল ভাবে গ্রহণ করেন তাদের। বসতে
বলেন।
ডাক্তার: তা কত দিন ধরে সমস্যা আপনার:
কফিল: তা স্যর এক বছর তো হইবোই। আগে সমস্যা তেমন হইত
না। গত দুই মাস ধইরা রোগের প্রকোপটা বাইড়া গেছে।
ডাক্তার: হ্যাঁ পুরনো কাগজপত্র দেখলাম। যে ডাক্তার সাহেব আপনাকে
এখানে পাঠিয়েছেন তিনি ঠিকই করেছেন। এখানে আপনার একটা
বিশেষ পরীক্ষা করব আমরা। পরীক্ষাটাকে বলে এফ এন এ সি বা
ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজী। এখানে আপনার ফুসফুসের
ক্ষত থেকে সুই এর মাধ্যমে একটু রস নেয়া হবে। সেটা পরীক্ষা করে
আমরা বলতে পারব আপনার ক্যান্সার কিনা এবং ক্যান্সার হলে সেটা
কি ধরণের ক্যান্সার।
(জামালের দিকে তাকিয়ে)আপনি উনাকে আমাদের প্যাথলজী বিভাগে নিয়ে যান। তিন দিন পর পরীক্ষার ফলাফল পেলে আপনাকে টিউমার বোর্ডে পাঠাব। টিউমার বোর্ড এখানকার বড় বড় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি বোর্ড যারা ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। ঠিক আছে ?
জামাল: জ্বী ঠিক আছে।

(কাট)

প্যাথলজী রুম থেকে বেরিয়ে তিন জন
আলোচনা করছে।
রাহেলা: এত জলদি হইয়া গেল?
কফিল: আরে আমি তো ভয়ই পাইছিলাম। ডাক্তার সাবে একটা ছোট্ট
সূঁচ ঢুকাইলো , জিজ্ঞাসা করল ব্যথা পাইছি কিনা - উত্তর দেবার আগেই
শুনি কাজ নাকি শেষ ।
জামাল: ভালাইতো হইছে চাচা। কষ্ট দেয় নাই। চলেন আজ যাইগা।
তিন দিন পর আবার আসতে হইব।

( ফেড আউট )

দৃশ্য-৮

স্থান: ক্যান্সার হাসপাতালের প্ল্যানিং রুম
সময়: সকাল

রেডিওথেরাপিস্ট কফিল মিঞার শরীরে
কোথায় রশ্মি দিতে হবে তা নির্ধারণ করছেন।

কফিল: স্যর আমার কি তাইলে সত্যি ক্যান্সার হইছে?
ডাক্তার: জ্বী কফিল সাহেব। তবে এ নিয়ে ভয় পাওয়ার দরকার নেই।
আপনার এই রোগ আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা
সম্ভব। তবে রোগ হলে বাড়ী বসে থেকে সময় নষ্ট করা যাবে না। যত
দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে আসতে হবে।
কফিল: আচ্ছা স্যার আমি তো জীবনে তেমন কুনো অন্যায় করি নাই
তাইলে আমার উপর এই গজব পড়ল কেন?
ডাক্তার: ছি কফিল মিঞা! এভাবে বলে না। আপনার এই রোগ কোনো
গজব নয়। এটা আর দশটা রোগের মতই একটা রোগ মাত্র।
কফিল: এই রোগ কেমনে হয়?
ডাক্তার: কিছু কিছু রোগ আছে যাদের সৃষ্টির জন্য বিশেষ ধরনের জীবাণুর দরকার হয়। সেই সব রোগগুলো আবার ছোঁয়াচেও হয়। আমরা বলি সংক্রামক রোগ। আবার কিছু রোগ আছে যারা স্পর্শের মাধ্যমে এক জন থেকে অন্য জনে ছড়ায় না। কোনো নির্দিষ্ট জীবাণু বা কারণে সে গুলো হয় না। সেই রোগ গুলোকে বলে অসংক্রামক রোগ। যেমন ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার.....
কফিল: আর যেমুন ক্যান্সার?
ডাক্তার: এই তো ঠিক ধরেছেন।
কফিল: তাইলে এই রোগ কেন হয়?
ডাক্তার: অনেক গুলো ফ্যাক্টর বা নিয়ামক এর জন্য দায়ী । যেমন বংশ
গতি, কাজের পরিবেশ, শারীরিক পরিশ্রম না করা, খাদ্যাভাস প্রভৃতি।
তবে সবচেয়ে বড় কারণ হল তামাক ও তামাম জাতীয় দ্রব্য সেবন।
শুনেছি আপনি প্রচন্ড ধূমপান করেন?
কফিল: আর লজ্জা দিয়েন না স্যর! আমি না জাইনা এতদিন বিষ খাইছি। এই আপনার কাছে কথা দিতাছি বাইঁচা থাকলে আর জীবনে আর বিড়ি-সিগারেট ছুঁমু না।
ডাক্তার: খুবই ভাল কথা। আপনার মত সবাই ব্যাপারটা বুঝলে ক্যান্সার
নামক দানব থেকে আমরা অনেকটাই মুক্তি পেতাম।

(কাট)

ওয়েটিং রুমে রাহেলা ও জামাল বসে
গল্প করছে।
রাহেলা: বল তো জামাল ভাই ক্যান্সারের বিপদ চিহ্ন কয়টা ?
জামাল: তুমি আবার ডাক্তার হইলা কোন সময়?
রাহেলা: ফাইজলামি না। সত্যি জানলে বল না।
জামাল: কেমনে কমু -আমি তো জানি না !
রাহেলা: আমি জানি । ক্যান্সারের বিপদ চিহ্ন হইল সাতটা ।
জামাল: কি কি এইটা জান?
রাহেলা: সেইটাও জানি-।
জামাল: কওতো শুনি।
রাহেলা: (আঙ্গুল দিয়ে গুনে গুনে) আচ্ছা শোনো। খুসখুসে কাশি বা ভাঙ্গা গলার স্বর, সহজে সারে না এমন ঘাও, শরীলের কোন খান থাইকা বেশি বেশি রক্ত পড়লে, স্তন বা শরীলের অন্য কোনো খানে যদি চাকার মত কিছু হয়, গিলতে না পারলে বা হজম করতে না পারলে, পায়খানার অভ্যাস হঠাৎ বদলাইয়া গেলে আর তিল বা আচিল যদি হঠাৎ বড় হইতে থাকে বা সেখান থাইকা পুজ বাইরাইতে থাকে----।
জামাল: বাহ্ । আপনি তো ঢাকায় আইসা পুরা ডাক্তার হইয়া গেছেন।
আস সালামু ওয়ালাইকুম ডাক্তার আপা--।
রাহেলা: (চোখ পাকিয়ে)ওয়ালাইকুম সালাম!

( ফেড আউট )

দৃশ্য-৯
স্থান: গ্রামের মাতববর আফতাব উদ্দিনের শোবার ঘর।
সময়: রাত

পাত্র-পাত্রী: আফতাব উদ্দিন ও তার স্ত্রী আছি্য়া।
আফতাব: আইজকা কফিল মিঞা ঢাকা থনে চিকিৎসা করাইয়া গেরামে
ফিরছে। পুরা ভালা হইয়া গেছে দেখলাম। শরীলটাও ফিরছে মাশাল্লা!
আছিয়া: আপনিই তো আগে কইতেন ওপর আলার গজব পড়ছে-।
আফতাব: মনে হয় ভুলই ভাবছি এত দিন । রোগ বালাই হইলে গজব
না ভাইবা আমাগো উচিৎ ঠিক সময়ে তার চিকিৎসা করা।
আছিয়া: এক দম খাটি কথা কইছেন। রোগ বালাই কি বইলা কইয়া
আসে? কখন কার কি রোগ হইবো সেইটাও কওন যায় না। আজকে না
হয় কফিল ভায়ের এই রোগ হইছে। আল্লা না করুক কালকে যদি
আমাগো কেউর এই রোগ হয়!
আফতাব: অলক্ষুণে কথা কইয়ো না জামালের মা। আচ্ছা রাহেলা
মাইয়াটা কেমন?
আছিয়া: খুবই ভালা মাইয়া মাশাললাহ। দেখতে রূপবতী, লেখাপড়া
জানে, আদব লেহাসেরও কমতি নাই।
আফতাব: কফিল মিঞার অবস্থা অবশ্য তেমুন ভালা না--
অছিয়া: কফিল ভায়ের অবস্থা দিয়া আমাগো কি কাম? আমাগো
দরকার ভালা একটা মাইয়া। তাছাড়া আমাগো আললায় কম দেয়
নাই। আমার ছেলেরে আমি যৌতুক নিবার দিমু না।
আফতাব: তুমি যখন চাইতাছ তখন আমি আর না করুম না। দেখি
কালই খবর পাঠামু কফিল মিঞার কাছে। শুভ কাজে দেরী করতে
নাই, কি বল? হা: হা: হা:------।

(দু’জনই হাসতে থাকবে)

(ফেড আউট)

।। সমাপ্ত।।


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

আশা রাখি আলোর রেখা একদিন ক্যামেরায় ধারণ করা হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমিও সে আশায় রইলাম!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।