কাচ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৫/২০১১ - ১০:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দূর থেকে দেখলে হঠাৎ হঠাৎ অপূর্ব লাগে, আপন প্রতিচ্ছবির প্রতিফলনে জ্বলতে থাকে সূর্যের পরিষ্কার আলোতে। মনে হয় কোনো অমূল্য রতন হয়তোবা। কিংবা নাগরিক বর্জ্যস্বরূপ বাস্তুহারা মানুষের মতো শৈল্পিক, বিত্তের ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা সুকোমল চিত্তের কল্পনায়। কিন্তু কাছে যাওয়া যায়না। কাছে গেলে স্বপ্নটা কুৎসিত হয়ে ওঠে, গা ঘিনঘিন করে। কোনোমতে চোখ ফিরিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে এবং নাক বন্ধ করে সরে যেতে হয়, সুসজ্জিত, সুরক্ষিত, সুবাসিত প্রাডো কিংবা পাজেরোর মধ্যে থাকলেও। ডানলপ কিংবা ব্রিজস্টোন প্রাণপণে চক্কর খেয়ে অবাঞ্ছিত কদাকার উপস্থিতি পিষে সামনে এগিয়ে যায়। সামনে কোনো ডুপ্লেক্সের খোলামাঠে খেলা করে শুভ্রমেঘে পরিবেষ্টিত নীলাকাশ। অন্যদিকে সে অনেকটা ওইরকম উদ্বাস্তু কোনো টোকাই এর মতো; স্বাধীন, ভবঘুরে, চিন্তাহীন, অমূল্য ইত্যাদি ইত্যাদি। দূরে থেকে দেখলে সেও জ্বলে, তাকে ঘিরে লক্ষ্য রাখা মানুষগুলোর কল্পনাও জ্বলে। কারও কারও কাছে সে কিংবা তার উপস্থিতি পরম আরাধ্য, শুষ্ক নির্জীব এই শহরের মধ্যে।

আত্মাহীন জীবিতদের মাঝে তার জ্বলজ্বল জীবন্ত চাকচিক্য অনেককেই হতবাক করে হঠাৎ হঠাৎ। তাকে পরশপাথর ভেবে ভুল করে অনেকেই। কিন্তু কাছে গেলেই ভুল ভেঙ্গে যায়, সাথে ভাঙ্গে কিছু সুপ্ত আশাও। সে ধূসর হয়ে দাঁত কেলিয়ে পড়ে থেকে পথিককে দেখে। কোনো বিকার নেই, চেহারায় উজ্জ্বলতা তো নয়ই। বরং হুট করেই যেনো তার কাছে থেকে উৎকট উদ্বাস্তু মানুষের মতো নোংরা রূপ বেরিয়ে পড়ছে। বিরক্ত হয়ে ক্ষয়ে যাওয়া পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে লাথি মারে একজন। তাল হারিয়ে দুই-তিন গোড় খেয়ে রাস্তার অনেকটা মাঝখানে এসে পড়ে সে।

এবং তার সাথে সাথেই মুখোমুখি হয়ে যায় শহুরে স্বপ্নের। হঠাৎ তার এই বীভৎস রূপ খুব কাছে থেকে দেখে সমস্ত স্বপ্নেও তালগোল পাকিয়ে যায়। দিশেহারা হয়ে একের পর এক পিষে যায় ডানলপ দিয়ে কিংবা ব্রিজস্টোন দিয়ে। পেছনে আর খেয়াল করেনা কেউ, বমি আসতে পারে দেখলে। অথচ, উপর্যুপরি পেষনে মাটিতে কিংবা রাস্তায় মিশে যাওয়ার পরিবর্তে উলটো কান্ড ঘটে যা অগ্রজ পথিকদের নজরে আসেনা। এখন একটা না, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো জ্বলজ্বল উপস্থিতি বাতাসে ইতস্তত কাঁপতে থাকে। চিকচিক করে ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাস্তার লেনজুড়ে। অনেক পেছনে থাকা নবীন স্বপ্নগুলো আয়ত্বের মধ্যে আসেনি এখনও, তাদের কল্পনায় অনেক অনেক পরশপাথর হয়তোবা।

-অতীত


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

ভাল্লাগলো। চলুক
তবে কাচ নয় তো, 'কাঁচ'। মন খারাপ

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি অতীত এর ছবি

ধন্যবাদ তিথীপু।

আমি যতদূর জানি কাচ বানান ঠিকই আছে, "কাঁচ" হবে না। আপনি বলার পরে অনলাইন বাংলা অভিধানেও দেখলাম। তবে "আয়ত্বে" বানান নিয়ে দ্বিধান্বিত। মনে হয় "আয়ত্তে" হবে। এটা খেয়াল করিনি পোস্টের সময়।

অতীত

অতিথি অতীত এর ছবি

ধন্যবাদ আয়নামতি1।

আমার জানামতে "আয়নামতি" নিকে একজন অতিথি সচলে লিখছেন। আপনার নিক "আয়নামতি1"। আপনি কি তার পরের সংস্করণ? চিন্তিত

অতীত

আয়নামতি1 এর ছবি

বেশ লেখেছেন হাততালি

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

বুঝি নাই ওঁয়া ওঁয়া

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।