ভালোবাসার জীবন

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৪/০৮/২০১৩ - ১২:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দাম্পত্য জীবন- স্বামী-স্ত্রী দুজন মানুষ, একটি জীবন। মানুষ দুজন দুজনকে হয়ত কখনও দেখেনি, হয়ত দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে কিন্তু সে তো পার্কের গন্ডিতে- কিন্তু সেই মানুষটিই হয়ে যাচ্ছে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত লাগে। নিজের বিয়ে হয়েছে- ভালোবাসি কাছের মানুষটিকে। তবুও অদ্ভুত লাগে।
ভারতে এসেছি বাবা’র চিকিৎসার জন্য। ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে বাবার মুখে। তবুও বাবাকে নিয়ে চিন্তার চেয়ে মাকে নিয়ে চিন্তাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। বাবা’র কিছু হয়ে গেলে মা’র কি হবে? মা স্বাবলম্বী- চাকুরী করেন বেশ বড় পোষ্টেই। নিজের সাথে বরং বাবাকেও মা দেখেন। তবুও তার চলে যাবার আশংকায় কেন মা-কে নিয়েই বেশি ভাবনা হয়! তার চলে যাওয়ায় তো সবচেয়ে কষ্ট হবার কথা তার সন্তানদের- রক্তের অচ্ছেদ্য বন্ধন। সেই বন্ধনের চেয়ে কেন কাগজ-কলমের সম্পর্কটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে!
এখানে আসার পর থেকেই দেখছি বাবাকে ছেড়ে মা একমুহুর্তের জন্যও কোথাও যেতে নারাজ। ডায়াবেটিকের রোগী হয়েও খাওয়া হাঁটার অনিয়ম করে যাচ্ছেন নিয়মিত ভাবেই। অপারেশনের দিন পরিচয় হল আরেক বাংলাদেশির সাথে। উনি এসেছেন ওনার স্বামীকে নিয়ে। এখানেই ভাই-বোন আছে, তারাও সাথে আছেন। অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হল কিন্তু উনি অপারেশন শুরু করতে দেবেন না; স্ত্রীকে আরেকবার দেখবেন। আর স্ত্রী অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে শুধু চোখ মুছে যাচ্ছেন। ভদ্রলোকের ক্যান্সারের ফোর্থ স্টেজ। মহিলাকে জড়িয়ে ধরতেই হু হু করে কেঁদে ফেললেন। সহমরণের এক অদ্ভুত রূপ দেখতে পেলাম।
বাবার সার্জারি যিনি করলেন সেই ডাক্তারই একইদিন আর একটা অপারেশন করেছেন। একই রকম সার্জারি দু’টো। ভদ্রমহিলার সাথে তার স্বামী আর মেয়ে এসেছেন। অপারেশনের দিন পরিচয় হল। বাবার আর তার সবকিছুই পাশাপাশি হয়েছে। তাই কাছ দেখার সুযোগ হল এই পরিবারটিকে। ভদ্রলোকও ক্যান্সারের রোগী। গত জুলাইয়ে তার অপারেশন হয়েছে। তারপর থেকে কেমো চলছে। এরই মাঝে স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পরেছে। ভর্তি হওয়া থেকে উনি ওনার স্ত্রীর পাশে আছেন এই শরীর নিয়ে। অপারেশনের ২/৩ দিন পর করিডোরে দেখা হল ওনাদের দু’জনের সাথে। ভদ্রমহিলাকে হাঁটতে হবে; আর ভদ্রলোক তাকে সাহায্য করছেন হাঁটতে। পরিচয় করিয়ে দিলেন আমার সাথে। ভদ্রমহিলাকে কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করতেই ভদ্রলোক উত্তর দিলেন- ডায়াবেটিক ছাড়া সব রোগ আছে, আর অরগান যেগুলো ফেলে দেয়া যায় সবই ফেলে দেয়া হয়েছে (এপেন্ডিক্স, গল ব্লাডার, ইউট্রাস)। লোকটির কথায় কোন বিরক্তি ছিল না। অনেক মায়া ভালোবাসা ছিল।মা পাশ থেকে বললেন এমন ভালোবাসা সহজে দেখা যায় না। বাবা কিন্তু মাকে কম ভালোবাসেন না। এই অসুস্থতার মাঝেও তার চিন্তা শুধু মাকে নিয়ে- সে ঠিক মত খাচ্ছে কিনা, ঘুমের সমস্যা হচ্ছে কিনা। দেশে ফিরতে চাই বাবাকে নিয়ে প্লেনে। কিন্তু মা প্লেনে যেতে পারবেন না; তাই বাবা কিছুতেই প্লেনে যাবেন না। কি যে করি বলুনতো! এত ভালোবাসাও যে বিপত্তির কারণ হয়ে গেল। এমন রোগী নিয়ে কি বাই-রোডে আসা ঠিক হবে!!!

লেখাটা লিখেছিলাম মে মাসের শেষের দিকে, কলকাতায় বসে। বাই- রোডেই ফিরেছিলাম সবাই একসাথে। জার্নিতে আমি আর মা অসুস্থ হয়ে গেছি আর বাবা দিব্বি ফিট। আর বাবা'র ক্যান্সার? অনেক ভাল আছেন। ভাল থাকুক ভালোবাসা।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল থাকুক ভালবাসা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

দরদী লেখা। চলুক
ভালবাসার রংমশাল বড় আজীব আলো ছড়ায়! তারে বুঝার চেষ্টা যত কম করা যায়, তাতে মুগ্ধ হওয়ার আশ্বাস তত বাড়তে থাকে। তবে লোকে বলে, ভাল বাসা থাকলে ভালবাসার পক্ষে তা পরিস্থিতি একটু সহজ করে! হাল্কা কথা, চাপ নেয়ার না, যতক্ষণ না চাপে পড়ার অবস্থা হয়! চোখ টিপি
ভাল থাকুন, ভাল থাকুক ভালবাসা।
- একলহমা

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালোবাসায় লেখা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো
ইসরাত

অতিথি লেখক এর ছবি

আমারও ভাল লাগল।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লেখকের নাম কী?
ভালো থাকুক ভালোবাসা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
অন্য নদী- লেখকের নাম। দিতে ভুলে গিয়েছিলাম মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার দরদী একটি লেখা।
লেখকের নাম কোথায়?

-নিয়াজ

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।
অন্য নদী

নিবিড় এর ছবি
অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

লেখাটা চমৎকার লাগল। খুব আবেগ দিয়ে লেখা। সর্বত্র ভালোবাসার জয় হোক। হাসি

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

ভালো লাগল পড়তে। নির্মল, সুন্দর।

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ভালোবাসা নিয়ে লেখা সব লেখাই দরদী হয়। তবে লেখার ভিন্ন ধরণের আঙ্গিক আর ঝরঝরে ভাষা ভালো লাগলো। নিকটাও ভালো লাগলো।
লেখা চলুক নদীর বেগে ---- (ওগো নদী আপন বেগে পাগল পারা - সেই রকম বেগে লেখা আসুক)
চলুক

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।