পরিবর্তন বিবর্তন- এইম ইন লাইফ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২১/০৮/২০১০ - ১০:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক'দিন ধরে একটা জিনিস খুব মনে পড়ছে, সেটা হলো মানুষের ইচ্ছে ধুপধাপ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। মনে পড়ে, আমার জীবনের প্রথম এইম ইন লাইফ ছিল-আমার একটা ভ্যারাইটিস ষ্টোর দেব যেখানে শুধু থাকবে চকলেট, ক্যান্ডি আর অনেক রকমের খেলনা। আর কোনো ছোট বাচ্চা সেখানে গেলেই আমি তাদের ফ্রি খেলনা আর নাবিস্কো ক্যান্ডি দেব কারন তখন ওটাই আমার প্রিয় ক্যান্ডি ব্র্যান্ড ছিল। মা'র কাছে ২৫ পয়সা চেয়ে না পেয়ে বুভুক্ষের মতো তাকিয়ে থাকতাম বাসার আশেপাশের ভ্যারাইটিস ষ্টোরগুলোর দিকে। একদম ছোট ছিলাম তখন, প্রাইমারী স্কুলে পড়ি। আরেকটু বড় হওয়ার পড়ে, সেটা পরিবর্তন হলো, নতুন এইম ইন লাইফ- ফেরিওয়ালা হওয়া। ইশ, কত মজা ওদের, কত জায়গায় ঘুরতে পারে। আর কি বড়লোক ওরা, কত কিছু থাকে ওদের বাক্সের মধ্যে। তখন ভাবতাম, ঠিক আছে, ফেরিওয়ালা যদি না হতে পারি (বাবার ভয়ে, এত জায়গায় ঘুরতে তো দেবেনা, ঠ্যাং ভেংগে ফেলবেন হো হো হো, অন্তঃত ফেরি ওয়ালা ব্উ হবো! নিশ্চয়ই অনেক নতুন নতুন জিনিস গিফ্ট করবে। এই ইচ্ছেটার কথা ভুল করে ডাইরীতে লিখেছিলাম। সেই সময়, আমার উপর স্পাইং করতো আমার ছোটবোন। ডাইরী চলে গেল মার কাছে, আর বাচায় কে। গালের মধ্যে এমন চিমটি খাইছি, সেই এইম ইন লাইফ তখনি হাওয়া। মা বলে দিল ভালো কিছু, বড় কিছু ভাবতে। মা অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন, বেশিদুর পড়াশোনা করতে পারেননি পরিবারের রক্ষনশীল ভুমিকার কারনে। তাই মা'র ইচ্ছে তাঁর কন্যারা অনেক পড়াশোনা করবে, অনেক বড় হবে, নিজের পায়ে দাড়াবে। সেই রাতে যথারীতি ব্রেইন ওয়াশ চললো (আমার মা'ই একমাত্র মানুষ যিনি এটা পারেন আমার সাথে)। আমি তো না ঘুমিয়েই ভাবা শুরু করলাম কি করা যায়, নতুন এইম ইন লাইফ কি হবে। ফেরিওয়ালার বউ না হতে পারার দুঃখে কয়েকদিন এটা নিয়ে ভাবাই ছেড়ে দিলাম।

তারপর অনেকদিন পরে, এডিসনের জীবনী পড়ে ডিসিশন নিলাম, ওকে গবেষনা করবো। তখন জানতাম না, আসলে গবেষনাটা কি। শুধু বই থেকে জানলাম, এডিসন যখন ছোট ছিলেন ডিমে তা' দিয়েছিলেন। পড়ার অনেক চাপ, সামনে বৃত্তি পরীক্ষা (ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি না পাইলে কার্টুন দেখা বন্ধ করে দিবে মা'র হুমকি দেওয়া শেষ)। সবাই আবার আমাকে আগুন মার্কা স্টুডেন্ট (?)বলতো তখন, জিনিস টা কি সেটা আমার মাথায় ঢুকতো না। আমার তো সময় নাই ডিমে তা দেওয়ার,বাবা এসে পড়া ধরবে অফিস থেকে ফিরে। ছোট ভাইটা তখনো স্কুলে যায়না, আর আমার কথা শুনে, ছোটবোনের মতো বিট্রে করেনা। তাই তাকে কাজে লাগিয়ে দিলাম রান্নাঘর থেকে ডিম এনে। সেও সেই শীতের মধ্যে ফ্লোরে বসে বোনের কথামতো বসে আছে ডিম নিয়ে, আমার পড়ার ডিস্টার্ব হবে তাই কিছু বলছে না। ইতিমধ্যে ট্রেইটর (আমার বোন) গিয়ে মা'কে খবর দিয়ে এসেছে। আর যাই কই। আমার ভাই পালাতে গিয়ে সব ডিম ভেংগে একাকার। বাবারে সেই দিন থেকে আমার গবেষক হওয়ার ইচ্ছেও শেষ। এরপর ট্টা্ই করেছি কবিতা লেখার সুফিয়া কামালের মতো, কি সাধনা করেছি তখন। অনেক কষ্টে একটা ছড়া লিখেছিলাম, ট্রেইটর সেটা চুরি করে স্কুলের দেওয়াল পত্রিকায় দিয়ে দিয়েছে তার নামে। ঘন্টা খানেকের জন্য এইম ইন লাইফ চেন্জ হয়ে গেল, একমাত্র টার্গেট ঐটারে খুন করবো। নিজেকে বুঝালাম, ধুর আমার নিজের বোন না? কেমনে খুন করি। তারপর অনেক লুকায় রাখতাম, তাও কেমনে টের পেত আর আমি বার বার মাফ করে দিতাম কারন বাবা বলেছেন, আমি বড় তাই আমাকেই নাকি মাফ করতে হবে!

হাইস্কুলে গিয়ে স্যারদের কাছ থেকে জানলাম, আমার নাকি অংকে, সায়েন্সে অনেক মাথা ভালো, আমি নাকি ইন্জিনিয়ার ডাক্তার হতে পারবো। আমি কেন জানি ডাক্তারদের সহ্য করতে পারতাম না। তাই ঠিক করলাম, ইন্জিনিয়ার হবো। কিন্তু বুঝতাম না, কাজ কি করতে হবে। আমার স্বঘোষিত সবজান্তা মেজমামা আমাদের সাথে থাকতো, তার কাছে জানতে চাইলাম ইন্জিনিয়ারের কাজ কি। মামা বললো, বিল্ডিং বানানো। আমাদের বাসার পাশেই একটা বিল্ডিং এর কাজ চলছে। উকি মেরে দেখতাম, ইন্জিনিয়ার টা কে। বিল্ডিং তো বানাচ্ছে মিস্ত্রীরা। মনের ভেতর খচ খচ করতে লাগলো, আহারে কি কষ্ট হবে আমার। কত উচুতে উঠে ঝুলে ঝুলে কাজ করতে হবে। আবার ভাবলাম, এটাও তো বাবা করতে দেবেনা। ধুর ছাই, কিছুই হবো না আমি। স্যারদের কাছে ব্যাচে পড়তে হতো, তাদের যখন টাকা দিতাম তখন ভাবতাম-স্যারেরাই সবচেয়ে বড়লোক, কত টাকা তাদের। কিছুদিন টিচার হওয়ার ইচ্ছেও হয়েছিলাম।

ইন্জিনিয়ার আমি হতে পারিনি। বুয়েটে চান্স পেয়েছিলাম মেকানিকাল ইন্জিনিয়ারং এ যেটা আমাকে টানতো না। তাই নিজের পছন্দ মতো সাবজেক্ট পাওয়ায় সেটাই পড়লাম। কিছুদিন শিক্ষকতা করেছি, কিন্তু দুঃখ, ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর কারনে ব্যাচ পড়াতে পারলাম না। মন খারাপ অবশেষে ছোটখাট গবেষক হলাম। এখন ভাবি, কত পরিবর্তন বিবর্তন পার হয়ে আসতে হয়েছে আমার এইম ইন লাইফ। হায়রে এইম ইন লাইফ।

akashneela07092002@yahoo.com


মন্তব্য

নকীব [অতিথি] এর ছবি

টিপিক্যাল পোষ্ট.............কি নিয়ে গবেষণা করছেন সেটা নিয়া কিছু লিখলে ভালো লাগতো............

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি তো ভাই বলিনি, কোনো এটিপিক্যাল পোষ্ট এটা।যা নিয়ে গবেষনা করছি সেটা নিয়ে বেশিরভাগ সময় থাকতে হয়, তাই এটা সেখানে না টেনে আনতে চাইনা। ধন্যবাদ আপনাকে।

আকাশনীলা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার এইম ইন লাইফের কাহিনীও এ রকম পরিবর্তনশীল।তবে এখনো জানিনা কি হচ্ছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

সবার এইম ইন লাইফের অবস্থাই এরকম। হাসি

আকাশনীলা

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

বাহ! বেশ লেখেন তো ! ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদা, আপনার লেখার ধারকাছেও কোনোদিন যেতে পারবো না। সময় করে পড়েছেন তাই ধন্যবাদ।

আকাশনীলা

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

হি হি হি, ভাই এটা আমি আপাতত মেনশন করিনি কারন এটা আমার লাস্ট এইম ইন লাইফ। ভবঘুরে হইতে গেলে রিসোর্স তো লাগবে, সেটা ম্যানাজ হয়ে গেলে আমাকে আর পায় কে! এটা আসলে স্বপ্ন সারা পৃথিবী ঘুরে দেখা।আমি আপনার জন্য দোয়া করি, আপনি আমার জন্য কইরেন। আপনি তো আবার দরগা ওয়ালা পীর টাইপের মানুষ চোখ টিপি

সিরাত এর ছবি

আপনার পছন্দের বিষয় ছিল কোনটি?

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন বায়োটেকনোলজী। আগে কিসে পড়েছি, সেটা এখানে বলবো না। হাসি

আকাশনীলা

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার প্রথম এইম ইন লাইফ ছিল দোতলা বাসের ড্রাইভার হবো। অন্য কোন গাড়ী না। এতা সেই ৮২-৮৩ সালের কথা! তবে পরিনত বয়সে একবার ইচ্ছে হয়েছিল ঈশ্বর হবার... সেটা তো সম্ভব না, তবে কাছাকাছি যেতে পেরেছি...!!!

--- থাবা বাবা!

অতিথি লেখক এর ছবি

সেটাই কম কি বলেন, ঈশ্বরের কাছাকাছি কিছু হতে পারা।:)॥॥

আকাশনীলা

শেখ নজরুল এর ছবি

আমার ইচ্ছে ছিলো গরুর রাখাল হওয়া- তার পিছনে হ্যাট মাথায় ঘুরে বেড়ানো। মানে কাউবয়।

শেখ নজরুল

শেখ নজরুল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ছোট ভাইয়ের ইচ্ছে ছিল হয় কাউবয় হওয়া নয়তো গরু দিয়ে হালচাষ করা। হাসি

আকাশনীলা

মাহে আলম খান এর ছবি

আমার এইম ইন লাইফ অর্ধেক পুরন হয়েছে, বাবা হয়েছি। এখন ছেলেটা বড় হল - খেলাধুলা করতে দিবো না, আর সারাদিন পড়তে বলবো। আমার বাপের সাথে এইটা আমার প্রতিশোধ। কিন্তু মনে হয় পারবো না। আমার বাপে এখন পল্টি খাইছে, নাতিরে নিয়া সারাদিন খেলে। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা। বাবা মা রা পল্টি খাবেই এখন। মজার কথা হল, যখন কোন জিনিস চেয়ে পেতাম না, খেলতে চাইলে খেলতে পারতাম না, তখন ভাবতাম আমার ছেলেমেয়েদের আমি কোনোদিন পড়তে বলবো না, শুধু খেলতে বলবো আর না চাওয়ার আগেই সব দিয়ে দিব। তা কি আর পারবো? আমাকেও পল্টি খেতে হবে। হাসি

আকাশনীলা

অতিথি লেখক এর ছবি

মজা নিয়া পড়লাম।

আজিম

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। হাসি

আকাশনীলা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।