কুকুর, বেড়াল ও বেওয়ারিশ লাশ

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৫/০৬/২০১১ - ১০:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাত তিনটা পয়তাল্লিশ।

হঠাত্ করেই কেমন জানি ঠান্ডা লাগতে শুরু করলো। খালি গায়ে বসে ছিলাম। জুন মাসের গরমে মাথার ঘুন পোকাও বের হয়ে যাওয়ার কথা।

একটা টি-শার্ট খুজে নিলাম। মাথার উপর সিলিং ফ্যানটাকে এখন হেলিক্পটার মনে হচ্ছে। ফ্যান বন্ধ করে দিলাম। কেমন জানি খানিকটা ভয় ভয় লাগছে। কারণ, মনে হচ্ছে ঠান্ডাটা আসলে বাইরে না, ভিতরে।

প্রতিরাতে আমার জানলা’র পাশ দিয়ে ঝরা পাতা, মরা পাতা গুলোর উপর দিয়ে খচ খচ শব্দ করে বিড়াল হেটে যায়। ঝুপ করে কার্ণিশে লাফ দিয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে অদ্ভুত সুরে কান্নাকাটিও করে বোধহয়।

অভ্যস্ত হয়ে যেতে যেতেও প্রতিবার তাদের হেটে যাবার শব্দে মাঝেই খানিকটা চমকে জানালায় পেছন ফিরে তাকাতে হয়। বেড়াল গুলো মনে হয় বেশ আমোদ পায় চমকে দিয়ে। তারপর ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে চলে যায়। কে জানে নি:শব্দে হাসেও হয়তো। তারা জানে, আপাত ভয়হীন ছেলেটা আসলে কতোটা ভীতু।

'আমি কখনোই বলতে পারি নি....আমি অন্ধকারে ভয় পাই মা'।

Mother do you think they’ll drop the bomb
Mother do you think they’ll like the song
Mother do you think they’ll try to break my balls?
Ooooh aah, Mother should I build a wall?

২.

আমার আসলে একটা ছোট্ট বাচ্চা কুকুর হয়ে জন্মাবার কথা ছিলো।
থাকে না, ওইযে এখনো ঠিকমতো পোষ না মানা, সারাক্ষন ঘরের এইদিক ঐদিক ঘুরে বেড়ায়। কাউকে তেমন গা করে না। এদিকে পাখি তাড়া করে ঐদিকে বল নিয়ে দৌড়ায়। সবই ঠিক আছে কিন্তু মালিকের ডাকে তেমন পাত্তা দেয় না ঠিকই কিন্তু খাবারের সময় এসে লেজ নাড়িয়ে খেতে বসে যায়?
অপ্রভুভক্ত কুকুর।

কুকুর জীবনটা খারাপ না। নিজের প্রতি সম্মান ছাড়া আর বাকি সবই আছে। সম্মান বোধটা এসেছে মানুষ হয়ে জন্মাবার ফলে। কুকুর হয়ে জন্মালে এই হ্যাপাটা থাকতো না।

কুকুর জীবন।

সারাদিন কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমিয়ে থাকা

খাবার দিয়ে যাওয়া

খাওয়া

খাওয়া শেষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখে যাওয়া

ইচ্ছে হলে সারাদিন হ্যা হ্যা করে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো। এদিক ঐদিক মুখ দেয়া।

ভাদ্র মাস না হয়ে বারো মাসই কোন রকম ভালোবাসার ধার না ধেরে কুকুরী দেখে শরীর গরম হয়ে ওঠা

আবার নিজের আপন ‘কুকুর ঘর’ এ ফেরা।

সারারাত জ্বলজ্বলে চোখ জ্বেলে বসে থাকা।

Who was given a pat on the back.
Who was breaking away from the pack.
Who was only a stranger at home.
Who was ground down in the end.
Who was found dead on the phone.
Who was dragged down by the stone.

৩.

'সময় ছুটে চলে, আমি আটকে পরে রই, আমার রাস্তা হাটে আমি হাটি না।'

মাথাটা খামচে ধরে বসে রইলাম। আর কিছুক্ষন পরই আমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে ঘোষনা করা হবে।

হঠাত্ করেই আশেপাশে'র সব কিছু খুব আপন মনে হতে লাগলো। রাস্তায় হেটে যাওয়া চুল সরলীকৃত তলোয়ারে’র ফলার মতো মেয়েটা, সিগারেট হাতের আশ্চর্য বিষন্ন ছেলেটা, দিবানিশি’র লাইনে দাড়িয়ে অতিষ্ঠ হয়ে যাওয়া মানুষ গুলো.....ব্যাগ বই কাধে নিয়ে দুর্বার ব্যস্ত অতি পরিচিত দৃশ্য.... সব কিছু, খুব সহজ প্রতিদিনে’র ঘটনাগুলো। যার প্রতি আমার আলাদা আগ্রহ ছিলো না কখনোই। সে সব কিছু থেকেই আমাকে আলাদা করা হবে। করা হবে ভুল বলছি, আমার অনাগ্রাহতাতেই তারা আলাদা হবে।

Death Certificate:

Patient was brought dead. I have declared the patient dead at 8:30 pm
The pulse was not found. Bp was uncountable. Heart sounds were not audible, No respiratory movements, Pupils were fixed, dilated and non-reacting to light.
So I have declared the patient was died due to cardio-respiratory failure.

ঢুকবার পথে শেলি মিস এর সাথে দেখা।

- কেমন আছেন মিস?
- আরে, এইতো ভালো। তুমি কেমন আছো?
- মিস, আমাকে কি চিনতে পেরেছেন আসলেই?
- আশ্চর্য, চিনবো না কেন? তোমাদের কি আমি কখনো ভুলে যাই? মিস্ এর সেই উজ্জল হাসি। তোমাকে তো ক্যাম্পাসে দেখি না?
- মিস, ড্রপ ছিলো।
- খুব ভাল কথা! খুবই ভাল কাজ করেছো।
- যাই মিস।
মিস্ ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালেন। এই শেলি মিস এর কাছে ফিজিক্স-১ করেছিলাম। প্রায় তিন বছর আগে।
আমি তাকে বলতে পারলাম না যে আমি আসলে একটা বেওয়ারিশ লাশ।

There must be some mistake
I didnt mean to let them
Take away my soul.
Am I too old, is it too late?

Ooooh, Ma, Oooh Pa
Where's the feeling gone?

Oooooh, waah
The show must go on...

৪.

বেওয়ারিশ লাশদের কাটাকুটি করার আগ পর্যন্ত যথেষ্ট সময় থাকে। আমার হাতেও যথেষ্ট সময়। একটা মুখে নিয়ে বাকি ছোট ছোট মৃত্যু গুলো পকেটস্হ করলাম। আজকাল মৃত্যু’র ও দাম বেড়েছে।

- অপ্রকৃতিস্থ


মন্তব্য

রিসালাত বারী এর ছবি

চলুক

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

হাসি

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

হাসি

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

হাসি

The Reader এর ছবি

হ্যাট স অফ ।।।

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

ধন্যবাদ.. হাসি

[উপরের স্মাইলি গুলা পুরা পুরি ....সচলায়তনে'র নানান টাল বাহানা আর আমার জিপি নেট ভয়াবহ স্পীড এর মিলিত রূপ...এইখানে আমার কোন দোষ নাই মন খারাপ ]

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

হুমম! গোলাপি জাদুকর সবই আউলায় দিসে! হক মওলা!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

এই গোলাপী জাদুকর আর জীবনসাবই খালি এইসব অপ্রকৃতিস্থ গুলান গুলারে বুঝছে... গুরু গুরু

বর্ষার মেঘাভেচ্ছা।

আশালতা এর ছবি

আপনার লেখার হাত ভয়ানক ভালো ।

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

এক কথায় জীবন ধন্য হয়ে গেল দেঁতো হাসি

যেখানেই যাই না কেন 'মিশিমাখা শিখিপাখা'র অনুপ্রেরণা আমার জন্য সব সময়ই আছে। [শস্‌স্‌........ব্যাপারটা নিশ্চই ধরতে পেরেছেন......সিক্রেট ওপেন ভাবে শুধু আমাদের মধ্যেই থাক... হাসি ]

বর্ষাশুভেচ্ছা।

-----------------------------------------------------
পাগল ছাগলে'র কারবার।

আপনার নাম লিখুন এর ছবি

কি মুশকিল ! লুকোচুরির কি ঘটল বুঝলাম না, আমার ব্লগিং এর একদম শুরুর দিকে মিশিমাখা শিখিপাখা নিকে তিন চারটে লেখা দিয়েছিলাম বটে, কিন্তু ওখান থেকে কবেই তো পাত্তাড়ি গুটিয়ে সচলে থিতু হয়ে গিয়েছি । এটা নিয়ে ঢাক ঢাক গুড় গুড়ের কিছু নেই ।
আমার মত নবিস লেখকের তারিফেই জীবন এতো দ্রুত ধন্য হলে চলবে কি করে ? সচলের সত্যিকারের বাঘা লেখিয়েদের জন্যও কিছু বাকি রাখুন হাসি

আশালতা

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

দু:খিত। আসলে আমার বোঝানোতেই ভুল ছিলো। আসলে ঐ নিকে'র লেখা বা না লেখা নিয়ে আমার মন্তব্যটা ছিলো না। সম্ভবত, এখানে একটা 'ইন-সাইড জোক' ছিলো... সে যাক।

ধন্য হতে হলে সম্ভবত কি বলা হলো সেটাই প্রথম ...তারপর আসে ব্যাক্তি। এই বাচ্চা বয়সেই বাঘা বাঘা লেখিয়েদের বাঘভীতি আমার মধ্যে না ঢুকালেই না? খাইছে

ক্ষমা হোক। হাসি

--------------------------------------------------------
পাগল ছাগলে'র কারবার

আশালতা এর ছবি

ক্ষমা চেয়ে বিব্রত না করলেই কি নয় ?
আমি নেহাত মোটামাথার মানুষ তো ঠাট্টা, অঙ্ক আর কবিতা জাতীয় জিনিষ খুব কম বুঝি । ইন বা আউট কোন সাইডের জোক চট করে বুঝি না রে ভাই । কদিন আগেই আরেকজনকে এই একই বিষয় নিয়ে বলতে হয়েছিল তো, একটু অধৈর্য হয়ে উঠেছিলাম ।

লেখায় যে কারো এনকারেজমেন্ট অবশ্যই ভীষণ ভালো লাগে, কিন্তু লেখালেখির জ্ঞানসম্পন্ন অভিজ্ঞ লেখিয়েরা যখন লেখা ভালো বলেন সেটা গুরুত্ত্ববহ হয়ে ওঠার কথা । আমি একদম আনাড়ি লেখক তো আপনার দেয়া সম্মান নিতে একটু কেমন কেমন লেগেছে শুধু, ভয় দেখাইনি । কিছু মনে করবেন না, পিলিজ লাগে হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

হাসি

guesr_writer rajkonya এর ছবি

আমি আসলে একটা বেওয়ারিশ লাশ।

বলেছেন একদম আমার মনের কথাটাই।

অপ্রকৃতিস্থ১ এর ছবি

আমি আসলেই একটা বেওয়ারিশ লাশ রাজকন্যা ।সম্ভবত লাশে'র সংখ্যা আরেকটা বাড়লো। খুশি হবো না দু:খ পাব বুঝছি না। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।