মতি সমাচার

সুবোধ অবোধ এর ছবি
লিখেছেন সুবোধ অবোধ (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/০৪/২০১৩ - ৩:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মতি সাহেব বড়ই ফাঁপড়ে আছেন! দুই পক্ষের চাপাচাপিতে একেবারে চিড়েচেপ্টা অবস্থা। তার বিশাল বক্ষও শুকিয়ে চিমসে মেরে গেছে। আগে তিনি বক্ষ যেন না বুঝা যায় সেজন্য শার্টের নিচে টাইট স্যান্ডু পড়তেন। অথচ এখন টি-শার্ট পড়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ তাকাচ্ছেও না। এটা অবশ্য একটা ভাল ব্যাপার। কিন্ত ঝামেলা লেগেছে অন্যখানে! গতকাল রাতে এক সুললিত কন্ঠের নারী ফোন করে বলল-“মতি ভাই,ভাল আছেন?”
তিনি লুলপুরুষের ন্যায় খানিকটা লুলাইত হয়ে বললেন-“হু,তবে আপনি কে বলছেন?”
টেলিফোনের অপর দিক থেকে রিনিরিনি কন্ঠে আওয়াজ আসল-“আমি ছাত্রী সংস্থা থেকে বলছি মতি ভাই,আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য ফোন দিয়েছি।”
তিনি খুশি খুশি গলায় বললেন-“কেন,কেন?”
-“আমাদের সাথে জিহাদে যোগ দেয়ার জন্য। এতদিন আমরা একাই যে জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছিলাম বেগানা নারীদের অনাচার নিয়ে আজ আপনি আমাদের সাথে যোগ দিয়েছেন সেই জিহাদে। বুঝেন ই তো,আগে তাও একজন মাহমুদুর ভাই ছিলেন,বাকশালী সরকার তাকেও অন্যায় ভাবে বন্দী করল। এখন আপনি আমাদের ভরসা হয়ে মাহমুদুর ভাই এর অভাব পুরন করবেন আশা করি।”
তিনি গদগদ হয়ে বললেন-“কি যে বলেন না! এই একটু ধর্মীয় দায়িত্ব বোধ থেকে কিছু ব্যাপার তো চলে আসেই,তাই না? তাই বলে মাহমুদুর ভাই এর সাথে কি আমার তুলনা হয়? উনি বুয়েট পাশ করা ‘ইঞ্জিনিয়ার সম্পাদক’ আর আমি...?”
-“আপনিও কিন্তু অনেক ট্যালেন্ট। বিনয়ী বলে এমন বলছেন। আর নামেও দেখেন কি অদ্ভুত মিল-মাহমুদুর রহমান আর আপনি মতিয়ুর রহমান। আসলে এই ‘ম’ অক্ষরটারই আলাদা একটা মহত্য আছে বোধয়-মুজাহীদ,মতিয়ুর রহমান নিজামী আবার ওই যুগে ছিলেন মোনায়েম খান! আমি আগেই জানতাম,একদিন আপনি আমাদেরই হবেন!”
কথা টা গিয়ে মতি সাহেবের বুকে ধ্বক করে লাগল। তিনি মুখে আরো মধু ঢেলে বললেন-“কেন ‘আমাদের’? কেন শুধুই ‘আমার’ নয়?”
ওদিকে আবার হাসি ঝংকার তুলল-“মত্তি ভাইই,আপনি কিন্তু অনেক রসিক আছেন,সাথে দুষ্টু ও!”
-“রস তো এই একটু আকটু আছেই। রস না থাকলে কি আর ‘রসোময়’ হওয়া যায়? তা,আপনার নাম কি?”
-“মাইমুনা। হি হি...”
“ইস্‌! হাসি তো নয়,যেন পাখির কলতান!”- মতি সাহেব বিমোহিত হলেন।
-“আজ তবে রাখি মতি ভাই,আবার পরে ফোন দিব।”
অনিচ্ছা সত্তেও তিনি “আচ্ছা” বলে ফোন রেখে দিলেন। বুকের মধ্যে যেন রাজার পেয়াদা রা খাজনা আদায়ের জন্য ঢেঁড়া পিটাচ্ছিল!

এর পর আবার ও সে ফোন দিয়েছিল। ব্যাস্ত মতি সাহেব যেখানে অন্তত দু’দু বার করে রিং টোন না বাজলে অন্যদের ফোন রিসিভ করেন না,সেখানে এখানে একবার না বাজতেই খপ করে ফোন ধরেন। বড় রসিক মেয়েটি। দেখতেও বুঝি তেমনই ‘রসালো’ হবে,আর যাই হোক শাহবাগী মেয়েদের মত অমন ‘উস্কখুস্ক’ হবে না! কথাও আগাচ্ছিল ভালই। হুট করে এই দুষ্টু ব্লগার ছোকড়া রা বাঁধ সাধল! এদের যন্ত্রনায় আজকাল যদি কিছু করা যেত!! কিছু এদিক সেদিক হলেই ফুটফাট ছড়িয়ে দেয়। সবাই লেখক হয়েছে বড়! ‘হাই’ সাহেব কে হাই এ তুলতে গিয়ে তিনি নিজে যে এমন লো তে নেমে যাবেন তা কে জানত?! এরা সব কি লিখছে তাকে নিয়ে! মান সম্মানের গলায় দড়ি দেয়ার মত অবস্থা! তিনি নাকি চটির সম্পাদক! কেমনে কি? ওদিকে হুজুররা তাকে নাস্তিক বলে ডাকে এদিকে এরা ডাকছে এইসব... দু’দিকের চাপাচাপিতে উনার অবস্থা বেগতিক। নিরীহ একটা কৌতুক ছেপে সেবার তাও হুজুরের পা ধরে পরিস্থিতি সামাল দেয়া গিয়েছিল,এবার এই ‘নিরীহ’ গল্প ছেপে রেহাই পাওয়া যাবে বলে তো মনে হচ্ছে না! এবার যে আবার কার পা ধরতে হবে কে জানে? পা ধরতে তার আপত্তি নেই,সে অভিজ্ঞতা তো আছেই!

একদিন পর-
মতি সাহেবের দুশ্চিন্তা কাঁটে নি। অনলাইন পত্রীকাতে ক্ষমা তিনি চেয়েছেন। কিন্তু তাতেও দুষ্টু ছেলেপেলে ব্লগে তাকে নিয়ে লেখা থামাচ্ছে না! আবার বুঝি পা ধরে মাফ চাওয়াই কপালে আছে!

(এটি একটি নিরীহ কাল্পনিক গল্প। কোন বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার সাথে যদি মিলে যায় তবে লেখক দায়ী নয়। পৃথিবীতে তো কত ঘটনাই ঘটে। আর তবুও যদি কারো মনে আঘাত লেগেই থাকে তবে আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থী। আগাম ক্ষমা চেয়ে নেয়াই ভাল,শেষে না আবার পা ধরতে হয়)

সুবোধ অবোধ


মন্তব্য

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

গুল্লি

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
হাসি

সুবোধ অবোধ

চিলতে রোদ এর ছবি

মতিকে জিজ্ঞেস করতে চাই, গত মাসে দ্বিতীয় পাতায় বড় করে ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রচারও কি তাদের একধরনের একধরনের ভুল ছিল নাকি?
আমাদের সংগঠন Engineering Students’ Association of Bangladesh(ESAB) এর পক্ষ থেকে গত ফেব্রুয়ারী মাসে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় রোবটিক্স কম্পিটিশনের মিডিয়া পার্টনারশীপের জন্য যখন তাদের সাথে আলোচনা করি, তারা আমাদের শর্ত দেয় ইসলামী ব্যাংক বা জামাত-শিবিরের সাথে সম্পর্কিত কেউ কম্পিটিশনের পার্টনার হলে তারা থাকবেনা। নৈতিক এই অবস্থানটা ভালোই লেগেছিল তখন।
এই দুই মাসে এমন কি হলো যে তারা প্রথম/দ্বিতীয় পাতায় বড় করে ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপন ছাপাতেও দ্বিধা করে না! সাথে নীরবে এইসব জ্ঞানপাপীদের দিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যায়?!

এই বাংলার উটপাখি যে আসলে কি চায় বোঝা বড় দায়... লেঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড!

অতিথি লেখক এর ছবি

বদলে যাবার স্লোগান তুলে মতি সাহেব এখন বদলে গিয়ে চটির সম্পাদক হয়েছেন!!

সুবোধ অবোধ

নীল আকাশ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
হাসি

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

হাততালি গুড শট

- সুচিন্তিত ভুল

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
হাসি

সুবোধ অবোধ

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধইন্যবাদ ভাইডি।
খাইছে

সুবোধ অবোধ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।