আউলা বাউলা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ০৩/০১/২০১১ - ১০:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১ বইয়ের ডাক
বেশ কিছুদিন ধরে একটা বাংলা গল্পের বই যোগাড় করতে চাচ্ছি, কোথাও পাইনা। দেশ থেকে কেউ আসেও না যে বইয়ের অর্ডারটা দিব। মনের দুঃখে সিদ্ধান্ত নিলাম অনলাইনে কিনেই ফেলবো। গেলাম বই-মেলা ডট কমে। বই খুঁজে পেলাম। বইয়ের দাম মাত্র ১২০ টাকা, আমেরিকায় পাঠাতে খরচ পড়বে ৪৮৫ টাকা, মোট ৬০৫ টাকা। খারাপ না। প্রায় কিনেই ফেলেছিলাম, শেষ মুহুর্তে মনে হল, আমার এক বন্ধুর জন্য এক কপি কিনি। বইয়ের সংখ্যা এক থেকে দুই করে দিলাম। দাম বদলিয়ে দাঁড়ালো: ২৪০ টাকার বই আর শিপিং খরচ ৭২০ টাকা, মোট ৯৬০ টাকা। দামটা যদিও আয়ত্বের মধ্যে তাও একটু খচখচ করতে লাগলো শিপিং-এর টাকার অঙ্কটা দেখে। বই দুইটা তো আলাদা করে পাঠাবে না, তাহলে খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয় কী করে? বাংলাদেশ ডাকবিভাগের ওয়েব সাইটে উঁকি মারলাম। ডাকের মূল্যহার যদি পাওয়া যায়। দেখে খুশি হলাম যে আমার প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য সেখানে পাওয়া যাচ্ছে। মূল্যহার জানানোর জন্য ছোট্ট একটা ফর্মও আছে, যেখানে গন্তব্যস্থান, প্যাকেটের ওজনের ঘর পূরণ করলে বলে দিবে খরচ কত পরবে। এর বাইরে আরেকটা ফী অবশ্য থাকে উড়োজাহাজ না পানি জাহাজে বইটা আসবে তার উপর নির্ভর করে। যাই হোক, আমি ঝটপট ফর্ম ভরে ফেললাম। ৮০ পাতার একটা বই, ওজন কতই বা আর হবে। আন্দাজে ২০০ গ্রাম আর গন্তব্যস্থান আমেরিকা দিয়ে পেলাম ২০০টাকা লাগবে। আচ্ছা ঠিক আছে, মেনে নিলাম। তারপরেই খেয়াল করি ফর্মে আমি আসলে একটা ভুল করেছি। সবার উপরে একটা ড্রপ-ডাউন মেন্যু আছে যেটা কিনা আমার চোখ এড়িয়ে গেছিল। প্রেরিত প্যাকেট চিঠি, বইপত্র, নাকি অন্য কিছুর প্যাকেট সেটা নির্ধারণ করা যায়। মূল্যহার প্রেরিত জিনিষের ধরণের উপরেও নির্ভরশীল। আমি দাম দেখেছি ছোট প্যাকেট অনুযায়ী, কিন্তু আমার তো লাগবে বইয়ের হিসাব। ফর্ম ঠিকঠাক করে আবার দাম দেখলাম। এবার দেখি ২৬৪ টাকা। ৬৪ টাকা বেড়ে গেলো কোন হিসাবে বুঝলাম না। নিচে একটা লিঙ্ক ছিল মূল্যহারের বিশদ বর্ণনা দিয়ে। পড়ে হিসাবটা বুঝলাম কিন্তু মানতে পারলাম না। আমার জানামতে আমেরিকায় বইপত্র সরকারী ডাকে পাঠালে (bookpost) খরচ কম পরে। আরও দুই একটা দেশে খবর নিলাম, বই পাঠানোর খরচ হয় ছোট প্যাকেটের সমান কিংবা কম, বেশি কোথাও পেলাম না। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বই যাবে, তার জন্য টাকা বেশি দিতে হবে কেন ঠিক বুঝলাম না। বিদেশ থেকে অনলাইনে বই কিনেই বা আর কয়জন। যে দুই একজন একটু শখ করল তাদের সাথে এরকম বিমাতাসুলভ আচরণ দেখে ভালো লাগলো না। ডাকবিভাগের "Complaint/Suggestion" লিঙ্কে যেয়ে কিছু কথা টাইপ করে জমা দিতে গেলাম, সাইট বিগড়ে গেল।

আপাতত দাঁত কামড়ে পড়ে আছি। ফেব্রুয়ারিতে দেশ থেকে আত্মীয় আসার কথা। দেখি বই আনাতে পারি কিনা।

২ দেন মোহর
মুসলিম পরিবারের সবাই কম বেশি দেন মোহরের ব্যাপারটা জানে মনে হয়। আমি শব্দটার সাথে পরিচিত থাকলেও, প্রথম বোঝার চেষ্টা করি আমার বড় বোনের বিয়ের সময়। যা বুঝলাম তা হল বর কনেকে কিছু টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, যেটা কিনা বিয়ের দিন দিতে হয়। অনেকে বুঝালেন অর্ধেকটা বিয়ের সময় এবং বাকিটা পরে দিলেও চলে। ভালো কথা। দেন মোহরের পরিমাণটা পাত্র, পাত্রী এবং তাদের পরিবারের সকলে মিলেই নির্ধারণ করে। এই টাকার অঙ্কটা আবার একেবারে ছোট না, হাজার বা লাখ টাকার কথা বলা হচ্ছে এখানে। কিন্তু মুশকিল হয়ে গেল যখন আপু বলে বসলো, ও ২০০ ডলারের বেশি কোনমতেই নিবে না। প্রথমে সবাই খুব খুশি, বাহ বাহ মেয়ের টাকার প্রতি লোভ নাই। কিন্তু দুই একদিন পরেই গুঞ্জন উঠলো রীতিনীতি নিয়ে। এই বাজারে মোটে ২০০ ডলার দেন মোহর হলে ছেলে পক্ষের (এবং কিছু কিছু মেয়ে পক্ষের মানুষেরও, যারা আপু কে ঠিক চিনে না) মান সম্মান থাকে না। তাই প্রস্তাব আসলো যে ছেলে পক্ষ দশ হাজার ডলার ধার্য করতে চায়। হবু দুলাভাই সম্পর্কে যতটুকু জানতাম, এই পরিমাণ টাকা মুখের কথায় দিয়ে দেওয়ার মত সামর্থ্য উনার ছিল না। কাউকে ছোট করার জন্য বলছি না, এটা একটা বাস্তবতা। এই বর্ধিত অঙ্কটা ছিল কাগুজে একটা সংখ্যা মাত্র যা সমাজে স্ট্যাটাস বাড়াতে সাহায্য করবে। আরও কিছু বিয়ের খবর শুনি, দেন মোহর লাখ লাখ টাকা। আমি বসে মাথা চুলকাই, ঘটনা বুঝি না। এই বিশাল সব টাকার নাচন দেখায় মানুষ কী হাসিল করতে চায় আমি বুঝতে পারি না। আমাদের মর্যাদা বোধ কী এতই ঠুনকো যে একটা মিথ্যা অঙ্ক দিয়ে সেটা বাড়ানো যাবে? আর সম্মান যদি আসলেই বাড়ে তাহলে লাখ কেন, কোটি বা বিলিয়ন টাকায় চলে যাক। সবথেকে মজার বিষয় হল, বড় বোনের যেই উদাহরণটা দিয়েছিলাম, আপু শুরু করেছিল একেবারেই নগণ্য একটা পরিমাণ দিয়ে। কিন্তু সেটা প্রহসনের মত দেখায় বলে পরিমাণটাকে বাড়াতে বাড়াতে $২০০ তে নিয়ে ঠেকানো হয়। পরে যখন দশ হাজারের কথা উঠলো, ইচ্ছা থাকলেও জিজ্ঞেস করতে পারিনি এটা প্রহসন হবে না কেন।

-রু


মন্তব্য

ফরিদ এর ছবি

বইমেলা ডট কম নিয়ে ভ্যাজাল হলে ইনফো@বইমেলা তে বকাঝকা দিয়ে মেইল করতে পারেন। সাইটখানা হাতে বানানো বলে মাঝেমধ্যে বিগড়ে যায়।

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ঝামেলা আসলে বইমেলা করেনি। বাংলাদেশের ডাকবিভাগ বইপত্রপাথানর জন্য বেশি দাম ধার্য করেছে। সেটাতে আমার আপত্তি।
-রু

রাগিব এর ছবি

বইমেলার ব্যাপারে ফরিদ ভাইকে সরাসরি জানাতে পারেন। উনি এখানেও মাঝে মাঝে লিখেন, কিন্তু ইমেইলে দ্রুতই জবাব দেন।

----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | টুইটার

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, রাগিব। বইমেলার কোন দোষ আমি খুঁজে পাচ্ছিনা। বরং ওনারা যে এই সার্ভিস দিচ্ছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ। -রু

বাউলিয়ানা এর ছবি

আহা আবার ফেব্রুয়ারী আসছে, আবার নতুন নতুন বই, বইয়ের ঘ্রাণ!!

আপনার কষ্ট সার্থক হোক। নতুন বই হাতে পেলে পোস্ট দিতে ভুলবেন্না কিন্তু।

লেখালেখি জারি থাকুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ফেব্রুয়ারিতে এগারো বছর হবে আমার বই মেলায় না যেতে পারার। আপনারা যেয়েন আর অনেক ছবি, বইয়ের বর্ণনা দিয়ে পোস্ট দিয়েন। -রু

নুর নবী দুলাল [অতিথি] এর ছবি

এবার বইমেলাতে আমি পুরো একটা দিন আপনার জন্য উৎসর্গ করব।

দীর্ঘ ১১ বছর বইমেলা'তে আসতে না পারার কষ্ট আমি বুঝি । কারণ, যখন থেকে আমি নিয়মিত বইমেলা'তে যাওয়া শুরু করি; তখন থেকে এ পর্যন্ত আমি শুধু একবার যেতে পারিনি। সে একবারের কষ্ট আমি এখনও ভুলতে পারিনি।

রু [অতিথি] এর ছবি

নুর নবী দুলাল অতিথি লিখেছেন:
এবার বইমেলাতে আমি পুরো একটা দিন আপনার জন্য উৎসর্গ করব।
অসংখ্য ধন্যবাদ। -রু

অপছন্দনীয় এর ছবি

আপনার বোনের জন্য স্যালুট।

ru এর ছবি

ধন্যবাদ। -রু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।