যখন সামনের আয়নায় একজন সংখ্যালঘু মানুষের প্রতিবিম্ব...

সাফিনাজ আরজু এর ছবি
লিখেছেন সাফিনাজ আরজু [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২১/১০/২০১২ - ৩:৫০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিকেলের দিকে ল্যাবে বসে কাজ করছিলাম, কাজের মাঝেই ইন্টারনেটে কখনও এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি। হঠাৎ এই খবরটি চোখে পড়ে,কোটালীপাড়ায় দুর্গার প্রতিমা ভাংচুর । রামুর সেই ভয়ংকর ঘটনার পর(প্রত্যক্ষদর্শী একজন ভান্তের বয়ানে ), আসলে বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই এই ধরনের খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। শুধু রামুর ঘটনাই বা বলছি কেন। মাঝে মাঝেই আমরা শুনতে পাই,অমুক জায়গায় মন্দিরে হামলা, তমুক জায়গায় প্রতিমা ভাংচুর, আর ঠিক দুর্গাপূজার আগে আগে এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটার সম্ভবনা আরও বেড়ে যায়, প্রতি বছরেই দুর্গাপূজার আগে এই ধরনের ঘটনাগুলো কানে আসতে থাকে। সরকার বদল হলে – তখন তো কোন কথাই নাই। আমাদের ধর্মান্ধ উন্মাদগুলোর তখন পোয়া বারো, বিধর্মী মানেই তো যাকে বলে গণিমতের মাল,মার ,ধর, কাট লুট করো,কেউ কিচ্ছু বলবেনা, যাই করোনা কেন ধর্মের নামে করছো তো সাত খুন মাফ। যাই হোক, যে কথা আসলে বলতে চাইছিলাম- প্রথমে আমি আমার জীবনের ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বলি-

বছর দুয়েক আগের কথা তখন আমি মাত্র অল্প কিছুদিন হল ফিনল্যান্ডে এসেছি। ফিনল্যান্ডের যে শহরে আমি থাকি তার নাম তাম্পেরে, ফিনল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, অভিজাত শহর। লোকসংখ্যা বেশ কম, আর অভিজাত শহর বলেই হয়ত মানুষজনের নাক খুব উঁচু। বিদেশী খুব একটা বেশি দেখা যায়না, আর যে কয়জন দেখা পাওয়া যায় স্থানীয়রা যে তাদের পছন্দ করেনা বেশ বুঝা যায়। নতুন এসেছি তখন, এমনিতেই মন খারাপ থাকে দেশের জন্য,তার উপরে মাঝে মাঝে ওদের বাঁকা চোখ দেখে অস্বস্তি বোধ করি। রাজধানী হেলসিনকির চিত্র কিন্তু ঠিক এমন নয়, ওখানে বিদেশীদের প্রতি আচরণ অনেক বেশি বন্ধুসুলভ। তাম্পেরেতে বাসে উঠে খুব আস্তে ফোনে কথা বললেও লোকজন ঘুরে ঘুরে দেখে। মোট কথা নতুন হিসেবে শহরের হালচাল তখনও বুঝে উঠতে পারিনি, তাই ভালো লাগেনা কিছুই, কোন কিছুতেই স্বস্তি আসেনা ভিতরে।

সেই সময় আমি পড়াশুনার পাশাপাশি একটি পার্ট টাইম জব শুরু করি। প্রথম কাজ যখন শুরু করি সময়টা ছিল মার্চ মাস। তখনও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, বাইরের তাপমাত্রা -১৫/-২০, অনুভূতিতে আরও বেশি। আমার কাজ শেষ হতো রাত ১১টার দিকে। প্রায় রাতেই শেষ করতে পারতাম না ঠিক সময়ে। লেট নাইট বাসের ঠিক আগের বাসটা পড়ি মরি করে কোন রকমে দৌড় দিয়ে ধরতাম। ঘটনার দিন ঠিক সময়ে অনেক চেষ্টা করেও কাজ শেষ করতে পারিনি, প্রানপনে দৌড় দিয়েও চোখের সামনে দিয়ে বাসটা চলে গেল। এর পরে লেট নাইট বাস, এখানে রাত ১২ টা বাজলেই লেট নাইট বাস চলা শুরু হয়, তখন বাস ভাড়ার হিসেব অন্য। বাস আসবে মিনিট ত্রিশ পরে, সেদিন তাপমাত্রা ছিল -১৫/-১৬, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, বাইরে দাঁড়ানোর কোন জায়গা নেই। আমার সাথে ছিল একটি আফগানিস্থানের ছেলে, আলিরাজ,এক সাথেই কাজ করতাম। আলি উদ্বাস্তু ভিসায় ফিনল্যান্ডে এসেছে বছর তিনেক, এখানকার ভাষা শিখেছে, এর মাঝে কোথাও কাজ করেনি, নতুন আমার সাথেই শুরু করেছে। ভাগ্যিস সেদিন আলি সাথে ছিল, একা একা অপেক্ষা করাটাই বিরক্তিকর,আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে তো কথাই নাই। আমরা সময় কাটানোর জন্য হাঁটাহাঁটি করছিলাম আর টুকটাক গল্প। হঠাৎ আলি প্রশ্ন করে, আমার কাছে ক্যাশ টাকা আছে কিনা। এর আগে কখনো লেট নাইট বাসে উঠতে হয়নি তাই ভুলে গেছিলাম মাসের যে বাস কার্ড করা আছে আমার তাতে লেট নাইট বাসে উঠা যায়না। হয় সেই কার্ডে অতিরিক্ত টাকা ভরা থাকতে হয়, নচেৎ অতিরিক্ত আড়াই ইউরো লাগে জন প্রতি, যার কোনটাই আমার ছিলনা সেদিন। কার্ডের যুগে ক্যাশ টাকা খুব বিরক্ত লাগতো তখন, তাই কখনো ক্যাশ টাকা থাকতো না সাথে। বরাবরের মতন সেদিনও ছিলনা। সমস্যাটা আলিকে বলতেই জানালো ওর কাছে ৫০ ইউরো আছে, আমাকে আপাতত ধার দিবে বাসে উঠার জন্য। সুতরাং সমস্যার সমাধান হল, এবার বাসের জন্য অপেক্ষা। ঠাণ্ডার মধ্যে সময়গুলো যেন কাটতেই চাইছিলনা। অবশেষে আমাদের ঠাণ্ডায় প্রায় জমিয়ে দিয়ে কাঙ্খিত বাস এসে হাজির হল।

এখানকার এক অদ্ভুত নিয়ম বাসস্টপে হাত তুলে ইশারা না করলে বাস থামেনা। দূর থেকে হেড লাইট দেখতে পাওয়া মাত্র আমরা দুজন প্রানপনে হাত নাড়তে থাকি, অবশেষে বাস সামনে এসে দাড়ায়। কার্ড পুশ করার পর আলি ৫০ ইউরো বের করে দেয় দুজনের টিকেট বাবদ। তারপর একটা বিচিত্র ব্যাপার ঘটে ,চালক কি যেন বলে ফিনিশে, আলি যেহুতু ভাষাটা পারে, জবাব দেয়। আমি চিন্তিত মুখে বাসের দরজাতে দাড়িয়ে, বুঝতে পারছিনা কি ঘটছে। ক্রমে দুজনের কথোপকথন কথা কাটাকাটিতে রূপান্তরিত হয়, একসময় দেখি চালক ইংলিশে বলে উঠে গেট আউট, দিয়ে বাইরে ইশারা করে। আলি তখন আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে বলে কোনভাবেই আমি যেন গাড়ি থেকে না নামি। দুজনের কথা কাটাকাটি একসময় চিৎকারে মোড় নেয়। ঘটনা কিছু বুঝতে না পেরে আমি শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি। বাসের ভিতরে প্রায় জনা দশেক মানুষ বসে, কেউ কোন কথা বলছেনা। এভাবে কতক্ষন কাটে জানিনা, ভিতরে একটা তীব্র আতংক কাজ করতে থাকে আমার, যদি সত্যি সত্যি বের করে দেয় কি হবে? রাতে সেই শেষ বাসের পর ঘণ্টা তিনেক বাস চলাচল বন্ধ থাকে। কি করবো আমি এই ভয়ংকর ঠাণ্ডার মধ্যে, মাত্র আধা ঘণ্টা দাড়িয়ে থেকেই অবস্থা কাহিল, এখন যদি আরও ঘণ্টা তিনেক দাঁড়াতে হয়, বাঁচবো তো আমি? নতুন এসেছি শহরে, তেমন কাউকে চিনিনা, আর তাছাড়া তখন অনেক রাত, ১২.৩০এর উপরে। বোকার মতন মোবাইলে ট্যাক্সির নাম্বার ও সেভ করা নাই, আলি সেদিন ভুলে মোবাইল আনেনি সাথে, তাই সে ও তো কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবেনা... এত কষ্ট হচ্ছিল এইসব হাবিজাবি চিন্তা করে। মনে হচ্ছিল আর কখনো দেখা হবেনা প্রিয় দেশ,মা, বাবা, ভাই, বোন অথবা বন্ধুদের... কি তীব্র আতংক আর ভয়! হঠাৎ দেখি ড্রাইভার উঠে দাঁড়িয়েছে, এবার হয়ত আমাদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে। এই অবস্থায় যাত্রীদের একজন উঠে দাড়ায়, এগিয়ে আসে, ড্রাইভারের হাতে ৫ ইউরো ধরিয়ে দেয়, আলির সাথে কি কি জানি কথা বলে... অতঃপর আমরা গাড়িতে বসতে পারার যোগ্যতা অর্জন করি।

পরে আলি আমাকে ব্যাখ্যা করে ঠিক কি ঘটেছিলো। আমরা যেহুতু দুজন তাই বাস ভাড়া হয় ৫ ইউরো, আলির কাছে ছিল ৫০ ইউরো। ড্রাইভার ৫০ ইউরো নিবেনা, তার কাছে নাকি ভাংতি নাই, আলি তখন বলেছিল ঠিক আছে, তুমি সিটি সেন্টারে চল, সেখানে তো বাস এমনি দাড়িয়ে যাবে, আমি অটো মেশিন থেকে খুচরা টাকা তুলে তোমাকে দিয়ে দিবো, ড্রাইভার রাজি না। তার এক কথা, হয় এখনি ৫ ইউরো দিবে অথবা নেমে যাবে গাড়ি থেকে। আলি বহুবার বলে দেখো এটা শেষ বাস, বাইরে অনেক ঠাণ্ডা, আমরা কিভাবে বাসায় ফিরবো, চালকের কড়া উত্তর এটা তোমাদের সমস্যা, আমার না। আলি নাকি তখন যাত্রীদের অনুরোধ করে কারো কাছে ৫ ইউরো থাকলে যেন তাকে দেওয়া হয়, কেউ কোন কথা বলেনা। আলি তখন বলে, এই ঠাণ্ডার মধ্যে আমি বাস থেকে নামবোনা, দরকার হলে তুমি পুলিশ ডাকো... কথা বার্তার এই পর্যায়ে ড্রাইভার বলে উঠে- সে বিদেশীদের ঘৃণা করে, এই সব ফাকিং বিদেশিরা তাদের দেশ টা নষ্ট করে ফেলছে, যত সব চোর ছ্যাঁচোড়ের দল...! ঘটনা শুনে আমি পুরা হতবাক হয়ে যাই, আজ যদি আলি আমার সাথে না থাকতো, কি হতো? (যদিও পরবর্তীতে অনেক ভালো গাড়ি চালকের দেখা পেয়েছি, যারা এমন অমানবিক অসুর নয়।) পরবর্তীতে আমি অনেকের সাথে ঘটনাটা শেয়ার করেছিলাম, স্থানীয়, বাঙ্গালি, প্রত্যেকের অভিমত ছিল আমরা বিদেশী ছিলাম- তাই এমনটি ঘটেছিলো। ফিনিশরা কেউ থাকলে হয়তবা এমন হতনা।

সেদিন রাতে বাসায় ফিরে খুব কষ্ট হচ্ছিল, সারারাত ঘুমোতে পারিনি, আজ যদি মারা যেতাম! কি তীব্র অপমানবোধ কাজ করছিলো ভিতরে, আজ আমি শুধু বিদেশী জন্য এই ঘটনা ঘটলো! শুধু গায়ের রঙের জন্য! চুলের জন্য, চোখের জন্য- প্রচণ্ড অভিমানবোধ ভিতরে, কার উপরে জানিনা, রাগ, ক্ষোভ, হতাশা,অপমান... মনে মনে ঠিক করলাম ডিগ্রী শেষ হওয়া মাত্র দেশে চলে যাবো, আমার দেশে, নিজের দেশে, সেখানে তো আর কেউ এমন করবেনা। রাত ভোর বিছানাতে এইসব হাবিজাবি ভাবতে গিয়ে ভোর রাতের দিকে হঠাৎ মনে হল, আজ ভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু হয়ে আমি ভাবছি নিজের দেশে চলে যাবো, সেখানে তো আর আমি সংখ্যালঘু নই, নিজের দেশে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে,... তবে আমাদের দেশে যে সমস্ত মানুষ ধর্মের জন্য সংখ্যালঘু, তারা যখন প্রতিনিয়ত এই ধরনের যন্ত্রণা, অপমান আর কষ্টের মধ্যে দিয়ে যায়, তারা কোথায় যাবে তবে?

কষ্ট পেয়ে, অপমানিত আর লাঞ্ছিত হয়ে আমি নিজের দেশে যেতে চাই,জানি সেখানে আমার আশ্রয় আছে... তবে তারাতো নিজের দেশেই অপমানিত আর লাঞ্ছিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, এই প্রচণ্ড কষ্ট, আতংক, ক্ষোভ, অপমান তারা কোথায় দেখাবে? কোথায় লুকাবে? নিজের দেশ ছেড়ে কোথায় যাবে তারা?
সেই রাতে আমি আসলে সংখ্যালঘু হবার পিছনের প্রচণ্ড যন্ত্রণা ঠিকমত অনুভব করতে পেরেছি, সেদিন থেকে পারি। এর আগেও যখনি শুনেছি কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা, কষ্ট পেয়েছি, রাগ হয়েছে, ঘৃণা বোধ করেছি সেই সব নির্যাতনকারীর প্রতি, কিন্তু সেই রাত থেকে আমি সত্যি সত্যি বুঝতে পারি, কষ্টটা কোথায় লাগে, কত তীব্র হয়ে লাগে।

আজ রামুতে বৌদ্ধ বিহার ভাঙ্গার ঘটনাই তো প্রথম না, ছোট থেকেই শুনে আসছি বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, তাদের উপাসনালয় ভাংচুর। এসব ঘটনা তো নতুন না, বারবার ঘটে। আজ হয়ত কোটালি পাড়ায় প্রতিমা ভাংচুর করা হল, দেশের বাকি অঞ্চলের হিন্দুরা কি শান্তিতে পূজা পালন করতে পারবে? সরকার হয়ত আইন শৃঙ্খলা আরও জোরদার করবে সহিংসতা এড়াতে কিন্তু উৎসবের পাশাপাশি তাদের ভিতরে যে চাপা ভয়, আতংক, যন্ত্রণা আর ক্ষোভ কিভাবে দূর করবে তারা?

যেই মানুষগুলো তাদের প্রতিবেশী তাদেরকেই তো ভয়, যাদের পূজায় নাড়ু, লুচি আর তরকারি খাওয়াতে ডাকবে তাদেরকেই তো ভয়, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় যাদের মেসো, মাসিমা, কাকা অথবা কাকিমা ডাকে তাদেরকেই তো ভয়... মাথায় ধর্ম চাপলে তাদের ভয়েই মাথার সিঁদুর মুছতে হবে যে, তাদের ভয়েই শাঁখা খুলতে হবে, তাদের ভয়েই ধুতি খুলে লুঙ্গি পড়তে হবে... তাদের কাছ থেকেই শুনতে হবে মালাউন নামক কুৎসিত শব্দটি, তারাই পরামর্শ দিবে ভারতে চলে যাবার... কি তীব্র কষ্ট, কি ভয়ংকর অপমান... কোথায় লুকাবে তারা? কাকে দেখাবে? কাকে বন্ধু ভাববে... ?

এই ভাবেই আছে তারা দিনের পরে দিন, এত কষ্টের পরেও নিজের দেশ কিভাবে ছাড়বে? কেনই বা ছাড়বে? এই দেশটি যতখানি ধর্মীয় ভাবে সংখ্যাগুরুদের, ঠিক ততখানিই কি সংখ্যালঘুদের? সংখ্যাগুরুরা কোথা থেকে এই অধিকার পায় তাদের অপমান করার? অন্য দেশে যেতে বলার? কে দেয় তাদের এই অধিকার?
নিজের ছোটবেলার কথা মনে আছে, বন্ধুরা সবাই মিলে ঈদ পালন করতাম, দুর্গাপূজায় প্রতিমা দর্শনে বের হতাম রাজশাহীর অলিতে, গলিতে, বড়দিনে চার্চে যেতাম... এগুলো ত কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা রীতিনীতি ছিলনা, ছিল প্রানের উৎসব, সব উপলক্ষেই নতুন জামা নিতাম... কখনো ভাবিনি কোন বন্ধুর ধর্ম কি? আজকাল ভাবতে বসি। কারো নামের টাইটেল দেখলে ভয় হয় আমার, থাকতে পারবে তো তারা নিজের দেশে? বলতে পারবে তো গলা উঁচু করে এই দেশটা আমার! আজকাল অন্য ধর্মের কারো সাথে পরিচিত হলে লজ্জা হয় আমার, ভিতরে ভিতরে মাটিতে মিশে যেতে থাকি-মনে হয় কেন আমিও সংখ্যালঘু হলাম না? কেন জন্মসুত্রে আমি সংখ্যাগুরু হলাম? আজকাল হয়ত বাচ্চারা ছোট থেকেই শিখে বড় হয় সংখ্যালঘুদের বাঁকা চোখে দেখতে। জাফর ইকবাল স্যার একটি কথা বলেন- বৈচিত্র্যই সৌন্দর্য, আমরা কি কখনই সেটা বুঝতে পারবনা?

আসলে ঠিক ভাবে চিন্তা করে দেখলে দেখা যাবে প্রায় সব মানুষই কোন না কোন ভাবে সংখ্যালঘু। আমাদের দেশে আমি হয়ত ধর্মীয় ভাবে, আর্থিক ভাবে সংখ্যাগুরু, কিন্তু যখন রাত ১০ টা বেজে যায়, যদি একা ফিরতে হয় বাসায় তখন আমি ভীষণ রকম সংখ্যালঘু অন্য মানুষদের থেকে, তখন আমার ভীষণরকম ভয় ভিতরে, তখন আমি মেয়ে হিসেবে সংখ্যালঘু আশেপাশের সব ছেলেদের থেকে... ঠিক একইভাবে মানুষ বিভিন্ন দিক থেকে সংখ্যালঘু হয়ে যায়, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক,লিঙ্গভেদে , এমন আরও আরও অসংখ্য কারনে?

প্রতি বছর সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে দেশ থেকে- কি তীব্র কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেলে মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যায়, আমি ভাবতেই পারিনা!
এই জাতভেদ কি কখনো শেষ হবেনা? জাত গেল জাত গেল- বলতে বলতেই আমাদের দিন যাবে, আমরা পশু থেকে আরও পশু হব দিনদিন, শুধু গুটিকতক মানুষের প্রতিবাদ ধর্মান্ধ পশু গুলোর পায়ে পিষ্ট হতে থাকবে প্রতিনিয়ত? এমন দেশ কি হবেনা আমাদের যেখানে কোন কারনেই সংখ্যালঘুরা ভয়ে আতংকে আর দিন কাটাবেনা? যেখানে সত্যি সত্যি সংখ্যালঘু বলে কোন কুৎসিত শব্দ থাকবেনা? যেখানে উৎসবগুলো আর ধর্মীয় না হয়ে সবার অংশগ্রহনে শুধুই উৎসব হবে? সব ধর্মের উপরে মানবতা কেন হতে পারেনা???
যদি এমন দেশ না হয়, তবে আমিও সংখ্যালঘু হতে চাই, সংখ্যালঘু হয়ে তাদের পাশে দাড়িয়ে, কষ্ট, অপমান, লাঞ্ছনা গায়ে মেখে সংখ্যাগুরু হয়ে জন্মানোর অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই!!!

সাফিনাজ আরজু

সচলায়তনে প্রকাশিত অন্যান্য লেখাগুলোর লিংক
আর কত! ......এই নীরবতা ভাঙ্গতে হবে।
মধুরেন বলবিদ্যা !!
একটি চরম বাস্তব দুঃস্বপ্ন : ফজলি আম, জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা, অতঃপর....?


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

ত্যাম্পেরের অভিজ্ঞতা শুনে খুবই অবাক হলাম।

আমি নিজেও প্রথমে ছোট শহরের ছিলাম ফিনল্যান্ডে, সেখানে অনেক অনেক বেশী আতিথেয়তা পেয়েছি স্থানীয়দের কাছে থেকে, এখনো সম্পর্ক আছে বন্ধুদের সাথে, দেখাও হয় বেড়াতে গেলে।

তবে নিঃসন্দেহে বলতে পারে সেই বাসড্রাইভার বদ ছিল, কারণ যতই রেসিস্ট হোক সে যাত্রী ফেলে যেতে পারবে না, তাহলে আপনি পুলিশ কল করতে পারবেন সেই অপরাধে।

স্থানীয়রা যে তাদের পছন্দ করেনা বেশ বুঝা যায় এমন ভাবার কারণ?

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রথমেই একটা কথা বলে দিই- আপনি ইউরোপের যে দেশেই যাবেন, সেখানের বাঙ্গালীদের সাথে মিশে দেখবেন- অধিকাংশই স্থানীয়দের ঢালাও বর্ণবাদী বলবে, তাদের নামে দুর্নাম করবে, এবং সমস্ত সুনাম চেপে যাবে। তাই সবচেয়ে ভাল হয় যদি নিজেই স্থানীয় বন্ধু পান, তাহলেই হয়ত বুঝবেন মানুষ হিসেবে ফিনিশরা কেমন।

আর হ্যাঁ, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সাথে নরডিক কোন দেশেরই কোন রকম তুলনা চলে না, এখানে কেউ আমার দিকে বাঁকা ভাবে তাকাতে পারে, কিন্তু আমার বাড়ীতে কেউ আগুন দিবে না, আমার জীবন হুমকির মুখে না।

লেখা চলুক---

সাইদ এর ছবি

চলুক

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

তবে নিঃসন্দেহে বলতে পারে সেই বাসড্রাইভার বদ ছিল, কারণ যতই রেসিস্ট হোক সে যাত্রী ফেলে যেতে পারবে না

সেটা আমিও জানি অনুদা। আমি নিজেও লেখায় উল্লেখ করেছি যে পরবর্তীতে অনেক ভালো ড্রাইভারের দেখা পেয়েছিলাম। অনেক সময় দেখেছি টাকা না থাকলেও ড্রাইভার গাড়িতে তুলে নেয়। সুতরাং এটি হয়ত ছিল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা হয়ত সহজে ঘটেনা।

আমি নিজেও ফিনল্যান্ডের অন্যান্য শহরে ঘুরেছি, যেমন তুরকু, পরি, অল্প অভিজ্ঞতায় সবাইকে বেশ হাসিখুসি মনে হয়েছে। কিন্তু তাম্পেরে কেন জানি এমন না। আমার ২/১ জন বন্ধু আছে, যারা হেলসিঙ্কি থাকে এবং মাঝে মাঝে তাম্পেরে আসে তারাও বিভিন্ন সময় গাড়িতে বা এখানে ওখানে মানুষের ভ্রুকুটি দেখেছে, তারাও অবাক হয়, কেন ওরা এমন করে। আবার আমি নিজে যতবার হেলসিঙ্কি গেছি কখনো এমন ব্যবহার পাইনি।

স্থানীয়রা যে তাদের পছন্দ করেনা বেশ বুঝা যায় এমন ভাবার কারণ?

এটা ভাবার কারন হল, কাজের সুবাদে আমার বিভিন্ন জায়গাই যেতে হয়েছে অনেক সময়, বিভিন্ন পরিবেশে, অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি কাউকে হাই বললেও অনেক সময় উত্তর পাইনি, আমাকে না দেখার ভান করে চলে গেছে। অনেকের মুখে বিরক্তির ছাপ দেখেছি, অনেকে আবার কোম্পানি কে ফোন করে জানতে চেয়েছে কেন আমাকে পাঠানো হল স্থানীয় কাউকে না পাঠিয়ে? আর বাসে বসে ফোনে কথা বললে তো কথাই নেই,সে আপনি যতই আস্তে কথা বলেননা কেন। এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনা থেকেই মনে হয়েছে, হয়ত ওরা বিদেশী পছন্দ করেনা। অবশ্যই এর ঠিক উল্টা চিত্র ও আছে।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রথমেই একটা কথা বলে দিই- আপনি ইউরোপের যে দেশেই যাবেন, সেখানের বাঙ্গালীদের সাথে মিশে দেখবেন- অধিকাংশই স্থানীয়দের ঢালাও বর্ণবাদী বলবে, তাদের নামে দুর্নাম করবে, এবং সমস্ত সুনাম চেপে যাবে। তাই সবচেয়ে ভাল হয় যদি নিজেই স্থানীয় বন্ধু পান, তাহলেই হয়ত বুঝবেন মানুষ হিসেবে ফিনিশরা কেমন।

একদম একমত কথাটার সাথে। আমার নিজের ফিনিশ কিছু বন্ধু আছে, এবং আমি জানি মানুষ হিসেবে ওরা কেমন। হয়ত নতুন প্রজন্ম বিদেশীদের দেখে বড় হচ্ছে তাই ওরা সহজে নেয়, যা কিনা আগের প্রজন্ম পারেনি।
আসলে আমার লেখার উদ্দেশ্য কোনভাবেই ফিনিশদের দুর্নাম বা সুনাম ছিলনা। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার আলোকে আমার যে উপলব্ধি ছিল শুধু সেটুকুই শেয়ার করতে চেয়েছিলাম।

আর হ্যাঁ, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সাথে নরডিক কোন দেশেরই কোন রকম তুলনা চলে না, এখানে কেউ আমার দিকে বাঁকা ভাবে তাকাতে পারে, কিন্তু আমার বাড়ীতে কেউ আগুন দিবে না, আমার জীবন হুমকির মুখে না।

একমত আপনার সাথে। সেখানেই তো কষ্টটা, শুধু ধর্মের জন্য মানুষগুলোকে নিজের দেশে সারাক্ষণ আতংক, ভয় আর অপমানের মধ্যে দিন কাটাতে হয়- আমি মেনেই নিতে পারিনা বিষয়টা! জানিনা এর কোন সুরাহা হবে কিনা কখনো মন খারাপ

ভালো থাকবেন নিরন্তর।

অতিথি লেখক এর ছবি

ফিনল্যান্ডে আপনার অভিজ্ঞতা শুনে খারাপ লাগলো। ভিনদেশে এম্নিতেই একা তারপর যদি সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে মানুষের ভিন্ন চাহনি সয়ে যেতে হয় তবে দুঃখের আর শেষ থাকে না।

আমিও বেশ ক মাস হল আইভরি কোস্টে আছি। এখানে আপনার মত আমিও সংখ্যালঘু। কেমন যেন খুব একা মনে হয় সবসময়। সব সময় একটা ভয় কাজ করে। সবার একটা বাঁকা দৃষ্টি তো থাকেই।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো দেখলে মনে হয় এখানে আমি সংখ্যালঘু হয়েও অনেক ভালো আছি।অন্তত শারীরিক , মানসিক , সামাজিক ভাবে লাঞ্ছিত হবার সুযোগ এখানে নেই।

লেখা ভালো লাগলো। চলুক

অমি_বন্যা

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

ভিনদেশে এম্নিতেই একা তারপর যদি সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে মানুষের ভিন্ন চাহনি সয়ে যেতে হয় তবে দুঃখের আর শেষ থাকে না।

ওঁয়া ওঁয়া

তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো দেখলে মনে হয় এখানে আমি সংখ্যালঘু হয়েও অনেক ভালো আছি।অন্তত শারীরিক , মানসিক , সামাজিক ভাবে লাঞ্ছিত হবার সুযোগ এখানে নেই।

একমত। জানিনা এর বদল হবে কবে? যতবার আমি এই ধরনের কোন ঘটনা জানতে পারি, নিজের অভিজ্ঞতার কথা মনে হয়, তখন খুব কষ্ট হয়। আমি জানি, আমার সেই ঘটনাটা ছিল হয়ত একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু আমাদের দেশের ঘটনাগুলো তো বিচ্ছিন্ন নয়, তবে সেই সব মানুষদের কেমন লাগে সারাক্ষণ?
কি ভয়ংকর আতংক, ভয়, অপমান, ক্ষোভ হয় তাদের ভিতরে আমি অনুভব করতে পারি। সংখাগুরুত্তের প্রতিনিধি হিসেবে আমার ভীষণ কষ্ট হয়, লজ্জা হয়!!!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

কারো জানা থাকলে দয়া করে আমাকে দেখান গত ৪১ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর কোন হামলার ঘটনার জন্য বাংলাদেশে কারো বিচার হয়ে ফৌজদারী দণ্ডবিধিতে শাস্তি হয়েছে।

যদি সরকার এই ব্যাপারে সত্যি সত্যি আন্তরিক হয়, তাহলে অনুরোধ করবো অপরাধীদের যত দ্রুত সম্ভব শনাক্ত করে দ্রুত বিচার আদালতে বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। এবং প্রচার মাধ্যমে তা বার বার দেখাবার নির্দেশ দিন। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর সাথে সাথে অতীতের ঘটনাগুলোর জন্য কমিশন গঠন করে অপরাধীর বিচারের ব্যবস্থা করুন। অপরাধীরা পার পেয়ে যায় বলেই তারা বার বার অমনটা করতে সাহস করে।

বদমাশরা শক্তের ভক্ত, নরমের যম। তাদের জন্য আইনের লাঠ্যৌষধী ছাড়া উপায় নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

খুব চমৎকার বলেছেন পাণ্ডবদা। একদম সহমত।

তারেক অণু এর ছবি

শতভাগ একমত পাণ্ডব দা।

অতিথি লেখক এর ছবি

সংখ্যালঘু সে যে ধর্মের ই হোক না কেন সে মানুষের চোখে সংখ্যালঘুই । আমরা যদি রুয়ান্ডা (১৯৯৭), গুজরাট (২০০৭) এবং সাম্প্রতিক রাখাইন (২০১২) সাম্প্রদায়িক ঘটানাগুলো লক্ষ্য করি সবগুলোতে সংখ্যাগুরুরা সংখ্যালঘুদের হত্যা, নির্যাতন, লুন্ঠন এমনকি ধর্ষন করতে পিছপা হয় নাই । সংখ্যাগুরুরা স্হান-কাল-পাএ, ধর্ম, দেশ কিছুই মানে না । মানতে চা্য় না । বড়ই অদ্ভূত আর বিচিএ মানবপ্রকৃতি । তখন ধর্মই মূখ্য হয়ে দাড়ায় । শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের "বিলাসী'' র একটি উক্তি স্মরণীয় । ন্যাড়া যখন বলে উঠেছিল, ''আমিও যে তাহাদের দলে ছিলাম ।" আমরা আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সমাজে বাস করছি কিন্তু আমাদের আদিম প্রকৃতি ও তার বিস্তৃতি ধারন হয়ে আছে সত্বায়, শিরায় শিরায় । এটা কী জেনেটিক্যাল ? একে কী কোনোভাবেই মডিফাইড করা যায় না ?

-আল রশিদ

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

চলুক

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনি, আপনার লেখায় একজন সংখ্যালঘুর মনোকষ্টটি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। চলুক

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য। হাসি
ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা। মন খারাপ

আসমা খান

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো আপু। হাসি
ভালো থাকবেন!

সাবেকা  এর ছবি

আপনার তখনকার অনুভুতিটা ভালভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন লেখায়।

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

Sharmin  এর ছবি

চমত্কার লিখেছ সাফিনাজ। আসলে আমাদের এই ঘৃণিত মনোবৃত্তি সম্পন্ন মানুষগুলোকে পশু বলাটাও ঠিক হবে না, পশুদের পাশবিকটাও এর থেকে ঢের গুন ভালো। পরশুদিন পূজার নিমন্ত্রণ খেয়েছি এখানেই পরিচিত দাদাদের বাসায়, অসাধারণ আপ্পায়ন। মনের মাঝে কষ্ট হচ্ছিলো গত কয়েকদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভেবে, কেন এই নৃসংসতা মন খারাপ উত্সব তো দেশের সংস্কৃতির অংশ, একে ধর্মের লেবাসে কেন বার বার নগ্ন করা হয় , মানবতার কান্না কেন ওই মানুষগুলোর হৃদয় সিক্ত করে না।জানি এই কেনর উত্তর নেই।
অনুদার আর তোমার সাথে আমিও সহমত, এদেশের স্থানীয় মানুষদের সাথে যতটুকু মিশেছি, বন্ধুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে সব সময়। ভালো থেক।
....শারমিন

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ধন্যবাদ শারমিন, তোমার মন্তব্য পাইয়া ভালো লাগলো।

মানবতার কান্না কেন ওই মানুষগুলোর হৃদয় সিক্ত করে না

আমিও জানিনা। হয়ত একদিন পরিবর্তন আসবে, সুদিনের অপেক্ষায় রইলাম ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।