দুইটি বিভ্রান্ত খণ্ড

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ১৩/০৪/২০১৩ - ১১:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় গল্পকার শাহাদুজ্জামানকে

১।
শিক্ষকের বাসায় দুই বছর পর এসেছে এক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে সে এক সময় সাম্যবাদী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, পরে লেখাপড়াই ছেড়ে দিয়ে আত্মনিয়োগ করে পার্টির কাজে। শিক্ষক মানা করেননি কী এক কারণে, সম্ভবত তিনি ছাত্রটির নিখাদ সারল্য ও দলের কাজে প্রচন্ড মনোযোগের বিষয়টা আন্তরিকভাবেই দেখেছিলেন। পার্টির প্রতি ছাত্রের ভালোবাসা ও কর্মস্পৃহার গুণকে তিনি মানুষ হিসাবে অস্বীকার করতে পারেননি। আবার, ছেলেটি গরীব পরিবারের সদস্য, অনেক খেটেখুটে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছে, আগেও মাঠে কাজ করে ভালো ফল করেছে, তাই মাঝপথে পড়া থামিয়ে দেওয়াটাও শিক্ষকের খুব পছন্দ হয়নি। যাহোক, ছাত্রটি চলে গেল বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে। এতকাল তাঁর দেখা ছিল না শহর বা ক্যাম্পাসের কোথাও। তাই হুট করে কোয়ার্টারের দরজায় তাঁকে দেখে শিক্ষক অনেকটা চমকেই গেলেন।
প্রিয় ছাত্রকে বসিয়ে অতঃপর জিজ্ঞাসা তাঁর, "তোমাদের পার্টির কাজ কেমন চলছে? এরকম রাজনৈতিক শক্তি আসা দরকার হে বুঝলে..."
ছাত্রের তড়িৎ উত্তর : "স্যার, আমি দল ছেড়ে দিয়েছি"।
আকাশ থেকে না হলেও প্রায় বৃক্ষ থেকে পড়ার দশা শিক্ষকের। নিজেকে একটু স্থির করে বললেন, "কেন? কী হয়েছিল!"

ছাত্র বিবৃত করে তার অভিজ্ঞতা : "স্যার, অনেকদিন নিজের জেলায় দলের হয়ে কাজ করেছি, এই মাত্র দুই মাস আগে গেলাম পার্টির কাজে ঢাকায়, আমাদের পার্টির সভাপতির বাসায় গিয়েছিলাম তখন এক সকালে...গিয়ে দেখি সেখানে দুইটা এসি চলছে, সকালে দামী পাউরুটিতে জেলি আর মাখন ছাড়া উনার চলে না...দেখে আমার কান্না পেল...সারাজীবন সকালে একটা বিস্কিটও খেতে পাইনি, সেভাবেই লেখাপড়া করেছি...আর মিটিঙে-মিছিলে সাম্যের বাণী শোনানো মানুষেরাই যদি এমন..."

শিক্ষক চুপ করে বসে থাকেন। এমন সময় ছাদের উপর দিয়ে এক খণ্ড মেঘ উড়ে যায়।

২।
এক বিরাট চিন্তাবিদ, তাত্ত্বিক, যিনি একটা বড়োসড়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটেন, তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে একঝলক ঢুঁ মারা যেতে পারে। তবে তাই হোক। নোটসে আর নাই বা গেলাম, অত ভারিভারি জিনিস বুঝবই না। ফটোস-এ যাই বরং। শয়ে শয়ে ছবি, ফিলিস্তিন...কিউবা...রাশিয়া...লালচীন...ভেনিজুয়েলা...; হাজারে হাজার ছবি মার্কস-স্ট্যালিন-লেলিন-চাভেজের...
কিন্তু, সেখানে বাংলাদেশের একটাও ছবি নেই।

===
দিগন্ত চৌধুরী


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বাংলাদেশ কী? এইটা কি মদিনার বাইরে না ভেতরে? তারপর বাকি কথা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

স্যাম এর ছবি

চৌধুরী সাহেব - বড় লেখা লিখলেই ভাল লেখা হয়না - ছোট করে লিখে তাই বুঝিয়ে দিলেন? খাইছে
ভাল লেগেছে

এক লহমা এর ছবি

কঠিন সত্য!

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

চরম সত্য কথা লিখেছেন রে ভাই। উত্তম জাঝা!

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

রাজীব মাহমুদ এর ছবি

আমার মনে হয় একজন লেখক সম্পর্কে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মন্তব্য যেটাই করি না কেন সেটা উনার লেখাকে কেন্দ্র করে বিশ্লেষণের জায়গা থেকে করলে উনার প্রতি সুবিচার হয়। উনার রাষ্ট্রচিন্তা,সমাজ-চিন্তা,ধর্মচিন্তা কে উনার লেখা থেকেই খুঁড়ে বের করে আনতে হবে যা নিয়ে আপনার অনেক কিছুই বলার থাকতে পারে। আর শাহাদুজ্জামান সম্পর্কে সেটা করার জন্য মোটামুটি যথেষ্ট লেখা উনার আছে। তবে সেটা অবশ্যই ছোট পরিসরেও করা যেতে পারে। সেটা না করে উনার ফেবুতে কেন বাংলাদেশের ছবি নেই এটা নিয়ে কোন একটা মেসেজ দেবার চেষ্টা করাটাকে আমার খুব চিন্তাশীল কিছু মনে হয়নি। ধন্যবাদ।

দিগন্ত চৌধুরী এর ছবি

শাহাদুজ্জামানের কিছু কোলাজ গল্প, "শিং মাছ লাল জেল এইসব" বা "বন্ধুর নোটবই", সেসব অনুসরণ করে "দুইটি বিভ্রান্ত খণ্ড" লেখা। তাই উৎসর্গও করেছি শাহাদুজ্জামানকে। সবার জন্য জানাই, গল্পের দুই অংশের চরিত্রগুলি কিন্তু কেউ শাহাদুজ্জামান নন, আমি গল্পটি প্রিয় লেখক ও প্রিয় মানুষ শাহাদুজ্জামানকে উৎসর্গ করেছি এর আঙ্গিকের কারণে, কারণ তা শাহাদুজ্জামানের গল্পের সাথে মিলে যায়। তাঁর অকারণ সমালোচনা করার কোনও কথাই ওঠে না। আরেকটা বিষয়, শাহাদুজ্জামানের এই গল্পগুলিতে যে বিষয়টি থাকে সাধারণত, বিপ্লবের স্বপ্নভঙ্গ...সেসব আমার লেখাতেও এসেছে। আঙ্গিক ও বিষয়ের নৈকট্যজনিত কারণেই এই উৎসর্গ, আর কিছু নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর ব্যাখার জন্য। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ভুল বোঝার জন্য। তবে উপরের মন্তব্যগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে অন্য অনেকেই হ্য়ত আমার মত ভুল বুঝতে পারে। আপনার এই ব্যাখ্যাটা হ্য়ত তাঁদের ভুল কেও ভেঙে দিয়েছে। অবশ্য এটা আমার ধারণা মাত্র। হয়ত শুধু আমি-ই ভুল বুঝেছি। তবে আমার মনে হয় আপনি "শিং মাছ লাল জেল এইসব" বা "বন্ধুর নোটবই" এর রেফারেন্স টেনে লিখলে হয়ত এমনটি হতনা। অসংখ্য ধন্যবাদ আবারো।

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

ভালো হয়েছে দিগন্ত

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

তানিম এহসান এর ছবি

ভাল লেগেছে দিগন্ত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।