দ্বি-চক্রযান প্রেম উপাখ্যান

সাফিনাজ আরজু এর ছবি
লিখেছেন সাফিনাজ আরজু [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২৬/০১/২০১৪ - ৮:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস ছিল কিনা আজ আর মনে নেই—কিন্তু সেই দ্বি চক্রের সাথে আমার চার চক্ষুর মিলন ঠিকই হয়েছিল কোন এক গোধূলি লগনে। ফলাফল দুম করে প্রেমে পড়েছিলাম তার সুদর্শন দুই চাকার। আসলে বলছিলাম সাইকেলের কথা...
তখন আমি মাত্র ফাইভে পড়ি। সারাক্ষণ পাড়ার মাঠে দাপিয়ে বেড়াই, এমন সময় একদিন পাড়াত এক বন্ধু নীল রঙের ছোট এক সাইকেল নিয়ে হাজির হল মাঠে। ছোট্ট সেই সাইকেলের মালিকের কি গর্বিত চলাফেরা, আলতো করে হাতে হ্যান্ডেল ধরে রেখে সারা মাঠ ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখে ঈর্ষায় আমিও বেগুনি হয়ে গেলাম।

ঈর্ষা লুকাতে তাকে এবং তার নীল টুকটুক সাইকেলখানা অগ্রাহ্য করলাম প্রথম দিন, ভাবখানা এমন যে ওসব সাইকেল ফাইকেল আমি থোড়াই কেয়ার করি...

বেশ কদিন অন্য সবার কাছ থেকে মনের চাপা বাসনা লুকিয়ে টুকিয়ে চলছিলাম ততদিনে অন্যসব বন্ধুরা সাইকেল চালানো শিখতে শুরু করে দিয়েছে। আগে খেলার মাঠে সবাই মিলে নানারকম খেলা খেলতাম। সাইকেল আসার পর থেকে সবার নজর সাইকেল চালান শিক্ষার দিকে গেল। আমি কয়দিন খুব হামবড়া ভাব নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরলেও একসময় নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। একদিন নিজেকেও আবিস্কার করলাম সাইকেল চালানর দলের মাঝে।

সেই শুরু হল সাইকেল প্রেম। আমার শয়নে স্বপনে তখন নীল রঙের সাইকেল খানাই ঘুরত। কয়দিনের মাঝে বন্ধুর সেই সাইকেল নিয়ে সারা পাড়া টো টো করা শুরু হয়ে গেল। বন্ধুদের মাঝে আমি একটু গুন্ডা টাইপ ছিলাম তাই সাইকেলের দখল খানা আমার হাতে আসতে খুব একটা সময় লাগেনি। আর বন্ধুটাও ছিল কিঞ্চিত বেকুব কিসিমের তাই সাইকেল খানা আমার না হয়েও আমার হয়েই ছিল।অনেক মানুষের কথা শুনেছি তখন, মেয়ে হয়ে সাইকেল চালাই তাই পাড়ার মুরব্বীদের অনেক ভৎসনা সহ্য করেছি, বাসায় অনেক নালিশ এসেছে কিন্তু কাউকে পাত্তা দেইনি কখনও।

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত একদিন সেই বন্ধুরা হুট করে অন্য পাড়ায় বাসা নিয়ে চলে গেল। জীবনে প্রথম বারের মত টের পেলাম বিরহ আসলে কাকে বলে... সারাদিন আমার সেই নীল বন্ধুর জন্য মন পুড়ে। এতদিন নিজের একটা সাইকেলের অভাব বোধ করিনি, সেবার বুঝলাম আমার নিজের একটা সাইকেল আশু প্রয়োজন। যথা সময়ে বাসায় আর্জি পেশ করা হল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তা খারিজ হয়ে গেল।
এমনিতেই পাড়ার মুরব্বীদের নালিশ মাঝে মাঝেই বাসায় আসে... তার উপরে একখানা সাইকেলের মালিক সেই মেয়েকে বানানোর কোনও প্রশ্নই উঠেনা, পাড়ার লোকের কথায় তাহলে আর টিকা যাবেনা। তাই আমার রাগ, অভিমান, কষ্ট ক্ষোভ, কান্না... সব বৃথা অপচয় হল... সাইকেল আর পেলাম না।

দিনে দিনে একসময় নীল বন্ধুর শোক কমে এল... আমিও পা পা করতে করতে ক্লাস সেভেনে উঠে গেলাম। রিকশা করে স্কুল এ যেতাম... কখনও বা পায়ে হেঁটে। পাশ দিয়ে সমবয়সী অনেক ছেলেরা স্কুল ড্রেস পড়ে সাঁ সাঁ করে প্যাডেল মেরে স্কুল এ যেত। আড়চোখে দেখতাম আর দীর্ঘশ্বাস পড়ত। খুব ইচ্ছে হত আমিও সাইকেল চালিয়ে স্কুল এ যাই। কেন মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে এদিক সেদিক ঘুরতে পারবেনা, সমাজের এ কেমন নিয়ম, কেন ছেলেরা আড়ালে বাজে কথা বলবে, কেন পাড়ার মুরব্বীদের জাত যাবে কিছুতেই মাথায় ঢুকত না।
আমার এই সাইকেল প্রেমের কথা ক্লাসের কমবেশি সবার জানা ছিল। একদিন ক্লাস শেষে ক্লাস ক্যাপ্টেন জানাল তার ও নাকি সাইকেল চালানর শখ হয়েছে। তার বাবা কিনে দিতে রাজিও হয়েছেন কিন্তু শর্ত একটাই সাইকেল নিয়ে বাইরে বের হওয়া যাবেনা। বাড়ির ছাদে চালাতে হবে। সাইকেল কি আর ছাদে চালানর জিনিষ! তবুও তাতেই সে রাজি... আর আমিও বহুদিন পরে সাইকেল কাছে পাবার সম্ভবনায় তাকে বেশ উৎসাহিত করলাম। শুনলাম সাইকেল আসবে ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টের পরে।

আমার সেই বন্ধুটার অপেক্ষার পালা কেমন ছিল জানিনা কিন্তু আমার দিবস রজনী আশায় আশায় থাকার পালা শুরু হল। বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্টের দিন জানতে পারলাম তার বাসার ছাদে একটি রুপালী রঙের সাইকেল শোভা পাচ্ছে। অনেক দিন পরে প্রিয় কিছু কাছে পেলে কেমন লাগে বুঝতে পারলাম। বেশ কদিন খুব উৎসাহের সাথে আমরা ছাদেই গোল হয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরতাম। কিন্তু লাগামহারা হয়ে স্বাধীন ভাবে না চলে এমন যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে আর কয়দিনই বা ভালো লাগে। অনেক চেষ্টা করেছিলাম সেই রুপালী বন্ধুকে বাইরে বের করতে কিন্তু বন্ধুর বাবা মা রাজি হননি। কিছুটা বিরক্ত আর হতাশা থেকেই একদিন ছাদের সেই সাইকেল পর্ব বন্ধ হয়ে গেল। মনে কেন জানি সেসময় এক চাপা অভিমান জমা হয়েছিল... কেন মেয়েরা সাইকেল চালাতে গেলে এত নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মানতে পারতাম না।

সময় নাকি সব ভুলিয়ে দেয়, হয়ত আমিও ভুলেই ছিলাম। কিন্তু আমার ছোট ভাই বোন ভুলেনি সাইকেলের প্রতি আমার ভালবাসার কথা। ভাইটা যখন বড় হল... নিজের একখানা সাইকেলের মালিক হল তখন আমি ভার্সিটিতে পড়ি। মুঠোফোনে জানলাম তার বাহনের গল্প। শুরু হল তার এবং আমার প্রতীক্ষার পালা। কবে আমি বাসায় আসব... দুই ভাইবোন মিলে সাইকেল চালাব। আমারও তর সইছিল না... অপেক্ষার পালা ফুরল... ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেলাম। বহুদিন পরে সাইকেল নেড়ে চেড়ে দেখলাম। সন্ধ্যার পরে প্রায় বছর পাঁচেক পরে আবার প্যাডেলে পা... প্রথম প্রথম একটু টল মল করলেও আসতে আসতে ঠিক হয়ে গেল। আমার আনন্দ দেখে কে... আমিও খুশী, ভাই ও খুশী...

এভাবে দুই তিন দিন কাটল... চাঁদ রাতের দিন একটু বেশীই খুশী ছিলাম... বাড়ির পিছনের মাঠ থেকে রাস্তায় গিয়ে সাইকেল চালাচ্ছিলাম। ভাই পাশে দৌড়াচ্ছিল। লোড শেডিং এর অন্ধকার রাতে খেয়াল করিনি যে সামনেই এক লাম্পপোস্ট, ফলাফল সরাসরি সংঘর্ষ।
অন্য সবাই যেখানে ঈদের দিন কত মজা করে নানান খাবার খাচ্ছিল আমি সেখানে হাঁটুর মালাই নড়ে যাবার কারনে পেইন কিলার খেয়ে শুয়ে আহা উঁহু করছিলাম। সেই ধাক্কা বেশ অনেক দিন ভুগেছিলাম।
এরপরে বহুদিন সাইকেল বিমুখ ছিলাম, না কোন রাগ বা অভিমান থেকে নয়। ছোট সেই দুর্ঘটনার পরে বাবামার কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল।

মাঝের পাঁচ বছর কিভাবে জানি কেটে গেল সাইকেল ছাড়ায়। ভাবিনি আবার কখনও বাল্যপ্রেম ফিরে পাব। অভাবিত ভাবেই সে সুযোগ মিলে গেল। ফিনল্যান্ডে আসার পর প্রথম যা দেখে আমার চিত্ত উদ্দেলিত হয়েছিল তা হল সাইকেল, অন্যভাবে বলতে গেলে ৩ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধ / বৃদ্ধা সকলের স্বতঃস্ফূর্ত সাইকেল আরোহণ।
যেদিকে চোখ যায় দেখি সবাই মনের আনান্দের সাইকেল চালাচ্চে, দূরত্ব কোন ব্যাপার না, কনকনে বাতাস বা খাড়া ঢাল থোড়াই কেয়ার।

আমি এসেছিলাম আগস্টের শেষ সপ্তাহে, প্রথম সংকল্প ছিল একটু গুছিয়ে নিয়েই একটা সাইকেল কিনব। তখনও অবশ্য জানিনা কোথা থেকে সাইকেল কিনব আর দামেই কেমন পড়বে, অনেকে ভরসা দিল সেকেন্ডহ্যান্ড সাইকেল ও কিনতে পারি কিছুটা সস্তা হবে। সাইকেলের ভাবনা মাথায় নিয়েই দ্রুত নতুন পরিবেশে কনকনে বাতাসে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বিধি বাম ঠিকমত গুছিয়ে উঠতে না উঠতেই সেই বছর তুষার পড়া শুরু হল অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই। যেখানে স্নো এর মধ্যে এর আগে কখনও হাঁটায় শিখিনি সেখানে সাইকেল!! মনের বাসনা মনেই চেপে রাখলাম সেই সময়ের জন্য। হু হু সামার আসুক, ঠিক একটা সাইকেল ম্যানেজ হয়ে যাবে।

ডিসেম্বারের শেষের দিকে পাশের ব্লকে থাকা ইন্ডিয়ান এক বন্ধু জানাল সে ফিনল্যান্ড ছেড়ে একেবারে চলে যাচ্ছে, তার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কোন জিনিষ চাইলে আমি কিনতে পারি। এমনি গেলাম দেখতে, টুকটাক কিছু কিনলাম ও, চলেই আসছিলাম হঠাৎ দেখলাম স্টোররুমের এক কোনে এক সাইকেল হেলান দিয়ে রাখা আছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটি তার এক বন্ধুর বিক্রির জন্য রেখে গেছে। শুনে আমার আহ্লাদ দেখে কে, কোন দরদাম না বন্ধুটি যে দাম চাইল তাতেই আমি কিনতে রাজি। সেই অভাবের যুগে বেশ ভাল অঙ্কের টাকা দিয়েই সাইকেল খানা হস্তগত করেছিলাম।

আমি আবার বড়ই অস্থির মানুষ, সাইকেল তো কিনা হল তক্ষুনি সেটা আমার বাসায় নিতে হবে, নিতে গিয়ে দেখা গেল, সাইকেলে তালা দেওয়া এবং চাবি তার বন্ধুর কাছে। পড়ে চাবি যোগাড় করে সাইকেল আনলেই চলত কিন্তু ঐ যে বললাম আমার মাথায় ভূত চেপেছে সাইকেল চালাতে না পারি, নিদেনপক্ষে বাসায় থাকলে দেখেও শান্তি।
সেদিন বাইরে অনেক বেশী স্নো পড়ছিল, তার মাঝেও আমার উৎসাহ দেখে আমি আর আমার সেই বন্ধুটি কোনমতে কোলে করেই সাইকেল ঘরে এনে তুললাম।
এরপর আজ ওকে চাবির কথা বলি, কাল ওকে চাবির কথা বলি। সে বেচারাও তার বন্ধুকে খুঁজে বেড়ায়, এভাবে আজ ,কাল পরশু করতে করতেই হঠাৎ এক জরুরী প্রয়োজনে ওকে ফিনল্যান্ড ছাড়তে হল, ও ভেবেছিল হয়ত মাস তিনেকের মধ্যেই ফিরে আসবে সেই ভেবে আমার কাছে ওর অনেক কিছু রেখে গেছিল আর আমিও ভেবেছিলাম ও তো আসছেই তিন মাসের মধ্যে আর তিন মাসেও তো সামার আসবে না, সুতরাং ও ফিরার পরেই নাহয় চাবি নেব।

কিন্তু আমার বিধি আবারও বাম। সেই যে সে তার বেশ কিছু সম্পত্তি রেখে গেল তার আর ফিরেই আসা হলনা বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যার কারনে, সাথে সাথে আমার আর চাবিও পাওয়া হলনা। বেশ ভালোই হল, সাইকেল থাকল কিন্তু চাবি নাই।

তাও মনে আশা নিয়ে ছিলাম হয়ত সে আসতে পারবে, এই করতে করতেই মে মাস এসে গেল। ধুমধাম সব বরফ গলে প্রথমে জল তার পর সেই জল ও শুকিয়ে কটকটে ঝকঝকে রোদেলা দিন এসে হাজির হল। শীতে মানুষের সাইকেল চালানোর পরিমান কিছুটা কমেছিল, গরম আসতেই সেটা দ্বিগুণেরও বেশী বেড়ে গেল।

আমি অসহয়ায় আক্রোশে ছটফট করছিলাম, আস্ত একখানা সাইকেল আমার স্টোররুমে পড়ে আছে কিন্তু চালানোর উপাই নাই! এমন সময় ফিনল্যান্ডেই পরিচিত হওয়া বন্ধু (আপু) কাম গাইড এক কথায় আমার সব সময়ের সঙ্গী বুদ্ধি দিলেন তালা কাটার। আসলে প্রথমে ভেবেছিলাম কোন সাইকেল মেরামতের দোকানে নিয়ে যাব কিন্তু গাড়ি নাই, এই চড়াই উৎরাইয়ের রাস্তায় গাড়ি ছাড়া সাইকেল কোলে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব।

আমি জীবনে কোনদিন তালা কাটিনাই, তার উপরে হ্যাক্সব্লেড ও নাই কিভাবে কাটব জানিনা। কিন্তু উনি বুদ্ধি দিলেন প্লায়াস দিয়েই কাটব আমরা যে বুদ্ধি সেই কাজ। এরপর রোজ বিকেলে আমি ভার্সিটি থেকে ফিরতাম আর উনি ডাক্তারি সেরে বাসায় ফিরার পর দুইজনের প্রাণান্তকর পরিশ্রম। রোজ একটু একটু করে কাটতাম, এভাবে একদিন বিধি হঠাৎ করেই বাম দিক থেকে ডানে চলে আসল, ফলাফলে সাইকেল বাবাজি স্টোর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামতে পারল।

সেই সামারে আমি খুব মজা করেছিলাম... ল্যাব থেকে বাসায় ফিরেই সাইকেল নিয়ে সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম।

আমার আর সাইকেলের প্রেম কাহিনী এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু ঐ যে শরৎচন্দ্র বলে গেছেন না বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না দুরেও ঠেলে দেয়... আর তাই আবারও বিচ্ছেদ। এবার অবশ্য নিজের দোষেই, সেই তালা কাটার অভিজ্ঞতা এত ভয়ংকর ছিল যে আমি সাইকেলে কখনও তালা দিয়ে রাখিনি আর... এখানে আসার পর কোন কিছু হারায়নি কখনও বা চুরি যায়নি, এমনকি যেখানে সেখানে ফেলে রাখলেও না, তাই সাইকেল চুরি যাবার ভয় ও পাইনি তেমন।সেই বছরেই শরতের শেষের দিকে শীত যখন আসি আসি করছে তখন হঠাৎ একদিন ল্যাব থেকে ফিরে আবিস্কার করলাম আমার সাইকেল নাই। নাই তো নাই একেবারেই নাই, পুরাই হাওয়া হয়ে গেল।

শীত তখন প্রায় চলেই এসেছে তাই মনের দুঃখ মনেই চেপে রাখলাম, ভাবলাম ঠিক আছে পরেরবার... কিন্তু পরের বার কোনভাবেই কোন ভাল সাইকেল পাচ্ছিলামনা কোথাও। নতুন সাইকেলের আকাশ ছোঁয়া দাম,পুরানগুলোর ও বেশ দাম আর সবচেয়ে বড় ব্যপার যেগুলো ভাল লাগছিল সেগুলো শহর থেকে দূরে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। যত দিন যাচ্ছিল আশে পাশের সবাইকে সাইকেল চালাতে দেখে আমি হতাশ হয়ে পড়ছিলাম ক্রমাগত ... আর বুঝি পেলাম না!

অবশেষে একদিন বাড়ির সামনের রকে একটা সাইকেল পড়ে থাকতে দেখলাম। কার সাইকেল আর কেনই বা ফেলে গেছে কে জানে। বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করলাম আসল মালিকের জন্য... দেখি দিনের পর দিন পড়েই আছে। বুঝলাম সত্ত্ব ত্যাগ করেই সাইকেল ফেলে গেছে মালিক কারন কোন তালা ছিলনা তাতে। অতঃপর কি আর করা, আমি সাইকেলখানা নিজের করে নিলাম।
সাইকেলের কন্ডিশন ছিল খুবই খারাপ... সারাক্ষণ নড়বড় করতে থাকে আর পিছনের দিকটাও কেমন ভাঙ্গাচোরা ছিল। কোনমতে এটা সেটা বেন্ধে আশেপাশের শুধু সমতল রাস্তায় চলার উপযোগী করলাম তাকে। কিন্তু দেখতেও খুব পচা লাগছিল, তাই জীবনে যা করিনি তাই করে ফেললাম, রং আর তুলি কিনে এনে তার শরীর রঙ্গিন করার চেষ্টা করলাম। খুব যে সুন্দর হয়েছিল দেখতে তা বলছিনা তবে চলনসই আর কি।

এত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তবুও সাইকেল আর আমার প্রেম কিছুতেই শেষ হয়নি। সেই ভাঙ্গাচোরা সাইকেলে সেই বছর কোনভাবে কেটে গেল... গড়িয়ে গড়িয়ে এল লাস্ট সামার। গত মে মাসে হঠাৎ করেই একখানা নতুন সাইকেলের দোকান উঠে যাওয়া উপলক্ষে ৭০ ভাগ ছাড়ে নতুন সব সাইকেল বিক্রির খবর জানতে পারলাম। আর আমাকে ঠেকাই কে। ৭০ ভাগ ছাড় থাকা সত্ত্বেও গুচ্ছের টাকা খরচ করেই তাকে পেলাম... সবুজ রঙের খুবই মিষ্টি দেখতে রেতকি বাইক।

গল্প উপন্যাসের মত এই পর্যায়ে এসে অবশেষে আমাদের সুখে দুখে একসাথে থাকার কথা। কিন্তু প্রেম হয়তবা বেশী গভীর তাই পেয়েও তারে পাইনা অবস্থা। সাইকেল আনার কিছুদিন পরেই খেয়াল করলাম পিছনের চাকায় কোনভাবেই বাতাস থাকছেনা। অবস্থা এমন হল রোজ পাম্প করে বের হয় মিনিট বিশেক চলার পরেই সাইকেল ঠেলে বাসায় ফিরতে হয়। মন খারাপ হলেও হাল ছেড়ে দেইনি, বার দুয়েক হাতে ঠেলেই মাইল পাঁচেক দূরে মেকানিকের কাছে নিয়ে গেছি, গাদা খানেক টাকা খরচ করে ভিতরের টিউব বদল, স্ক্রু টাইট সহ বেশ কিছু পার্টস বদলিয়েও কোন লাভ হইনি। অতঃপর তার আবার স্টোররুমে শয়ন। খুব মন খারাপ হয়েছিল তবুও সাইকেল বিমুখ হতে পারিনি।

আজকাল মুখবইয়ের কল্যাণে দেখছি দেশে অনেকেই সাইকেল চালিয়ে বেড়াচ্ছে, সুন্দর সুন্দর সব সাইকেল, কি তার গড়ন, কি তার বাহার। মনে হচ্ছে মেয়েদের জন্য সাইকেল চালানটা আগের চাইতে কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে দেশে। ন্যাড়া নাকি একবারই বেলতলায় যায়, আমি কতবার চলে গেলাম তবুও হুঁশ হলনা, আবার নতুন করে বেলতলায় যাবার স্বপ্ন এরই মাঝে উঁকিঝুঁকি দেওয়া শুরু হয়েছে মনে। দেখা যাক এইবার কি হয়!!!

(সাইকেল নিয়ে আমার মত এই উচ্ছ্বাস হয়ত আরও অনেকের আছে, সবার সাথে আমার ভালবাসা আর অভিজ্ঞতা ভাগ করতে চাওয়ার জন্যই লিখলাম)


মন্তব্য

এক লহমা এর ছবি

সফিনাজ-দিদি, সটান ৫ তারা। এত ঝরঝরে এমন চমৎকার প্রেমের গল্প খুব কম পড়েছি।
এটা নিয়ে কেউ যদি একটা সিনেমা বানাত! সেখানে অবশ্য সাইকেল-প্রেমের সমান্তরাল বা কোণাকুণিতে একটা মানুষ-মানুষীর প্রেম জুড়ে দিতে হতে পারে। কিন্তু ফোকাসে থাকবে এই সাইকেল-প্রেম। আঃ কি যে জমাটি হত! দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

দেঁতো হাসি দেঁতো হাসি
দাদাভাই, ইটা কি কইলা !!
সিনেমা, জমজমাট প্রেম কাহিনী !!! অ্যাঁ
তয় আইডিয়া আমার পছন্দ হইছে। খাইছে
তুমি ডিরেক্টর হও আর আমি প্রডিউসার খুঁজে বের করি, রাজি আছ তো? চাল্লু
তোমার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল দাদাভাই। ভাল থেক সবসময়।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সাইকেল নিয়ে লেখা চমৎকার একটা লেখা।

আমি এখনও ভালো মত সাইকলে চালাতে পারি না, টলোমলো করে।
খুব শখ একবার সাইকেল চালানোতে ওস্তাদ হয়ে রাস্তা দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটব চাল্লু

শুভেচ্ছা হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আসলেই সাইকেল নিয়ে রাস্তা দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলার মজাই আলাদা। হাসি
সাইকেল খুবই লক্ষ্মী, একটু ভালবেসে যত্ন নিয়ে চালানোর চেষ্টা করেন দেখবেন খুব দ্রুত আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

শেষ পর্যন্ত যান-বাহনের সাথে প্রেম-ভালুবাসা? অ্যাঁ
ভাগ্যিস সাইকেল চালাইতে জানিনা... সাইকেল টক মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

কিতা করতাম কন, সাইকেল মন কাড়ি নিলে মোর কি দোষ !!!
জানেন না বুঝি প্রেম-ভালুবাসা বলে কয়ে আসেনা। শয়তানী হাসি
এহ সাক্ষীদাদা সাইকেল মিঠা , বড়ই মধু। চোখ টিপি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম, পেছনের কথা মনে করায় দিলেন... আমার পেম-ভালুবাসা ছিল সাইকেলের পেছনটার সাথে... আজকাল কিসব সাইকেল বানায়... ক্যারিয়ারবিহীন... নিষ্ঠুর দুনিয়া মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

তবে যাকে নিয়ে এতপ্রেম, এত স্মৃতি তার দুই-একখান ছবি আপলোড় মারতে পারতেন।

আগের গুলোর তো কোন ছবি নাই, শুধু রেতকি বাইকটার আছে, সেই আপলোড করলেই হত।
আপনি তো আমারে ডরাই দিলেন মাসুদ ভাই, এত দাম হলে কেম্নে কি?? চিন্তিত
আমি তো অলরেডি বেলতলায় যাবার স্বপ্নে বিভোর। ইয়ে, মানে...
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

সাইকেল প্রেমের ইতিকথা পেরে ভালোই লাগলো, তবে যাকে নিয়ে এতপ্রেম, এত স্মৃতি তার দুই-একখান ছবি আপলোড় মারতে পারতেন।

গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে সাইকেলের একটা ছোটখান বিপ্লব হয়ে গেছে। এখন ঢাকা-চট্রগ্রামের রাস্তায় আগের চেয়ে অনেক বেশি বাহারি সাইকেল দেখা যাচ্ছে। সেই উৎসাহে শখের বসে একটা সাইকেল মার্টে গেলাম দাম দেখতে, দাম শুনেতো আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলাম, ১৫-২৫ হাজার টাকা দাম এক একটার চিন্তিত ! একটু চলছে বলেই দামটাকে এমন আকাশ ছোঁয়া করে ফেলেছে!

মাসুদ সজীব

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এটা দেখুন। এখানে ৮ লাখ টাকা দামের সাইকেলও আছে। বাংলাদেশে এখন সাইকেল ক্রেজ চলছে। ২০ হাজার টাকা দামের হেলমেটও আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

কি কারনে এত দাম? সাইকেল কি মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে যে অনেক দুর্লভ হয়ে গেল আর তাই এত দাম? ইটা রাইখ্যা গেলাম...

মাসুদ সজীব

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ক্রেজ বলে কথা !!! চিন্তিত

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া
এটা কি দেখালেন পাণ্ডবদা, মাথায় নষ্ট। কত আশা করি আছি দেশে গিয়ে একটা সাইকেল কিনব মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব মজার একটা লেখা সাইকেল নিয়ে। আমার নিজেরও একটা মজার অভিজ্ঞতা আছে এটা নিয়ে। ওয়ালমার্ট থেকে একটা সাইকেল কিনেছিলাম শখানেক ডলার দিয়ে। সপ্তাহ্‌খানেক চালানোর পর দেখি পেছনের চাক্কায় আর হাওয়া থাকে না। একটা পাম্পার কিনলাম, তাতেও কাজ হলো না। শেষে কি আর করা! ফেরত দিয়ে আসলাম। পুরো টাকাই ফেরত দিলো ওরা। সেই টাকা দিয়ে আরেকটা কিনলাম। কিন্তু সেটারও একি অবস্থা! খুব বেশিদিন টিকলো না। এভাবে ৬/৭ টা সাইকেল কেনা হয়ে গেলো আমার, কিন্তু একটা টাকাও খরচ হলো না। ভালোই লাগল। পুরা ফল সেমিস্টার বিনামূল্যে সাইকেল চালালাম। দেখি, সামনের সামারে হয়ত কিনব আবার। কিন্তু এবার শুরুতেই চাক্কা বদলায়ে নিবো!!

---এবিএম।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

এভাবে ৬/৭ টা সাইকেল কেনা হয়ে গেলো আমার, কিন্তু একটা টাকাও খরচ হলো না। ভালোই লাগল। পুরা ফল সেমিস্টার বিনামূল্যে সাইকেল চালালাম।

মন খারাপ আপনি ভাগ্যবান মানুষ। আমার কপাল পুরাই ফাটা ভাই। যে দোকান থেকে সাইকেল কিনেছিলাম সেটা উঠে গেছে। আর যে কোম্পানির সাইকেল খোঁজ নিয়ে দেখলাম তারা আমার শহরে নাই। রাজধানী যাইতে হবে সাইকেল বদলাতে হলে। মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাফি এর ছবি

ওয়ালমার্ট এর সাইকেল খুবই বাজে কোয়ালিটির। পুরো টাকাটাই গচ্চা। আর পেছনের চাকায় হাওয়া না থাকার কারণ নিশ্চয়ই লিক, সেটা যেকোন সাইকেলেই হতে পারে। এর জন্য পুরো সাইকেল ফেরত দেওয়া অর্থহীন। ওয়াল্মার্টের সাইকেলের দামে ক্রেইগলিস্ট থেকে অনেক ভাল মানের পুরোন সাইকেল কিনতে পারেন।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আমার পিছনের চাকা দুইবার বদলানো হয়েছে, তাও একই অবস্থা। চাকা বদলানোর পর প্রথম কয়েকদিন ভাল থাকে তারপর আবার হাওয়া থাকেনা। মন খারাপ

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

গান্ধর্বী এর ছবি

খুব ছোটবেলায় সাইকেলে চরতে গিয়ে একবার পা কেটে গিয়েছিল। ভীতুর ডিম আমি এরপর থেকে সাইকেলে চাপা ছেড়ে দিয়েছিলাম ইয়ে, মানে...

ভাল লাগল সাইকেলচরিত চলুক

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আবার শুরু করেন, সাইকেল চালাতে কিন্তু আসলেই অনেক মজা। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

গৃহবাসী বাউল এর ছবি

সাইকেল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা টেরাজিঢি। ক্লাস ৫ থেকে আব্বু আম্মু মুলা ঝুলাইতেছে যে পরীক্ষায় ফার্স্ট হইলে অথবা বৃত্তি পাইলে সাইকেল কিনে দিবে। তারপর কত চন্দ্রভুখ অমাবশ্যা কেটে গেল, আমি কত ক্লাশে নিরঙ্কুশ প্রথম হলাম আর শখানেক বৃত্তি পেলাম, তবু কেউ কথা রাখেনি। তারপর কানাডা এসে আজকে কিনি কালকে কিনি করতে করতে হাড়া কাপানো শীত।
আমার নিচতলায় থাক্তো একটা ছোটভাইয়ের আবার সাইকেলের শখ। একদিন ওর ওইখানে যেয়ে দেখি খান্তিনেক নানা বর্ণের ও ডিজাইনের সাইকেল দাঁড়ানো, জিজ্ঞেস করতে সে জানাল সবি তার। আমতা আমতা করতে করতে একটা চেয়েই ফেললাম। সেও খুবি আনন্দের সংগে দিয়ে মোটামুটি সম্প্রদান কারকেই দিয়ে দিল। হয়ে গেল নিজের সাইকেল। তারপর তো আমি পারলে বিছানা থেকে নেমে বাথ্রুম পর্যন্ত যেতেও ওইটা নিয়ে যাই। এরপর অবশ্য ঐ ছোটভাইয়ের আগ্রহেই আরেকটা আনি ডিজাইন বদল করার জন্য, তারপর আরেকটা। কিছুদিন আগে এক ভাই বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় তার সাইকেলটি দিয়ে গেলেন। অনেকদিন পর সাইকেল পেয়ে -২৫সে এর মধ্যেই তা চালিয়ে নিয়ে চলে এলাম। এখন সে আছে আমার ঘরনী হয়ে। সামারেই আমরা ঘুরতে বের হব।

-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

ক্লাস ৫ থেকে আব্বু আম্মু মুলা ঝুলাইতেছে যে পরীক্ষায় ফার্স্ট হইলে অথবা বৃত্তি পাইলে সাইকেল কিনে দিবে। তারপর কত চন্দ্রভুখ অমাবশ্যা কেটে গেল, আমি কত ক্লাশে নিরঙ্কুশ প্রথম হলাম আর শখানেক বৃত্তি পেলাম, তবু কেউ কথা রাখেনি।

আপনার আব্বু আম্মু তো তাও মুলা ঝুলাইছে। বেরহম দুনিয়ায় আমার বাবা মা মুলা,কচু, ঘেঁচু, আলু কিছুই ঝুলায় নাই। মন খারাপ
আহা, আমাকে কোন বড় ভাই, বড় বোন, ছোট ভাই, ছোট বোন কেউ কোন সাইকেল দিলনা।
আপনার এত্তগুলান সাইকেলের ছবি দেখে হিংসা, হিংসা, হিংসা। রেগে টং রেগে টং
দুনিয়ায় ইন্সাফ বলে কিছু নাই দেখি। মন খারাপ

তবুও আশা করি ঘরনি নিয়ে এই সামারে সুখে দুখে ভালোই সংসার করবেন। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

গৃহবাসী বাউল এর ছবি

আপনি যখন দিবেনই না, তখন আমিই দিয়ে যাই। আমার ঘরের বর্তমান অবস্থা। আগের কমেন্ট করে যেয়ে এই ছবি তুলে আনলাম।
[img][/img]

-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

[img][/img]

এই যে লন দিয়াই দিলাম। দেঁতো হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

অনেকদিন ছবি দেইনি, কেম্নে দেয় ভুলে গেছি, আগেরটা পোস্ট হল কিনা বুঝতে পারছিনা। তাই আবারও দিলাম। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

মেঘের কান্না  এর ছবি

সাইকেল এর যে ঝাকাস ছবি দিলেন ! প্রেমে না পরে উপায় আছে? লইজ্জা লাগে আমি এমনই এক টাক্কু মাথার লোক যে বেলতলায় বারবারই যাই। প্রথমবার তো না বুঝে যেয়ে টাকমাথা ফুটো করলাম, তাতে কি? আস্ত এক বেল তো মুফতেই মিলল। বেল এর লোভে গাছতলায় তো বারবারই যাব এখন খেকে, তবে মাথায় একটা হেলমেট পরে।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

টাক্কু মাথার লোক

আমি কোথায় ভাবলাম আপনাকে বৃষ্টি আপু ডাকা শুরু করব! (মেঘের কান্না তো বৃষ্টি হয় নাকি?) খাইছে
হয় সাইকেল চালানোর সময় অবশ্যই হেলমেট। চাল্লু

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

মেঘের কান্না  এর ছবি

ঠিক, মেঘের কান্না মানেই তো বৃষ্টি, সব ধরনের বৃষ্টিই ভালো লাগে, কিন্তু কি এক মড়ার দেশে আসলাম, মুষলধারে বৃষ্টি মনে হয় একবার কি দুইবার দেখলাম এই গত দশ বছরে ওঁয়া ওঁয়া । আর হ্যা টাক শব্দটা কিন্তু উপমার জন্যই, টাক্কু পর্যায়ে যেতে মনে হয় এখনো আরো হাতে অনেক সময় আছে।

সাফি এর ছবি

ইয়ে মানে ইহারা তো লেডিস সাইকেল।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আমার সেই রুয়েট লাইফের ১৪০০ টাকায় কেনা সাইকেলটা এখনও আছে - ওটা চালিয়ে অফিসে যাই, আসি। ছেলেকে স্কুলে আর গানের ক্লাসে আনা নেয়া করি ওতেই। এই সাইকেলটার সাথে কত যে মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে - হুড়মুড় করে সব মনে পড়লো।

ধন্যবাদ আরজু। দেশে এলে আমার সাইকেলটা চালানোর আমন্ত্রণ রইলো।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি এখনো সাইকেল চালিয়ে অফিসে যান? কিংবা ছেলেকে স্কুল আর গানের ক্লাসেও নিয়ে যান? বাহ!

মাসুদ সজীব

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

লইজ্জা লাগে

____________________________

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

আপনি রুয়েটে পড়েছেন, এখনও কি রাজশাহী তে থাকেন? আমার বাড়িও রাজশাহী, জেনে খুব ভাল লাগল। দেঁতো হাসি
দেশে আসলে নিশ্চয় দেখা হবে। হাসি

দেশে এলে আমার সাইকেলটা চালানোর আমন্ত্রণ রইলো।

চলুক দেঁতো হাসি
ভাল থাকবেন প্রোফেসর ভাই।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

না, স্বপ্নের শহরে এখন আর থাকা হয় না, এখন ঢাকায় থাকি।

নিশ্চয় দেখা হবে।

____________________________

আয়নামতি এর ছবি

ওয়ালমার্টের সাইকেল খ্রাপ বলে কে রে! আমি একটা কিনেছিলাম সেইরাম ছিল কিন্তু দেঁতো হাসি
আপনার পেম তো সুকঠ্ঠিন পেম সাফিনাজ! বেঁচে থাকুক পেম, বেঁধেই রাখেন তারে জীবনের সাথে।
কী দিন এলো রে সাইকেলের সাথে যেন পেম অক্ষয় হয় সে দোয়া করতেছি! হেহেহে....
লেখাটা পড়ে মজা পেলুম। আরো লেখা আসুক এইরাম পেমসেম নিয়ে হাসি

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

কি আর বলব আমার জীবনের বিরাট ট্র্যাজেডি হল পেম ভালুবাসা সব বস্তুবাচক হয়। ইয়ে, মানে... মন খারাপ
আমাদের জন্য দোয়া কর আয়না দিদি, এই পেম যেন অমর পেম হয়। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

শাব্দিক এর ছবি

এই সেই লেখা এতদ্দিন পরে আসল? যাই হোক বেটার লেট দেন নেভার।
আমি সবসময়ের মতই সবার শেষে পড়লাম, আবারো বেটার লেট দেন নেভার।
লেখায় পাচতারা। তয় আমি নারকেল খাই না এবং সাইকেল চালাতে পারি না, এটাই আমার জীবনের বড় ট্র্যাজেডি ঃ(।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

হ্যাঁ আপু, এই সেই লেখা যা এতদিন পরে শেষ হল শেষমেষ। মাঝে কয়েকমাস এত ব্যস্ত ছিলাম। মন খারাপ
এখন ব্যস্ততা নাই, দেখনা ধুমায়ে লিখছি খালি। দেঁতো হাসি
তারার জন্য অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নারকেল খাওনা? অ্যাঁ
তোমার জীবন এক আনা বৃথা, এখন নারিকেল খাওয়ান তো শিখাতে পারব না তবে তুমি রাজি থাকলে সাইকেল চালান শিখাতে পারি? কি রাজি তো চাল্লু ?
দেশে আসতেছি, রেডি হও।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমি সাইকেল চালাতে শিখেছিলাম একাদশ শ্রেণিতে উঠবার পর। বাবা সাইকেল ধরতে দিতেন না। নষ্ট হয়ে গেলে তাঁর আর অফিসে যাবার উপায় থাকবে না বলে। সবাই পারে, আমি সাইকেল চালাতে পারি না। কি লজ্জা ! কি লজ্জা ! বন্ধুদের সাথে প্রাইভেট পড়তে যাই, ওরা বীরদর্পে সাইকেল চালায় আমি সীটের সামনের রডের উপর বসি। আজ এর সাইকেলে, কাল ওর সাইকেলে। কি লজ্জা ! কি লজ্জা ! তারপর একদিন বাবাই সাইকেল চাপিয়ে মাঠে নিয়ে গেলেন। সাইকেল চালানো শেখাতে। জেলা স্কুলের বড় মাঠ। আমি ততদিনে সাইকেলের প্যাডেল নাগালে পাবার মতো লম্বা হয়েছি। আমি সামনে সাইকেলের উপরে হ্যাণ্ডেল ধরে চালাবার চেষ্টা করছি, বাবা সাইকেলের পিছনে দাঁড়িয়ে ক্যারিয়ার ধরে ব্যালান্স রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, আর থেকে থেকে আমাকে লক্ষ্য করে বলে উঠছেন, জোরে চালা, সামনে দেখে চালা, আরো জোরে। টেরি পাই নি, একসময় কখন যে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন আমি কিছুদূর চালিয়েও গেছি, তারপর পপাত ধরণীতল।

গেলবছর ৮৫০০/- টাকায় কিশোরী মেয়েকে সাইকেল কিনে দিলাম। বাসার সামনের মাঠটায় বাপ-বেটি দুজনে মিলে সাইকেল্টাকে টেনে নামালাম। তাজ্জব হয়ে দেখি, মেয়েটা আমারই মত আনাড়ী হয়েছে। এবার ও সামনে, আমি পেছনে। বাবাকে তখন খুব মনে পড়ছিল

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।