শেষ দানেও আছি....

সাফিনাজ আরজু এর ছবি
লিখেছেন সাফিনাজ আরজু [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৮/০৩/২০১৪ - ৫:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঘড়িতে প্রায় সন্ধ্যা ছয়টা। বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে সুইমিং পুলের ধারে আয়েস করে বসে সন্ধ্যা নামা দেখার আদর্শ সময়।
সারাদিন হোটেল রুমে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছিলাম, বার থেকে এক ক্যান বিয়ার হাতে নিয়ে বাগানে প্রবেশ করতেই সন্ধ্যার গোধুলি আলোতে পাম গাছের সারি এলোমেলো করে বয়ে যাওয়া মিষ্টি বাতাসে মনটা জুড়িয়ে গেল।

বাগানটা দারুন, দুই ধারের লন জুড়ে সার বেধে ফুলের বাগান আর মাঝ দিয়ে দিয়ে বড় বড় নারিকেল গাছ আর পাম গাছের সারি, পিছনে আকাশ তখন শেষ সূর্যের আলোতে রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে, সমুদ্রের তীর থেকে ধেয়ে আসা বাতাসে এমনভাবে নারিকেল আর পামের সারি দুলছে মনে হচ্ছে যেন আকাশে আগুন দেখে গাছগুলো পালানোর চেষ্টায় হুটোপুটি লাগিয়েছে।

সুইমিং পুলটাও হোটেলের মতই চমৎকার। গাঢ় নীল পানি, পুলের চারিধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সাদা সাদা টেবিল ঘিরে বেশ কিছু ডেক চেয়ার রাখা, রোদ ঠেকানোর জন্য মাথার উপর রঙ্গিন ছাতা। সুইমিং স্যুইট পরে বিভিন্ন বয়সি নারী পুরুষ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সান বাথে মগ্ন। পুলে তখন ও ৩-৪ জন অল্প বয়সি মেয়ে আর প্রায় ডজন খানেক যুবক হুল্লোড় করছে, এ ওর গায়ে পানি ছিটাচ্ছে, কখনো বা রাবারের বল ছুড়ে মারছে, সব মিলিয়ে প্রান প্রাচুর্যে ভরপুর একটা পরিবেশ। বেশ লাগছিল দেখতে।

মেয়েগুলোকে চেনা মনে হচ্ছিল- হোটেলে আগেই দেখেছি, চুলের রঙ আর কথার টোনে ব্রিটিশ মনে হয়। ছেলেগুলোকে আগে দেখেছি মনে পড়েনা, চেহারার গড়ন আমেরিকানদের মত। আজ সকালে জেটিতে আমেরিকান ন্যাভাল ক্যাডেটদের একটা বোট ভিড়তে দেখেছি, ওরা সেই ন্যাভাল ক্যাডেট হতে পারে।

এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা হলুদ ছাতা লাগান চেয়ার টেনে আরাম করে বসলাম। চারিপাশে আরও খান চারেক খালি চেয়ার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা। গ্লাসে বিয়ার ঢেলে যখন নিজের স্বাস্থ্য পান করলাম মনে হল বেঁচে থাকাটা খারাপ কিছু না।
তারিয়ে তারিয়ে বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিয়ে মনে হল- ছুটি কাটানোর জন্য এর চেয়ে ভাল জায়গা আর হতে পারেনা। পুল থেকে ছিটে আসা পানি এসে চারিপাশের সবুজ ঘাস ভিজিয়ে দিচ্ছে, ছেলে মেয়েগুলো কে দেখে মনে হচ্ছিল ভাব জমতে ওদের তেমন একটা সময় লাগেনি। ছেলেগুলা ত মহা ফাজিল পানিতে ডুব দিয়ে গিয়ে কোন মেয়ের পায়ের পাতা ধরে প্রায় টান দিয়ে ডুবিয়ে নিচ্ছিল, আর মেয়েরাও যে সেটা ভালই উপভোগ করছিল তাদের কল কলিয়ে হাসি শুনলেই বোঝা যায়।

হঠাৎ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল এক ছোট খাট বয়স্ক ভদ্রলোক, বেশ অদ্ভুত ভঙ্গিতে লেকের ধারে হেটে বেড়াচ্ছে। পরনে খুব পরিষ্কার সাদা স্যুট, মাথায় গাঢ় ক্রিম কালারের পানামা হ্যাট। লোকটার হাঁটা আমাকে কৌতূহলী করে তুলল, খুব দ্রুত ভঙ্গিতে প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে এমন ভাবে হাঁটছিল দেখে মনে হচ্ছিল পায়ের পাতার উপর ভর না দিয়ে আঙ্গুলের মাথায় ভর দিয়ে হাটছে। চঞ্চল দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে পুল পার হয়ে চেয়ারের পাশে এসে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। ঠোঁট ফাঁক হতে দেখলাম তার মুখ ভর্তি ইদুরের মত অসমান আর ছোট ছোট দাঁত।

মুচকি হেসে হাসি ফিরিয়ে দিলাম।

-”আপনার পাশে কি একটু বসতে পারি?” - ভাঙা ভাঙা ইংলিশে বলে উঠল বুড়ো।
-“ওহ সিউর!”

লোকটাকে বাতিকগ্রস্থ মনে হল, চেয়ারের পিছনে গিয়ে আগে চেয়ার ভেঙ্গে পড়ার সম্ভবনা নাই খুঁটিয়ে দেখে নিশ্চিত হল তারপর হেলান দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে এক পায়ের উপর অন্য পা তুলে বসল। লোকটার পায়ে বাতাস চলাচলের জন্য ফুটা করা বাস্কিন শু। মনে মনে হাসলাম, এই ধরনের বাতিকগ্রস্থ বুড়োদের আমার বেশ চেনা আছে।

-“সন্ধ্যাটা দারুন তাইনা? “

ঘাড় নাড়লাম আমি।

-“জানেন ত জ্যামাইকার প্রতিটি সন্ধ্যা এমন হয়, এবার দিয়ে তিনবার হল জ্যামাইকা আসা”...সগক্তি করল বুড়ো।

-“আপনার কি প্রথমবার?”

-হম, বুড়োর আচার আচরন আমার পছন্দ হচ্ছিল না, তাই সংক্ষেপে উত্তর দিচ্ছিলাম।

-“এদের কান্ড দেখেন, এদের দেখে ত মনে হচ্ছেনা এরা হোটেলের কেউ, সুইমিং পুল নোংরা করছে কেন?” পুলের যুবকদের দিকে ইশারা করে বলল বুড়ো। ভাঙা ভাঙা উচ্চারনে স্পষ্ট স্প্যানিশ টান।

-“মনে হয় আমেরিকান নাবিক, এখনও পড়াশুনা করছে”- কাঁধ ঝাকিয়ে উত্তর দিলাম।

-“অবশ্যই আমেরিকান, গজগজ করতে করতে বলল বুড়ো, ওরা ছাড়া আর কারা এত গোলমাল করতে পারে, ভাবে কি নিজেদের... তা তুমিত আমেরিকান নও তাইনা?”

হঠাৎ বুড়োর তুমি সম্বোধনে বিরক্ত হলেও বিরক্তি চেপে ঘাড় নাড়লাম।

-“হম, আমি আমেরিকানদের একদম সহ্য করতে পারিনা।“

এমন সময় পুলের পানি থেকে উঠে এসে এক যুবক আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল, তার পাশে সেই ইংরেজ মেয়ে গুলোর কোন একজন। ওদের গা বেয়ে তখনো পানি গড়িয়ে পড়ছে।

-”সরি, এই চেয়ারগুলো কি আপনারা ব্যবহার করবেন?”

-“উঁহু।“

-“আমরা কি বসতে পারি।“

-"ওহ সিউর।"

“থ্যাংকস।“ ছেলেটির হাতে একটা শুকনা তোয়ালে ধরা, হাতের মুঠি খুলে তোয়ালে সরাতেই দেখি ভিতরে সিগারেট আর লাইটার।
প্রথমেই মেয়েটিকে সিগারেট অফার করল - সোনালি চুলের গোছা ঝাকিয়ে সিমপ্লি মেয়েটি না করে দিল। এবার ইয়ং নাবিক আমার দিকে সিগারেট বাড়িয়ে ধরতেই আমি আর না করলাম না। ঠোঁটে সিগারেট ঝুলিয়ে তাকিয়ে দেখি ছেলেটি তখন বুড়োকে সিগারেট অফার করছে।
থ্যাংকস, লাগবেনা, আমার আছে- বলতে বলতে পকেটে রাখা একটা কুমিরের সিগারেট কেস থেকে সিগারেট বের করল বুড়ো। এবার অন্য পকেট থেকে চাকুর মত একটা বস্তু বের হল যেটাতে ছোট একটা কেঁচি মতন আছে, দেখে আমার ম্যাকগাইভারের যন্ত্রটার কথা মনে পড়ল। লোকটি এবার খুব আয়েশি ভঙ্গিতে সিগার চাছতে লাগল।

-”লাইটার লাগবে আপনার?”-- আমেরিকান যুবক সহাস্যে হাতের লাইটারটি তুলে ধরে বলল।

-”যে বাতাস দিচ্ছে, তোমার লাইটার কাজ করবেনা হে...।“

-“কি যে বলেন, অবশ্যই কাজ করবে। সবসময় আমার লাইটার কাজ করে, অনেক বাতাসের মধ্যেও কখনও এক টিপে লাইটার জ্বালাতে ব্যর্থ হয়নি।“

এবার বুড়ো না জালান সিগারেট ঠোঁট থেকে বের করল, মাথা একদিকে হেলিয়ে দিয়ে শকুনের মত কুতকুতে চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল-

-“তাই নাকি !তোমার লাইটার স--ব--স--ম--য় কাজ করে?” কণ্ঠে স্পষ্ট ব্যাঙ্গ

-“অবশ্যই কাজ করে,আমি কখনও ব্যর্থ হয়নি লাইটার জ্বালাতে।“- ছোকরার গলার সরে বেশ গর্বিত ভাব।

বুড়োটা তখনও ঘাড় সোজা করেনি, বাকা ভাবেই তাকিয়ে বলল-

-“তার মানে আমাদের এই ইয়াং ভদ্রলোক দাবি করছেন যে উনার এই বিখ্যাত লাইটার কখনই ব্যর্থ হয়না তাইত”, বুড়ো এবার সম্মতি লাভের আশায় আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারা করল।

আমার খুব বিরক্ত লাগছিল- একে তো শুরু থেকেই বুড়োর কথা বার্তা পছন্দ হয়নি তার উপরে আবার সামান্য এক লাইটার জ্বলবে কি জ্বলবে না তা নিয়ে কথা পেঁচানো শুরু করেছে। আমার মনে হচ্ছিল ইচ্ছে করেই যুবকটিকে খোঁচাচ্ছে বুড়ো।

-“সিউর”, যুবকটি জবাব দিল। “আপনি হয়ত বিশ্বাস করছেন না কিন্তু আমি দাবি করে বলছি আমার লাইটার এক টিপেই জ্বলে সবসময়। কখনও দ্বিতীয় বার চাপা লাগেনা।“

বুড়োর দিক থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে এবার যুবকটির দিকে তাকালাম, বয়স বড় জোর উনিশ কি বিশ হবে,লম্বা ঝোলান মুখ এবং মুখের সাথে মানানসই পাখির ঠোঁটের মত তীক্ষ্ণ নাক , রোদ না লাগা ফ্যাকাশে চওড়া বুকে বাদামি লোম থাকা সত্তেও বুকের চামড়ায় হালকা লালচে ফুটি দেখা যায়। ডান হাতে লাইটারটি শক্ত করে ধরে রেখেছে, আঙ্গুল ফ্লিপে রাখা যে কোন মুহূর্তে এক টিপে আগুন ধরাতে প্রস্তুত।

যুবক হাসার চেস্টা করে আবার বলল- “এক টিপে লাইটার জ্বালাতে আমি এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়নি।“ হাসা সত্ত্বেও ভিতরের চেপে থাকা রাগ স্পষ্টত ছাপ ফেলছিল তার মুখে।

“আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমার লাইটার এক টিপেই জ্বলে উঠে, সবসময়! “ যুবক আবার জোর দিয়ে বলল।

-“দাড়াও দাড়াও এক মিনিট প্লিজ”, বুড়োর হাতে এখনও সিগার ধরা, তালু বাড়িয়ে এমনভাবে থামতে বলল যেন ট্রাফিক থামাচ্ছে। গলার আওয়াজ অদ্ভুত রকমের শান্ত আর একঘেয়ে।

-“ওকে, তা তুমি যখন এতই কনফিডেন্ট তোমার লাইটার নিয়ে, চল নাহয় একটা বাজি হয়ে যাক।“

-“কি নিয়ে বাজি“, যুবকটির বিস্মিত প্রশ্ন?

-“এই যে এক চান্সেই এই লাইটার জ্বলবে নাকি জ্বলবে না সেটা নিয়েই ছোট খাট কোন বাজি...,ধরবে?“

-“ওকে নো প্রবলেম, হয়ে যাক বাজি, আমি জানি আমি জিতব ।“

-“ভেবে বল...“

-“আরে এতে এত ভাবাভাবির কি আছে।“ যুবকটি মরিয়া হয়ে উঠছে ক্রমশ।

এইবার বুড়ো একটু চুপ করল, হাতের সিগার খুব মনোযোগ দিয়ে দেখল, জানিনা কেন আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল মনে হচ্ছিল বুড়ো কিছু একটা গোপন করে যাচ্ছে। মন থেকে কেমন একটা বাধা কাজ করছিল।

বুড়ো এবার ছেলেটির চোখে চোখ রাখল-

-“তুমি বাজি ধরতে পছন্দ করো?“

-“কেনা করে! “

-“হম, আমিও করি।এক কাজ করা যাক আমরা একটা বড়সড় বাজি ধরি, কেমন... “

-“দাঁড়ান, দাঁড়ান এই সামান্য ব্যপার নিয়ে আমি বড় কোন বাজি ধরব না, মেরে কেটে এক ডলার হতে পারে,তাছাড়া অনেক বড় বাজি ধরার মত টাকাও নাই আমার। “

শোনো, অগ্রাহ্যের ভঙ্গিতে বুড়ো বাতাসে হাত নাড়ল- “ব্যাপারটা আমরা একটা খেলা হিসাবে নেই। আমার রুমে চল, সেখানে কোন বাতাস নাই, আমি বাজি ধরছি যে তুমি টানা দশবার তোমার লাইটার জ্বালাতে পারবেনা, আর তুমি ধরবে যে তুমি পারবে তাইত? “

-“হুহ, আমি জানি আমি পারব।“

-“উহু মুখে বললেই ত হবেনা, প্রমাণ করে দেখাও, সাহস থাকলে বাজি ধর।“

-“বললাম ত বাজি ধরব, আচ্ছা ঠিক আছে, ম্যাক্সিমাম দশ ডলার পর্যন্ত বাজি ধরতে রাজি আছি, তার বেশি কোনভাবেই না।“

-“শোনো ছেলে, রাশভারি ভঙ্গিতে বলল বুড়ো- আমি ধনী ব্যাক্তি এবং রিস্ক নিতে পছন্দ করি, এত ছোট বাজিতে আমার পোষাবে না। হোটেলের বাইরে আমার বড় একটা গাড়ি রাখা আছে, চমৎকার আমেরিকান ক্যাডিলাক......... “

-“আরে আপনি পাগল হলেন নাকি“, ছেলেটা নার্ভাস ভঙ্গিতে হেসে উঠল- “এক লাইটারের পিছনে আমি নিশ্চয় আমার সব সম্পত্তি বাজি ধরবোনা। এমন পাগলামির কোন মানে নাই।“

-“পাগলামি ভাবছো কেন, ধরে নাও ইটস আ গেম। পরপর দশ বার আগুন জ্বালাতে পারলেই ক্যাডিলাক তোমার। “

-“তুমি কি চাওনা একটা নতুন ঝকঝকে ক্যাডিলাকের মালিক হতে?“

-“কে না চাইবে একটা নতুন ক্যাডিলাক গাড়ি... কিন্তু...“

-“কোন কিন্তু নেই“, বুড়ো আবার থামিয়ে দিল-- “সামনে ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল, বাজি ধরো।“

-“বাজি ত ধরতে চাই কিন্তু আমি কি রাখব বাজিতে?“

বুড়ো এবার চেয়ারে হেলান দিল। সিগারেটটা এখনও তার হাতে শোভা পাচ্ছে, জ্বলার অপেক্ষায় প্রস্তুত। আস্তে আস্তে সিগারেটের গোঁড়া ঘসতে ঘষতে বুড়ো বলল -“আমিও চাইনা তুমি এমন কিছু বাজি ধরো যাতে করে সর্বশ্রান্ত হয়ে যাও।“

-“ তাহলে কি বাজি ধরবো? আপনি ত অনেক দামি গাড়ি ধরেছেন।“

-“হম...এমন কিছু বাজি রাখতে পার যেটা হারালেও তোমার তেমন খারাপ লাগবেনা, বা যেটা আসলে তোমার তেমন কোন প্রয়োজন ও নাই...“

-“কিন্তু কি সেটা? যুবক প্রায় চেঁচিয়ে উঠল“, স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম ছেলেটা আর ধৈর্য রাখতে পারছেনা।

-“যেমন...হম, এই যেমন... “বুড়ো এদিক সেদিক তাকাল একবার তারপর বাচ্চাকে বুঝাচ্ছে এই ভঙ্গিতে সামনে ঝুঁকে এসে বলল -“এই যেমন তুমি তোমার বাম হাতের কেনি আঙ্গুল বাজি রাখতে পার।“

-“কি বলছেন এসব“...ছেলেটি থতমত খেয়ে গেল।

-“কেন নয়, ধর তুমি জিতলে ত গাড়ি তোমার আর আমি জিতলাম ত তোমার আঙ্গুল আমার।“

-“মানে কি এসবের? আমার আঙ্গুল আপনার কিভাবে হবে।“

-“খুব সিম্পল,কেটে নেব“...ভয়ংকর কথাটা বলতে বুড়োর গলা একবার কাঁপল না।

-“কিইইইই!!“যুবক এবার লাফ দিয়ে দাঁড়াল... “আপনি একটা উন্মাদ, বদ্ধ উন্মাদ, আপনার আসলে পাগলা গারদে থাকা উচিত।“

বুড়ো এবার পিছন দিকে ঘাড় বাকিয়ে আড়মোড়া ভাঙল, - “এত উত্তেজিত হবার কি আছে? আমি ভেবেছি তুমি তোমার লাইটার নিয়ে খুবই কনফিডেন্ট ছিলে তাই একটু মজার খেলা হিসাবে বাজিটা নিয়েছিলাম। তুমি রাজি না বাজি ধরতে...যাকগে বাদ দাও। কি বলেছি ভুলে যাও সব। “

নীরবতা নেমে এল আমাদের মাঝে। যুবক চুপ করে বসে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন পুলের পানির দিকে চেয়ে রইল। সবাই চুপচাপ কিন্তু প্রত্যেকের স্নায়ু টানটান হয়ে আছে বোঝাই যাচ্ছে। পুরো সময়টা আমি আর সেই ইংরেজ মেয়েটি হতভম্ব হয়ে ওদের কথোপকথন শুনছিলাম।
এতক্ষন আমাদের কারো সিগারেট ধরানো হয়নি, যুবক এবার সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে লাইটারে চাপ দিল। কিল্ক করে সামান্য একটু আওয়াজ করে খুব মসৃণ ভাবে আগুন জ্বলে উঠল, শিখাটা একবারও কাঁপল না। খেয়াল করলাম যুবক আগুনের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।

-“আমাকে একটু লাইটারটা দিবেন প্লিজ“- হাত বাড়িয়ে লাইটারটা চাইলাম আমি।

-“ওহ সরি সরি, ভুলেই গেছিলাম আপনার কাছে লাইটার নেই“- তাড়াতাড়ি বলল যুবক।

আমার দিকে ঝুঁকে এসে আবার লাইটারে চাপ দিল, এবারও এক চাপেই খুব চমৎকার ভাবে আগুন জ্বলে উঠল, শিখা একবার কাঁপল না।
আবার সবাই চুপচাপ, ভালই বুঝছিলাম যুবকটির মনে চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ঐ বদমাশ বুড়োর উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। যুবকটিকে দেখলেই বোঝা যায় তার মধ্যে একটা দোটানা ভাব কাজ করছে। একবার উঠে একটু হেটে নিল তারপর চেয়ার বদলিয়ে নতুন চেয়ারে বসল। মাথার পিছনে দুই হাত রেখে কয়েকবার সামনে পিছনে ঝুঁকল। ডান হাত বুকে চেপে কিছুক্ষন ঘষল। আচরনে অসম্ভব অস্থিরতা। আবার হাত মাথার পিছনে নিল, তারপর দুই হাত দুই হাঁটুতে রেখে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে হাটুঁর মালাই চাকতি ঘষতে লাগল। কিছুক্ষন পরেই দেখি দুই পা নাচাচ্ছে।
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পরে যুবকটি নীরবতা ভেঙে বুড়োর দিকে তাকাল, বুড়ো তখন চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রয়েছে।

-“আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা আরেকবার আলাপ করি।আমরা এখান থেকে আপনার রুমে যাব তারপর আমি যদি টানা দশবার লাইটার জালিয়ে আগুন ধরাতে পারি তাহলেই ক্যাডিলাক আমার, তাইত?“

যুবক আঙ্গুলের কথা এড়িয়ে গেল।
-“আর না পারলে তোমার আঙ্গুল আমার, বুড়োর গলার স্বর ভিষন শান্ত। কিন্তু তুমি ত মনে হল ভয় পাচ্ছ।“

-“আচ্ছা ধরেন আমি হেরে গেলাম তখন আপনি কি করবেন? আমি আমার ডান হাত দিয়ে বাম হাত চেপে রাখব আর আপনি সেটা ঘচ করে কেটে নিবেন? “

-“আরে না না, তুমি আমাকে কি মনে করো হে ? বুড়ো সহাস্য বলল। এমন ত হতেই পারে যে তুমি হেরে গেলে তারপর আঙ্গুল হারানোর ভয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে পালালে, আমি বুড়ো মানুষ তোমার সাথে কি পারব? ঐ ঝামেলার মধ্যে আমি নাই, বাজি হবে বাজির মত। এর চেয়ে ভাল হবে শুরুতেই আমি তোমার বাম হাত কবজি থেকে টেবিলের সাথে বেধে নিব, তুমি বাম হাত টেবিলের উপরে ছড়িয়ে রাখবে আর আমি পাশেই একটা ধারালো ছুরি নিয়ে দাড়িয়ে থাকব। যেই মুহূর্তে তুমি ব্যর্থ হবে, নিমেষেই তোমার বাম আঙ্গুলে ছুরি চালাবো তুমি টের টাও পাবেনা।“

আমি এতক্ষনে বুঝে গেছি এই বুড়ো মানসিকভাবে পুরোপুরি অসুস্থ। কি অবলীলায় ভয়ংকর সব কথা বলে চলেছে।

-“কত সালের মডেল?“ সবাইকে সচকিত করে যুবকটি বলে উঠল।

-“কি কত সালের? ও আচ্ছা আমার ক্যাডিলাক?আরে একদম নতুন গাড়ি, গত বছরের মডেল, এখনও সিটগুলো থেকে পলিথিন সরানো হয়নি। কিন্তু এসব জেনে কি লাভ, আমি বুঝেছি তুমি ভয় পাচ্ছে, বাদ দাও এসব আলাপ। আমেরিকানগুলা এমনি হয়, একেকটা ভিতুর ডিম। সত্যিকারের পুরুষের মত বেট ধরার সাহস আছে নাকি ওদের?“ ফুহ...নিজের মনেই বিড়বিড় করতে থাকল বুড়ো।

যুবকটি গভীর ভাবে একবার শ্বাস টানল, প্রথমে ইংরেজ মেয়েটির দিকে একবার তাকাল, তারপর আমার দিকে... “আমি রাজি।“

-“কি বললে?“

-“বললাম যে আপনার বাজিতে আমি রাজি।“

-“আহ, রাজি তুমি? দারুন! “পাগল বুড়োটা আস্তে আস্তে হাত তালি দিচ্ছিল...“তাইলে আর দেরি কেন। এক্ষুনি আমার রুমে চল।“

আর এই যে তুমি, এবার আমার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বলল... কি জানি বলে সেটাকে, উম ম ম... তুমি তাহলে আমাদের রেফারি হও, সব খেলাতেই ত একজন রেফারি থাকে নাকি, আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির ভঙ্গিতে চোখ টিপল বুড়ো। ঘোলাটে চোখের জমিনে কাল মনি কুতকুত করছে, সত্যি বলছি আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন শয়তানের চোখ দেখছি।

আমি এইসবের সাতেও নাই, পাঁচেও নাই। এই বাজি ধরা এবং বাজির শর্ত কোনটাই পছন্দ হচ্ছেনা একদম- বেশ বিরক্ত হয়েই বললাম আমি।

“আমারও না “...চেঁচিয়ে উঠল ইংরেজ মেয়েটি, এতক্ষনে এই প্রথমবার ওকে কথা বলতে শুনলাম। “এটা কোন বাজি হল নাকি। একটা ভয়ংকর, নোংরা বাজি, আমি এর মধ্যে নাই।“

“ও হেরে গেলে আপনি কি আসলেই ওর আঙ্গুল কেটে নিবেন?“ কৌতূহল দমাতে না পেরে জানতে চাইলাম আমি।

“কেন নয়? এটা একধরনের খেলা, খেলায় কেউ জিতবে আর কেউবা হারবে... যে জিতবে সে পুরষ্কার পাবে তাইনা? তাছাড়া ও জিতে গেলে যে আমার এত দামের গাড়িটা নিয়ে যাবে... সেটাও ভাব একবার।“

চল চল আর দেরি কিসের, এক্ষুনি আমার রুমে যাই। তাড়া লাগাল বুড়ো।

-“তা রুমে যাবার আগে কোন কাপড় পরে নিবে নাকি?“ ছেলেটার নগ্ন বুকের দিকে ইঙ্গিত করল বুড়ো।

-“না, আমি ঠিক আছি, এভাবেই যাব।“

এবার আমার দিকে ঘুরল যুবক, “আপনার যদি খুব বেশি তাড়া না থাকে আপনি কি রেফারি হবেন প্লিজ?“ যুবকের কণ্ঠে স্পষ্ট মিনতি।
যুবকের দিকে চেয়ে এবার আর না করতে পারলাম না আমি।

“ওকে যাব আমি আপনাদের সাথে, কিন্তু বিষয়টা আমার একদম ভাল লাগছে না। আরেকবার ভেবে দেখবেন প্লিজ।“

“ভাবা ভাবির কিছু নাই আর, দান পরে গেছে, চলুন রউনা দেই“, জোর দিয়ে বলল যুবক।

“তুমি আসবে প্লিজ“, মেয়েটির দিকে ফিরে বলল যুবক, “তুমি থাকলে আমার ভাল লাগবে।“

সবাই মিলে এবার বাগানের মধ্যে দিয়ে ফিরে চললাম। বুড়োকে অসম্ভব অস্থির আর উত্তেজিত দেখাচ্ছিল।
এখন আগের চেয়েও দ্রুত আর জোরে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে।

“চল একবার গাড়িটা দেখায় তোমাদের। আফটার অল যদি জিততে পারো কি জিতছ তুমি সেটা দেখে নেওয়া ভাল তাইনা?“

হোটেলের বারান্দায় উঠে এমন জায়গায় দাড়ালাম আমরা যেখান থেকে পারকিং লট পরিষ্কার দেখা যায়।
সামনের দিকেই একটা হালকা সবুজ রঙের মসৃণ আর অভিজাত ক্যাডিলাক পার্ক করা আছে। দামি গাড়ি, দেখলেই বোঝা যায়। ঐ গাড়িটার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলল বুড়ো- “ঐ যে দেখো আমার প্রেয়সী।“

সেদিকে চেয়ে যুবকের চোখ চকচক করে উঠল...“আরে দারুন গাড়ি ত।“

“বলেছিলাম না, ঠকবে না। চল চল এবার উপরে যায় সবাই, দেখা যাক আমার প্রেয়সী তোমার হতে পারে কিনা“, বিশ্রী ভঙ্গিতে হেসে উঠল বুড়ো।

সবাই মিলে এবার দল বেধে বুড়োর রুমের দিকে চললাম। সিঁড়ি বেয়ে উঠে দরজা খুলতেই দেখি দারুন করে সাজান এক্সক্লুসিভ ডাবলবেডের সুইট। এক বিছানার কিনারায় মেয়েদের রাত পোশাক অবহেলায় পড়ে রয়েছে। ঘরের মধ্যে অবশ্য আর কাউকে দেখতে পেলাম না।
“মারটিনি চলবে তো?“ বুড়ো ঘুরে সবাইকে জিজ্ঞেস করল?

ঘরের এক কোনায় সদৃশ এক টেবিল জুড়ে বিভিন্ন মদের বোতল সাজান, সবগুলোই দামি, একটা ছোট মিক্সার, আর বেশ কিছু খালি গ্লাস । পাশের ছোট ফ্রিজ খুলে বরফের টুকরো বের করে ড্রিংক বানাতে শুরু করল বুড়ো। কাজের ফাকে রুম সার্ভিস ডাকার বেল টিপেছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই রঙিন উর্দি পড়া এক মহিলা দরজায় নক করে রুমে ঢুকল।

“রুম সার্ভিস স্যার।“

ও আচ্ছা, সোজা দাড়িয়ে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে একটা দশ ডলারের নোট বেয়ারার দিকে বাড়িয়ে ধরল।

- “এটা রাখো, তোমার বখশিশ, আমরা সবাই মিলে এই ঘরে একটা গেম খেলব...আমার দুটো, উম ম না তিনটা জিনিষ লাগবে। কিছু পেরেক, একটা হাতুড়ি আর একটা খুব ধারাল চাকু, রান্নাঘর থেকে কসাইয়ের চাকু, কি পারবেনা এনে দিতে?“

-“কসাইয়ের চাপাতি স্যার??“ বেয়েরা মেয়েটি বিস্ফোরিত চোখে বলল।

-“হ্যাঁ কসাইয়ের ধারাল চাপাতি, যা হাড় কাটে... তোমার পারা উচিত তাইনা? “বুড়ো মেয়েটির হাতে ধরা নোটের দিকে ইশারা করল।

-“এক্ষুনি আনছি স্যার“, মেয়েটি ছুটে বেরিয়ে গেল।

বুড়ো ঘুরে ঘুরে সবার হাতে মারটিনির গ্লাস ধরিয়ে দিল। আমার মনে হচ্ছিল সব কিছু যেন স্বপ্নে ঘটছে, নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা। বামে তাকালাম লম্বা মুখ আর লম্বা নাকের যুবকটি প্রায় নগ্ন অবস্থায় পাশে দাঁড়ান, কোমরে শুধু একটা ছোট জাঙ্গিয়া, গায়ের পানি প্রায় শুকিয়ে এসেছে, দেয়ালে হেলান দিয়ে বারবার পা বদল করে দাঁড়াচ্ছে, বোঝায় যায় খুব নার্ভাস। আমার ডান দিকে সোনালি চুলের ইংরেজ মেয়েটি হালকা নীল রঙের সুইমিং কস্টিউম পরনে, বারবার আঙুল দিয়ে চুল পেঁচাচ্ছে, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা, মাঝে মাঝে চশমার উপর দিয়ে চোখ তুলে ছেলেটার দিকে অস্বস্তি নিয়ে তাকাচ্ছে। আমার ঠিক সামনে বুড়ো দাঁড়ান... ফ্যাকাশে ধুসর চোখে মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে বারবার আর মাঝে মাঝে মারটিনির গ্লাসে হালকা চুমুক দিচ্ছে। বুড়ো খুব গম্ভির হয়ে আছে, হাবে ভাবে বোঝায় যায় আঙ্গুল কাটতে এক মুহূর্তের জন্য ও দ্বিধা করবেনা।

খোদা আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি নাকি!

যদি যুবকটা হেরে যায় তাহলে কি হবে?? তাহলে হয়ত আমাদের যে ক্যাডিলাক সে জিততে পারেনি তাতে করেই তাকে হাসপাতালে নিতে হবে... ডাক্তার তো নিশ্চয় জানতে চাইবেন কিভাবে কাটল আঙ্গুল? কি জবাব দেব তখন ? ডাক্তার নিশ্চয় পুলিশ ডাকবে। আমার মনে হচ্ছিল আমি কোন একটা ভয়ংকর ফাঁদে আটকা পড়ে গেছি। এত ফালতু ঘটনার মুখোমুখি জীবনেও হইনি।

“আপনার কি মনে হচ্ছেনা যে এটা একটা চরম ফালতু বাজি? এর পরিণতি কি হতে পারে ভেবেছেন একবারও?“- রাগত স্বরে যুবক কে বললাম।

“ উঁহু, আমার মনে হচ্ছে এটা একটা দারুন বাজি আর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই ঐ সবুজ রঙের গাড়িটার চাবি আমার হাতে ঝুলবে।“ ঠক করে খালি গ্লাসটা টেবিলে রাখল যুবক। লম্বা এক গ্লাস ভর্তি মারটিনি অলরেডি পেটে চালান করেছে।

“তুমি কেন বুঝতে পারছ না এটা একটা জঘন্য বাজি?“, প্রায় ফুঁপিয়ে উঠল মেয়েটি। বোঝাই যাচ্ছে এত টেনশন আর নিতে পারছেনা।

ছেলেটাকে খুব শান্ত দেখাচ্ছিল এবার, “এদিকে তাকাও, নিজের হাতের দিকে ইশারা করল সে, বাম হাতের কেনি আঙুলটা একবার ভাজ করল একবার খুলল। জীবনে এই আঙুল কি কোন কাজে এসেছে আমার? উঁহু কোনদিন না, এটা জাস্ট একটা ফালতু আঙুল। এই প্রথম এই আঙুলটা একটা ভাল কাজে লাগতে যাচ্ছে। যদি জিতে যায়, আহ চোখ বন্ধ করল ছেলেটি প্রায় ত্রিশ হাজার ডলারের ঐ ঝকঝকে গাড়িটা আমার হবে। আর যদি হেরেই যায়, নাহয় গেলাম হেরে কি আসে যায়, মাত্র তো একটা আঙুল, এটা আসলেই একটা দারুন বাজি“-- যুবকটার কথা শুনতে শুনতে আমার মনে হচ্ছিল বুড়োর সাথে সাথে ছেলেটাও বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে।

ছেলেটার কথা শুনে বুড়োটা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল, “এই না হলে সাহস, নাহ আমেরিকানদের সম্পর্কে আমার ধারনা বদলে যাচ্ছে।“ দ্রুত সবার খালি গ্লাস ভরে দিল বুড়ো।

“শুরু করার আগে রেফারির কাছে গাড়ির চাবি জমা দিচ্ছি আমি“, আমার দিকে আঙুল তুলল বুড়ো। এরপর পকেট থেকে চাবি বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। "গাড়ির সমস্ত কাগজপত্র সামনের ড্যাশবোর্ডে রাখা আছে।"

এমন সময় মেইড ফিরে এল। এক হাতে হাড় কাটার সাংঘাতিক ধারালো চাপাতি আর অন্য হাতে একটা হাতুড়ি আর ছোট এক ব্যাগ ভর্তি পেরেক।

“সব আনতে পেরেছ দেখি, গুড।“ এখন যেতে পার।

মেয়েটি দরজা ভিড়িয়ে চলে যাওয়া মাত্রই বুড়ো লাফাতে লাফাতে বিছানার উপর সব জিনিষ গুছিয়ে রাখল। এবার ছেলেটিকে ডাকল - “আর দেরি করা যাবেনা, আসো তো টেবিলটা ঘরের মাঝখানে নিয়ে যায়। “

টেবিলটা খুব সাধারন চার ফিট বাই তিন ফিটের একটা ছোট টেবিল, উপরে একটা প্যাড, কিছু কলম আর একটা কলমদানি রাখা। সব হোটেলে রুমেই ব্যবহারের জন্য এমন ছোট টেবিল থাকে। দুই উন্মাদ মিলে ঘরের মাঝামাঝি টেবিলটা রাখল। বুড়ো আগেই সব জিনিষ সরিয়ে টেবিল খালি করে ফেলেছিল।

ফুর্তিতে শিস বাজাতে বাজাতে ঘরের চারিপাশে তাকাল বুড়ো।“ উম ম ম আমাদের একটা চেয়ার লাগবে“, দ্রুত বিছানার পাশ থেকে একটা চেয়ার এনে টেবিলের পাশে রাখল। তাকে এত হাসি খুশি আর সপ্রভিত দেখাচ্ছিল যে...যে কেউ ভাববে সে বাচ্চাদের জন্য খেলার কোন উপকরন সাজাচ্ছে।

এখন কি করব, নিজের মনেই বকছিল বুড়ো, দ্রুত একটা পেরেক এনে হাতুড়ির এক বাড়িতে সেটা টেবিলের মাঝে ঢুকিয়ে দিল।
হাতে মারটিনির গ্লাস নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে আমরা পাশেই দাড়িয়ে বুড়োর কাজ দেখছিলাম। ছয় ইঞ্চি ফাঁক রেখে বুড়ো দুটো টেবিলে পেরেক পুতল পাশাপাশি। এমনভাবে পেরেকগুলো পুতল যেন মাথাটা বের হয়ে থাকে। এরপর আঙুল দিয়ে টেনে দেখল ঠিক মত পেরেক গাঁথা হয়েছে কিনা।

শালা, শুয়োরের বাচ্চা, রাগ চাপতে পারছিলাম না আমি। মন বলছে এই কাজ সে আগেও করেছে, সব কিছু এত নিখুঁত আর গোছানো, শয়তানটা জানে কি কি লাগবে, একবারের জন্য ও তাকে ভাবতে হয়নি, পেরেক, হাতুড়ি, চাপাতি, টেবিল, চেয়ার। রাগে আর ঘৃণায় মুখে থুতু জমতে শুরু করেছে আমার।

“এখন আমাদের কি লাগবে, কি লাগবে...“ হম এক টুকরো দড়ি লাগবে। ঝুঁকে খাটের নিচ থেকে দড়ি বের করল বুড়ো। এবার লক্ষি ছেলের মত চেয়ারে বসে পড়ত, যুবকটিকে ইশারা করল। খুশিতে নাচছে শয়তানটার চোখ।

যুবকটি খালি গ্লাস নামিয়ে রেখে চেয়ারে বসতেই বুড়ো দড়ি হাতে তড়িঘড়ি এগিয়ে এল। প্রথমে দড়ি দিয়ে শক্ত করে তার তালু বরাবর রশি পেঁচাল, এরপর দড়ির দুই মাথা দুই পেরেকে শক্ত করে বেঁধে ফেলল। এখন যুবকটি চাইলেও বাম হাত টেবিল থেকে নাড়াতে পারবেনা। আমরা মন্ত্র মুগ্ধের মত বুড়োর কাজ দেখছিলাম। এতেই বুড়ো সন্তুষ্ট হলনা, আরেকদফা কেনি আঙুল বাদে বাকি আঙুল তালুর সাথে শক্ত করে বাদল। শুধু কেনি আঙুল বের হয়ে থাকল।

“বেশ বেশ“, ঘোঁত করে উঠল বুড়ো, বোঝাই যাচ্ছে নিজের কাজে ভীষণ সন্তুষ্ট।

“ওহে ছোকরা আঙুল খানা বাড়িয়ে ধর, আমি চাইনা একটা আঙুল কাটতে গিয়ে বাকি আঙুলেও পোঁচ লাগুক। আর ডান হাত তো খালি থাকলই, এক হাতেই তো লাইটার জ্বালানো যায় নাকি?“

লাফাতে লাফাতে বিছানা থেকে চাপাতি হাতে নিয়ে ছেলেটার চেয়ারের পাশে দাঁড়াল বুড়ো।

চারিদিকে সবাইকে দেখে নিয়ে জিভ দিয়ে একবার ঠোঁট চাটল। “শুরু করা যাক, রেফারি শুরু করার সংকেত দাও হে।“

মেয়েটি ছেলেটির চেয়ারের পিছনে দাড়িয়ে আছে, একবার হালকা স্পর্শে ছেলেটির কাঁধে হাত রাখল, কথা না বলে স্পর্শ দিয়ে ভরসা দেবার চেষ্টা করল হয়ত। ছেলেটি চোয়াল শক্ত করে বসে আছে, বাম হাত কবজি থেকে বাঁধা, ডান হাতে শক্ত মুঠিতে লাইটার ধরা, চোখের পাতা পিট পিট করছে..চোখ বুড়োর হাতে ধরা চাপাতির দিকে.... নার্ভাস?!

শুধু শয়তানটা আমার দিকে কুতকুত চোখে তাকিয়ে আছে।

“তুমি রেডি তো?“ ছেলেটির দিকে চেয়ে বললাম আমি।

কোন কথা না বলে শুধু ঘার নাড়ল সে।

“আর আপনি?“ এবার বুড়োর দিকে চাইলাম।

খুশিতে বুড়োর ইঁদুরের মত দাঁত ঝিকিয়ে উঠল, বাতাসে কোপানোর ভঙ্গিতে চাপাতি ঘোরাল একবার, তারপর সাঁই করে চাপাতি নামিয়ে আনল ছেলেটির আঙ্গুলের উপর... আঙুল থেকে ঠিক দুই ইঞ্চি উপরে থামিয়ে দিয়ে বলল...“আরে শুরু কর তো।“

“শালা, হারামজাদা“- বিড়বিড় করলাম আমি, “আঙুল কাটার জন্য তর সইছে না যেন“।

ছেলেটি একটু চমকে উঠলেও ভয় পেলনা, কেবল দুয়েকবার চোখের পাতা ঘন ঘন পড়ল তারপর শান্ত হয়ে গেল।

“ওকে তাহলে, শুরু করছি।“

ছেলেটি এবার বলে উঠল, “আপনি প্লিজ একটু জোরে গুনবেন কতবার আমি জ্বালাতে পারলাম?“

“কোন চিন্তা করেননা“, অভয় দিলাম আমি।

ছেলেটি এবার তার ডান হাত উপরে তুলল, বুড়ো আঙুল ফ্লিপারে রাখা।
জোরে একবার শ্বাস নিল, তারপর বুড়ো আঙুলে চাপ দিল--একবার মাত্র ক্লিক শব্দ হল, সাথে সাথেই খুব সুন্দর ভাবে হালকা হলুদ আলো ছড়িয়ে আগুন জ্বলে উঠল।

-“এ এ এ ক ক ক“...

ছেলেটি ফ্লিপার থেকে হাত সরিয়ে নিতেই আগুন নিভে গেল। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষার পর আবার চাপ দিল, এবার কিছুটা জোরে... হালকা শব্দ করে আবার আগুনের হলুদাভ শিখা।

-“দু ই ই ই ই...“

ঘরে পিন পতন নিরবতা, ছেলেটির চোখ শুধু লাইটারের দিকে, বুড়ো তখনও চাপাতি ধরে রেখেছে আঙ্গুলের একটু উপরে, চোখ লাইটারের দিকে।

-“তি ন ন ন ন“ ... ঘাম গড়িয়ে নামছে আমার চিবুক বেয়ে।

-“চা র র র“

-“পাঁচ“

-“ছয়“

-“সাত“!

বোঝাই যাচ্ছে এই লাইটার খুব ভাল কাজ করে। সবই বুড়ো আঙ্গুলের খেলা। ছেলেটা শক্ত করে একবার বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিচ্ছে, মুহূর্তের মাঝেই খুব চমৎকার ভাবে আগুন জ্বলে উঠছে, আঙুল সরিয়ে নিতেই শিখা উধাও।
আমি মনে মনে রেডি হলাম আট বলার জন্য।

-“আট“

আট বলতে না বলতেই হঠাৎ দড়াম করে ভিজিয়ে থাকা মেইন দরজাটা খুলে গেল। এত আচমকা দরজাটা খুলল যে আমরা সবাই আঁতকে উঠলাম। দরজায় ছোটখাট কালো চুলের এক অভিজাত বয়স্ক ভদ্রমহিলা দাঁড়ান, মাত্র সেকেন্ড দুয়েক মহিলা আমাদের দিকে চেয়ে রইল, তারপরেই “কার্লোস কার্লোস“ বলে চেঁচিয়ে উঠে দৌড়ে চাপাতিটা বুড়োর হাত থেকে প্রায় ছিনিয়েই নিল। চাপাতি বিছানার দিকে ছুড়ে ফেলেই স্প্যানিশ ভাষায় চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বুড়োকে কি জানি বলতে লাগল। মহিলা রাগে কাঁপছিল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে ঝড়ের বেগে কথা বলছিল আর এক হাতে বুড়োর কলার ধরে তাকে ক্রমাগত এত বেশি ঝাঁকাচ্ছিল, আমার ভয় হচ্ছিল বুড়োর ঘাড়টা না ভেঙে যায়।

ধীরে ধীরে মহিলার রাগ একটু কমতে বুড়োকে ঝাঁকানো বন্ধ করল, তারপর প্রায় ধাক্কা দিয়েই তাকে বিছানার এক কোনে বসিয়ে দিল। বুড়ো এতক্ষন কোন কথা বলেনি, এবার সুযোগ পেয়ে হাত দিয়ে টিপে টুপে দেখতে লাগল ঘাড় ঠিক জায়গায় আছে কিনা।

মহিলা এবার আমাদের দিকে ফিরল। আমরা রুদ্ধশ্বাসে ঘরের মাঝে ঘটে যাওয়া নাটক দেখছিলাম।

-“ আমি খুবই দুঃখিত, প্লিজ কিছু মনে করেন না আপনারা, প্রায় বিশুদ্ধ ইংলিশে বলে উঠল মহিলা। আমারি দোষ, সব আমার দোষ। মাত্র দশ মিনিটের জন্য ওকে একা রেখে লাউঞ্জে গেছি, এর মাঝেই সে এই কান্ড আবার শুরু করেছে।

মহিলাকে আসলেই আন্তরিকভাবে দুঃখিত মনে হচ্ছিল। আমরা কিছু বললাম না, চুপ করে শুনছিলাম। ছেলেটা শুধু ডান হাত দিয়ে তার হাতের বাঁধন খোলার চেস্টা করছিল।

-“ও একটা ম্যানিয়াক। এর আগে আমরা যেখানে থাকতাম ভয় দেখিয়ে, বাজি ধরে প্রায় ৪৭ টা আঙুল কেটে নিয়েছে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে। অনেক টাকা, সম্পত্তি আর ১১ টা গাড়ি হারিয়েছি আমরা ওর এই উন্মাদনার জন্য। শেষমেশ ওখানকার সবার শাসানিতে টিকতে না পেরে ওকে নিয়ে এখানে চলে এসেছি আমি“, বুড়োর দিকে ইঙ্গিত করল মহিলা।

আমি এবার খুবই ছোট্ট একটা বাজি রেখেছিলাম মার্থা -মিন মিন করে বলল বুড়ো।
-“ও কি বাজি রেখেছিল এবার, কোন গাড়ি?“

-“হ্যাঁ একটা ক্যাডিলাক“, জবাব দিল যুবকটি।

-“ওর কোন গাড়ি নাই, ওটা আমার গাড়ি“, মহিলা চেঁচিয়ে উঠল রাগে। “আমার গাড়ি বাজি রাখার সাহস পায় কোথা থেকে ??“

-“ভাবা যায় ওর কিছু না থেকেও আপনার সাথে বাজি ধরেছে, আমি আসতে একটু দেরি করলে কি যে ঘটত?“ শিউরে উঠল মহিলা। “প্লিজ কিছু মনে করেননা আপনারা।" মহিলার কথা শুনে তাকে আসলেই সত্যিকার ভদ্র মহিলা মনে হচ্ছিল।

-ওকে, পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করে টেবিলে রাখলাম আমি।

“ছোট্ট একটা বাজি রেখেছিলাম মার্থা“- আবার মিন মিন করল বুড়ো, এবার গলার স্বর আরও ক্ষীণ।

কার্লোসের বাজি ধরার মত কোন জিনিষ নাই, নিজের মনেই বিড়বিড় করছিলেন ভদ্রমহিলা, কিছুই নাই ওর, ফুটা পেনিটাও নাই, এগুলো সব আমার। যা যা সম্পদ সব আমার, অনেক আগেই আমার হয়ে গেছে। আমি অনেক কষ্টে এগুলো নিজের করে নিয়েছি, সময় লেগেছে, খুব কষ্ট হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব আমার হয়ে গেছে। ছেলেটির চোখে চোখ রেখে হাসল মহিলা, গভীর দুঃখের হাসি। তারপর ধীরে ধীরে টেবিলের সামনে এগিয়ে এল গাড়ির চাবি নেবার জন্য। পকেট থেকে হাত বের করতেই এবার দেখলাম আমি মহিলার ঐ হাতটাতে শুধু একটা মাত্র আঙুল, একটা আঙুল আর তালু, আর কিচ্ছু নাই। স্রেফ একটা আঙুল!!!

(রোয়াল্ড দালের "ম্যান ফ্রম দি সাউথ" গল্পটি পড়ে এত মজা পেয়েছি যে আমার দুর্বল লেখনি সত্ত্বেও অনুবাদ করার দুঃসাহস দেখিয়ে ফেললাম। লেখাটি বড়, দুই খণ্ডে দেওয়া যেত কিন্তু তাতে করে গল্পের আসল মজাটাই নষ্ট হয়।
প্রথম অনুবাদ প্রচেষ্টা, সমালোচনা সাদরে আমন্ত্রিত। হাসি )


মন্তব্য

katush এর ছবি

আপ্নার অনুবাদ খুব সুন্দর হয়েচে। আমার খুব প্রিয় লেখক ডাহ্ ল।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি
ডাল আমারও খুব প্রিয় লেখক। কিভাবে যে লিখতেন এমন সব গল্প কে জানে!

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

সাফিনাজ আরজু, গরম এক কাপ চা নিয়ে বসেছিলাম লেখাটা পড়তে। পড়াশেষে দেখলাম ঠান্ডা জল। এখন কে গরম করে দেবে? মন খারাপ

সামান্য দুইটা ভুল আছে। 'আসো তোমাদের গাড়িটা দেখায়' লিখেছেন। সেখানে ''দেখাই'' হবে। আর আরেক জায়গায় ''চল চল এবার উপরে যায় সবাই'' হয়ে গেছে। আসলে ''যাই'' হবে। কিছু মনে করবেন না দয়া করে। দৃষ্টি কটু লাগছিলো বলেই বলা।

চমৎকার আর ঝরঝরে অনুবাদ করেছেন। ভাল লাগলো পড়ে।

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই, কষ্ট করে এত বড় লেখাটা পড়ার জন্য।
আসলে অনেক বড় লেখা তো, নিজের অজান্তেই ছোটখাট ভুল থেকে গেছে, ধরিয়ে দেবার জন্য আবারও ধন্যবাদ। আবার পড়ে দেখে ঠিক করে দিচ্ছি। হাসি

ইস চা টা ঠাণ্ডা হয়ে গেল, আমার কি দোষ সব দোষ ডালের ! উনার কাছে চা চেয়ে পাঠান। খাইছে

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

এক লহমা এর ছবি

হাততালি
একটানা গল্পটা পড়ে ফেলেছিলাম। অফিস যাওয়াটা গড়বড় হয়ে গিয়েছিল আর একটু হলেই! পরের গল্পের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

এবারে একটু অন্য কথা। লম্বা গল্প। লিখতে লিখতে ধৈর্য্য ছুটে যাওয়া অসম্ভব নয়। আরো কয়েকবার পড়লে বেশ কিছু বানান আর ভাষাগত সংশোধন করতে চাইবে বলেই মনে হয়। ভবিষ্যতে যখন বই বার করবে, তোমার সম্পাদকমন্ডলীতে আমার নাম স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে জমা দিয়ে রাখলাম দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ঠিক বলেছ তুমি দাদাভাই, এখন আবার পড়লে কিছু কিছু জায়গা বদলাতে ইচ্ছে করছে। প্রথম অনুবাদ তো, কষ্ট করে নাহয় পাস মার্কটা দিয়েই দাও। দেঁতো হাসি

ভবিষ্যতে যখন বই বার করবে, তোমার সম্পাদকমন্ডলীতে আমার নাম স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে জমা দিয়ে রাখলাম

কস্কি মমিন!

আমি বই বার করব, শুনার পর থেকে মাথাটা ঘুরতাছে। অ্যাঁ
এত সুন্দর করে বলেছ, মনটাই ভাল হয়ে গেছে। ফ্রেশ আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- নাও। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনুবাদ পড়তে গিয়ে সবসময় তিনবার ভাবি। আসলটার মজা পাবো তো? কিন্তু আপনার প্রথম লাইনটা পছন্দ হওয়াতে গড়গড় করে পড়া শুরু করলাম। গায়ে কাঁটা দিতে দিতে পড়া শেষ করলাম। আগাগোড়া টানটান গল্প। ছোটখাট কয়েকটা বানানভুল রয়েছে, সেগুলো ঠিক করে নিয়েন। প্রথম অনুবাদেই মাত। চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনুবাদ খুব একটা ভাল হয়েছে মনে হয়না, আসলে গল্পটাই এমন টান টান উত্তেজনার ছিল !
আমি শুধু চেষ্টা করেছি ভাষাটা যেন সাবলীল থাকে।
এত সুন্দর করে উৎসাহ দিলেন নীড়দা, অনেক অনেক ধন্যবাদ। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

রোয়াল্ড দালের প্রথম কোন লেখা পড়লাম। কাহিনীর টান আর বর্ণনা করার স্টাইল দেখে বুঝলাম রোয়াল্ড দাল কেন এত বিখ্যাত!

---শেহজাদ আমান

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এই ধরনের লেখা আমার খুব ভাল লাগে তাই ডালের বেশীরভাগ লেখায় আমার কাছে মাস্টার পিস মনে হয়। হাসি
পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ওহ! বিশ্বাস করুন, গল্পের শেষে এসে আমার হাতের দিকে একবার তাকালাম, জানি ওখানে সবগুলো আঙুল ঠিকই আছে, তারপরও।

আয়নামতি দিদির কাছে বায়না ধরাতে আপনি আমাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন, এবার আপনার কাছে বায়না ধরছি - সচলের যারা এই গল্প পড়েছে সবার সঙ্গ পাবো নির্ঘাৎ - নিয়মিত আপনার কাছ থেকে অনুবাদ গল্প চাই। বছর শেষে একটা সংকলন করার উপযোগী সংখ্যক গল্প অবশ্যই অবশ্যই উপহার দেবেন।

____________________________

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনুবাদ যে খুব উচ্চমানের হয়েছে দাবি করবনা, তবে আমি শুধু চেয়েছিলাম প্রথম অনুবাদ হিসেবে যেন লেখার সাবলীলতা টুকু বজায় থাকে।
প্র ভাই, ভেবেছিলাম আর অনুবাদ করব না, পারিও না ঠিকমত আবার কষ্ট ও আছে। কিন্তু আপনার মন্তব্য পড়ে ঠিক করলাম আর একটা হলেও অনুবাদ করব এবং সেটা আপনার জন্যই! দেখা যাক এইবার কার পা, মাথা অথবা অন্য কিছু কাটা যায়......চোখ টিপি
এভাবে উৎসাহিত করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আয়নামতি এর ছবি

সচলের যারা এই গল্প পড়েছে সবার সঙ্গ পাবো নির্ঘাৎ - নিয়মিত আপনার কাছ থেকে অনুবাদ গল্প চাই। বছর শেষে একটা সংকলন করার উপযোগী সংখ্যক গল্প অবশ্যই অবশ্যই উপহার দেবেন।

প্রোফেসরের সাথে একমত হে হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ইশ, কি আবদার! শয়তানী হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আবদার না রাখলে কিন্তু জ্বালাতন করতেই থাকবো, করতেই থাকবো - হুঁ!! হাসি

____________________________

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গল্পটা পড়াই ছিলো। ডালের ঐ সংকলনটার প্রতিটা গল্পই দুর্দান্ত। লোকটা লিখতে জানতো বটে হাসি

অনুবাদ ভালোই হয়েছে। একটু মূলানুগ মনে হলো।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

সেই লোকটা লিখতে জানত। বাচ্চাদের বইগুলো ও আমার অসম্ভব পছন্দের।
প্রথম অনুবাদ তো, তাই হয়ত একটু মূলানুগ হয়ে গেছে, এর পরে কোন অনুবাদ করলে নিজের মত করে লেখার চেষ্টা করব।
প্রিয় গল্পকারের মতামত পেয়ে অনেক ভাল লাগল। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আয়নামতি এর ছবি

এটা প্রথম অনুবাদ তোমার? একটা উত্তমজাঝা পাওনা উত্তম জাঝা!
মূলগল্প পড়িনি আমি। কিন্তু তোমার লেখাটা চমৎকার লাগলো।
একলহমার সাথে এবিষয়ে সহমত। কিছুবাক্য রিরাইট করলে অতিচমৎকার একটা অনুবাদ হবে এটা।
আরো চাই আরো চাই তুমার লেখা বুঝলে বালিকা দেঁতো হাসি
***
যেসব টাইপোগুলো চোখে পড়লো বলি: দারন-দারুণ, গোধুলী-গোধূলী, ধারন-ধারণ, প্রান-প্রাণ, স্যুট>স্যুইট দুভাবে লিখেছো; হাটতে গিয়ে ক্লান্তিতে ঁবিন্দু ঝরে গেছে দেঁতো হাসি সিউর(রাজশাহীয়ান? চোখ টিপি ) শিওর, সগক্তি-স্বগতোক্তি, আচরন-আচরণ, উচ্চারন-উচ্চারণ, ঘসতে>ঘষতে দুটোই লিখেছো(কনফু নাকি চিন্তিত ) সবশ্রান্ত-সর্বস্বান্ত, পারকিং-পার্কিং, জিনিষ-জিনিস,
উপকরন-ণ, কোনে-কোণে । এথ্থো কষ্ট করিলেম টেকাটুকা দেও আমারে খাইছে

এক লহমা এর ছবি

আয়নাদিদি, স্যুট এবং স্যুইট দু'ভাবে (দুভাবে নয় কিন্তু চোখ টিপি ) লেখারই কথা যে! একটা পোষাক, অন্যটা ঘর - সফিনাজদিদি মনে ত হল যেখানে যেটা বসানোর, তাই বসিয়েছে। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

রাজশাহীয়ান?

আবার জিগায়! লেখা দিয়ে বুঝাইতে হইবেনা যে মুই রাজশাহীয়ান? দেঁতো হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আয়নামতি এর ছবি

খাইছে ঠিক দু'ভাবে হবে।

সুইমিং স্যুইট পরে

আর বুড়োর পরনের স্যুট লিখেছে আছে কোথাও, সত্যি!...@ একলহমা দেঁতো হাসি

এক লহমা এর ছবি

ঠিক, ঠিক, ঠিক! মনে পড়েছে! সুইমিং 'স্যুইট' এবং বুড়োর পরনের 'স্যুট', দু'টোই 'স্যুট' হওয়া দরকার।
গুরু গুরু আয়নাদিদি!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

গুরু গুরু
আয়নাদি, আমারে তুমার ইস্টুডেন্ট বানায় নাও,পিলিজ লাগে।
বানান নিয়ে একটু ঝামেলায় থাকি, যখন যেখানে যে বানানে ভুল পাবে ধরিয়ে দিও। কথা দিচ্ছি এক বানান দ্বিতীয়বার ভুল করবনা। ইয়ে, মানে...

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

রংতুলি এর ছবি

চলুক যদিও পিচ্চিটার জন্যে এক বসায় পড়তে পারিনি, তারপরেও দুর্দান্ত লাগল!

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ভালো লেগেছে ... , বলছ আপু ?
তোমার পিচ্চিটা কেমন আছে? হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

আশালতা এর ছবি

বড় লেখা পড়তে আমার বিরাট আলসি লাগে। এটা পড়ে ফেলেছি, তার মানে লেখা ভালো হয়েছে। নাহলে আমার মত অসহিষ্ণু পাঠককে শেষতক আটকে রাখা যেত না। চলুক। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

শেষ পর্যন্ত পাঠক তাইলে আটক খাইছে... চাল্লু
ধন্যবাদ আশাদি, ভালো লাগলো আপনার কথা শুনে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন লাগলো কিন্তু ভয় পাইছি অ্যাঁ
ইসরাত

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ভয় পাইছেন তাইলে, গুড। চোখ টিপি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।