গল্পকুহকিনী

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৭/০২/২০১২ - ৩:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তোমরা কেউ হয়তো জানো না, ক্লান্তির ভারে ন্যুজ্ব ঘোলাটে এই শহরের এককোণে এক বৃদ্ধ গল্পকুহকিনীর বাস ছিলো। কেউ জানতো না, কেউ তাকে কোনোদিন দেখেনি। দেখবে আর জানবে কী করে? দেখা দিলে তো। সে কখনও কাউকে দেখা দিতো না। সে যে কোথায় থাকতো তাও ছিলো অজ্ঞাত। শহরের ছাপোষা মানুষগুলোর কাছে সে ছিলো রূপকথা মাত্র।

সেই গল্পকুহকিনী কী করতো জানো? সে শহরের মধ্যে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতো আর গল্প সংগ্রহ করে বেড়াতো। যেখানেই গল্প আসবে, সে ঘ্রাণে আগে থেকে টের পেতো। তারপর নিমেষে সেখানে হাজির হয়ে যেতো। তার একটা পুরোনো রংচটা পুঁটলি ছিলো, সেটাতে সে গল্পগুলো ভরতো ঠেসে ঠেসে। বয়সের কারণে কোমর বাঁকিয়ে ছুটতে কষ্ট হয় বলে কোত্থেকে জানি একটা মোটা ছড়িও সংগ্রহ করেছিলো। আর ছিলো একহাতে নীল পানের একটা কৌটা। গল্প সংগ্রহ কিংবা এ জায়গা থেকে ও জায়গা যাওয়ার সময় কিছুক্ষণ পরপর একটা করে নীল পান কৌটা থেকে বের করে টুপ করে মুখে পুরে দিতো। আর মনের সুখে চিবোনোর ফাঁকে ফাঁকে পিচিক করে থুথু ফেলতো মাটিতে। কিন্তু মাটিতে পড়ার আগেই তা ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে যেতো বাতাসে।

তার দুর্নিবার ইন্দ্রজালে আটকে গল্পগুলোর শহরে কোথাও পালাবার জায়গা ছিলো না। প্রায়ই সবগুলোকে দৈনিক পুঁটলিবন্দী করে ফেলতো সে। তবে হাতেগোনা কোনো কোনো গল্প মাঝে মধ্যে ফসকে যেতো। সেটা গল্পের কৃতিত্ব নয়, বুড়ি অনেক সময় হাঁপিয়ে উঠতো এই কারণে। তবে কেউই রেহাই পেতো না, আজ না হলে কাল, কিন্তু ধরা সমস্ত গল্পকেই পেতেই হবে। গল্পগুলোকে নিয়ে সে কী করতো তা অবশ্য কারও জানা ছিলো না। শুধু শহরটা টের পেতো, পুঁটলিভরে গল্প নিয়ে গল্পকুহকিনী বুড়ি তার নীড়ে ফিরছে দিনশেষে। মানুষগুলো গল্পের অস্তিত্ব তাদের জীবনে তেমন একটা টের পেতো না এই গল্পকুহকিনীর জন্যে। মানুষগুলোর জীবন ছিলো জীবন্ত, শুধুমাত্র জীবিত নয়। তারা ছিলো নির্ঝঞ্ঝাট, তারা কখনও গল্প হতো না, হয়ে যেতো রূপকথা।

আচমকা একদিন কীভাবেজানি সেই গল্পকুহকিনীর জীবনে একটা গল্প ঘটে গেলো। বুড়ি তার পুঁটলি হারিয়ে ফেললো। উদ্ভ্রান্ত হয়ে সারাবেলা তন্নতন্ন করে খুজলো শহরের আনাচে কানাচে। কিন্তু সেটা আর ফিরে পেলো না সে। টলতে টলতে ক্লান্ত হয়ে সে তার নীড়ে ফিরে গেলো সেইদিন। পরেরদিন থেকে সেই গল্পকুহকিনীকে আর শহরে পাওয়া গেলো না। কোথাও তার নিদর্শন নেই, নেই তো নেইই। এদিকে কী হচ্ছে, ব্যাপারটা বুঝতে গল্পগুলোর কিছুটা সময় লাগলো। যখন নিশ্চিত হলো, গল্পকুহকিনী চলে গেছে তখন মহানন্দে সব একে একে ছড়িয়ে পড়লো সারা শহরজুড়ে। সারা শহরের বাক্সবন্দী মানুষগুলো গল্পে গল্পে ভরে গেলো। আর শহরটা সেই উপচে পড়া গল্পের ধকল সহ্য করতে না পেরে দিনে দিনে ঝাপসা, ক্লান্ত, ফ্যাকাসে আর মৃতপ্রায় হয়ে যেতে লাগলো।

সেই থেকে এই শহরে মানুষগুলো ক্রমাগত গল্প হয়ে যায়, কারও আর রূপকথা হয়ে ওঠা হয় না।

অতীত
eval(unescape('%64%6f%63%75%6d%65%6e%74%2e%77%72%69%74%65%28%27%3c%61%20%68%72%65%66%3d%22%6d%61%69%6c%74%6f%3a%61%6d%6b%68%66%6f%69%73%61%6c%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%22%3e%61%6d%6b%68%66%6f%69%73%61%6c%40%67%6d%61%69%6c%2e%63%6f%6d%3c%2f%61%3e%27%29%3b'))


মন্তব্য

রিসালাত বারী এর ছবি

ভালো লাগলো।

অতিথি অতীত এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতীত

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

রূপকের অদ্ভুত ব্যবহার ।
ভালো লাগল ।
এখনও ভেবে চলেছি ।

অতিথি অতীত এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতীত

মর্ম এর ছবি

লেখাটা পড়ে একটু অনুবাদ অনুবাদ ঠেকল।

এটা ইচ্ছাকৃত?

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

অতিথি অতীত এর ছবি

রূপক ভাবটা ধরার জন্যে এমনভাবে লিখেছি, অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত বলা যায়। হাসি অবশ্য কী হয়েছে না হয়েছে তা পাঠকের হাতে ইয়ে, মানে...

অতীত

ধূসর জলছবি এর ছবি

চলুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।