“শেষ বিকেলের সোনা রোদ”

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০২/২০১২ - ৯:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পরীক্ষার চাপে ঘাড় ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। অথচ একটু যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে, এতটুকু সময়ও নীলার হাতে নেই। সব টিচারদের ধারণা, যে যেটা পড়ান সেটা ছাড়া স্টুডেন্টদের আর অন্য কোন সাব্‌জেক্টই থাকতে পারে না। ফলাফল - সবগুলো পরীক্ষা একসাথে পড়েছে। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ুয়া নীলা বেচারী কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়বে, কোন দিশা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্টের বই খুলে বসেছে।

টিং টিং টুং টাং...... টিং টিং টিং টাং...... অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে,সম্ভবত আবীরের। 'দু সপ্তাহ হল, আবীর অফিসের কাজে কানাডা গেছে; আগামী পরশু সকালের ফ্লাইটে দেশে ফেরার কথা। গত দু'দিন হল, একবারও কথা হয় নি, এর মাঝে আবীর শুধু ছোট একটা মেইল করে জানিয়েছে যে এই শেষ ক'দিন খুব বেশি ব্যাস্ত থাকবে, তাই নো ফোন-কল। এতক্ষণে স্যারের ফুরসত হল আমাকে মনে করার-- ভাবতে ভাবতে ফোনটা অন করলো নীলা।

- "হ্যালো, ভাবী, কি অবস্থা?"
- "জ্বী, কে বলছিলেন প্লিজ?"
- "ভাবী, আমি মণি বলছিলাম। স্যরি, নতুন নাম্বার থেকে কল দিলাম বলে মনে হয় চিনতে পারেন নি। বাই-দ্যা-ওয়ে, আবীরের তো পরশু ফেরার কথা, তাই না?"
-"হ্যাঁ, কেন? কোন সমস্যা হয়েছে? আবীরের কিছু হয় নি তো?" নীলার হার্ট-বিট যেন আচমকা থেমে গেল। কারণ, মণি আবীরের অফিসের প্লাস ছোটবেলার বন্ধু, দু'জন একসাথেই গিয়েছিলো এই ট্যুরে।
- "না না ভাবী, আবীরের কিছু হয় নি। আপনি তো জানেনই, আমি ও'র সাথেই এ ক'দিন ছিলাম, কিন্তু জরুরি একটা কাজে আমি দু'দিন আগেই দেশে চলে এসেছি। তাই আবীর ও'র লাগেজের ভার একটু কমাতে আমার কাছে আপনার জন্য কিছু জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে। ভাবী, খুব সুবিধা হত যদি আপনি এখনি একবার এসে জিনিসগুলো নিয়ে যেতেন।"
নীলা হার্ট যেন আবার চলতে শুর করলো।
- "ভাই, আজ না হয় থাক। আপনার বন্ধু ফিরুক, তারপর না হয়..."
- "ভাবী, আবীর আমাকে দিয়ে প্রমিস করিয়ে নিয়েছে যে জিনিসগুলো যেন আজকের মধ্যে আপনার হাতে দিতে পারি। আমি আপনার ভাবীকে নিয়ে এখন বেইলী রোডে আছি। এখানকার *** হাটের যে ব্রাঞ্চটা আছে, ওখানে আসলেই আমাদের পাবেন। রাখি ভাবী, দেখা হচ্ছে তাহলে।"............ লাইনটা কেটে গেল।

আবীরের কি কোন কালেই আক্কেল বলে কিছু হবে না? নিজেই যেখানে কাল বাদে পরশু ফিরছে, সেখানে মণি ভাইকে দিয়ে শুধু-শুধু কষ্ট করানোর কোন মানে হয়? আর মণি ভাই-ই বা কি মানুষ? নীলার জিনিস কষ্ট করে সাথে নিয়ে নিয়ে ঘুরছে, বেচারা। বেশি ভালো মানুষ হলে যা হয়।

যা-ই হোক, এখন বাজে ২টা, বাসা থেকে বেইলী রোড যেতে-আসতে, সব মিলিয়ে এক ঘন্টার বেশি লাগা উচিত না। একদিক দিয়ে ভালোই হল, এই ফাঁকে একটু ঘুরেও আশা হবে, আবার ফ্রেশ মাইন্ডে পড়তে বসাও যাবে। নীলা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে মা'কে সব বুঝিয়ে বেড়িয়ে পরল। আবীর দেশে না থাকলে সে ক'টা দিন নীলা মা'র বাসায় এসে থাকে। এই ভর-দুপুরে নীলার বাইরে যাওয়া দেখে মা রাগ হবার বদলে অবাক হয়েছে বেশি। কেননা এরকম অসময়ে আবীর আর পরীক্ষা - শুধুমাত্র এ দু'টো কারণেই নীলা বাসার থেকে বের হতে রাজী হয়। আজকের কারণটাও ইন্ডাইরেক্ট-ভাবে আবীর। মেয়েটাকে গত দু' সপ্তাহে আজই একটু হাসতে দেখে মা আর কিছু বললেন না।

আড়াইটার মধ্যে বেইলী রোডে এসে হাজির নীলা। রহিম ভাইকে গাড়ী পার্ক করতে বলে সোজা চলে এলো *** হাটে। এ জায়গাটায় কখনোই একা আসে নি নীলা, স্কুল-কলেজে পড়ার সময় আম্মু-আব্বু, আর পরে সবসময় আবীর থেকেছে সাথে। আজ একা এসে কেমন যেন মন খারাপ হয়ে গেল নীলার। যা-ই হোক, মণি ভাই নিশ্চয়ই বসে থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকলো নীলা। "আজব তো, পুরো দোকান ফাঁকা, মণি ভাই তো দূরের কথা, অন্য কোন মানুষেরও কোন নাম-গন্ধ নেই; ওহ-হ্যাঁ, আজ তো শনিবার, এজন্যই কোন ভীড় নেই।" - ভাবলো নীলা। "কিন্তু তাই বলে মণি ভা কৈ গেল?"

"হ্যাপি বার্থ-ডে ম্যাডাম, ভাল আছেন?" - সেই চিরচেনা মানুষটার অতিপরিচিত কন্ঠ শুনে নীলা প্রায় লাফিয়ে উঠলো। "আবীর? তুমি? সত্যি????" আবীরের হাতটা ধরলো নীলা। হ্যাঁ, তার অতি প্রিয় মানুষটাই তার সামনে দাঁড়ানো, অথচ তাও যেন বিশ্বাস হয় না নীলার। "কিন্তু তোমার না পরশু ফেরার কথা? তাহলে মণি ভাই? মানে?????" নীলা যেন এক নিঃশ্বাসে প্রশ্নগুলো করতে থাকে। নীলার হাত ধরে ও'কে শান্ত করে বসায় আবীর। "হ্যাঁ, আমার পরশুই আসার কথা ছিলো। কিন্তু কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল, আর হাতে যে দু'টা দিন ছিলো তাতে ভেবে দেখলাম যে তোমার-আমার এই বিশেষ দিনটা যেন মিস্‌ না হয়, সেজন্যই হয়তো আল্লাহ্‌ সব ঠিক করে রেখেছেন। আর তাই পরশুর বদলে আজ সকালে এসে পৌঁছেছি, আর তোমাকে চমকে দেব বলে উঠেছিলাম মণির বাসায়। তো ম্যাডাম, কেমন সারপ্রাইস দিলাম? " আবীরের মনভোলানো হাসি-ভরা চোখে নীলা যেন দু'বছর আগের একটা দিনের রিক্যাপ দেখছিলো। ............

দু'বছর আগের কথা। ঠিক এই দিনে প্রথম দেখা হয়েছিলো নীলা আর আবীরের। কথা হয়েছিলো অনেক আগের থেকেই, সেই সাথে মন দেয়া-নেয়াটাও। অথচ ওরা দেখা করেছিলো খানিকটা দেরিতে। দেরি করার কারণ - নীলা; মানসিকভাবে পুরোপুরো সাহস যোগাতে তারই কিছুটা দেরি হয়েছে। সেদিন এক বান্ধবীর বাসায় একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ ছিলো; নীলা বলেছিলো ১১টার মধ্যেই কাজ শেষে হবে, সে কারণে সাড়ে ১০ টা থেকে আবীর বেইলী রোডে এসে হাজির। এ জায়গাটা সিলেক্ট করার কারণ হল নীলার বান্ধবীর বাসা এখানে, আর আবীরের সাথে একা কোথাও যেতে সাহস পাচ্ছিলো না নীলা! কিন্তু, কাজ শেষ হতে সেদিন আড়াইটার মত বাজলো। আবীর তো এর মাঝে বেশ ক'বার ওয়ার্নিং-ও পাঠিয়েছে এসএমএস দিয়ে - "হয় ৫ মিনিটে নীচে আসো, না হয় আমিই উপরে আসলাম।" এভাবে ৫ মিনিট করে করে শেষ পর্যন্ত আড়াইটার সময় দেখা হলো দু'জনের।

তার এক বছর পর, মানে গত বছরের এই দিনটাকেই শেষ পর্যন্ত বেছে নিয়েছিলো আবীর-নীলা, তাদের বিয়ের দিন হিসেবে। সত্যি, দিনটা দু'জনের জন্য এত বিশেষ, অথচ পড়ার চাপে, আবীর কাছে না থাকায়--- সব মিলিয়ে ভুলেই গিয়েছিলো নীলা যে আজ তাদের জীবনের কত্ত প্রিয় একটা দিন।

"কি ম্যাডাম, কেমন লাগলো আমার গিফট্‌?" আবীরের চোখে তার স্বভাব-সুলভ দুষ্টু হাসি, "কিন্তু আমার গিফট কৈ?" "বাসায় চলো, তারপর দিচ্ছি তোমার গিফট্‌।" বাসায় ফেরার পথে গাড়ি ছেড়ে রিক্‌সা নেয় দু'জন, আর ওদের খুশি-ভরা সুখটুকু ওদের চোখে-মুখে লেগে থাকে, ঠিক পড়ন্ত বিকেলের মিষ্টি রোদের মত...।

-মিথুন

ছবি: 
08/24/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ভালো লাগল গল্প। হাসি

মিথুন এর ছবি

ধন্যবাদ

অতিথিঃ অতীত এর ছবি

ভালো লাগলো।

অতীত

মিথুন এর ছবি

ধন্যবাদ জানানোর জন্য।

মিথুন এর ছবি

ধন্যবাদ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এটা কি গল্প, না সত্যি সত্যি? হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মিথুন এর ছবি

আপু, গল্পটা সত্যি হলে তো আর গল্প হত না খাইছে ! অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

আবীর ও'র লাগেজের ভার একটু কমাতে আমার কাছে আপনার জন্য কিছু জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে। ভাবী, খুব সুবিধা হত যদি আপনি এখনি একবার এসে জিনিসগুলো নিয়ে যেতেন।"

এইটুকু পড়ে অনেক কিছু সন্দেহ করে বসেছিলাম। যাই হোক, সেরকম কিছু না ঘটায় ভালো লাগলো।

মিথুন এর ছবি

ধন্যবাদ আপু। বাই-দা-ওয়ে, কি কি সন্দেহ করেছিলেন ? ইয়ে, মানে...

এবিএম এর ছবি

দৃশ্যপট টা আরো একটু বিস্তৃত হতে পারত, গল্পটা আরো একটু বড় হতে পারত।
আরো লিখবেন। ভালো থাকবেন।

মিথুন এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার সাজেশনের জন্য। চেষ্টা করবো অনেক ভালো করার। আপনিও আশা করি ভাল থাকবেন। হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।