বিষাদে জন্ম তার!

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি
লিখেছেন সুমিমা ইয়াসমিন [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/১০/২০১০ - ২:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভোরের চাদরটা তখনো ঘুমের আবেশ জড়ানো। সে চেয়ে আছে নিষ্পলক। ভোর বেলার বাতাসে একটা আলাদা ঘ্রাণ থাকে। সেই ঘ্রাণে থাকে মিষ্টি এক অনুভব। আমি সবটুকু মিষ্টি অনুভব জড়িয়ে তাকে বলি, ভালো থাকিস আজ সারাদিন। সে কোনো তোয়াক্কা করে না, সে তার মতই থাকে।

সূর্যটা আড়মোড়া ভাঙে। নাগরিক কোলাহল বাড়তে থাকে। ব্যস্ততার পাগলা ঘোড়ার পিঠে আমিও সওয়ার হই। ছুটতে থাকি। ছুটতেই থাকি। মাঝে মাঝে তার কারণে ব্যস্ততাকে দূরে ঠেলে দেই। হয়ে উঠি অলস বিলাসী। কাজের স্তুপ জমে ওঠে, উঠুক। সব দৌড় ঝাঁপ বন্ধ।

শুধু পাশে থাকে ইন্টারনেট। ব্লগ কিংবা ইমেইল নাড়াচাড়া। ফুলে ফেঁপে ওটা ইনবক্সে ঢুকে পুরনো মেইলগুলোতে খুঁজে বেড়াই পুরনো গন্ধ। পুরনো আনন্দ। পুরনো ব্যথা। নোনাধরা স্মৃতি। পুরনো সবই রঙিন, ধুসর কেবল বর্তমান।

যন্ত্র মানুষকে দূরে সরিয়ে দেয়, আবার কাছেও এনে দেয়। দিনে দিনে যান্ত্রিক হয়ে উঠি। তবু ইন্টারনেট আছে বলেই এখনো যোগাযোগটা টিকে আছে বন্ধুদের সাথে। যেসব বন্ধু প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছে, তাদের অনেককের কাছ থেকে হয়তো বহু দূরে হারিয়ে যেতাম। বিচ্ছিন্নতা ঘুচিয়ে এখন যান্ত্রিক কাছাকাছি থাকা। বরং স্বল্প দূরত্বে থাকা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগহীন দীর্ঘদিন।

হঠাৎ কাছের এক বন্ধুর ডাকে মুঠোফোনটা জেগে উঠলে রাজ্যের ভালো লাগা এসে ভর করে! বন্ধুর আমন্ত্রণ, চল্ একদিন সবাই মিলে সারাদিন আড্ডা দেই! জগৎ সংসার ভুলে সারাদিন বেড়াবো। রোদে পুড়বো। বৃষ্টিতে ভিজবো। দুপুরে খিচুরি খাব। বিকালে নৌকায় চড়বো। সমুদ্র সৈকতে বালির মধ্যে শুয়ে সূর্য ডোবা দেখবো। অকারণ হাসাহাসি। বৃথা কথা চালাচালি...। আহ্, যদি সত্যি পারতাম!
ওই বলা পর্যন্তই। সময়টা আর হয়ে ওঠে না। কর্পোরেট ব্যস্ততা আমাদের গিলে খেয়েছে। এখন কারো সময় নেই। সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার সুযোগ নেই!

আমি এসব মেনেই নিয়েছি। সে মানতে চায় না। তাকে নিয়েই আমার যত জ্বালা! আমি ভাবি এক, সে ভাবে আরেক। আমি যেতে চাই একদিকে, সে যেতে চায় অন্যদিকে। ছোটবেলায় ভাবতাম, আমি ছোট বলেই সে আমার কথা শুনছে না। আমি বড় হলে আমার সব কথা সে ঠিকই শুনবে। কিন্তু কোথায় কী! সে তার মতই আছে। আমার কোনো কথাই শোনে না!

রাত্রি দ্বিপ্রহরের দিকে ছোটে। নিস্তব্ধতা ধীরে ধীরে গ্রাস করে নগরীকে। আকাশে ঝুলে থাকে কুমারী রাতের লাজুক হাসি। রাতজাগা তারাগুলো আকাশে ফোটায় হাজার ফুল। সৌন্দর্য মোড়ানো এই রাত্রিতে তাকে আবারো মিনতি করি, ভালো থাকিস। এবার সে চোখ রাঙায়!
বলি, তোর ভালো থাকার জন্য এতকিছু করি, তবু তুই ভালো থাকিস না!

‘ভালো আছি’, এই বোধটা বুকে চেপে ছুটছি জীবনবভর। অথচ সে ভোগে বিষাদে, কারণে কিংবা অকারণে! আমি ও আমার মন এরকমই বৈপরীত্যে সমান্তরাল।


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

চলুক চলুক

আবার ডুব দেবেন না যেন!
লেখা চাই, নিয়মিত.. হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

তিথীডোর, ডুবে আর থাকতে পারি কই! ....অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

সুমিমা ইয়াসমিন

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নিজের ভিতরে যে আরেক আমি, তাকে ঘিরে তোমার এই কথামালা ভালো লাগলো। এ ভালো লাগা কিন্তু তোমার মতো বুকে চেপে রাখা 'ভালো আছি' এর মতো না। সত্যিকারের ভালো লাগা-ই। নিয়মিত লিখো না ক্যান?

অতিথি লেখক এর ছবি

পান্থ, নিয়মিত সত্যিকারের যন্ত্রণা পেতে চাস নাকি!
তুই যে আমার লেখাটা পড়েছিস, তাতেই তোর জন্য ভালো লাগা বরাদ্দ হলো অনেকখানি...

সুমিমা ইয়াসমিন

তীরন্দাজ এর ছবি

বাহ্! নিজের ভেতরের নিজেকে হাতড়ানো, মাঝে মাঝে খুজে না পাওয়া, ভালো লাগলো খুব। তবে এই হাতড়ানো আর না পাওয়ার মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, তীরন্দাজ। ভালো লাগলো।

সুমিমা ইয়াসমিন

অতিথি লেখক এর ছবি

‍ ‍‍পুরনো সবই রঙিন, ধুসর কেবল বর্তমান।''
ধন্যবাদ সুমিমা।

-মাইনুল এইচ সিরাজী

অতিথি লেখক এর ছবি

সিরাজী ভাই, ভালো লাগলো আপনি আমার লেখাটি পড়েছেন বলে।

সুমিমা ইয়াসমিন

বইখাতা এর ছবি

চলুক ভালো লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বইখাতা, আপনার ভালো লেগেছে জেনে আমার খুবই ভালো লাগলো!

সুমিমা ইয়াসমিন

বালক এর ছবি

কেনো জানি লেখাটি খুব ভালো লাগলো।

********************************************************************************
"কেউ বেশি খায় কারো খিদে পায় না, কেউ সস্তার কিছুই খেতে চায় না... আমি চিনি এমন অনেক যারা সারাদিনে কিছুই খেতে পায় না!"

____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"

অতিথি লেখক এর ছবি

বুঝলাম লেখাটাতে ভালো লাগার মত কিছু নেই!
ধন্যবাদ,বালক।

সুমিমা ইয়াসমিন

রানা মেহের এর ছবি

সুন্দর লিখেছেন সুমি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতিথি লেখক এর ছবি

রানা মেহের, অনুপ্রাণিত হলাম।

সুমিমা ইয়াসমিন

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পরে আপনার লেখাটা পড়ে সচলে লগইন করলাম। ঠিক বলেছেন কর্পোরেট ব্যস্ততা আমাদের গিলে খেয়েছে। এতটুকুও অবসর পাবার ফুরসত পাই না। মাঝে সাঝে ভাবি এই জীবন যুদ্ধের কি কোন জয়-পরাজয় নির্ধারিত নেই! একটুকু বিশ্রামেরও প্রয়োজন তো আছে!

ভালো লাগলো সুমিমা।
ভালো থাকুন সারাবেলা।

সাবরিনা সুলতানা

সুমিমা ইয়াসমিন [অতিথি] এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, প্রিয় প্রিয় প্রিয় সাবরিনা।
ভালো থাকুন, এই যুদ্ধক্ষেত্রেও...!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।