শবনম শিউলি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৫/২০১১ - ২:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল সৈয়দ মুজতবা আলীর 'শবনম' পড়ব। এর কাছে চাই, ওর কাছে চাই, কিছুতেই সুবিধা হয়না। অবশেষে তিথীডোর মেহেরবানি করলেন (অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে)। ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে টুকটুক করে আধেকটা শেষ করেছি মাত্র। মাঝপথেই লিখতে বসলাম। এই লেখাটাকে বুক রিভিউ বলা যাবে না কোনমতেই। আলী সাহেবের বইয়ের রিভিউ লেখার স্পর্ধা করবো না। এই লেখক খুব সম্ভবত একটা বাজারের ফর্দকেও সুখপাঠ্য করে তোলার ক্ষমতা রাখতেন। আজকে লিখতে বসেছি শবনম পড়তে বসে আমার অনুভূতি নিয়ে। তারপরেও, ভবিষ্যতে শবনম পড়ার ইচ্ছা থাকলে সামনে আর না আগানোই ভালো হবে, এখানে স্পয়লারের অভাব হবে না।

প্রথমেই জানিয়ে রাখি 'শবনম' নিয়ে আমার ধারণা কী ছিল। ভালবাসা বুঝতে হলে, ভালো কীভাবে বাসতে হয় শিখতে হলে, 'শবনম' পড়তে হবে। ভালবাসা, বিরহের এক অনন্য গল্প এই 'শবনম'। বইয়ের শেষে হয়ত পুরোটাই বুঝবো, কিন্তু আশা ছিল অর্ধেকে এসে অন্তত একটা কিছু শিখব, হয় ভালবাসা, নয়তো ভালবাসায় পড়া, তাও না হলে বিরহটা অন্তত। কিন্তু দুঃখের সাথে অনুধাবন করলাম মাথায় কিছুই ঢুকে নাই। যেই তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই আছি।

নিজে তো কিছু শিখলামই না, তার উপর শবনম কেন মজনূনের প্রেমে পড়ল সেটাও ঠিক বুঝলাম না। মজনূনের ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা হয় নাই। উনিশ বছরের পরীর মত সুন্দর একটা মেয়ে, যেচে গল্প করতে আসছে, যে কেউই তো আকৃষ্ট হবে। মজনূনও হয়েছে। আর সে কারণেই শবনম আর আমার একই প্রশ্ন, এতো সুন্দর না হলে কি মজনূন ওকে ভালোবাসতো? শবনমকে আমার মনে হয়েছে ছটফটে ছেলেমানুষ টাইপের। একটু পাগল পাগল, কখন কী করে বলা যায়না, কথায় কথায় কবিতা আওড়ায়। দেখতে মজাই লাগে। পোলাপান তো ধরাও খায় এভাবেই। উপরের দুই একটা জিনিষ দেখে পাগল হয়, হুট করে বিয়ে করে, দুইদিন পর ঘোর কাটলে হায় হায় করে! আমি এখন চিন্তায় পড়েছি এই দুইজন কে নিয়ে। এরাও কি সেই একই পথে যাচ্ছে? উত্তর পেতে বই শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমাকে।

আবার আগের কথায় ফিরে আসি, শবনম কী খেয়ে মজনূনের প্রেমে পড়তে গেল। বইয়ের অর্ধেক পর্যন্ত যতটুকু বুঝলাম তা হচ্ছে, মজনূনের শবনমকে না চাওয়াটাই মেয়েটির কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মজনূন নিজের মনের কাছেও শবনমকে চাইবার সাহস করেনি। দূরের থেকে দেখতে পেলে অন্য দরজা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছে। যাকে কখনো পাওয়া যাবে না, তার প্রেমে পড়তে ভয় লাগতেই পারে। কী দরকার খামোখা কষ্ট পাওয়ার, সামনে দিনগুলো দীর্ঘশ্বাস দিয়ে ভরিয়ে তুলবার? শবনমও তো বুঝতে পেরেছিল। ওর ভালবাসা কি তাহলে করুণা থেকে প্রস্ফুরিত হোল? করুণা নিঃসৃত ভালবাসা প্রাপককে কিছুদিনের জন্য শান্তি দিলেও অবশেষে কষ্ট দেয় অনেক বেশি। তবে করুণা বললে মনে হয় দুইজনের প্রতি অবিচার করা হয়ে যায়। শবনম মনে হয় এতোটা বোকা নয় যে করুণা দেখাতে যেয়ে ভালবেসে বিয়ে করে বসবে। আর মজনূনও এমন কোন জলে পড়েনি যে কারো করুণা পেতে হবে। শব্দটা খুব সম্ভবত মায়া হবে। হতে পারে, মায়ার বাঁধন খুব শক্ত হতে পারে।

উপরের একটা প্রশ্ন কিন্তু এখনো ঝুলে আছে, "এতো সুন্দর না হলে কি মজনূন ওকে ভালোবাসতো?" বইয়ে সরাসরি উত্তর এখনো পাইনি, পাবো বলেও মনে হয় না। কিন্তু আমার ধারনা, বাসত। শবনমের যেই উচ্ছল প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্ব আঁকা হয়েছে, সেটা যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে। বাহ্যিক সৌন্দর্যে ঘাটতি থাকলেও করবে। শবনম হাসাতে পারে, প্রশ্ন করে চিন্তায় ফেলতে পারে, দেশ বিদেশের গল্প করতে পারে। সুন্দর চেহারার প্রতি মোহ ছুটতে খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু একজন সুবক্তা বইয়ের মত, কখনো পুরনো হয় না। যাই হোক, যে কারণে বইটা পড়তে বসা, সেটা কতটুকু আমার জন্য সার্থক হবে বুঝতে পারছি না। তবে এই দুইজনের ভালবাসা দেখে একটা গান শুনতে ইচ্ছা করছে, "আবার ভালবাসার সাধ জাগে।"

-রু


মন্তব্য

রু (অতিথি) এর ছবি

আমি তো ভাবলাম মডারেশনে আটকা পড়েছে, নীড়পাতায় নাই যেহেতু। এখন দেখতে পাচ্ছি অতিথির ব্লগে দিব্যি বসে আছে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ভালো লিখেছেন।

রু (অতিথি)  এর ছবি

ধন্যবাদ।

নাঈম এর ছবি

আমিও তিথিপুর রিভিউ পড়ে শবনম কিনছিলাম। পইড়া কিছু বুঝি নাই মন খারাপ ভাবলাম আমার এন্টেনা ছোড তাই কিছু ধরা পড়ে নাই। খাড়ান, আবার পইড়া লই। তারপর কিছু কমুনে হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।