অন্তুর আজো খেলতে ইচ্ছে করে।

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১২/০২/২০১১ - ১০:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অন্তু প্রতিদিন এই সময়টায় আকাশ দেখে। সকালের সূর্যটা আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠতে থাকে... আলোয় ভরে উঠে চারপাশটা। গাছগুলোর পাতার ফাঁকে ফাঁকে আলো তার ঘরের জানালা দিয়ে প্রবেশ করে...তার গায়ে আদর মেখে দেয়। অন্তু জানালার পর্দা মেলে দেয়, যেন সবটা আলো তার চাই-ই চাই।

আজও অন্তু আকাশ দেখছিল। মাঝে মাঝে অন্তু ভাবে, তার একটা ক্যামেরা থাকলে মন্দ হত না...দু-চারটা ছবি তুলতে পারতো। একটা ক্যামেরা তার অবশ্য আছে ঠিকই, কিন্তু ওটার ফিল্ম কিনতে হয়। অন্তুর ফিল্ম কেনার ঝামেলাটা ঠিক পছন্দ না। আজ অন্তু বাবাকে একটা ক্যামেরার কথা বলবে, অন্তত ঈদের সময় পেলেও খারাপ হবেনা ব্যাপারটা।

"কিরে, রুটিন ওয়ার্ক করছিস?"
"কেন? তোর এতাকে রুটিন ওয়ার্ক বলে মনে হয় কেন?"
"রোজ যেভাবে জানালার পাশে দাঁড়াস, তাতে মনে হয় সামনের বাসার মেয়েটার সাথে তোর হাজার বছরের প্রণয়!!!"
" আপু ! ফাজলামি কোর নাতো!"
অবনী মুচকি হাসে। অন্তুর কাছে এসে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।"নাস্তা করেছিস?"
"হুম। আজকে তোমার ক্লাস আছে?"
"হ্যা। এইতো, একটু পরেই রওনা দেব। তোর জন্য কিছু আনতে হবে?"
"না, ওই কাজলদের দোকান থেকে যে ডিভিডিটা এনেছিলাম, ওটা ফেরত দিয়ে দিয়ো, দেখা হয়ে গিয়েছে।"
"ঠিক আছে।"

অবনী চলে যায়। অন্তু আবার জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। বাসার নিচেই ছোটখাট একটা বাজার। বেশ ব্যস্ত রাস্তায় ওদের বাড়িটা। আগে এই ব্যাস্ততা একদম অসহনীয় ছিল, এখন আর তেমনটা লাগে না। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সে লোকজন দ্যাখে। হাজার রকমের লোকজন। কিছু কিছু পরিচিত মুখও আছে, যেমন হাশেম চাচা। রোজ একই জায়গায় বসে কলা বেঁচে। দেখলেই একটু হেসে বলবে, " বাবাজি, শরীলডা ভালা?"

মোবাইলটা বেজে উঠে। কে ফোন করতে পারে? হাসু? রুমি? না না, ওরা তো এখন কলেজে যাওয়ার কথা...

"হ্যালো?"
"অন্তু? আমি তোমার স্যার বলছি, শফিক স্যার।"
মাওলানা স্যার! "স্লামালিকুম স্যার ! কেমন আছেন আপনি?"
"ভালো। তুমি ভালো আছ অন্তু?"
"আছি স্যার, ভালই আছি।"
"কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো...?"
"নাহ...কি সমস্যা হবে আবার...," অন্তু প্রসঙ্গ চেঞ্জ করতে চায়।
"হুম...আচ্ছা বাদ দাও। আজ খেলা আছে জানো তো?"
"জ্বি স্যার, বাংলাদেশের খেলা।স্যার, ওরা মকবুলকে নামাবে ?"
"জানি না অন্তু, কাল পর্যন্ত তো জানি মকবুল নামবে। দেখা যাক কি হয়..."

দুপুরে অন্তু ভাত খাবার আগে কিছুক্ষন বই পড়ে। সব রকমের বই-ই পড়ে। আজ কেন জানি পড়তেই ইচ্ছে করছে না। ছবি দেখবে? নাহ্‌ তা-ও ভালো লাগছে না। কি করবে ভাবতে ভাবতেই অন্তু ঘুমিয়ে পড়লো।

'কভারের উপর দিয়ে মার অন্তু, ওখানে একটা গ্যাপ আছে...'

ঘুমটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেলো অন্তুর। আবার সেই পুরনো স্বপ্নটাই দেখেছে। উফ্‌ কেন যে সে একই স্বপ্ন বারবার দেখছে...বুঝতেই পারে না।

"অন্তু? ঘুম ভাঙলো তোর?"

তিনটা বাজে, তার মানে মা আরও আধা ঘন্টা আগেই স্কুল থেকে এসে পড়েছেন।এতক্ষন পর ঘুম ভাংলো...অনেকক্ষন ঘুমাল তাহলে !

"হ্যা মা,আজকে হঠাৎ ঘুম এসে পড়ল...।"
"ভাত তো খাসনি...আয় তোকে আজ খাইয়ে দেই..."
"না না, নিশ্চয়ই আজকে মাগুর মাছ রান্না করেছ..."
জাহানারা ফিক করে হেসে দিলেন। "...ধুর বোকা, মাগুর মাছ রান্না করলেই আমি তোকে খাওয়াই? আজকে এমনিতেই তোকে খাওয়াবো।"

খেতে খেতে মার দিকে তাকায় অন্তু। মা আসলেই অনেক ভালো, তাই না?

"খাওয়া শেষ, এখন একটু রেস্ট নে, ঠিক আছে?"
"হুম, নেব।"

কলিংবেলের শব্দ। বাবাও আজকে তাড়াতাড়ি এসে পড়লেন মনে হয়...। দোকান আজকে চালাবেন না মনে হয়...।

"আর বলিস না, তোর আনোয়ার চাচার জন্যে আর পারি না," বাবা ঘরে এসেই বলতে লাগলেন," কখন থেকে খালি খেলা আছে, খেলা আছে বলে পাগল করে ফেললো! শেষমেশ নিয়েই এলাম, বাসায় বসে আমরা সব্বাই একসাথেই দেখবো।"

আনোয়ার চাচা হাতে করে আবার চানাচুরও এনেছেন। "অন্তু, আজকে শিউর নিউজিল্যান্ড হারবে। তোর সাথে আমার বাজি।"
অন্তু হেসে বলল, " বাজি তো আমার বাংলাদেশের পক্ষে, কাজেই আমি আপনার সাথে বাজি ধরতে পারলাম না।"
"এই সেরেছে, তাহলে বাজিটা ধরবো কার সাথে...?" আনোয়ার চাচা চিন্তিত হয় পড়েন।
"আপুর সাথে ধরতে পারেন, ও তো সবসময় আমার বিপক্ষে থাকে.."

" ওই কই গেলি তোরা , খেলা শুরু হয়ে গেলো তো !" অন্তুর বাবা টিভি অন করে ফেলল। অবনী বাসায় এসেই টিভির সামনে। অন্তু, আনোয়ার চাচাও এসে পড়লেন। মা চানাচুর-মুড়ি মাখতে মাখতে ওঘরে থেকে বললেন, "এই শুনছো, টসে কে জিতলো?"
" বাংলাদেশ। কই চানাচুর কোথায়...?"
"আনছি বাবা, একটু মুড়ি মেখে নেই..."
অন্তু অবশ্য মুড়ি খায় না, "মা, আমারটা মুড়ি ছাড়া..."
"মনে আছে রে..."

খেলা শুরু হল। প্রথম ওভারে একটা শটও নিতে পারলো না তানিম ইকবাল, মেডেন ওভার গেল। অন্তু খুব চিন্তায় আছে, হার্ড পিচ দেখে। যেই কন্ডিশন, তাতে দু-একটা উইকেট না পড়লেই আশ্চর্য হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় ওভাররের প্রথম বল করার জন্য আসলো ওদের নতুন বোলার। নাম শুনেছে অন্তু, কিন্তু খেলা দেখেনি। কেমন করে কে জানে...।"অন্তু?"
"হুম...?" অন্তু বাবার দিকে না তাকিয়েই বলে।
"এই বলে ছক্কা হতে পারে...।"
"না বোধহয়, মেডেন ওভারের পর ছক্কা?"
"হতেও পারে।"
"দেখা যাক।"

ব্যাট করার আগে কি একটু হাসি ছিল জুবায়েরের মুখে? হাসল কেন?

বল করলো হ্যমিল্টন। শর্ট-পিচ বল, জুবায়ের সামনে এসে মারলো স্ট্রেইট ডাইভ...
"ছক্কা...!!!"
অন্তু লাফিয়ে উঠেই পড়ে গেল। ওর মনেই থাকে না যে এখন আর আগের মতো সে দৌড়াতে পারে না, লাফাতে পারে না। একটা ম্যাচে বাউন্সার বল ওর পিঠে লাগে। সেই থেকে ওর নিচের অংশ অবশ। ডাক্তার বলে দিয়েছেন, ওর হাঁটার সম্ভাবনা নেই। তবুও অন্তু ভুলে যায় তার দুর্বলতার কথা।আজো যে তার খেলতে ইচ্ছে করে!

"অন্তু! ব্যাথা পেলি বাবা?" মা এসে তুলে ধরেন তাকে।
" না মা," অন্তু জোর করে হাসে। " পাইনি।"

অন্তুর চোখে কি দেখা যাচ্ছে? জলের ফোঁটা? থাক, ও কথা আর লিখতে চাই না। তাহলে ওর সাথে সাথে আমারো যে কান্না চলে আসবে?

__________________________________________________

মেঘদুত


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমার কাছে মনে হলো এটা একটা অণুগল্পের প্লট। প্লটটা নতুন না হলেও ভালো লেগেছে।

সেইদিক থেকে শুরুর কিছু অংশ অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। অবশ্য অন‌্য পাঠকের অন‌্যরকম লাগতেই পারে।

অতিথি লেখক এর ছবি

হতে পারে... আমি একটু বড় করে ছবিটা আঁকতে চেয়েছিলাম...
সময় স্বল্পতার জন্য পারলাম না।

আপনাকে ধন্যবাদ... হাসি

_________________________________

মেঘদুত

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগল, তবে এমন পরিণতি আমরা চাই না, আমরা চাই, অন্তুরা সর্বদা লাফাতে সক্ষম থাকুক, সেই উৎসাহে প্রেরণা মিলুক আমাদের টাইগারদের।

-অতীত

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

লেখা ভালো হয়েছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে আর ডিভিডি ফেরত দিতে বলার সময়ই কেন যেন মনে হচ্ছিলো এরকম একটা কিছুই শেষ দিকে থাকবে।
বদ্দার সঙ্গে একমত। একটু সম্পাদনা করলে গল্পের ধারটা আরেকটু বাড়বে মনে হয়। ভালো লাগলো গল্পটা। চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি .. চলবে।

_________________________
মেঘদুত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গল্পের সঙ্গে লেখকের নাম নাই কেনু?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আছে তো ভাই, নিচে লেখা...

_____________________________
মেঘদুত

বইখাতা এর ছবি

ভাল লেগেছে গল্পটা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।