শিক্ষা-কাঠামোর সংস্কারঃ লক্ষ্য এবং উপায়

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০৫/২০১৩ - ১০:৪৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২১ শে মে, ২০১৩ গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবর নিম্নরূপঃ

“উচ্চমাধ্যমিকে আগের পাঁচটি বিভাগের সঙ্গে নতুন বিভাগ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে ‘ইসলাম শিক্ষা’। এছাড়া সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ নম্বরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়কে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব এ তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্ম শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়ার জন্যই চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলাম শিক্ষা বিভাগ খোলা হয়েছে।“
(তথ্যসূত্রঃ বিডিনিউজ২৪, ২১শে মে, ২০১৩)

বাংলাদেশে চলমান ত্রিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের কথা বিভিন্ন মহলে বহুকাল ধরেই আলোচিত হয়ে আসছে। ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম এবং মাদ্রাসা শিক্ষার তিনটি সম্পূর্ণ ভিন্ন কাঠামোর মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা না করে সময়ের সাথে মাদ্রাসার সংখ্যা বৃদ্ধি কিভাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে সে সম্বন্ধে আলোচনা চলে এসেছে এবং সমন্বিত একটি জাতীয় শিক্ষাক্রমের ব্যাপারেও পণ্ডিত মহল সুপারিশ করেছেন। এমতাবস্থায়, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, সংগীত ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগের পাশাপাশি “ইসলাম শিক্ষা” নামে নতুন গ্রুপ চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করার আইন নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করে। পূর্ববর্তীকালে এমন কোনো পরিকল্পনার কথা গণমাধ্যমে না আসার কারণে এবং চলমান রাজনৈতিক মণ্ডলে মাদ্রাসার শিশু-কিশোরকে ব্যবহারের কুশ্রী অভিজ্ঞতা কুশলী হওয়ার পরিবর্তে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কাজ করতে পারে বলে আন্দাজ করা যায়। কোনো পাইলট প্রজেক্টের ব্যবস্থা না করে পূর্বঘোষণা ব্যতীত একেবারে এক ধাপে নতুন বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্তটি কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে পর্যালোচনা প্রয়োজন। অন্য সব দীর্ঘকালীন ফলাফল বাদ দিলেও, এই চলতি শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে কয়েক মাসের মধ্যে; এর মধ্যে একটি নতুন বিভাগ চালুর মত কাঠামোগত সুবিধা কয়টি কলেজের আছে তা নিয়ে ক্ষমতাশালী মহল কতটুকু আলোচনা করেছেন প্রশ্নটি বাধ্য হয়েই চলে আসে। কোনো বিশেষ মহলকে খুশি করার প্রচেষ্টা যদি এই সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করে থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে হতাশাজনক।

মাদ্রাসা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের সাথে সাধারণ স্কুলের পাঠ্যক্রমের ব্যবধানটি এইক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষাক্রমকে অনাধুনিক দাবি করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো। দেশের মেইনস্ট্রীম উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা ছাত্রদের সংখ্যা, আধুনিক শিক্ষাক্রম থেকে তাদের দূরত্বের পরিচায়ক। একটি ছাত্র কোন্ শিক্ষামাধ্যমে জড়িত হবে, সেই প্রশ্নের সাথে তুমুলভাবে তার আর্থিক অবস্থার প্রশ্নটি জড়িত। খুব নগণ্য একটি অংশ ধর্মীয় কারণে মাদ্রাসাগামী হয়, এর বাদে সকলেরই মূল কারণটি থাকে সাধারণ ব্যয়বহুল শিক্ষাব্যবস্থার পরিপূরক এমন একটি কাঠামোতে প্রবেশ করা যেখানে খাদ্য-বাসস্থানের সুযোগ এবং কোনোভাবে ধর্মীয় শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী জীবনধারণ করার সুবিধা আছে। কাওমী মাদ্রাসায় বাইরের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সাহায্যের কারণে হতদরিদ্র পরিবার এবং অনাথ শিশুদের আশ্রয়স্থল হিসেবে দাঁড়িয়ে যায় যা সাধারণ স্কুল বা অনেক ক্ষেত্রে আলিয়া মাদ্রাসাগুলো রাষ্ট্রীয় সহায়তায় দিতে পারে না।

এই পর্যায়ে এসে এবং গত কিছুদিনের ঢাকা শহরে বিশেষ রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে মাদ্রাসার কিশোর ছাত্রদের নির্মমভাবে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা একমত হতে পারি যে শিক্ষা কাঠামোর একটা র‍্যাডিকেল সংস্কারের প্রয়োজন অসীম; যে কাঠামো আমাদের সংবিধানের প্রতিশ্রুতি মত শিক্ষা উপকরণে সকলের সমান অধিকারের দাবি নিশ্চিত করবে। পরবর্তী প্রশ্ন আসে, এই পরিবর্তিত কাঠামোটির রূপরেখা কি হবে এবং শিক্ষা সম্বন্ধে আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি, আগামী পঞ্চাশ বছর পরে আমরা কোন শিক্ষাকাঠামো দেখতে চাইঃ একটি কল্যাণমুখী শিক্ষার সমানাধিকার নিশ্চিত করে এমন শিক্ষাকাঠামো নাকি বিভিন্ন মাধ্যমে আরো বিস্তৃত দূরত্ব সৃষ্টিকারী শিক্ষাকাঠামো।

বিভিন্ন মাধ্যমগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব নষ্ট করতে প্রথম উপকরণ অবশ্যই কারিকুলামে যতটা সম্ভব সমতা রাখা। ধর্মশিক্ষা একটি মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্ত হওয়াই বেশি যুক্তিসংগত এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, যুক্তিবিদ্যার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সব শিক্ষার্থীর সমান জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থাকার অধিকার রেখে কারিকুলাম তৈরি করতে যতদ্রুত সম্ভব নির্দেশনা আসা প্রয়োজন। মাদ্রাসার হাত্রদের কাছে সাধারণ শিক্ষাধারার বিষয়গুলো সহজলভ্য না করে এবং প্রচলিত ব্যবস্থায় কাওমী-আলিয়া শিক্ষাক্রমের দূরত্ব বজায় রেখে আমরা যদি সাধারণ কলেজেই মাদ্রাসার একটি প্যারালাল ব্যাবস্থা তৈরি করি সেক্ষেত্রে ভবিষ্যত এফেক্টগুলো কি হবে তার কয়েকটি আপাত ধারা মনে হতে পারেঃ

১। মাদ্রাসা যে শিক্ষার যোগান দিয়ে একচেটিয়া বাজার তৈরি করে রেখেছে বহুকাল ধরে, সেখানে সাধারণ শিক্ষাক্রমের প্রবেশ সেই বাজারকে ভেঙে দেবে এবং যে ছাত্রদের মধ্যে মাদ্রাসায় ভর্তির সম্ভাবনা বেশি, তারা সাধারণ স্কুলে একই শিক্ষার সুযোগ পাওয়ার ফলে সাধারণ পাঠ্যক্রমের শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে বেশি আসবে এবং মাদ্রাসাতে জামায়াত-শিবিরের ব্যবহারের সুযোগ কমিয়ে দেবে।

২। জামায়াত-শিবির এর দৃষ্টি মাদ্রাসার পাশাপাশি সাধারণ কলেজেও এক হারেই আসবে এবং ছাত্রদের যে অংশটি জামায়াত কর্তৃক ব্যবহৃত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিলো তাদেরও করুণ পরিণতি দাঁড়াবে। কারণ, “ইসলাম শিক্ষা” নামের নতুন বিভাগটিতে শিক্ষক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে অনেক মাদ্রাসা ডিগ্রিধারীর সাধারণ কলেজে আসার রাস্তা তৈরি হবে। আরেকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য, এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে কেবল উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বা মানবিক পর্যায়ে পড়াশুনা করা ছাত্রের জন্য উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে “ইসলাম শিক্ষা” বিভাগে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। যা সম্ভব এইক্ষেত্রে, দাখিল পরীক্ষার্থীরা পরবর্তীতে আলিম পরীক্ষা না দিয়ে সাধারণ কলেজে ‘ইসলাম শিক্ষা” নিতে অনুপ্রাণিত হবে।

এই পর্যন্ত ব্যবস্থাটি অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এই মাধ্যমে মাদ্রাসা থেকে সাধারণ কলেজে আসা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিশেষ কারো রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি পূরণের সুযোগও বাড়বে।

৩। মাদ্রাসায় যাওয়ার কারণ যদি মূলত আর্থিক হয়, তবে সাধারণ কলেজে “ইসলাম শিক্ষা” গ্রুপ মাদ্রাসা শিক্ষার সাবস্টিটিউট হিসেবে দাঁড়াতেই পারবে না এবং কেবল কলেজের মধ্যে একটা জাত্যাভিমানের চল বাড়বে যেটি আমরা বর্তমানে কেবল জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্রাকারে দেখছি, তাই আরো বেড়ে নগ্নভাবে লড়াই হিসেবে দেখা যাবে প্রতি কলেজ চত্বরে। সেই লড়াইকে সামগ্রিকভাবে সামাল দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ বোধ হয় না।

আপাতদৃষ্টিতে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পয়েন্টের প্রকোপ প্রথমের তুলনায় বেশি আসবে বলেই আশংকা জাগছে।

ঢাকায় গত কয়েকদিন যে তাণ্ডব চলেছে তাতে কাওমি মাদ্রাসা থেকে নিয়ে আসা শিশুকিশোরদের ব্যবহারের যে নিদারুণ প্রয়াস আমরা দেখেছি, সেই দৃশ্য যেন পুনরাবৃত না হয় এমন প্রচেষ্টা এই নতুন সিদ্ধান্তের পেছনে দেখা যায় না। গবেষক ফারুক সোবহান কর্তৃক পরিচালিত ২০১১ সালের একটি গবেষণাপত্র থেকে দেখা যায়, কাওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা মেইনস্ট্রীম শিক্ষা নিয়ে শ্রদ্ধার দৃষ্টি রাখে না এবং সেই অবস্থান থেকে তারা সাধারণ কলেজে এসে “ইসলাম শিক্ষা” গ্রুপে ভর্তি হবে এই আশা করাও ভুল। সংখ্যার দিক থেকে তুলনা করলে কাওমী মাদ্রাসার সংখ্যা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কম নয় যে আমরা তাদের অস্বীকার করে কোনো র‍্যাডিকাল পরিবর্তন আনার প্রত্যাশা করতে পারি। (তথ্যসূত্রঃ Modernization of Madrassa Education in Bangladesh: A Strategy Paper, Bangladesh Enterprise Institute, 2011)

“ইসলাম শিক্ষা” গ্রুপ নিয়ে আলোচনার কারণে বাকি একটি নতুন আইন নিয়ে কথা কম হচ্ছে, যে পরিকল্পনাটিও আসলে আমার দৃষ্টিতে শিক্ষাকাঠামোতে নেগেটিভ প্রভাব ফেলার বিশাল সুযোগ আছে। “তথ্য প্রযুক্তি” নামে একটি নতুন বিষয় ২০১৫ সাল থেকে বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা কতখানি এবং আমাদের শিক্ষাকাঠামো এই নতুন বিষয়ের জন্য কতটা প্রস্তুত- তা জানা জরুরি। একটি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে “কম্পিউটার বিজ্ঞান” অনেকদিন ধরেই আছে। সেখানে সুযোগ থাক্ বা না থাক্, জোর করে “তথ্য প্রযুক্তি” চাপিয়ে দিলে প্রয়োগের অভাব বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের আরো ক্ষতিগ্রস্থ করবে বলে মনে করতে বাধ্য হচ্ছি। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, শহরতলির কথা বাদ দিয়েই অনেক শহরেও পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান ল্যাবের প্রকট দৈন্যদশা। সেখানে কম্পিউটারের সুলভতার উপরে গবেষণা না করে বাধ্যতামূলক “তথ্য প্রযুক্তি” বিষয়টি কতটা সাহায্য করবে আর কতটা ধনী-দরিদ্র পার্থক্যকে সুস্পষ্ট করবে তা চিন্তার বিষয়। শহরের একটি পরিশ্রমবিমুখ ছেলের পক্ষে যে বিষয়গুলো সহজ তা প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক পরিশ্রমী শিক্ষার্থীর কাছেই সুযোগের অভাবে অজানা। সেই সুযোগ তৈরি না করে একটি বিষয় বাধ্যতামূলক করাটাকে হঠকারি সিদ্ধান্ত মনে হয়, তাই এইক্ষেত্রে ২০১৫ সালের মধ্যে কতখানি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব সেটা জানা জরুরি।

- অপর্ণা হাওলাদার।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। সচলায়তনে স্বাগতম।

সবার আগে প্রয়োজন মাদ্রাসা গুলোর পাঠ্যক্রম ঠিক করে দেওয়া। বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসাগুলোতে। এবং তা তদারকী করা। মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। মাদ্রাসা এবং তার ছাত্রদেরকে রাজনৈতিক এবং জঙ্গীবাদ প্রসারের হাত থেকে রক্ষা করা।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, নজরুল ভাই।

সেটাই-- মাদ্রাসায় পাঠ্যক্রম ঠিক করার ব্যাপারে দ্বিরুক্তির অবকাশ নেই। চলতি কাওমী শিক্ষাক্রমের উপরে হাত দিতে সাহস কে করবে, সেটাই প্রশ্ন। এমনকী ইন্টিগ্রেটেড বলতে বিশেষজ্ঞ মহল কি রূপরেখার কথা চিন্তা করেন, সেটাও কোথাও আমি অন্তত পেলাম না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আলোচনা ভালো লাগলো। গত দুই দিনেও এই বিষয়ে লেখা এসেছে। কাজেই এই বিষয়টি নিয়ে আসলে শঙ্কার অবকাশ রয়েছে। যারা এইসব বুদ্ধি বের করে এইধরনের একটা ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেয় তাদের স্বার্থ বুঝতে দেরী হয় না। এই বিষয়টি কার্যকর করার আগে এর বহুবিধ কুফল গুলো সরকার রিভিউ করে দেখবে সে আশা রাখি। তা নাহলে এখন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও অনেক ছাগু আর তাদের লালন কারীদের গড়ে তোলা নতুন ফ্রন্ট নিয়ে সরকারকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কার্যকর তো মনে হয় করে ফেলেই গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে। এই ধরণের বিপজ্জনক সিদ্ধান্তের কারণ জানানো হোক।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

-অপর্ণা।

সত্যপীর এর ছবি

উচ্চ মাধ্যমিকে ধর্মশিক্ষার পিছনে পয়সা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে স্কুলকলেজে কম্পিউটার কিনে দেয়া হোক যেন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি সত্যই কাজে লাগে। ধর্মশিক্ষার জন্য পিতামাতাই যথেষ্ট। উচ্চ মাধ্যমিকের দামড়া পোলাপান বাপমা লাইনে আনতে না পারলে টিচারেও পারবে না হো হো হো

আরো লিখুন। সিরিয়াস এবং অসিরিয়াস বিষয়ে...(অসিরিয়াস বিষয় হইলে আমার মত পাব্লিকের পড়তে আরাম খাইছে )

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

"উচ্চ মাধ্যমিকের দামড়া পোলাপান বাপমা লাইনে আনতে না পারলে টিচারেও পারবে না"
সেটাই।

অনেক ধন‌্যবাদ। হাসি

Emran  এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ লেখা। আমার মনে হয় না মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন আদৌ সম্ভব। মাদ্রাসাগুলি এখন গ্যাংগ্রিনে পরিণত হয়েছে। এখন যেটা চিন্তা করা উচিৎ সেটা হল কিভাবে মাদ্রাসাগুলিকে বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দেয়া যায়। মাদ্রাসার মূল খাদ্য ছাত্র; ছাত্র দেখিয়ে তারা আর্থিক সাহায্য আনে। আমাদের চিন্তা করা উচিৎ মাদ্রাসাগুলি তাদের ছাত্রদেরকে কী সুযোগ-সুবিধা দেয়, যা সরকারী স্কুল দিতে পারে না; এবং না পারলে কেন পারে না। শিক্ষাখাতে তো বাংলাদেশ বিদেশ থেকে প্রচুর ত্রাণ পায়; সেই ত্রাণের টাকা দিয়ে কি মাদ্রাসার সমতুল্য সুযোগসুবিধা সরকারী স্কুলে দেয়া সম্ভব না?

অতিথি লেখক এর ছবি

ইমরান, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মাদ্রাসা সমাজের জন্য গ্যাংগ্রিনে পরিণত হয়েছে এই বক্তব্যের সাথে আমিও একমত---তবে দেশের যা অবস্থা দেখি, নিকট ভবিষ্যতে মাদ্রাসা বিলুপ্তি সম্ভবপর লক্ষ্য বলে মনে হয় না। আপাতত আধুনিকায়ন-ই প্রাধান্য পেলে হয়তো কিছু এগোনো সম্ভব।
মাদ্রাসার ছাত্রদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পথ বন্ধ, এবং সেই সুবিধা অন্যকোনো ভাবে দেওয়ার চিন্তা আমলে আনা অতি আবশ্যক।

Emran  এর ছবি

ছাত্রের অভাবে টোল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ছাত্র না পেলে মাদ্রাসাগুলিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মাদ্রাসার সমতুল্য সুযোগসুবিধা যদি সরকারী স্কুলগুলি দিতে পারে, তাহলে আমার ধারণা ছাত্র/অভিভাবকরা মাদ্রাসা বাদ দিয়ে স্কুলের পথেই হাঁটবে।

সাময়িক একটা বিকল্পের কথা বলতে পারি, যা আমাদের দেশেই এক সময় চালু ছিল। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান পর্বে দাখিল পাস করে কোন মাদ্রাসা ছাত্র কলেজে ভর্তি হতে চাইলে তাকে পুনরায় হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে ম্যাট্রিক পাস করে আসতে হতো। আহমদ শরীফ এবং কুদরৎ-ই-খুদা - দু'জনেই কিন্তু ছিলেন মাদ্রাসার ছাত্র (আমাদের স্কুলের এক জামাতি শিক্ষকের মতে আহমদ শরীফ নাকি মাদ্রাসা থেকে "টাইটেল" পাস করেছিলেন!) । ১৯৭৫-র পরে সামরিক শাসনামলে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য মাদ্রাসা ডিগ্রী = সাধারণ ডিগ্রির নিয়ম চালু হয়। দুই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে এই equivalence তুলে দিতে হবে।

সত্যপীর এর ছবি

ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান পর্বে দাখিল পাস করে কোন মাদ্রাসা ছাত্র কলেজে ভর্তি হতে চাইলে তাকে পুনরায় হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে ম্যাট্রিক পাস করে আসতে হতো।

পশ্চিমের ভার্সিটিগুলাতে বাইরের ছাত্রদের মাঝে মাঝে এক্সট্রা ক্রেডিট নিতে হয়, এইরকম এক্সট্রা ক্রেডিট সিস্টেম চালু করলে মন্দ হয়না কিন্তু। ধরেন আপনি যেরকম বলছেন মাদ্রাসা পাস করে আবার হাইস্কুলে ঢুকতে হবে উচ্চশিক্ষার জন্য, সেরকম না করে মাদ্রাসার ছাত্রদের কিছু এক্সট্রা কোর্স করে (গণিত পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি, বা যেটা রিলেভেন্ট ভার্সিটির ওই সাবজেক্ট পড়ার জন্য) ভার্সিটিতে ঢোকার নিয়ম করা যায়।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কাছে কিন্তু হাইস্কুলে ঢোকার আইডিয়াটাই বেশি ভালো লাগছে---রিয়েলিস্টিক বেশি মনে হচ্ছে কারণ--আমাদের বিভাগে দেখতাম মাদ্রাসা থেকে আসা ছেলেরা এত বেশি সবার থেকে আলাদা থাকতো--যার কারণ আমার কাছে দুই সমাজের মধ্যে দূরত্বটাই মনে হয়েছে। এরা যদি আগে থেকেই সাধারণ স্কুলের সংস্পর্শ পায়, তবে সেটা সামাজিকীকরণেও সাহায্য করবে হয়তো আর নতুন একটা কাঠামো করে আলাদা কিছু করাও লাগবে না।
তবে আপনার প্রস্তাবটাও ভেবে দেখার মত। বিশ্ববিদ্যালয় বা সাধারণ কলেজের পক্ষ থেকে যদি এরকম সাপোর্ট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, তাহলে অনেক ধাপ এগোনো যাবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে---আমার ধারণা ছিলো না আগে মাদ্রাসা আর হাইস্কুল এর ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট ছিলো না। তাহলে বলা যায় যে, আমরা একটা রিয়েলিস্টিক কাঠামো থেকে সময়ের সাথে সরে এসেছি!
"দুই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে এই equivalence তুলে দিতে হবে।" - সহমত। এই পদক্ষেপ না নিয়ে এর উলটা পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ কি ---সরকারকে তার-ও উত্তর দিতে হবে।

নির্ঝর অলয় এর ছবি

খুবই দরকারী লেখা।

কিন্তু যাঁদের গুরুত্ব দেয়াটা দরকার তারা দেবে কি? মাদ্রাসার দরিদ্র ছাত্রদের পুনর্বাসন জরুরী, জরুরী তাদের মস্তিষ্ককে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা। এদেশে জনমতের আদৌ কোন দাম আছে কি?

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, নির্ঝর।

সিলেবাস গুলোতে সাম্য আনা, মাদ্রাসার ভেতর আর বাইরের দুনিয়ার ব্যবধান কমানো কাজগুলো প্রচন্ড কঠিন বলে বিশ্বাস হয় না, কিন্তু ভোট এর কথা মাথায় রেখে কি আর সংস্কারের দায়িত্ব ঘাড়ে নেওয়া যায়!

-অপর্ণা

(আগের ১১,১২ মন্তব্য-ও আমার। নাম লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম।)

পৃথ্বী এর ছবি

উচ্চ মাধ্যমিকে "ইসলাম শিক্ষা" বিভাগ একবার জেকে বসলে সেটাকে আর বন্ধ করা যাবে না, পরবর্তীতে এই বিভাগ বন্ধ করতে গেলেই ধর্মভিত্তিক দলগুলা সোনার হরিণের দামের ইস্যু পেয়ে যাবে।

আরেকভাবে বললে, kill it before it lays eggs!

একটা প্রশ্ন - মাদ্রাসাগুলোকে স্কুলে রুপান্তর করার ক্ষেত্রে কি কোন টেকনিক্যাল বাধা আছে? একটা সমস্যা ইমেডিয়েটলি মাথায় আসে - মোল্লারা আপত্তি করবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকার যদি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনায় খুব ধীরে ধীরে মাদ্রাসাগুলোকে স্কুলে রুপান্তর করতে যায়, সেক্ষেত্রে সরকার কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে? আমি জানি যে বাংলাদেশের সরকার দীর্ঘ মেয়াদে কোন কিছু করছে এমন ভাবনা হাস্যকর, কিন্তু তত্ত্বীয়ভাবে কি এই প্রকল্পে কোন বাধা থাকে? মাদ্রাসার পক্ষের একটা বহুল প্রচলিত যুক্তি হল এগুলা নাকি এতিমদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছে(যদিও এই শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া আর অশিক্ষিত থাকার মাঝে পার্থক্য কী তা আমার বোধগম্য নয়), কিন্তু এতিমদের জন্য মাদ্রাসা না খুলে স্কুল খুলতে সমস্যা কোথায়? স্কুল কি এতই ব্যয়বহুল?


Big Brother is watching you.

Goodreads shelf

অতিথি লেখক এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, পৃথ্বী।

মাদ্রাসাকে স্কুলে পরিণত করার হঠাত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য লেভেল ফিল্ড আমাদের হয়তো এখোনো নেই, তবে আমার মতে- ধীরে ধীরে মাদ্রাসাগুলোতেই যদি সাধারণ শিক্ষার কারিকুলাম ইনজেক্ট করা যায় এবং বেশি পয়সা বরাদ্দ করে হলেও মেইনস্ট্রীম থেকে পাশ করা মানুষকে মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় উতসাহিত করা যায়, সেটা হয়তো প্রথম দরজা খুলতে পারে। করা সম্ভব অনেককিছুই, কিন্তু কে করবে আর কি করবে, সেটাই প্রশ্ন।

-অপর্ণা হাওলাদার।

খেয়া'দি এর ছবি

এরশাদ, জিয়া আর বেগম জিয়া যেটা পারে নাই, সেটা আওয়ামী লীগ করে দেখালো! ক্ষমতায় জেঁকে বসে থাকার জন্য এরপর আল্লাহর নামে খুন করাটাকেও জায়েজ করা বাকী খালি।

অতিথি লেখক এর ছবি

এরশাদ, জিয়া, বেগম জিয়া যা করেছেন---তার ই পরের ধাপ হিসেবে এটা এসেছে হয়তো। যে বা যারা এটার ভেতরে ভালো উদ্দেশ্য দেখতে পাচ্ছেন, তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শেখার ক্ষমতা কম বলেই মনে হচ্ছে।

-অপর্ণা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।