একজন আলি কেননের উত্থান পতন-আহমদ ছফা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৩/০৪/২০১১ - ৮:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একজন আলি কেননের উত্থান পতন-আহমদ ছফা

আসরাফ

দে তোর বাপরে একটা ট্যাহা।
ভিখিরিরা সাধারনত ভক্ষাদাতাকেই বাবা বলে ডাকে। আলি কেনানা দাবি ছেঢ়ে বসলো সম্পূর্ণ উল্টো। অর্থাৎ সে ভিক্ষাদাতার বাবা এবং একটা টাকা তাকে এখখুনি দিয়ে দিতে হবে। একেবারে যাকে বলে কড়া নির্দেশ। এই চাওয়ার মধ্যে রিতিমতো একটা চমক আছে।

এভাবেই উপন্যাসের শুরু। একজন নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষ যার নাম আলি কেনানা। এই নির্দেশের মধ্যই সে খুঁজে পায় তার আত্ববিশ্বাস,সে বুঝে যায় ভাল করে নির্দেশ দিতে পারলে যে কেউই তা পালন করতে বাধ্য। অধিকাংশ মানুষের মনের জোর থাকে খুব কম। সব সময় থাকে একটা আস্থাহীনতার ভয়। হঠাৎ টিকটিকির ডাকের শব্দে যেমন ভয়ে চমকে উঠতে হয় গঠনাটি অনেকটা এরকমই।

"একজন আলি কেনানের উত্থান পতন" নাম করন থেকেই ধারনা করা যায় এর কেন্দ্রিয় চরিত্রে আছে আলিকেনান নামে একজন । আহমেদ ছফা খুবই বাস্তাব ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়েছেন এই আলি কেনানাকে। যেমন করে আমাদের চারপাশের মানুষের রাতারাতি উত্থান হয় এবং পতনও ঘটে তাদেরই একজন এই আলি কেনান।
ভোলা জেলার একটি ছোট মহকুমা শহর। পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খাঁ একদিন মিটিং করতে গিয়ে নৌকায় গ্রামবাসি দের আক্রমনের শিকার হন। তার তাবেদারা তাকে ফেলে পালায়। আলি কেনান সেই নদীতেই মাছ ধরতে ছিল।গভর্নরের জীবন বাঁচিয়ে আলি কেনান হয়ে যায় গভর্নরে একান্ত পিওন। নামে পিওন হলেও তার ক্ষমতা ছিল প্রায় ঈশ্বরের কাছা কাছি। মন্ত্রি, এমপি দেরকেও তার কথা শুনতে বাধ্য করতেন। গভর্নরের পরেই যার এত ক্ষমতা হঠাৎ তার পতন হয়। স্বর্গ থেকে আদমের পতনের মতো একেবারে মাটিতে। আলি কেনান ভিখারির গোত্রেয় হয়ে উঠতে থাকে।
কিন্তু আলি কেনন আবার শুরু করেন জীবন। একেবারে অন্য প্রান্ত থেকে। আবার মাটি থেকে স্বর্গে যাত্রা। নিজেকে আলখেল্লায় জড়িয়ে পীর সেজে গড়ে তুলেন তার নতুন সম্রাজ্য। খুব সতর্কতারসহিত জৌলুস বাড়াতে থাকেন তার সিংহাসনের। সেবকের সাথে সাথে সেবা। গরিব শিশ্যদের সাথে সাথে আসতে থাকে ধনিরা সেই সাথে ধনেরাও। কিন্তু শেষ বিপর্যয়ের হাত থেকে সে রক্ষা পায়নি।
দৃঢ়চেতা, সাবধানি,চতুর হওয়ার কারনে তার চরত্রটি অন্য পীর ফকিরদের সাথে মলিন হয়ে মিশে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচান উপন্যাসিক।যদিও কৌশল গতদিক থেকে আর দশটা পীর ফকিরদের সাথে তার পার্থক্য সামন্যই।তিনিও ভন্ডামির দ্বারা ঠিকিয়েছেন সাধারনকে। সেও স্বপ্নে অলৌকিক দর্শনের দাবি করেছেন। মানুষকে ধোকা দেবার জন্য পীররা কেউ ঈশ্বর,কেউ তার প্রতিনিধী। কেও কেও সুফি আলেম দরবেশ বাবা দের। হতে পারে পীর বাবারা নিজেদের অস্তত্ব রক্ষার জন্য এমন একজনের সাক্ষাত পান যার অস্তিত্ব কখনো ছিলই না। জিবীত পীররা তাদের চিন্তা, চেতনা দিয়ে তাদের কে করেছে মহামান্মিত। আলি কেনান এমনই তৈরি করেছেন"বাবা বু আলি কলন্দর" কে। আলি কেনানের শিশ্যদের কাছে এই বাবা ব আলি কলন্দর আসীম ক্ষমতাধর প্রায় ঈশ্বর তুল্য পীর।
এমনকি হতে পারে যে আমাদের দেশের যে সকল মাজারের বিক্ষাত মানুষজন তারাও তাদের পরবর্তি প্রজন্মের কল্পনা আর মিথ দ্বারা সৃষ্টি??
একন কর্মঠ আত্মবিশ্বাসি চরিত্র তৈরি করতে আহমেদ ছফা কোন কৃপনতা করেন নি। তাকে বলিষ্ঠ স্বাস্থের আধিকারী করেছেন। যেমন করা হয়েছিল সকল নবী,ও ধর্মগুরুদের। কন্ঠস্বর দিয়েছেন তেজস্বি বুদ্ধি দিয়েছেন আমাদের দেশের রাজনীতি বিদদের মতো। কূট কৌশলে তাকে করেছেন বাস্তবের সাথে মিলে যাওয়া মানুষের মতো। লোভ লালসা,যৌনতা সবই দিয়েছেন আবার নিয়ন্ত্রন করেছেন বাস্তবতা ও সময়ের তাল মিলিয়ে।
ধার্মিকদের দুর্বলতার দিক গুলি উঠি আসছে ঢেউ এর মতো স্বাভাবিক গতিতে। আলি কেনান গালাগালি করতো আশ্রাব্য ভাষায় কিন্তু ভক্তদের কাছে তাও শ্রুতিমধুর মনে হতো। তার উদ্ভট আচরনকে দেখতো পরম করুনাময়ের হেয়ালী হিসেবে। ভক্তদের আদর যত্নে যখন মোটাতাজা হয়ে উঠলেন ভক্তরা তখন তার দেহে দেখতে পেত নূরের ঝলকানি।যখনর না খেতে খেতে স্বাস্থ ভগ্ন হয় তখন ভক্তরা বলে" খোদার প্রেমে দিওয়ানা স্বাস্থ দেখার সময় কোথায়। যখন ইসলামের গর্হিত কাজ করতো যেমন কুকুর নিয়ে ঘোরাফেরা লোকে বলতো কত উদার আমাদের বাবা। সেই কুকুর যখন লাথি দিয়ে রাস্তায় ফেলে আসে ভক্তরা বলল কুকুর নাপাক প্রাণী।
মাজার কে কেন্দ্র করে এই যে ব্যবসা,মাজারে কাজ করে তাদের ইতিবৃত্ত,উরুসের নামে টাকা কামানোর উৎসব। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দখল বেদখল। রাজনীতিবিদদের সুবিধাবাদী আবস্থান। কবরকে কেন্দ্র করে মানুষের দর্বলতা সব কিছুই চমৎকার ভাবে উঠে এসেছে এই উপন্যাসে।

আহমেদ ছফার লেখার যে দিকটা আমার কাছে পছন্দের তা হলো লেখায় বর্ণনার ঢিলেঢালা ভাবটা থাকেনা। অনেকটা প্রবন্ধের ঢং কিন্তু জটিলতার দোষে দুষ্ট নয়। সহজ কথা তিনি সহজে বলেনই না সহজ করে বুঝিয়েও বলতে পারেন। একজন আলি কেনান উপন্যাসটা ব্যাপ্তির কারনেও এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায়। এক্ষেত্র আমার ধারনা উপন্যাস শুরু করে দিলে উপন্যাসই পাঠককে দিয়ে পড়িয়ে নেয়। এটি ভাষার কারনেও হতে পারে আবার বলে যাওয়ার ধরনের কারনেও হতে পারে।
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছেন "খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি",প্রকাশ কাল ফেব্রুয়ারী২০০৪। প্রচ্ছদ করেন সমর মজুমদার। বইটি উৎসর্গ করা হয় চিত্তরঞ্জন সাহাকে। পৃষ্ঠা সংখা ৬৪। বইটির গায়ের মূল্য৬০টাকা।

ashraf.bsk@gmail.com


মন্তব্য

পাগল মন এর ছবি

অনেকখানি পড়লাম, তারপরে আর পারলাম না। এত বানান ভুল থাকলে যত ভালো লেখাই হোক পড়া যায় না।

ভাই, সচলে লেখা পোস্ট করার আগে প্রিভিউ দেখা যায়, দয়া করে এর পরেরবার লেখা দেওয়ার আগে ভালো করে প্রুফরীড করে নিবেন। আর আপনি যদি যে বানানগুলো ভুল করেছেন সেগুলোর শুদ্ধ বানান না জানেন তাহলে ডিকশনারী দেখে নিবেন।

এক তারা দিলাম বানান ভুলের জন্য। আশা করি পরেরবার বেশিরভাগ ভুলই শুধরে নিবেন। শুভকামনা রইলো।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

ashraf.bsk এর ছবি

পাগল মন@
ধন্যবাদ।
লেখাটা দেখার পর আমারও খুব বিরক্ত লেগেছে। শিরোনাম থেকেই ভুল।
এই ব্লগে লেখা দেয়ার কিছু ঝামেলা আছে। আমি সংরক্ষন করেছিলাম। পরে বানান শুদ্ধ করে দেব বলে । কিন্তু এডিট করার সুযোগ মনে হয় আমাকে দেয়া হয়নি। তবে অবশ্যই পরবর্তি লেখা বানান ভুল কমানোর চেষ্টা করবো।

পাগল মন এর ছবি

"সংরক্ষণ" ক্লিক করা মানে আপনি আপনার লেখা পাবলিশের জন্য জমা দিচ্ছেন। অতিথি হিসেবে আপনি এডিট করতে পারেন না। আপনি আপনার লেখা প্রিভিউ দেখতে পারেন "চোখ" অঙ্কিত বাটনে ক্লিক করে।

আর আপনাকে আমি অনলাইন ডিকশনারীর লিঙ্ক দিয়েছি, কোন বানান না পারলে সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন। সেখানে মোটামুটি অনেক বানানই পাবেন। আপনার কমেন্টেও কয়েকটি বানান ভুল। প্লিজ দয়া করে বানানগুলো ঠিক করে লিখুন। বানান কোনটি সঠিক সেটা জানার জন্য সচলের লেখা পড়ুন বেশি করে কেননা এখানে বেশিরভাগেরই বানান ভুল অনেক অনেক কম হয়।

এত সমালোচনা করলাম দেখে মাইন্ড খাইয়েন না আবার, আপনার ভালোর জন্যই এগুলো বললাম। আর বানান ভুল কম/না থাকলে আমাদেরও সুবিধা পড়তে। ভালো থাকবেন।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

ashraf.bsk এর ছবি

মাইন্ড করি নাই। বেশ খুশি হয়েছি।
আপাকে ধন্যবাদ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যতোটা সরল ভাবছেন, এই উপন্যাসটা অতোটা সরল না... রূপক আকারে উঠে আসছে বিরাট একটা ইতিহাস...
বইটা আরেকটু মনোযোগ দিয়া আবার পড়ে ফেলতে পারেন

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।