আমার স্বপ্নের ঢাকা ইউনিভার্সিটি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ২৮/১০/২০১৩ - ১০:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শিরোনাম দেখে ভেবে বসবেন না, আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি। আমি কখনো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যাইনি। তবু ঢাকা ইউনিভার্সিটি আমার স্বপ্নের। আমার স্বপ্নের সব হিরো, আমার বাস্তবের সব হিরো- ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে কখনো মাতিয়ে রেখেছিল। মনে আছে যেদিন আমি ফেইসবুকে এক আধপরিচিত ছেলের অপরাজেয় বাংলার নিচে গ্র‍্যাজুয়েশান ক্যাপ ছুঁড়ে দেয়া ছবি দেখেছিলাম, সেদিন ঈর্ষায় আমি জ্বলে গিয়েছিলাম। আমার নিজের বিখ্যাত গ্রেট হল গ্রাজুয়েশানকে কেমন ফিকে মনে হতে লাগলো। আমার ঢাকা ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া প্রেমিককে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম- তুমি মিছিল দেখেছো? ও বলতো- "দেখবো না কেন? করেছিও।" আমি আমার কাছের মানুষটাকে ছুঁয়ে দেখি। আমার সামনে একটা জলজ্যান্ত হিরো, যে মিছিল করেছে। আমি অবাক হয়ে জানতে চাইতাম কিভাবে এতোদিন সে কাউকে ভালো না বেসে ছিল। ও বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতো- আরে কাকে ভালোবাসবো? আমি আরো অবাক হয়ে বলতাম- "কেন? সুন্দর সুন্দর শাড়ি পরা মেয়েদের। পহেলা বৈশাখে দেখায় না? সুন্দর সুন্দর শাড়ি পরে, চুড়ি পরে আর টিপ পরে।" ও আরো বিরক্ত হয়ে বলতো- "ধুর! যত্তসব খ্যাত!" আমার অবাক লাগতো- ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কিভাবে কোনো খ্যাত পড়বে? ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সব বিদ্রোহীরা পড়ে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে।

মানুষ বলে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি মুক্ত করতে হবে। কিন্তু যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ছাত্রদের গর্জন জড়িয়ে আছে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজনীতিকরণ দেশের জন্যে কতটা ভালো? আমার মনে হয় না পৃথিবীর আর কোনো ইউনিভার্সিটিতে জাতির ইতিহাসের প্রতীক হিসেবে শহীদ মিনার ধরনের কিছু আছে। যখনই ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা জেগেছে, ওরা ইতিহাস গড়ে দিয়েছে। নিজেদের ক্যাম্পাসে বিদ্রোহের এতো বড় প্রতীক রেখে কিভাবে অরাজনীতিকরণ সম্ভব? বিশ্বজিত হত্যার পর খুনিদের তালিকা দেখে আমি খুব অবাক হয়ে ভাবছিলাম কিভাবে একটা দর্শন পড়ুয়া ছেলে খুন করতে পারে। আমি আমার ফিলোসফি পড়া বন্ধুদের কথা ভাবছিলাম। জীবন সম্পর্কে এতো গাঢ়ভাবে যারা ভাবতে পারে তাদের পক্ষে কিভাবে একটা অপরিচিত কাউকে এভাবে রাস্তায় ফেলে খুন করা সম্ভব? আমার প্রশ্নের জবাব আমি পেয়ে গেছি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি কেন এমন, তাও এখন আমি জানি। আমরা সবাই জানি। তাহলে আমি এটা কেন লিখছি?

কিছু সময় আগে, আমার ইউনিভার্সিটিতে একটা বির্তক হচ্ছিল। বিষয় ছিল - Oxbridge has failed Britain. সে প্রসঙ্গে আমার এক বন্ধু বলেছিল- "Oxbridge has a duty to reform its internal culture. Oxbridge focuses only on our degree, on our internship, on our job, on our CV points but never on our responsibility. Oxbridge has many internal problems; problems that spill out into rest of the society via its graduates." এখানে আমি Oxbridge প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। ঢাকা ইউনিভার্সিটির সমস্যার সাথে অক্সফোর্ড বা কেম্ব্রিজের সমস্যার তুলনা হয়না। কিন্তু, এখানে দুটো পয়েন্ট খেয়াল করার মতো- ১) ঢাকা ইউনিভার্সিটির নিজেকে শুধু একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দাবি করে অন্য সব দায়িত্ব থেকে নিজের হাত ধুয়ে ফেলতে চাওয়া সমস্যাযুক্ত ; ২) অক্সব্রিজের মতো ঢাকা ইউনিভার্সিটির সমস্যাগুলোও আমাদের সমাজের সবাইকে ক্ষতি করে, সে আপনি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কিত থাকুন বা নাই থাকুন।

আমরা সবাই নিউজপেপারে পড়ি শিক্ষক নির্বাচনে দুর্নীতি নিয়ে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাচ্ছে- এই কারণে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন টিচার পাচ্ছিনা। আপনি যদি বাংলাদেশের বর্তমানে ঢাকার নামকরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির টিচারদের যোগ্যতা আর ঢাকা ইউনিভার্সিটির টিচারদের যোগ্যতা বিচার করেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন। আমার সাবজেক্টের কথাই বলি- আমি যেখানে প্রাইভেটে কর্নেল, পেনসিলভেনিয়া, কেম্বিজ এবং আরো নাম করা ইউনিভার্সিটির নাম পেয়েছি, সেখানে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে দেখেছি- পি এইচ ডি না করা সহকারী প্রফেসার! এইখানে হয়তো অনেকে বলতে পারে- কিন্তু প্রাইভেটে টিচারদের বেতন বেশি। আমার মনে হয়না প্রাইভেটে টিচাররা বেশি টাকা পায় বলে পড়াতে যায়। যে ছেলে বা মেয়ে, ভালো ইউনিভার্সিটিতে পড়ার পর দেশে ফিরে আসে, সে অন্তত টাকা কিংবা কাজের অভাবে ফিরে আসে না। ওরা আসেই দেশের জন্যে কিছু করতে। (আমি বলছি না প্রাইভেটে পড়ালে দেশের জন্যে কিছু করা হয়না। আমি বলতে চাচ্ছি, অনেকের ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, সম্ভব হয়না।) যোগ্যতাসম্পন্ন টিচারের অভাবে ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের মান খারাপ হচ্ছে - তাতে আমার কি? আমার বন্ধুর কথা শুনে সেদিন আমি বুঝেছিলাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে না গেলেও ওদের হাত থেকে আমার নিস্তার নেই।

ঢাকা ইউনিভার্সিটির জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের জন্যে "থিঙ্ক ট্যাঙ্ক" গড়ার উদ্দেশ্যে। এরাই তো বু্যরোক্রেসিতে থাকবে। সচিব হবে, ব্যাঙ্কার হবে, সুশীল হবে। সমাজের সব পর্যায়ে ওরা যাবে। আর আমাদের দেশের ভবিষ্যত দেশ ফেলে আসা মেধাবী ছাত্রের না, ওদের হাতেই থাকবে। ওদের ক্ষতি মানে আমাদের ক্ষতি। ইউনিভার্সিটির কর্তব্য একটা ডিগ্রি দেয়া না। আমাদের সুশিক্ষিত করা। আর দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে এমন একটা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে আমাদের সুশিক্ষিত করা হয়। যেখানে মূল্যবোধকে জাগিয়ে দেয়া হয়, যেখানে মানুষ বানানো হয়। ছাত্র রাজনীতি ব্যান করা কোনো সমাধান না, কিন্তু ছাত্রদের সুশিক্ষিত করা সমাধান। যখন তাদের মধ্যে একটা মতাদর্শ থাকবে, তখন তাদের ব্যবহার করা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যে কঠিন হয়ে যাবে। লিডার কোনো গাছ থেকে টপকাবে না। লিডার তৈরি করার জন্যে পরিবেশ গড়া লাগবে আগে। এখন সময় হয়েছে "স্বলেহন" বাদ দিয়ে, একবার নিজেদের ইউনিভার্সিটিগুলোর ভেতরকার সংস্কৃতির সমালোচনা করার, পরিবর্তন আনার।

-রাঙা


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে। আমিও কখনো ঢাকা ভার্সিটিতে পড়িনি। কিন্তু যতবারই ওদিকে গেছি অদ্ভুত একটা আলোড়ন বোধ করেছি নিজের ভিতর।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢাকার মানুষদের আমার সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান মনে হয় একুশে ফেব্রুয়ারিতে আর বইমেলার সময়ে। খুব ইচ্ছে আছে কখনো ওখানে যাবার। আমার বয়ফ্রেন্ড বলেছে, ওর জীবন বৃথা আমাকে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে না নিয়ে গেলে। তাই আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি কখনো যাওয়া হবে। ক্লাসে বসে উত্তর দিচ্ছি। আপনার ঢাকার গল্পের প্রতীক্ষায় থাকলাম।

রাহী এর ছবি

লেখা ভালো লাগছে চলুক

এখন দেখা যাক অন্যরা কি বলে

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমিও পড়িনি ঢাকা ভার্সিটিতে, কিন্তু অনুভব করেছি এর সম্ভাবনাগুলো। আমার খুব কাছের এক বন্ধু পড়ত ওখানে।
ওর কাছে যখন শুনতাম ওর ডিপার্টমেন্টের সবাই কি রকম আপন, সব টিচাররা ওদের সবার নাম জানে, ঈর্ষামিশ্রিত একটা ভাল লাগা ছিল আমার। ঢাকা ভার্সিটিতেও অনেক গবেষণা হয়, অনেকেই আমরা জানি না। আমার দেশের একটা ভার্সিটিতে ভাল ভাল কাজ
হচ্ছে শুনতেও ভাল লাগত!

আবার, যখন শুনেছি ওকে একজন লেকচারার অকারণে নাজেহাল করেছে (কারণ, ওর সাবেক প্রেমিকার প্রতি ঐ বিবাহিত লেকচারের আগ্রহ), খুব দুঃখ পেয়েছিলাম।

তবে, আগে রাজনীতির মূলপাঠ ছিল দেশের জন্য কিছু একটা করা, এখন সেটা দাঁড়িয়েছে অন্যায্য সুবিধা বাগানোর হাতিয়ার হিসেবে। ছাত্রনেতা মানে হল টেন্ডার, চাঁদাবাজি আর ভবিষ্যতে কোটিপতি হবার স্বপ্ন।

লেখায় ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। রিসার্চ হয় কিন্তু আসলে খুব কম হয়। আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ এবং আন্তর্জাতিক পাবলিকেশান কম হওয়ার কারণে, সামগ্রিকভাবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আর সামাজিক ফ্যাক্টরগুলো নিয়েই রিসার্চ অনেক কমে যায়। অনেকের ইচ্ছে থাকলেও বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা এতো চ্যালেঞ্জিং, তাছাড়া ডাটার অভাব, সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা সোসাইটি যেটাকে প্রায় একজন বিদেশির শুধু ভারতীয় সোসাইটি (কিংবা অন্য উন্নয়নশীল দেশের) সাথে তুলনা করে বুঝতে হয়। আর, অনেকেই বুঝে এই assumption টা অনেক সমস্যাযুক্ত। তাই এদের অনেকেই ঝামেলায় যেতে চায়না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

'ইউনিভার্সিটি' এক জিনিস আর 'ঢাকা ইউনিভার্সিটি' আরেক জিনিস। ঢাকা ইউনিভার্সিটি শুধু কোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয় না। একটি জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি আর নির্মাণের অংশীদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র রাজনীতি উঠিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই তোলা যাবে না। ছাত্ররা রাজনীতি সচেতন না হলে কেমনে কী? মনে রাখতে হবে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই এখনো স্পষ্টভাবে জামাত শিবিরমুক্ত থাকতে পেরেছে এখনো পর্যন্ত।

আমিও ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র না। কিন্তু স্কুল জীবন থেকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিছিলে অংশ নিয়েছি। টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, মল চত্বর এগুলোতে কেটেছে বছরের পর বছর। জগন্নাথ হলের স্থায়ী বাসিন্দার মতোই হয়ে গিয়েছিলাম একসময়। আমার সবচেয়ে প্রিয় স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখাটা ভালো লেগেছে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

'ইউনিভার্সিটি' এক জিনিস আর 'ঢাকা ইউনিভার্সিটি' আরেক জিনিস।

আমি যেটা এতো কিছু লিখে বলতে পারিনি, আপনি সেটাই বলে দিলেন। ধন্যবাদ!

অতিথি লেখক এর ছবি

কেন জানি ভাল লাগল আপনার কথা গুলো!
ধন্যবাদ রাঙা, শুভকামনা রইল।

তুহিন সরকার।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ! আপনার জন্যেও শুভকামনা!

অমি_বন্যা এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্যে!

শাফায়েত এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে, দু:খ লাগে যখন দেখি অনেক মানুষই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে শুধু নেগেটিভ কথাগুলোই জানে, ভাবে এখানকার ছাত্ররা শুধু সেশনজটের মধ্যে আড্ডা আর রাজনীতিতেই সময় নষ্ট করে। উপরে "মেঘলা মানুষ" বলেছেন "ঢাকা ভার্সিটিতেও অনেক গবেষণা হয়, অনেকেই আমরা জানি না", কথাটা সত্যি, আমার নিজের ডিপার্টমেন্টেই দেখছি ছোট পরিসরে হলেও আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের স্টুডেন্টরা গবেষণা করার চেষ্টা করে, কিছু পেপার পাবলিশ প্রায় প্রতিবছরই, আন্তর্জাতিক মানের সাথে তুলনা করলে এটা হয়তো কিছুই না কিন্তু একেবারেই হয়না সেটা ঠিক না। সায়েন্স ফ্যাকাল্টির বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টে সেশনজট বলতে কিছু এখন আর নেই, এটা বেশ ইতিবাচক একটা দিক।
যাইহোক "স্বলেহন" করে আসলেই লাভ নেই, স্বীকার করতেই হবে হাজার সমস্যায় জর্জরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য এগুলো সংস্কার করা খুব জরুরী। দেশের উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভবত কোনো বিকল্প নেই, ঢাবির খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য থাকলেও এই অভাবটা এখনো পূরণ করতে পারছেনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়েন! ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে!

কায়সার এর ছবি

১) শিক্ষক নির্বাচনে দুর্নীতি সমস্যাটি প্রকট নয়, এবং এটি আনুষঙ্গিক সমস্যাসমূহের কারনও নয়। আপনি খোঁজ নিলেই দেখতে পারবেন অসংখ্য অত্যন্ত যোগ্য শিক্ষক পুরোদস্তুর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তাদের যে মেধা তারা গবেষণা আর শিক্ষণে কাজে লাগাতে পারতো, তা তারা দেশের বিদ্যমান নোংরা রাজনীতির তল্পিবাহক হয়ে ব্যয় করছে। দলীয় আনুগত্যের পুরস্কার স্বরুপ রাষ্ট্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ নানাবিধ আকাঙ্খিত সুবিধা পাওয়া যায় বলেই তাদের এই নৈতিক অধঃপতন হয়।

২) ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আপনার বক্তব্যের সাথে একেবারেই একমত হতে পারলাম না।

আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারলাম বিশ্বের অনেক উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আপনার সংস্পর্শ হয়েছে। আপনি কি কোথাও ছাত্রদেরকে মূলধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখেছেন? ৫২, ৬৯, ৭১ যে সময় আমরা পার হয়ে এসেছি, তা এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ এবং অভূতপূর্ব ছিল যে, সে সময়ের ছাত্রদের রাজনিতিতে অংশগ্রহন দেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে অপরিহার্য ছিল। কিন্তু বর্তমানের স্বাধীন, সার্বভৌম, গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ছাত্রদের (এবং অবশ্যই শিক্ষকদের) মূলধারার রাজনীতিতে অংশ গ্রহনের কোন কারন থাকতে পারে না।

অবশ্যই ছাত্রদের নির্বাচিত সংগঠন থাকবে এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পড়ালেখার সাথে সম্পৃক্ত যে কোন বিষয়ে সোচ্চার থাকবে। ছাত্রনেতা হবে ছাত্রদের মুখপাত্র, ছাত্রদল বা ছাত্রলিগের নেতা নয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী হিসাবে অবশ্যই তারা রাজনীতি সচেতন হবে এবং দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে নির্মোহ ভাবে দেশের স্বার্থে কাজ করবে। আমি মনে করি রাজনীতি করা ছাত্রদের কাজ নয়, এবং তাদেরকে সেটা করতে দেয়ার ফল কখনই ভাল হবেনা।

-- কায়সার

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। সম্ভত আমি আপনাকে বুঝতে পারিনি, কারণ আপনার যুক্তি আমার কাছে পরস্পরবিরোধী মনে হচ্ছে।
(১) আমি শিক্ষক নির্বাচনের কথা একটা প্রচলিত উদাহরণ হিসেবে এনেছিলাম। আপনি বলেছেন - "

শিক্ষক নির্বাচনে দুর্নীতি সমস্যাটি প্রকট নয়

"- মানে কি? প্রকট না হলে কি এটা "justified"? "

এবং এটি আনুষঙ্গিক সমস্যাসমূহের কারনও নয়।

" আপনি নিশ্চিত যে এটা আনুষঙ্গিক সমস্যাসমূহের কারণ না? কারণ আপনি নিজেই বলেছেন "[যোগ্য(!) শিক্ষকেরা] দেশের বিদ্যমান নোংরা রাজনীতির তল্পিবাহক হয়ে [তাদের মেধা] ব্যয় করছে"। যখন শিক্ষকেরা নিজের দলের বা পছন্দের কাউকে নিয়োগ দেয়, তখন তারা এমন কাউকেই নিয়োগ দেবে, যারা তাদের তাদের এবং তাদের রাজনৈতিক ধারণার তল্পিবাহক হবে। শিক্ষকদের যোগ্যতা শুধু তাদের ডক্তরেট দিয়ে হয় না। আমার নিজের বেশ কয়েকজন ডক্টরেট না করা শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকদের মূল্যবোধ, তাদের মতাদর্শ, তাদের যোগ্যতার অনেক বড় মাপকাঠি। কোনো "যোগ্য" শিক্ষক যদি "নোংরা রাজনীতির তল্পিবাহক হয়", তাহলে তার যোগ্যতায় বিশাল সমস্যা আছে। আর এটা এমন কোনো সমস্যা না যেটা সমাধান করা যাবে না। অন্য "সুস্থ" শিক্ষকেরা চাইলেই সেটা করতে পারেন। কিন্তু, সেটা সম্ভব না, কারণ তারা নিজেরাই ওভাবে দুর্নীতি করে এসেছেন এবংপুরা সিস্টেমটাই দুর্নীতি দিয়ে ঘিরে গেছে।
(২)

আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পারলাম বিশ্বের অনেক উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আপনার সংস্পর্শ হয়েছে। আপনি কি কোথাও ছাত্রদেরকে মূলধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখেছেন?

আমি পলিটিক্স এবং ইকোনোমিক্স এর স্টুডেন্ট। তাই আমি সম্ভবত disproportionately বেশি ছাত্রদের চিনি যারা রাজনীতি এবং মূলধারার রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত। পৃথিবীর অনেক দেশে ১৮ বছর বয়সে মেম্বার অফ পার্লামেন্ট হওয়া যায়। এবং আমার নিজের ক্লাসমেট আছে, যে ১৯ বছর বয়সে ইলেকশান করেছে। আমি যতদূর জানি নাম করা প্রতে্যকটা ইউনিভার্সিটিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সোসাইটি থাকে। আমার অনেক বন্ধু সেইসব সোসাইটির অংশ ছিল এবং ঐসব দলের হয়ে ইলেকশানের সময় (এবং অন্য আরো সময়ে) নানারকম সাহায্য করেছে। তাই আপনার প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে লিডারদের হোমস্কুলিং হয় না। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির সাথে অক্সব্রিজের ছাত্র রাজনীতির পার্থক্য হচ্ছে ছাত্ররা মূলধারার রাজনীতি করলেও ওখানে টেন্ডারবাজি করার, খুন করে পালিয়ে যাওয়ার, এবং নানারকম সুবিধা পাওয়ার সুযোগ নেই। এখানেই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের ভেতরকার সংস্কৃতি পরিবর্তন করা দরকার।

কায়সার এর ছবি

১।

যখন শিক্ষকেরা নিজের দলের বা পছন্দের কাউকে নিয়োগ দেয়, তখন তারা এমন কাউকেই নিয়োগ দেবে, যারা তাদের তাদের এবং তাদের রাজনৈতিক ধারণার তল্পিবাহক হবে।

সম্ভবত আপনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে স্পষ্ট ধারনা নেই। এখানে পছন্দ হলেই কাউকে নিয়োগ দেয়া যায়না। ব্যতিক্রম হয়, তবে তা এতই সামান্য হারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্যাসমূহ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন সেখানে তার কোন ভূমিকা নেই।

যোগ্যতা আর মূল্যবোধ এর মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার জানা নাই। আর মূল্যবোধ মাপকাঠি ধরে কিভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব সেটাও বুঝলাম না। একজন সুস্থ শিক্ষক কিভাবে চাইলেই ভ্রষ্ট রাজনীতির সুফলভোগী একজন সহকর্মীকে ঠিক পথে আনতে পারে সেটা জানতে পারলেও খুশী হতাম।

আপনার লেখাটি অবশ্যই সুন্দর হয়েছে। তবে মূল্যবোধের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেশ এবং জাতিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা কতখানি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা আরেকবার ভেবে দেখবেন হাসি

২।
আমি কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র। আর উত্তর আমেরিকার যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি, সেখানে কোন ধরনের রাজনীতির কোন সংস্পর্শ দেখিনি। এ ব্যাপারে সচলে উপস্থিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকজন তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে ভাল হয়।

পলিটিক্স সম্পর্কে আমার জ্ঞান কম। ঠিক কি কারনে একজন ছাত্রের মূলধারার রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা প্রয়োজন বুঝতে পারলে ভাল হত।

রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সব সুপথে চলে আসবে এবং তাহলে ছাত্ররাও সুস্থ রাজনীতি করবে - আপনার এই সমাধান নিয়ে নতুন করে আর কিছু বলার নাই দেঁতো হাসি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা।

তবে আমার কিছু কথা আছে ছাত্র রাজনীতির ব্যপারে। ছাত্রদের রাজনীতি করায় খারাপের কিছু দেখি না। কিন্তু সমস‌্যা তখনই যখন ছাত্ররা ব্যবহৃত হতে থাকে ক্ষমতা দখলের ক্রীড়নক হিসেবে। ছাত্ররা সাধারণ মানুষ হিসেবে রাজনীতি সচেতন হবে, রাজনীতি করবে, মূলধারার রাজনীতিতে নির্বাচন করার যোগ্যতা থাকলে নির্বাচনে অংশ নেবে - সবই ঠিক আছে। কিন্তু নিছক কিছু মানুষের লোভের বলি হয়ে ক্ষমতার পালাবদলের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে - এটা মেনে নেয়া যায় না। ঠিক তেমনি মেনে নেয়া যায় না ছাত্ররা পেশী শক্তির জোরে নেতা হয়ে জ্ঞান আহরণের বদলে কাঞ্চন আহরণে মত্ত হবে।

ছাত্রদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে, রাজনীতি করতে হবে কারণ এ সময় থেকেই মনে আদর্শের বীজ বুনে দেয়া যায়। সমস্যা তখনই যখন আদর্শটা জন-মানুষের উপকার করার থেকে নিজের এবং দলের উপকার করার আদর্শে বদলে যায়।

ছাত্রদের রাজনীতিতে আনার আরো একটা বড় কারণ হলো রাজনীতিতে প্রকৃত অর্থে শিক্ষিত এবং মেধাবী মানুষ নিয়ে আনা। কিন্তু তা যখন পরিবর্তিত হয়ে যায় তরুনদের পেশী শক্তিকে রাজনীতিতে আনাতে, তখন শিব গড়তে বাঁদর গড়া হয় বৈকি। তবে, এই দায় ছাত্রদের না। এই দায় যারা বিষবাষ্প ঢেলে রাজনীতির সকল আনাচ কানাচকে বিষাক্ত করে তুলছে তাদের। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে এত কথা উঠতো না।

৫২, ৬৯, ৭১ - ইত্যাদি সময় ছিল জাগরণের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য জায়গায় ছাত্র রাজনীতি ছিল বলেই যে আন্দোলন গড়ে উঠতে পেরেছিল - এ কথাটা প্রশ্নসাপেক্ষ। ছাত্ররাজনীতি না থাকলে কী এই আন্দোলন হতো না? বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা হচ্ছে এখানে মুক্তমনা, শিক্ষিত এবং প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর একদল টগবগে তরুণকে সবসময় পাওয়া যায়। এই সংখ্যক তরুণকে একসাথে আর কোথাও পাওয়া সম্ভব না। তাই দেশের প্রয়োজনে, দশের প্রয়োজনে এদেরকে সবসময় পাওয়া যাওয়ার কথা - যদি না কলুষিত শিক্ষা আর লোভ দিয়ে তাদেরকে আগেই অন্য কোন দিকে ঠেলে দেয়া হ্য় বা নির্জীব করে রাখা হয় বা অসৎ উদ্দেশ্যে পরিচালিত করা হয়।

মোদ্দা কথা, দেশে রাজনীতি নামের যে নোংরা খেলা চলছে, তার প্রভাব এসে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়েও। এ আর কিছু না, আমদের রাজনৈতিক দৈন্যের বাস্তব প্রতিফলন। উপরতলা ঠিক হোক, নীচেরটা আপনিই ঠিক হয়ে যাবে।

____________________________

স্পর্শ এর ছবি

চলুক


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আপনার সাথে প্রায় সব কথাতেই একমত। শুধু উপরতলা নিচতলার ব্যাপারটা বাদে। নীচতলাটা ঠিক করাটা আমার কাছে আগে জরুরি মনে হয়। কারণ উপরতলাটা এতো জটিল (রাজনীতিবিদরা নিজে থেকে তো আর ঠিক তো হবে না), সেটা ঠিক করার জন্যে অনেক ধরণের প্রভাবক লাগবে। আমি রাজনৈতিক বিদ্রোহের উপর প্রচুর রিসার্চ করে যেটা মনে হয়েছে, রেভুলিউশান আসলেও পরিবর্তন কখনো একদিনে আসে না। আর সেটার জন্যে একটা সমাজের পরিবর্তন দরকার, ভেতর থেকে। আর সেটার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন আমার প্রায় মনে হয় বাংলাদেশের অনেক মানুষের দেশের প্রতি, নিজের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা কম হবার কারণ নিজের ইতিহাস ঠিকভাবে না জানা, এবং ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম, আরবী মিডিয়াম, নামের হাজাররকম মিডিয়াম থাকা। এটা আমাদের সমাজেও খুব দেখা যায়। আমি নিজের জীবন থেকে বলি- আমি বোর্ডিং এ যখন আসি, তখন আমি খুব কম বাংলা জানতাম কিংবা খুব কম বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতাম। কিন্তু বাইরে আসার পর দেখা গেলো, কেউ আমাকে আমার বাবা-মা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে না, আমার আগের স্কুল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে না। সবার প্রথম প্রশ্ন হয়- আমার দেশ নিয়ে! ছোট বয়সে ওটা আমার কাছে একটা বিশাল শিক্ষা ছিল। কেউ কেউ আমি বাংলাদেশি না জেনে হয়তো বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা দুষ্টুমি কথা বলে বসলো, কিংবা আমি বাংলাদেসে থাকি বলার পর ভেবে বসলো আমরা বন্যাতে সারাজীবন পানির নিচে থাকি ধরণের কিছু। এতো অপমানবোধ আমার এর আগে কখনো অনুভব করিনি। আমি দেশে থাকতে মজা করে বলতাম, আমি যেখানে থাকি, সেখানে পানির উঠার মানে বাংলাদেশ প্রায় পুরাটাই তলিয়ে গেছে। কিন্তু, বাইরে আসার পর নিজের দেশের দৈন্যতা নিজের হয়ে দেখা দিল এবং এটাই স্বাভাবিক। নিজেকে জানার শুরু থেকেই আমার নিজের দেশকে জানা, নিজের সংস্কৃতি নিয়ে জানা। আমি মনে মনে অনুবাদ করে বলি বলে, আমার বাংলা অন্যদের কাছে একটু অদ্ভুত শোনায়। আমি আমার জীবনে সবচেয়ে বেশিবার শুনেছি- "তুমি এতো সুন্দর বাংলা বলতে পারো?" আমি এটাই বুঝলাম না, একটা বাংলাদেশি বাংলা বলতে পারবে সেখানে অবাক করার কি আছে? আর বাংলাদেশে অনেকেই বাংলা বলে না। এটা আমার অনেক খারাপ লাগে। আমি অনেককে চিনি, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে আর ভয়ংকর খারাপ বাংলা বলে; এবং এটা নিয়ে ওরা লজ্জাও পায় না। আমি গত ১০ বছরে বাসায় ফোনে কথা বলা ছাড়া বাংলা বলিনি। আমার মনে হয় আমি যদি বাংলা শিখতে পারি, নিজের দেশে থেকে কেন কেউ শিখতে পারবে না? বিশেষ করে অনেক ইংলিশ মিডিয়াম এবং হুজুরদের মধ্যে দেশ সম্পর্কে ধারণা খুব অদ্ভুত। তাই মনে হয় আগে শিক্ষার পরিবর্তন দরকার। কারণ খুব ছোট স্কেলে হলেও ঐ পরিবর্তনটা সম্ভব।

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমি এটাই বুঝলাম না, একটা বাংলাদেশি বাংলা বলতে পারবে সেখানে অবাক করার কি আছে?

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি আপনার মূলতত্ত্বের সাথে একমত নই। জনগন পরিবর্তন হয়ে দেশকে পরিবর্তন করা অনেক দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু রাষ্ট্র কিংবা সরকার চাইলে যেকোন দেশকে কিংবা সমাজকে অনেক কম সময়ের মাঝে বদলে দিতে পারে। একজন মহান নেতা একটা রাষ্ট্রকে সময়ের চেয়ে ১০০ বছর এগিয়ে দিতে পারে, যেমন পেরিছিলেন আব্রাহম লিংকন, শেখ মুজিবর রহমান, মাহাতির মোহাম্মদ কিংবা নেনসন ম্যান্ডেলা। সেখানে জনগন মূখ্য ছিলো না, তাদের চারিত্রিক সততা, দৃঢ়তা আর সংকল্প তাদেরকে সফল মহানায়ক তৈরি করেছিলো ,তারা দেশকে অনেক বেশি এগিয়ে দিয়েছিলো।

আপনি যদি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে পরিবর্তন দ্রুত আসবে। আর আইনের শাসন জনগন প্রতিষ্ঠা করে না। ব্যাক্তি আমি আপনি এমন করে জনে জনে বদলে গিয়ে দেশকে বদলে দিতে শত শত বছর পেরিয়ে যাবে। আর সবাই একই হারে বদলাবে না, একই পরিমান সুযোগ সুবিধা পাবে না। রাষ্ট্র যদি সকল জনগনকে সমান সুযোগের অধিকার না দেয় তাহলে পরিবর্তন আনায়ন আদৌ সম্ভব না। তাই সৎ রাজনৈতিক সরকার দ্বারা পরিবর্তন সহজ তুলনামূলক। পৃথিবীর সব মানুষি কম বেশি নিয়ম মানতে চায়না, উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে এত কড়াকড়ি নিয়মগুলো কি জনগন নিজ থেকে মানতে শুরু করেছিলো নাকি সরকার মানতে বাধ্য করেছিলো? সরকার ই সেই নিয়ম করেছিলো এবং জনগন মানতে মানতে তা অভ্যস্ত হয়ে গেছে এবং একটা সময় দেখা গেছে যে নতুন প্রজন্ম জন্মের পর থেকেই এটাকে সহজাত হিসাবে জেনে আসছে। একটা উদাহারন দেই, যেমন আমাদের দেশে রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করা, এটা শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই সমান ভাবেই করে? কেন করে ? করে, কারন এটা করলে কোন জরিমানা হয়না, শাস্তি হয় না। কিন্তু যদি আইনের শাসন থাকতো যে অন্যায় করলে সাথে সাথে জরিমানা তাহলে দেখতেন সবাই কি সুন্দর নিয়ম মানছে। তাহলে কোন পরিবর্তনটা সহজ? জনগন বদলে গিয়ে নিজ থেকে আইন মানবে নাকি আইনের শাসন জনগনকে আইন মানতে বাধ্য করবে, জনগন পরিবর্তন হবে?

ছাত্র রাজনীতি বিষয়টা ও ঠিক এমন, নীতি নির্ধারকদের কেই ঠিক করে দিতে তাদের সীমা পরিসীমা। অন্যায় করলে যদি শাস্তি আর সৎ থাকলে পুরষ্কৃত করা হয় তাহলে দেখা যেত ছাত্র রাজনীতি এত কুলষিত হতো না।তাই প্রফোসর হিজিবিজবিজ ভাইয়ের সাথে একমত যে আগে উপরতলা ঠিক হতে হবে, উপরতলা ঠিক হলে নিচতলা ঠিক হতে বেশি সময় লাগবে না

আপনি যে ইংলিশ মিডিয়াম এর কথা বললেন সেখানে ছাত্রছাত্রীর দোষের চেয়ে স্কুল এর নীতি নির্ধারকদের(সরকার/ওই মাধ্যম পরিচালক বৃন্দ) দোষ বেশি, তারা যদি বাংলার সঠিক চর্চাকে বাধ্যতা মূলক করে দেখবেন ভুলভাল বাংলা বলা নেই। এটা ঠিক আমরা আমাদের দেশ সম্পর্কে কম জানি, জানার চেষ্টা করিনা।

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পরে উত্তর দেয়ার জন্যে অনেক দুঃখিত! আশা করি ভালো ছিলেন। আমি আপনার সাথে অবশ্যই একমত -

একজন মহান নেতা একটা রাষ্ট্রকে সময়ের চেয়ে ১০০ বছর এগিয়ে দিতে পারে....ব্যাক্তি আমি আপনি এমন করে জনে জনে বদলে গিয়ে দেশকে বদলে দিতে শত শত বছর পেরিয়ে যাবে। আর সবাই একই হারে বদলাবে না, একই পরিমান সুযোগ সুবিধা পাবে না।

কিন্তু, আমরা যদি একটা মহান নেতা আবার পাওয়ার মত ভাগ্যবান না হই? তাহলে আমরা কি তার প্রতীক্ষায় আরো শত বছর বসে থাকবো? "Participation" এর একটা প্রচলিত সমালোচনা হচ্ছে যে - এটা অনেক সময় নেয় আর এটা উন্নয়নের ধারাকে বিলম্বিত করে। কিন্তু, প্রায় সময়ই Participation is a response to the failure of the state. ব্যাক্তি আমি আপনির চেয়ে "আমরা" অনেক শক্তিশালী। এবং সে ক্ষেত্রে আমরা আন্দোলন করলে পরিবর্তন সম্ভব। এবং পৃথিবীর অনেক দেশে যে পরিবর্তনগুলোকে খুব স্বাভাবিক মনে করে হয় এখন- সেগুলো ওমন আন্দোলনেরই ফল।

ছাত্র রাজনীতি বিষয়টা ও ঠিক এমন, নীতি নির্ধারকদের কেই ঠিক করে দিতে তাদের সীমা পরিসীমা।

যেটা আগে বললাম- অবশ্যই সেটা করে দিতে পারলে তো অনেক ভালো হয়। কিন্তু সেটা তারা কেন করবে, যদি তারা সেসব ছাত্রদের ব্যবহার করে লাভবান হয়? কিংবা আরো ভয়ংকর, যদি তারা ছাত্রদের political discourse এর বাইরে ফেলে দিয়ে বলে, ছাত্রদের রাজনীতিকরার অধিকার নেই (পড়ুন- কোনো ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেহেতু ওরাই প্রথমে নাক গলায়, ওদের নাক কেটে দেয়া হোক!) সারা বিশ্বে এবং বাংলাদেশেও এটা করে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সোসাইটি ঠিক করে কোনটা acceptable কোনটা না; কিন্তু রাষ্ট্র নির্ধারণ করে কোনটা legal আর কোনটা illegal. এবং সময়ে সময়ে ঐ আইনের প্রভাব ভয়ংকর হতে পারে। রাষ্ট্র কিন্তু কিছু মানুষ চালায় যাদের নিজস্ব interest আছে। এবং মার্ক্স খুব সঠিকভাবেই বলেছে যে "(T)he executive of the modern state is essentially a committee for managing the common affairs of the whole bourgeoisie." সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিজে থেকে পরিবর্তন আনবে ভাবাটা একটু নিজের ঘাড় থেকে দায় ঝেড়ে ফেলার মত। আপনি চাইলে অবশ্যই একজন মহান নেতার অপেক্ষায় থাকতে পারেন যিনি আমাদের two-party system থেকে বের করতে পারবে (তার আগে তাকে মেরে ফেলা হবে না, তাকে এই দুই দল উঠতে দেবে, কিংবা এই দুই দল থেকে কেউ উঠতে পারবে- কারণ আমি সতি্য জয় কিংবা তারেকের মাঝে সেই মহান নেতা হবার সম্ভাবনা দেখিনা) যে আমাদের নতুন কিছু দেবে।

আপনি যে ইংলিশ মিডিয়াম এর কথা বললেন সেখানে ছাত্রছাত্রীর দোষের চেয়ে স্কুল এর নীতি নির্ধারকদের(সরকার/ওই মাধ্যম পরিচালক বৃন্দ) দোষ বেশি, তারা যদি বাংলার সঠিক চর্চাকে বাধ্যতা মূলক করে দেখবেন ভুলভাল বাংলা বলা নেই।

অবশ্যই ঠিক বলেছেন। আমি ছাত্রদের দোষ তেমন দেইনা। আমি সম্ভবত বুঝিয়ে বলতে পারিনি। আমি বলতে চেয়েছিলাম একটা দেশে তিন-চাররকমের education system থাকাটাই সমস্যা। এতোটাই সমস্যা যে এদের মাঝে কিছু নিজের মাতৃভাষা বলতে ভুলে যায় এবং কিছু নিজের ইতিহাস ভুল শেখে।

Anik Aziz এর ছবি

You wrote very clearly. "Dhaka University" is more than the learning platform. But It's hard to believe we are being degraded only for some intra-burreaucratic situation. Still we are the one to stand out and We all are on it. (If society considers the political unrest to us, I would say please count the numbers and don't judge too early. And yes recruiting teachers in improper way has become a regular practice though 20-25% teachers are on lien for PhD, DBA, PGD, we are not considering them as well)

But still DUeans are the best and we are there to lead.

Thanks

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার আর আপনার মাঝে খুব মতের খুব একটা পার্থক্য নেই, আমরা সকলেই চাই ছাত্ররাজনীতি স্বচ্ছ আর সুন্দর হোক। ন্যায় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হোক। চাওয়া যখন সবার এক হবে পরিবর্তন ঠিকি আসবে। কারন প্রয়োজনি পথ/উপায় তৈরি করে দেয়। ভালোথাকবেন

মাসুদ সজীব

অতিথি লেখক এর ছবি

হাততালি

যখন শিক্ষকেরা নিজের দলের বা পছন্দের কাউকে নিয়োগ দেয়, তখন তারা এমন কাউকেই নিয়োগ দেবে, যারা তাদের তাদের এবং তাদের রাজনৈতিক ধারণার তল্পিবাহক হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।