স্কুলগামী অভিভাবক ও ছেলেমেয়েরা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২৭/০৪/২০১১ - ৮:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া আর আসার ব্যাপারটা অনেকদিন ধরেই দেখি। ঝিনাইদহে দেখেছি। খুলানাতে দেখেছি। ঢাকতেও দেখছি। তবে ঢাকার ব্যাপারটা একটু বাড়াবড়ি রকমেরই। অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তিত হবেন - এটা খুবই স্বাভাবিক। আর আমাদের রাস্তাঘাটও দিন দিন আরো অনিরাপদ হয়ে উঠছে যেন। হেটে চলার মত পর্যাপ্ত জায়গা আমাদের রাস্তাতে নেইই। তার উপর যে রাস্তা যন্ত্রযানের জন্যই নিরাপদ না তা মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ হবে আর! রাস্তা পারাপারও এক কঠিন বাস্তবতা আমাদের জন্য। ফুট ওভার ব্রিজের সংখ্যা নিয়ে না হয় না-ই বললাম। যেগুলো আছে সেগুলোর দিকে কারো কোন খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। রাস্তাগুলো তাও সকালের দিকে একবার একটু করে হলেও পরিস্কার করা হয়। ফুটওভার ব্রিজগুলোর ভাগ্যে তা কখনোই জোটে বলে মনে হয় না।

তার উপর আমাদের স্কুলগুলো কিন্তু অনেক দূরে দূরে অবস্থিত। ভাল স্কুলের সংখ্যা হাতে গোনাই। আর তাই ছাত্রছাত্রীদেরকে বেশ খানিকটা রাস্তা পার হয়েই যেতে হয় স্কুলে। ফলস্বরূপ এই সব স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের সাথে প্রচুর অভিভাবকদের উপস্থিতি দেখি। এই অভিভাবকদের অনেকেই আবার স্কুলের গেটের বাইরে অনেক্ষণ বসে থাকেন। কারণ অনেক স্কুলেই অভিভাবকদের বসে থাকার ব্যাবস্থা নেই। আমার প্রশ্নটা এখানেই। এত বিপুল সংখ্যক অভিভাবকদেরকে কি আমরা বসিয়েই রাখব এই লম্বা সময়টা? যে ছেলেমেয়েরা স্কুলে ঢুকে গেল তাদের মনের ভেতরে কি অল্প করে হলেও এই ভাবনা ঢুকে যাচ্ছে না যে তাদেরকেও একদিন অভিভাবক হয়ে এইভাবে বসে থাকতে হবে? আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য এটা একটা বিপুল অপচয় ছাড়া কিছু বলে মনে হয় না আমার। হ্যা, এতে আমাদের ছেলে মেয়েরা তাদের বাবা-মায়ের সাথে বিশেষত মায়ের সাথে একটু বেশি সময় থাকতে পারছে। এতে সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের সম্পর্কটা হয়তো আগের কোন সময়ের থেকে অনেক বন্ধু ভাবাপন্ন হচ্ছে। অন্তত মাঝে মাঝে তাদের কথোপোকোথন শুনে আমার তাই মনে হয়। আবার সাথে সাথে এটাও মনে হয় এই ছেলেমেয়েরা শেষ পর্যন্ত বড় হচ্ছে না। মানসিক ভাবে ছোটই থেকে যাচ্ছে। আবার আমাদের অভিভাবকরাও তাদের বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠছেন না। তারা নিজেরা নিজেদেরকে ডিভেলপ তো করছেনই না বরং বিপন্ন করে তুলছেন।

অন্যদিকে যে ভবিষ্যৎ সমাগত তার সম্পর্কে যেহেতু অভিভাবকদের কোন ধারণা থাকছে না তাই তারা কিছুদিন পরই এই ছেলেমেয়েদেরকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। সরকারী বা অসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বেশির ভাগের জীবন-যাপন তাদের বাবা-মায়ের থেকে আলাদা। কারণ তারা খুব দ্রুতই বুঝে যায় বাবা-মায়েরা যে নিরাপত্তার বেস্টনি তাদের জন্য এতদিন দিয়ে গেছেন, বর্তমান পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য সেটা যথেষ্ট সহায়ক নয়। কিন্তু কি যে তাদেরকে টিকে থাকতে সাহায্য করবে তা তারা নিজেরা বের করার উপায় খুজে পায় না। কারণ তা বের করার জন্য জীবনের অববা দৃষ্টির যে অভ্যস্থতা দরকার তা তাদের নেই। আর তাই তাদেরকে অন্ধের মত অনুকরণই করতে হচ্ছে।

এই ব্যাপারগুলোর সাথে আরো অনেক কিছু জড়িত। আমি সবগুলোর তালিকা তৈরী করতে বসিনি। শুধু ভাবি, অন্তত আপাতত, এই চলমান ব্যবস্থাটায় কোন পরিবর্তন আনা যায় কিনা। যদি আমাদের আশপাশের কয়েকটা বাড়ি মিলে আমরা একটা পরিমন্ডল তৈরী করতে পারি। যে পরিমন্ডলের ছেলেমেয়েরা সবাই একসাথে স্কুলে যাবে। ওদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে ওদের ভেতরের সবথেকে জ্যেষ্ঠজন। এই ভাবে হয়তো আমরা ছেলেমেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই কিছু নেতৃত্বের গুণও শিখিয়ে নিতে পারতাম। আবার প্রায় সমবয়েসীদের ভেতরে একটা নির্ভরশীলতার চর্চাও তৈরী হতে পারত। এতে সামাজিক নিরাপত্তাও হয়তো তৈরী হতো আরো। কিন্তু সমস্যা হল যে আমরা পাশের এ্যাপার্টমেন্টের মানুষদেরকেই বিশ্বাস করতে পারি না, তারা আশপাশের কয়েকটা বাড়ির মানুষ এবং তাদের ছেলেমেয়েদের উপর আস্থা রাখি কিভাবে?

রাজীব রহমান


মন্তব্য

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

আপনার লেখাটি ঢাকার নৈমত্তিক সমস্যা। এটার সমাধান বোধ হয় এত সহজ নয়। ধন্যবাদ এই দরকারি পোস্টটির জন্য।

অপছন্দনীয় এর ছবি

সমস্যাটা অনেক দিক দিয়ে এসেছে।

অনেক অভিভাবকের কোন কাজ নেই পৃথিবীতে - এবং সাধারণতঃ কাজ না পেলে তাঁরা কাজ খুঁজে বের করার চেয়ে "ভাবীদের" সাথে গপ্প করে কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন।

সব স্কুলের মান উন্নত করার চেষ্টা কোনদিন করা হয়েছে কিনা জানিনা। তবে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি সব পর্যায়েই দেখবেন কিছু উন্নাসিক আছেন যাঁরা কয়েকটা বাদে অন্য প্রতিষ্ঠান যে গরুর খোঁয়াড় নয় সেটাই স্বীকার করতে রাজি নন। বিশেষ করে ইউনিভার্সিটির ব্যাপারে কিছু মানুষকে দেখবেন দুইটা ছাড়া আর কোন ইউনিভার্সিটির অস্তিত্ব আছে বাংলাদেশে এটাই জানেন না। স্কুল কলেজের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।

কিছুদিন আগে বি আর টি সি স্কুল আওয়ারে শুধুমাত্র স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আনা নেয়ার জন্য একটা সার্ভিস চালু করতে চেয়েছিলো। সেই সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় যাত্রীর অভাবে। নীল রক্তের মানুষের ছেলেমেয়েরা গাড়ি ছেড়ে বাসে যাবে সেটা তাঁরা চেয়ে চেয়ে দেখবেন? খানদান বলে একটা জিনিস আছে না? (যারা এমনিতে বাসে যেতে বাধ্য তারা এর আগে পরে সব সময়েই বাসে যায়)।

বাংলাদেশের অনেক বাবা মা-ই সন্তানের উপরে "পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ" রাখতে চান - তাতে সন্তান মেরুদন্ডহীন হয়ে বড় হলেও কিছু আসে যায় না। আমার এক ক্লাসমেটের মা সে যখন কলেজে পড়ে তখনও সারা দিন কলেজে বসে থাকতেন, একগাদা কলা আর ডিম ইত্যাদি নিয়ে। ক্লাস শেষ হলেই তাকে ধরে খাওয়াতেন এবং তারপর দেখে শুনে বাসায় নিয়ে যেতেন।

সবকিছুই ঠিক করা সম্ভব, শুধু যদি নিজেদের মননশীলতা ঠিক করা যায় (নীল রক্তের মানুষদের বাদ দিয়ে, ওনাদের মননশীলতা এমনিতে ঠিক হবে না, ঘাড় ধরে করাতে হবে)। সেটা কেউ করতে চায় কিনা সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন।

রাজীব  রহমান এর ছবি

মননশীলতা ঠিক করার কথাটা ঠিক বলেছেন। সেটাতে আমরা আসলেই আটকে গেছি। আর নীলদের ঘাড়ে হাত দেবে এত সাহস কার?

বিআরটিসির বাসের ব্যাপারটাও হতাশার। এই ব্যাপারটা একেবারেই নতুন একটা চেষ্টা ছিল। এরকম একটা ব্যাপার জনপ্রিয় করতে খানিকটা সময় লাগবে সেটাই স্বাভাবিক... অথচ কয়েক দিন পরই কার্যক্রম তুলে নেয়া হল...

guest_writer এর ছবি

বলাইদা,আপনি তো সমঝদার মানুষ। নিজেই বুঝে নিন না আমি কী বলতে চেয়েছি 'আমাদের'দিয়ে। যে ডেকরি মেয়েগুলা পাগল অইগুলা আমাদেরই প্রোডাকশন মাগার বেয়াড়া হয়ে গেছে। হুদুদু/হুদুধ আইন দরকার এদের জইন্য। গড়াগড়ি দিয়া হাসি
ধরুন এই পাকমনপেয়ারুটা টাইম মেশিনে করে একাত্তরে চলে গেল। পাকি জন্তুগুলোর সামনে পড়লে ওগুলো পেয়ারুটাকে জিগাবে,"এ! তু মুসালমান হ্যায়?"ও জওয়াব দেবে হুজুরদের,"হা হা আলবৎ। লা ইলাহা ইল্লালাহ...।" এরপর মধ্যযুগগুলো সওয়াল পুছবে,"নামুরাদ,পেট ক্যায়া পাকিস্তানি পারচাম রাং কার্নে কা জাগা হ্যায়? পেয়ারুর জবাব না পেয়ে তারা রাগ হয়ে যাবে। আদেশের সুরে বলবে,"তুমহে নিজাম দিয়া জাতা হ্যায় কি আব্‌হি তুম মাফি মাঙ্গো। বাঙ্গাল কুত্তো কো হাম এইসা মওকা নেহি দেতা লেকিন তুম আচ্ছে গোলাম লাগতে হো। যাও পাকসাফ হোকে,বাল কামাকে হাজির হো।" পেয়ারু আসমানে তাকিয়ে মিনমিন করে বলবে,"আল্লাগো,কী কয় বুজি না। কিন্তু শুনতে বড়ই সুখ পাইলাম?" ওর নড়চড় হচ্ছে না দেখে দেবে পাকিরা ওর ভূঁড়িওয়ালা পেটে বেয়নেট চার্জ করে। বিদ্ধ হবে পাকমনপেয়ারু। ওর রক্তের সাথে গলে গলে পড়তে থাকবে পাকিস্তানের সিতারা-হিলালওয়ালা পতাকা।
শালার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। আমাদের পবিত্র পতাকাটা আঁকছে কপালে। পাকি ফেইক পতাকাটা ওর কপালে না আইকা গালে আর প্যাটে আঁকছে। শালার ধোনেও পাকি ফ্ল্যাগ ছিল মনে হয়। অসিম আকরম ওরে দেইখা বলতেছিল অই দেখা যায় এক পাকমনপেয়ারু...

চিন্তক অতুল অনুরণন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।