পাঠদান কর্মসূচীঃ ক্রিকেট

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ২১/০৩/২০১২ - ৮:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০ মার্চ, ২০১২

আজ জিতলেই বাংলাদেশ নিশ্চিত ফাইনালে। তাই সকাল থেকেই বাসায় টানটান উত্তেজনা, জমজমাট পরিবেশ। আমি আর পরিষ্কার দুইজন যথেষ্ট, তারপরও চিল্লাফাল্লা যেন পাশের বাসা থেকে কোনভাবেই কম না হয় সেজন্য পরিষ্কার তিনজন দামড়া পোলা ধরে নিয়ে আসলো। কোথা থেকে নিয়ে আসলো কে জানে, কিন্তু আমাকে আশ্বস্ত করলো এরা গলা ফাটিয়ে চিল্লাবে – চিন্তা নেই নেই। চিন্তা আমি করি না, তবে আমার দলের খেলার দিন খুব টেনশনে থাকি – এই আর কি। ভাবছি, নিজের দলকে কতো ভালোভাবে সমর্থন করা যায় এটা আজকে পরিষ্কার ছোঁড়াকে শিখিয়েই ফেলবো।

ভালোয় ভালোয় প্রথম ইনিংস শেষ হল, কিন্তু বৃষ্টি নামক রোমান্টিক জিনিসটা শুরু করলো বেঈমানি। আমাদের বুয়ার ত্রাহি ত্রাহি চিৎকার – আল্লাগো, তুমি দিলা তো দিলা মিরপুরেই বৃষ্টি দিলা। ছাকিপ ভাইগো ডরাইয়ো না, মাথা ঠাণ্ডা রাইখোগো ভাইডি ... ও আম্মা, খেলা শেষ না হওয়ার আগে আইজ কেউ খাইতে বইসেননা। পরিষ্কার কিছুক্ষণ মন দিয়ে বিলাপ শুনল, তারপর বলল – “খালা, দুয়া ধইরা লাভ নাই। ওইদিকে শ্রীলঙ্কা, ইন্ডিয়া দুইদিকের মানুষ দুয়া করতেছে। আমরা মানুষ কম”। বুয়া চোখের পানি মুছে বলল – তাইলে কি করুম? পরিষ্কারের উত্তর – দুয়া করো, খবরদার থামবা না। বড়দা পাশের বাসার দিদাকে হুমকি দিয়ে আসলো, খেলা শেষ হওয়ার আগে পূজা রেখে উঠাউঠি নেই। আম্মা আর দাদীতো আজ নফল রোযাই রাখছে।

চরম অভিশাপের ঠেলায় বিরক্ত হয়েই মনে হয় বৃষ্টি অবশেষে থামল, খেলা শুরু হল নতুন টার্গেট নিয়ে। কিন্তু এদিকে যে মাঠটা ভিজিয়ে দিয়ে সর্বনাশ করে দিলো, বলতো গড়িয়ে গড়িয়ে চলবে। টেনশন এর উপর টেনশন। দেখতে দেখতে এক উইকেট চলে গেলো, বাবা আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল – “তুই যে খেলা দেখছিস, ঘটনা কি? তুই থাকলেতো খালি উইকেট পরবে আর কোন বাউন্ডারী হবে না। তোর এতো বড় সাহস, তুই আজকে খেলা দেখতে বসছিস। আমি মিনমিন করে বললাম, বাবা এসব কুসংস্কার ...... কথা শেষ করার আগেই বুয়ার চিৎকার - সব্বনাশ, আপনে খেলা দেখতাছেন! আমরাতো হাইরা যামু। শেষ ভরসা পরিষ্কারের দিকে তাকালাম, কারণ সে সকল প্রকার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। লাভ হল না। দাঁত খিঁচিয়ে পরিষ্কার বলল – “জানি এইডা কুসংস্কার, এই আলোচনা কাইল করুম নে। আইজ খেলা না জিতলে খবর আছে, আমি আইজ সব বিশ্বাস করি”। বিরস বদনে পাশের রুমে গিয়ে একটা তিন গোয়েন্দা নিয়ে বসলাম। যখনই বাউন্ডারী হয়, একটু ফালাফালি করে আবার রুমে ফিরে যাই। চিৎকার করতে করতে গলা শুকিয়ে ব্যথা হয়ে গেল, যায় যাক – এসব ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে চিন্তা করার জন্য পুরো বছর পড়ে আছে। তবে এতো সতর্ক থেকেও লাভ হল না। পানি খেতে এসে টিভির দিকে একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে ফেলেছিলাম – ও হরি, টপ করে তামিম মাঠের বাইরে। পরিষ্কার আর তিনটা দামড়া পোলা মারমার-কাটকাট ভঙ্গিতে আমার দিকে ছুটে আসলো। আবার রুমে নির্বাসন।

বাধ্য হয়ে রেডিওতে খেলা শুনতে শুরু করলাম, তাহলে নিশ্চয় কুফা লাগবে না। কিসের কি, সাকিব আউট হতে হতে বেঁচে গিয়ে মরে গেলো। পরের বলেই আউট। মনের দুঃখে পা কামড়াতে ইচ্ছা করছিলো, কিন্তু মা আরেকটা বড় ছেঁচা দিয়ে গেলো। আমার মোবাইলটা কেড়ে নিলো, ল্যাপটপ সহ। আমি যেন কোনভাবেই খেলাতে মন দিতে না পারি। এক দামড়া পোলা হুংকার দিয়ে বলল – ব্লাডি হেল পরিষ্কার, এরকম কুফা একজনের সাথে আমগোরে খেলা দেখতে বসাইছ! পরে হিসাব নিমু।

যাই হোক, হিসাবটা শেষমেষ আর দিতে হয় নি। আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে তিন গোয়েন্দা পড়েছি। আর বাংলাদেশ, আমার দেশ জিতে গেছে, আমরা সবাই জিতে গেছি। না জিতলে আমি মার খেতাম।

আমার এবারের পাঠদান কর্মসূচীর সমাপ্তিটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। একটা বাক্যও শেখাতে পারি উল্টা অনেক কিছু শিখেছি। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বাংলাদেশের খেলার দিন সব কুসংস্কার বিশ্বাস করতে হয়, কুফা লোকদের ঘরে বন্দী করে হলেও খেলা জিততে হবে। আর আমরা, এই অসহায় কুফা সম্প্রদায় দরকার হলে খেলার সময় ঘুমায় যাব – তারপরও বাংলাদেশ যেন জিতে।

পাদটীকা : ত্যাঁদড় ছোঁড়া পরিষ্কার ফতোয়া দিয়েছে, ২২ তারিখ আমাকে খেলা দেখতেই হবে আর পাকিস্তানকে সমর্থন করতে হবে (ফরজ)। বাংলাদেশের জন্য সব করতে রাজি, কিন্তু এটা পারবো না। ভাবছি কিওক্রাডং পালিয়ে যাব।

- বান্ধবী


মন্তব্য

ধূসর জলছবি  এর ছবি

আমি পুরোটা সময় একটা চেয়ারে বসে ছিলাম, আমি উঠলেই আউট হয়। তাই শেষ হওয়ার আগে আর নড়াচড়াও করিনি। বাংলাদেশের খেলার দিন আমিও যাবতীয় সব কুসংস্কারে বিশ্বাস করি। লেখায় চলুক

বান্ধবী এর ছবি

একটু কষ্ট করে আজকেও এক জায়গাতে বসে থাকবেন। এটা আমাদের সবার দাবি হাসি

guest_writter এর ছবি

চলুক

দীপাবলি।

বান্ধবী এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

সজল এর ছবি

চলুক
বাংলাদেশ যেহেতু ৭৫ শতাংশ ম্যাচের মত হারে (অন্তত বড়দলের বিরুদ্ধে), তাই দেশের বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে স্ট্যাটিসটিক্যালি কুফা মনে করে। এইসব বঞ্চিত-নিপীড়িতদের কে উদ্ধার করবে?

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ধূসর জলছবি  এর ছবি

ক্রিকেটাররাই পারে। যখন আরা ৭৫% ম্যাচ জিতবো, তখন অধিকংশই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করব। হাসি

বান্ধবী এর ছবি

সহমত

বান্ধবী এর ছবি

আমি খেলা দেখছি না এবং টসে জিতে গেছি। মন ভেঙ্গে যাচ্ছে, কিন্তু তবুও আজকে আমি খেলা দেখব না

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

বাংলাদেশের খেলা যখন চলে, তখন টেনশনে শরীরের রক্ত পানি হয়ে যায়।

লেখায় চলুক

বান্ধবী এর ছবি

রক্তের একটা বড় অংশ পানি হয়ে যায়, বাকি অল্প পরিমাণ রক্ত বিপুল বেগে পুরো শরীরে দৌড়াদৌড়ি করে মন খারাপ
সে কী টেনশন ওঁয়া ওঁয়া

ধুসর গোধূলি এর ছবি

কালকে জগৎ ইতিহাসের সেরা ভুনা খিচুড়ি রেঁধে, কড়কড়া বয়দা ভাজি বানিয়ে যখন দেখলাম ডাকু আর লুসু মেথডের হিসাবে বাংলাদেশের জন্য নয়া হিসাব, তখন খোমাখাতায় স্ট্যাটাস মারছিলাম- "লোক হিসেবে ডাকওয়ার্থকে একজন ওয়ার্থলেস এবং লুইস সাহেবকে একজন সত্যিকারের লুইস ওরফে লুল বলে ধারণা হচ্ছে এখন।"

তারপর এক কাইতে শুয়ে পুরা খেলা দেখছি। ড্যানা ব্যথা হয়ে গেছে, মাথা চিনচিন করছে, তারপরেও নট নড়ন চড়ন! নড়লেই প্যাচ লাগে, কী করুম! এদিকে জার্সিটা যে গায়ে তুলুম, সেই সাহসটাও পাচ্ছি না। যদি 'না-হয়', এই টেনশনে। শেষমেশ জার্সি গায়ে তুলছি। শোয়া থাইকা তিড়িং করে লাফ দিয়ে উঠছি। কখন জানেন? যখন দশ রান বাকি তখন। কারণ ইতোমধ্যে বুঝে গেছি, শ্রীলঙ্কা তো বটেই- গোটা ভারতও যদি এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে যায়, কোনোই ফায়দা নাই!

কাইলকা কী করুম বুঝতাছি না। তবে রেকর্ড বলে, আমি পুরা খেলা দেখছি এবং বাংলাদেশ জিতছে- এমন পরিসংখ্যান খুব খুব খুব কম! তো বুঝতেই পারতেছেন, কুসংস্কার মানি আর না মানি, আমি কালকে পুরা খেলা দেখুম না!

বান্ধবী এর ছবি

আমি আজকে সকাল থেকেই জার্সি পরে বসে আছি।
আমিও কুসংস্কারের ঘোর বিরোধী। তবে আজকে না, আগামীকাল থেকে। আজ আমি ভূত, পেত্নী, শাঁকচুন্নি থেকে শুরু করে যাবতীয় সব অলৌকিক জিনিসের পা ধরতেও রাজি।

অফ টপিক - ভুনা খিচুড়ি আমি বড্ড ভালোবাসি দেঁতো হাসি

তারেক অণু এর ছবি

(গুড়)

বান্ধবী এর ছবি

আপনি আমার লেখা পড়লেন, অনেক শরম পেলাম লইজ্জা লাগে লইজ্জা লাগে লইজ্জা লাগে

সাত্যকি. এর ছবি

ব্যাপারটা কি? অতি আশা-আনন্দে উদ্বেল হয়ে আছি বলেই কি লিখা এত ভালো লাগলো?
না আপনি সত্যি সত্যিই এতো এতো এতো ভালো লিখেন ?

বান্ধবী এর ছবি

জাতি হিশেবে আমাদের সবার আবেগ-অনুভূতি ভীষণভাবে এক সুরে গাঁথা। সেই সুর যেকোনো ভাবে লিখলেই হল – একাত্মতা আসবেই, ভালোও লাগবে হাসি

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

আমি খেলা দেখব না। খালি ৮/১০ মিনিট পর পর জেনে নিব খেলার স্কোর। চক্ষু খুইল্যা গুট্টি খেলুম, গুট্টি...

বান্ধবী এর ছবি

কোন রিস্ক থাকলে আমি আজকে স্কোরও জানতে চাইবো না দেঁতো হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।