মা এর চেয়ে 'ফেসবুকিয় মাসী'র দরদ বেশি!!!

সুবোধ অবোধ এর ছবি
লিখেছেন সুবোধ অবোধ (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০৫/২০১৩ - ১১:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছু কিছু মানুষ আছেন যাদের কাছে জীবনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যই হচ্ছে গুজব ছড়ানো! তারা অবাস্তব এবং অদ্ভুত কথা ছড়িয়ে মনে মনে সুখী হন। বাংলাদেশের মত আবেগে ভরপুর জাতিতে এই কাজ করা খুবই সহজ। আপনার যদি গুজব ছড়ানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে সকাল বেলা কোন চা এর স্টলে গিয়ে কনফিডেন্সের সাথে একটা আজগুবি কথা বলে আসুন। বিকেল বেলা ওই চায়ের দোকানে চা খেতে গিয়েই হয়তো আপনি টাশকি খাবেন। কারণ ততক্ষনে আপনার সেই কথার সাথে রং টং মাখিয়ে আরো কিছু আজগুবি কথার মিশেল দিয়ে এমন একটা রূপ তৈরি হয়েছে যে আপনি নিজেই বেকুব বনে যাবেন! একেবারে গ্রাম বাংলার একটা গল্প বলি-

এক বাড়িতে একজনের সন্তান হয়েছে। দেখতে কালো। একজন দেখে গিয়ে আরেক বাড়িতে বললো- “অমুকের মাইয়া হইছে,দেখতে কালা।” শুনে গিয়ে সে আরেক বাড়িতে গিয়ে বললো-“অমুকের নাকি মাইয়া হইছে দেখতে কুটকুটা কালা!” সে শুনে গিয়ে তার পাশের বাড়িতে বললো-“অমুকের নাকি মাইয়া হইছে দেখতে কাউয়ার(কাকের) লাহান কালা!” সেই কথা ঘুরতে থাকলো এবং শেষ পর্যন্ত সেটা রূপ নিল-“অমুকের বাড়ি নাকি তমুকের মাইয়া একখান কাউয়া জন্ম দিছে,আবার হেই কাউয়া নাকি এহন(এখন) খালি ঘড়ের চালের উপর দিয়া উড়তাছে আর ‘কা কা’ কইরা ডাকতাছে!!!”

৬মে রাতে মতিঝিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিজানের পর থেকে ছড়ানো গুজব নিয়ে আমি মোটেও অবাক না। কারণ সেদিন রাতে আমি প্রত্তক্ষদর্শী না হলেও পরোক্ষদর্শী ছিলাম। মানে টীভী তে লাইভ দেখছিলাম। দেখার সময়ই আমার ফ্রেন্ড কে বলেছিলাম দেখিস আগামিকাল কি পরিমান গুজব ছড়ে! সকাল থেকেই তার প্রমান দেখা গেছে। যে অদ্ভুত অদ্ভুত কথা গুলো আমি নিজেই শুনেছি বিভিন্ন জনের মুখে তার কয়েকটা নমুনা দেই-
(১) ২৫০০/৩০০০ মানুষ মারা গেছে কমপক্ষে!!
(২) ৭১ এর ২৫ মার্চেও এত মানুষ মরে নাই!!!(শুনে কানের নিচে থাবা দিতে ইচ্ছা করছিল)
(৩) ৫/৯ ট্রাক ভড়ে লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে!!
(৪) তুরাগ নদীতে ১০০ লাশ ভাসতে দেখা গেছে!!!(ভোর বেলা লাশ নদীতে ফেললে সেই লাশ কিভাবে সকালে ভেসে উঠবে সেটা আমার মাথায় ধরে না,অবোধ কি না!!)
(৫) বুড়িগঙ্গা নদীতে নাকি এখন পানির চেয়ে লাশ বেশি!!(টুট টুট......)
এই গেল বহুল ভাবে আলোচিত নামকরা কিছু গুজব এর নমুনা। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই সব গুজবের জন্মদাতা বা প্রচারকরা কেউ অশিক্ষিত না,বরং প্রায় সবাই শিক্ষিত!! আরেক প্রজাতি আছেন যাদের কথাই হচ্ছে- “আমরা এত কিছু বুঝতে চাই না,আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।” উনারা কোন কিছুতে মাথা ঘামাবেন না। কোন কিছু করবেনও না। কিন্তু উনারা বিভিন্ন রকমের সমালোচনা করবেন,এটা কেন হল না,ওটা কেন হল না,এমন হলে ভাল হত। উনারা কিছু পারুক না পারুক একটা ব্যাপার খুব ভাল পারেন- সব কিছুতেই ঝিম মেরে বসে থাকতে আর সময় বুঝে মুখ এবং পশ্চাৎদেশের মধ্যে কোন ব্যাবধান না রেখে যা খুশি তাই বলে ছাড়তে!!

তা,যাই হোক বহুল ভাবে আলোচিত এইসব গুজবের বাইরেও কিছু খুচরা গুজব নিশ্চই আছে। এখন আমার বোকাসোকা চিন্তাভাবনায় যা আসে তাই বলি-
আমি যৌথ বাহিনীর অভিজানের প্রায় পুরোটাই দেখেছি। দেখে আমার একবারও মনে হয় নি ওখানে এত এত মানুষ মারা গেছে। কারণ মৃত মানুষের যে সংখ্যার কথা বলা হয়েছে তার ১০০ ভাগের এক ভাগও যদি সত্যি হত তাহলে ওই যায়গার রাস্তায় রক্তের ছড়াছড়ি থাকার কথা! আর ওই সংখ্যা হলে তো রক্তের বন্যা বয়ে যেত। রাস্তায় তো দূরের কথা রাস্তায় আহত হয়ে পড়ে থাকা মানুষগুলোর পাশেও কোন রক্তের ছাপ ছিল না,কারণ তাদের অধিকাংশই ছিল গুলিতে নয় বরং যৌথ বাহিনীর রাইফেলের বাড়ি খেয়ে আহত। যে কয়টা লাশ(৩/৪ টা) মঞ্চের ওখানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে তার সবগুলোই ছিল সারাদিনের সহিংসতায় মারা যাওয়া,যাদের ওই সমাবেশে আনা হয়েছিল কর্মীদের কে উত্তেজিত করার জন্য।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে- তাহলে এমন গুজব কেন ছড়লো?? যৌথ বাহিনী কি ওখানে তাদের আদর করেছিল??

যারা এই অভিজান দেখেছেন তারা সবাই জানেন যে ওখানে লাইট বন্ধ করে দিয়ে এমনিতেই একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। যে বিপুল সংখ্যক হেফাজতের কর্মী ওখানে ছিল তাদের ৭০-৮০% ই কোন দিন ঢাকায় আসে নি আগে। সারাদিন মঞ্চে নেতাদের হম্বিতম্বির সাথে এরা সবাই জোশে লাফালাফি করলেও রাতের অন্ধকারে যেখানে যেকোনো মুহূর্তে পুলিশের আক্রমনের ভয় ছিল,এমন অবস্থায় অল্প বয়সী মাদ্রসা ছাত্র গুলো ছিল মানসিক ভাবে যথেষ্ট পরিমান ভীত। সেখানে সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট আওয়াজ এবং ফাকা গুলির আওয়াজ ই তাদের কে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কি?? এইখানে দেখুন।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে গুজব ছড়ানো অধিকাংশ ব্যাক্তিই রাতের বেলা ওই অভিজান দেখেন নি। সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা যা শুনেছেন তাই নিয়েই ঝাপিয়ে পড়েছেন চায়ের কাপে ঝড় তোলার জন্য। আবার অনেকেই যারা কেন এভাবে অভিজান চালানো হল নিয়ে নাকি কান্না জুড়ে দিয়েছেন,আগেরদিন সারাদিন তারাই বলে বেড়িয়েছেন,চিন্তিত হয়েছেন যে এরা যদি এখানে অবস্থান করে তাহলে কি যে হবে?!! সারাদিন তান্ডবের ভয়াবহতায় যেখানে পুলিশ এবং ফায়ার বিগ্রেডের গাড়ি পর্যন্ত ভীড়তে পারছিল না আগুন নেভানোর জন্য,যার ফলে পুড়ে গেছে ১৯০ টি দোকান,সাথে ফুটপাতের হকারদের সব কিছু, সেখানে রাতে অভিজান চালানোর বিকল্প কি হতে পারতো???
যেখানে পরদিন থেকে বি এন পি এরও সেই অবস্থান কর্মসূচীতে যোগ দেয়ার কথা সেখানে কি ভয়াবহতা আরও বারতো না??
ওদিকে আওয়ামিলীগ ঘোষণা দিয়েছিল পরদিন থেকে তারাও মাঠে নামবে হেফাজত কে প্রতিরোধ করার জন্য। সেখানে পরদিন কি অবস্থা হতে পারতো????

আসলে কিছু কিছু মানুষই আছে যাদের কে কোনভাবেই সন্তুষ্ট করা যায়না!!!

এবার আরেকটা ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। অনেকেই এখনো দাবী করেন যে হেফাজত এবং জামাত শিবির এক না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম এক না। এখন আমার কথা হচ্ছে- যদি কেউ জানে যে তার কাঁধে বন্দুক রেখে অন্য একজন গুলি করবে তখন কাঁধ পেতে দেয়াটা হয় ফাইজলামি অথবা চরমতম বেকুবের লক্ষণ!! আর সেটা না বুঝতে পারলে সেই ঘিলু নিয়ে রাজনীতির মাঠে নামা উচিৎ না বলে আমি মনে করি। ডেইলী স্টারের এই রিপোর্ট টা পড়ুন।

মানবতাবাদীদের কাছে আরেকটা প্রশ্ন- যখন রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমন করা হয়,তখন কি পক্ষান্তরে সেটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই আক্রমন হয় না?? আর যখন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমন আসে তখন রাষ্ট্র কি বসে থাকবে?? রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়ীত্ব কার??

আবার গুজবের প্রসঙ্গে এসে শেষ করি। ঢাকায় সেদিন যে সমস্ত হেফাজত কর্মীরা এসেছিল তাদের সবাই কোন না কোন মাদ্রাসার ছাত্র। ২৫০০/৩০০০ কর্মী যদি মারা গিয়ে থাকে তাহলে তাদের লিস্ট কোথায়?? লাশ নাহয় গুম হয়েছে,নাম তো আর গুম হয়নি। তাদের পরিবারই বা কোন অভিযোগ করছে না কেন??? নাকি মা এর চেয়ে ‘ফেসবুকিয় মাসী’ দের ই দরদ বেশি??!!!

সুবোধ অবোধ


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই।
হাসি

সুবোধ অবোধ

স্যাম এর ছবি

চলুক

ধুসর জলছবি এর ছবি

গুজব ছড়াতে ছড়াতে এমন অবস্থা দুদিন পর নিজের মৃত্যুর খবর নিজেরাই ছড়াবে এরা । যা মন চাচ্ছে বলে বেড়াচ্ছে। ফাজিলের দল সব।

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব বেশি অস্বাভাবিক না এদের দ্বারা।
এরা যে কেন বোঝে না যে এখন গুগল ইমেজ সার্চ নামের একটা ব্যাপার আছে।
অযথা ফটোশপ দিয়ে একটা পিক বানিয়ে দিলেই কিছু সংখ্যক ছাগু ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না।
ছাগু গুলারে কে বোঝাবে?

সুবোধ অবোধ

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

আমাদের দেশের সবচে' বড় বিপদ অশিক্ষা - এর বড় ভগ্নাংশটা আবার ধর্মীয় অশিক্ষা। এখানে যুক্তির চে' আবেগ বড় আর আবেগের চে' হুজুগ বড়। কি আর করবেন?

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই,শিক্ষিতরাও কম যাচ্ছে না।
অশিক্ষিত মানুষের চেয়ে জ্ঞান পাপীরা বেশি ভয়ঙ্কর!!

সুবোধ অবোধ

শাওন  এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

গুজবপ্রিয় নপুংশক আবর্জনা একেকটা ।

লেখায় চলুক

তালেব মাষ্টার

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ...

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

আহ!!
সচলায়তনের পুরনো রূপ দেখে দারুণ লাগছে! তবে এই পোস্টে করা চরম উদাস ভাই এবং হিমু ভাই এর মহামুল্যবান কমেন্ট দেখি উধাও!!!
মন খারাপ
কেমনে কি??!!

সুবোধ অবোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুবোধ অবোধ

রাব্বানী এর ছবি

আমি ফেসবুকে লিখছিলাম -
"সাভারে যখন মৃতের সংখ্যা ৫০০ এর কাছাকাছি, তখন সরকার আর বিজিএমইএ মিলে হিসেব দেখিয়েছিল মোট কর্মী ৩০০০; উদ্ধার ~২৫০০ আর মৃত ৫০০; হিসেব মিলিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন মৃতের সংখ্যা ১০০০ পার হয়ে গেল। তাহলে তাহলে সরকার আর বিজিএমইএর দেয়া কর্মী সংখ্যার চাইতে ৫০০ বেশি হল কিভাবে?"
তাতে একজনের মন্তব্য হল: এই পুলিশ অভিযানের পর নাকি সাভারে দিন প্রতি লাশের সংখ্যা বেড়ে গেছে !!!

অতিথি লেখক এর ছবি

হ ভাই,৫ মে এর পর সাভারের ধ্বংস স্তুপের নিচ থেইকা খালি দাড়ি টুপি পড়া লাশ বাইর হইছে!!!!
জানেন না????!!!!

সুবোধ অবোধ

রাব্বানী এর ছবি

হ, মেয়ে গুলা ছেলে হয়া গেছে!!!

অতিথি লেখক এর ছবি

গার্মেন্টস এ যে খালি মাইয়ারাই কাজ করে তা তো জানতাম না!!!
অ্যাঁ

সুবোধ অবোধ

রাব্বানী এর ছবি

আপনি আমার প্রথম কমেন্টই বুঝতে পেরেছেন কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত না। আমার কমেন্টের উদ্দেশ্য ছিল 'কন্সপিরেসি থিওরির অভাব নাই', আর প্রতিদিন এগুলার ডাল-পালা গজাচ্ছে।

আমার ফেসবুক বক্তব্য ছিল:
"সাভারে যখন মৃতের সংখ্যা ৫০০ এর কাছাকাছি, তখন সরকার আর বিজিএমইএ মিলে হিসেব দেখিয়েছিল মোট কর্মী ৩০০০; উদ্ধার ~২৫০০ আর মৃত ৫০০; হিসেব মিলিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন মৃতের সংখ্যা ১০০০ পার হয়ে গেল। তাহলে তাহলে সরকার আর বিজিএমইএর দেয়া কর্মী সংখ্যার চাইতে ৫০০ বেশি হল কিভাবে?" - এর সাথে আমার মতে মতিঝিল এর ঘটনার কোন সম্পর্ক নাই।

"এই পুলিশ অভিযানের পর নাকি সাভারে দিন প্রতি লাশের সংখ্যা বেড়ে গেছে !!!"-এটা হল আরেকজনের মন্তব্যের সার সংক্ষেপ। এটা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি যে, there is no limit to conspiracy theory; sensible or not.

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই রে,আমিও উনারে উদ্দেশ্য কইরাই প্রথম কমেন্ট টা করছিলাম।
যেহেতু উনাকে চিনি না,তাই এইখানেই বলছিলাম।

সুবোধ অবোধ

রাব্বানী এর ছবি

চলুক

সুবোধ অবোধ এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুবোধ অবোধ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।