সাক্ষরতা নিয়ে কথকথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৩/০৭/২০১১ - ৯:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জাতিসংঘ 2003 থেকে 2012 সাল পর্যন্ত এ দশককে সাক্ষরতা দশক হিসেবে অভিহিত করে। যার শ্লোগান হচ্ছে -“Literacy as Freedom". যে স্বাধীনতা মানুষকে জ্ঞান ভান্ডারে ডুব দেবার, যে কোন তথ্য পাবার ক্ষেত্রে সহোযগিতা করার এবং লিখিত ভাষার সাথে স্বার্থক যোগাযোগ রক্ষা করার সক্ষমতা দান করবে। সাক্ষরতা জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ মুক্তি পাবে তার যাবতীয় অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ভুল ধারনা থেকে এবং সাক্ষর হবার আগে ও পরের ব্যাপক পরিবর্তন, ব্যক্তি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবে।

বাংলাদেশে তথা বিশ্বে সাক্ষরতার সংগা সময়ের সাথে সাথে তার আবেদনের ও পরিবর্তন হয়ে আসছে: যেমন:

পঞ্চাশ এর দশক—যিনি যেকোন ভাষার মুদ্রিত উপকরন পড়তে পারবেন তিনিই সাক্ষর।.
ষাট এর দশক—একজন যিনি বোধগম্যতার সাথে যেকোন ভাষা পড়তে পারবেন তিনিই সাক্ষর।
সত্তর এর দশক-–সাক্ষরতা এমন একটি সক্ষমতা, যাতে লিখার ও পড়ার উভয় ক্ষমতাই বলবৎ থাকবে।
আশির দশক –সাক্ষরতা এমন একটি সামর্থ্যকে নির্দেশ করে- যার মাধ্যমে মাতৃভাষা বুঝতে পারবে এবং তা মৌখিক ও লিখিত ভাবে প্রকাশ করতে পারবে এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় গননা, হিসাব মৌখিক ও লিখিত ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে।

এছাড়া বর্তমানে পড়া লেখা ও হিসাব এর পাশাপাশি জীবন দক্ষতাকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

ব্রাজিলিয়ান শিক্ষাদার্শনিক পাওলো ফ্রেইরি সাক্ষরতা কে প্রচেতনীকরন প্রক্রিয়ার একটি হাতিয়ার হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষায় “reading the world” যেখানে শুধু শব্দ না পড়ে সাড়া বিশ্বকে পড়ার দিকে ইংঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এছাড়া উনি সাক্ষরতাকে সমস্যা সমাধানের, দরকষাকষির, সামাজিক প্রতিকূলতা উত্তরণের জন্য স্বার্থক যোগাযোগ এর মাধ্যম হিসেবেও দেখেছেন যা আমাদের দেশের উন্নয়নের পদক্ষেপের জন্য খুবই উপযুক্ত হিসেবে গ্রহনীয় হতে পারে।
বাংলাদেশের সাক্ষরতা হার 2005 সালে 41.1 %(United Nations Development Programme Report 2005)
ফ্রেইরী আরো উল্লেখ করেন- সাক্ষরতা এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সাক্ষর ব্যক্তি নিজের অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবে এবং তার ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য যথা সম্ভব পদক্ষেপ গ্রহন করবে। তাই দেশের অধিকাংশ মানুষ যারা নিজেদের সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পারে না, নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা নেই তাদের কে ব্যতিরেকে আমাদের সামনে চলার পথ দুর্গমই বলা যায়।
আবু হাসান
13/07/2011


মন্তব্য

এম আব্দুল্লাহ এর ছবি

স্বাক্ষরতায় স্বাধীনতা।
লেখাটি আরেকটু গোছানো হতে পারত। বাংলাদেশে সাক্ষরতার চিত্র আরেকটু ডিটেইল হতে পারত।
ধন্যবাদ।
এম আব্দুল্লাহ

নিটোল(অতিথি)  এর ছবি

বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো। সম্প্রতি দেশের সাক্ষরতার হার নিয়ে এক দফা বিতর্ক হয়ে গেল। এ বিষয়টিও আসতে পারত লেখায়।

নিটোল

তানিম এহসান এর ছবি

লেখাটা আরো বিশদ হলে ভালো হতো। কারন ফ্রেইরী এমন একজন মানুষ যিনি ‘উন্নয়ন’ আদর্শ (ডেভেলপমেন্ট ফিলোসফি) বদলে দেন একটা সুনির্দিষ্ট আঙ্গিক থেকে, তিনি ”রিফ্লেকট” এর কথা বলেন, সত্যি কথা বলতেকি, তার আগ পর্যন্ত বাহির থেকে যেয়ে যেয়ে চাপিয়ে দেয়ার একটা প্রবণতা ছিলো, তিনি সেখানে যাদের জন্যে কাজ তাদের সামাজিক, সাংসকৃতিক রিফ্লেকশন এর উপর গুরুত্ব দেন। সেই চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতাটা এখনও আছে তবে সেটার রাশ টেনে ধরে ভিন্ন একটা গুরুত্ব থেকে উন্নয়ন প্যারাডাইম এর এখনকার যে এপ্রোচ তার সূচনা কিন্তু ঘটেছিলো এই মানুষটার হাত ধরে ব্রাজিলে।

কিছু মনে করবেননা, আমি আপনার কয়েকটা কথার পিঠে কথা বলতে চাচ্ছি, আপনি দেশের অধিকাংশ মানুষের উপলব্ধি করার ক্ষমতা এবং নিজ ক্ষমত সম্পর্কে ধারনা না থাকার কথা বলেছেন। আমি আপনার সাথে একমত নই, আমি পুরোই উল্টা মনে করি। এদেশের বেশীরভাগ মানুষ সশিক্ষিত, তাদের উপলব্ধি করার ক্ষমতা তাদের মত এমনকি নিজ ক্ষমতা সম্পর্কিত ধারনাও। আপনি হয়তো লেখাটা আর বড় করতে চাননি কিংবা পরবর্তীতে আরো লেখার ইচ্ছে আছে কিন্তু পাওলো ফ্রেইরী আজীবন যে সাধনা করে গেছেন তাতে কিন্ত নিজ নিজ সমাজে, সংসকৃতিতে নিজ নিজ মানুষের জয়গানের যে উচ্ছ্বাস তা ‘উন্নয়ন’ নামক বিতর্ককে অনেকটাই ছাড়িয়ে যায়। ধন্যবাদ,

পাঠক এনায়েৎ ইউ এস ইসলাম এর ছবি

"Literacy as Freedom"
'সাক্ষরতায় স্বাধীনতা' চমৎকার একটি শ্লোগান। এরকম চমৎকার সব শ্লোগান নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চলতে দেখি। সফলতাও নিশ্চয়ই অর্জিত হয়। কম অথবা বেশি। ২০০৩ থেকে ২০১২। ২০১২ তো খুব বেশি দূরে নেই। লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হচ্ছে সেটা নিয়েই ভাবার সময় এখন। বাংলাদেশের জন্য সাক্ষরতা নি:সন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের কাছেও বিষয়টি ইমপোরট্যান্ট। কারণ পরীক্ষায় এবিষয়ে রচনা আসতে পারে। রচনায় মার্ক বেশি। যাই হোক নিরক্ষরতা দূরিকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশে অসংখ্য এনজিও কাজ করছে। সরকারও কাজ করছে। দেখা যাক ২০১২ সালের মধ্যে অর্জন কতটুকু হয়। অল্প কিছুদিন অনুশীলন করে একজন নিরক্ষর লোককে দ্রুত সাক্ষর হয়ে উঠতে আমরা দেখেছি। আবার এও দেখেছি অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগের অভাবে ঐসব সাক্ষর লোকদের ততটা দ্রুততার সাথে নিরক্ষরদের দলে ফিরে যেতে। তা হলে লাভটা কি হলো। তাই বলে লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়ানো'তো আর যাবে না। পরিকল্পনা প্রনয়নের সময় দীর্ঘদিনে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে সেগুলোও মূল্যায়ন হওয়া দরকার। যদি একম হয় এঁরা ভাবছেন ওদের জন্য, তাহলেতো কাজ হবে না। ওদেরকেও ভাবতে হবে। ওদের মেধা সঞ্চালনের মধ্য দিয়েই লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে।
সাক্ষরতা বিষয়ে লেখার জন্য জনাব আবু হাসানকে ধন্যবাদ। আরেকটু বিস্তারিত হলে ভালো হতো। পাওলো ফ্রেইরী সম্পর্কে শুনেছি। 'বিশ্বকে পড়া'- এই কথাটি চমৎকার শুনাচ্ছে তবে, বুঝতে পারলাম না। সম্ভব হলে পাওলো ফ্রেইরীর দর্শণ নিয়ে অরেকটু বিস্তারিত আলোচনা করলে খুশি হবো।

তানিম এহসান এর ছবি

পাওলো ফ্রেইরী এবং তার সম্পর্কে জানতে প্রথমেই পড়েন তার লিখা “পেডাগজি অফ দ্যা অপ্রেসড’।

সেই বই নিয়ে বিসতর গবেষনা হয়েছে, ব্রাজিল একদা ছিলো বহু উন্নয়ন কর্মীর তীর্থভুমি আর ফ্রেইরী ছিলেন ধর্মপিতা, তিনি মাক্সিষ্ট শ্রেনীবিন্যাসের ধাপ ধরে ধরে তারপর একটা এপ্রোচ এর প্রণয়ন করেন! তারপর ঘাটের জল গড়িয়েছে অনেক কিন্তু তার যে পদ্ধতিগত জায়গার উপর ফোকাস ছিলো তাও দিনে দিনে আরো শার্প হয়েছে। উন্নয়ন প্রপনচ একটি চলমান বিতর্ক, কিন্তু আমরা যারা উন্নয়ন কর্মী, বিশেষ করে যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন তাদের কাছে তার আবেদন এখনও পূর্ণ মাত্রায় রয়ে গেছে।

আমি তার সম্পর্কে খুব অল্পই জানি, এমন মানুষটিকে আলোচনায় নিয়ে আসার জন্য আবারও ধন্যবাদ! আবু হাসান ভাইয়ের কাছ থেকে এই সম্পর্কিত আরো লেখা পাওয়ার অপেক্ষায় এখনো আছি।

পাঠক এর ছবি

“অল্প কিছুদিন অনুশীলন করে একজন নিরক্ষর লোককে দ্রুত সাক্ষর হয়ে উঠতে আমরা দেখেছি।”
মন্তব্য : সত্যি কি, সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনুযায়ী?
“আবার এও দেখেছি অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগের অভাবে ঐসব সাক্ষর লোকদের ততটা দ্রুততার সাথে নিরক্ষরদের দলে ফিরে যেতে। তা হলে লাভটা কি হলো।”
মন্তব্য : বর্ষায় রাস্তা মেরামতের কাজ করে ঠিকাদারদের যেমন লাভ হয়!

দীপক এর ছবি

“অল্প কিছুদিন অনুশীলন করে একজন নিরক্ষর লোককে দ্রুত সাক্ষর হয়ে উঠতে আমরা দেখেছি।”
মন্তব্য : সত্যি, সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনুযায়ী?
“আবার এও দেখেছি অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগের অভাবে ঐসব সাক্ষর লোকদের ততটা দ্রুততার সাথে নিরক্ষরদের দলে ফিরে যেতে। তা হলে লাভটা কি হলো।”
মন্তব্য : বর্ষাকালে রাস্তা মেরামত করে ঠিকাদারদের যেমন লাভ হয়।

পাঠক এর ছবি

এনায়েৎ সাহেব
বিশ্বকে পড়া'- এই কথাটি চমৎকার শুনাচ্ছে তবে, বুঝতে পারলাম না।
আপনার এ্ িকথার প্রেক্ষিতে বলছি। এর মানে হচ্ছে -আপনার চতুস্পার্শ্ব, পরিবেশ, সমাজ, প্রকৃতি ্ত্যিাদিকে অধ্যয়ন করা এবং উপলব্ধিতে নেওয়া।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।