কবন্ধের এলোমেলো পোঁচে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১৫/০১/২০১৪ - ৫:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কবন্ধের এলোমেলো পোঁচে
শুভচিহ্ন মুছে যাচ্ছে একে একে,অমাবস্যা আরো
গাঢ় হয়ে নামে চরাচরে।
কুঠার শানায় ওরা,ঘন ঘন ফুলকি ওড়ে
ফলে অন্ধকার অধিক আঁধার
বলে মনে হয়,মধ্যযুগ কাফনের মত আপাদমস্তক
মুড়ে ফেলে দশদিক।তবুও মানুষ
হাটুতে ঠেকিয়ে মুখ বসে থাকে,যেন সে পাথর।

আলেকজান্ডার কাছা সামলাতে সামলাতে প্রধান ভৃত্যকে নিয়া দৌড়ে হাজির, ‘সেলুকাস,মেশিনের অবস্থা কী??’
সেলুকাস উদাস হইয়া জানাইল, ‘কেন প্রভু,এরশাদাদুর ওষুধ লাগানোর পর আপনার মেশিন তো চলছে ফাইন।’
আলেকজান্ডার বিরক্ত হইলেন,‘আরে ধুর!!আমার মেশিন না,টাইম মেশিনের অবস্থা কী??’
সেলুকাস এইবার মাথা নাড়ে, ‘প্রভু ওই মেশিন তো এখনো ঠিক হয়নাই।’
আলেকজান্ডারের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেল, ‘এখন কী হবে সেলুকাস!!’
সেলুকাস মাথা নাড়ল ,‘ব্যাপার না।এইখানে আর দিনকয়েক থাকতে হবে।এই ত।’
প্রধান ভৃত্য গোলমান খ্যাসখ্যাস হাসে, ‘ হে হে।নু টেনশন হুজুর।হে হে।’
আলেকজান্ডার এই প্রধান ভৃত্যর কথায় কথায় নাক গলানো পছন্দ করেনা।ধমক দিবে মনে করে সামলায় নেয়।মন তার ভালো নাই।

‘না সেলুকাস,ঘটনা খারাপ।টাইম মেশিন এক্ষণ ঠিক করো।’
সেলুকাস ঠান্ডা মেজাজে বিড়ি ধরাইল,‘আবার কি করলেন প্রভু??’
গোলমান হোসেন টিপটিপ হাসে।
আলেকজান্ডার হালকা আমতা আমতা করে, ‘তেমন কিছুই না,বুঝলা।এই সকাল সকাল ভৃত্যদের নিয়া শিকার করতে গেছিলাম।আমার সিনা টান আর হাতে বন্দুক সটান। আগাইতেছি। আগাইতেছি।হঠাত পাতা খসখস করে উঠল আর সাথে সাথে ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যার‍্যা!!ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যার‍্যা!!’
সেলুকাস তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়,‘উফ!!আপনারে কয়বার বলছি প্রভু মানুষ শিকারের অভ্যাসটা ছাড়েন।জানোয়ার শিকার করেন।যাইহোক,কয়টা??’
-তিন।
সেলুকাস ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ‘ব্যাপার না,লাশ গুম করে দিতে পারি কিনা দেখি।’
ভৃত্য গোলমান হাত কচলায়,‘হে হে।গুম করনের কী দরকার হুজুর!!ফালানো থাউক।নু টেনশন।হে হে।’
সেলুকাস দাঁত কিড়বিড় করে, ‘হারামজাদা গোলমান বেশি কথা কইস না।দেশে আইন কানুন নাই!!সামলাইতে পারবি??’
ভৃত্য গোলমান খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসে।

আলেকজান্ডার আবার আর্জি পেশ করে,‘কিন্তু সেলুকাস,ঘটনা তা না।’
সেলুকাস ধোয়া ছাড়ল, ‘তাইলে কি??’
গোলমান টুপি খুলে মিচকি হাসে।
আবারো আমতা আমতা করে আলেকজান্ডার শুরু করে, ‘আর বলিও না,শিকার শেষ করে কিছুদূর ফিরে আসতেই দেখলাম সরোবরে কয়েক স্নানরতা রমণী।’
সেলুকাস রক্তচক্ষু রগড়াইল, ‘আপনাকে কত্তবার বলছি রমণী দেখে রাস্তা ঘাটে উত্তেজিত হবেন না প্রভু!!সেই জমানা তো আর নাই।যাই হোক,কয়টা??’
___চার ।
___হুম,ব্যাপার না প্রভু।কিছু স্বর্ণমুদ্রা ঢেলে দেখি প্রশাসন কয়দিন ম্যানেজ হয় কিনা।
গোলমান হাত কচলায়,‘হে হে।স্বর্ণমুদ্রা নষ্ট করনের কী দরকার হুজুর!!থাউক না,নু টেনশন।হে হে।’
সেলুকাস চিৎকার করে, ‘স্বর্ণমুদ্রা নষ্ট করা মানে!!হারামির বাচ্চা গোলমান,নারী কত্ত ছেঞ্ছেতিব জিনিস আইডিয়া আছে কুনো??পারবি ম্যানেজ করতে??’
গোলমান ফ্যাকফ্যাক করে হাসে।

আলেকজান্ডার কোনদিকে ভ্রূক্ষেপ করেনা ‘কিন্তু সেলুকাস,ঘটনা তো শেষ হয় নাই’
____ ‘মানে??আর কি??’
গোলমান খুকখুক কাশি দিয়া গলা পরিস্কার করে।
____না মানে,আমি তো আর একাই ওই কাম করি নাই।আমার সৈন্যবাহিনী,সাথে দেশি ভৃত্যরাও সুযোগ বুঝে আমার আদেশের জন্য আর অপেক্ষা করে নাই।
সেলুকাসের কপালে ভাঁজ পড়ল, ‘এইবার কয়টা??’
_____চল্লিশ
সেলুকাস সিগারেটে টান দেওয়া ভুলে ক্ষীণ কণ্ঠে আমতা আমতা করে বলল, ‘আচ্ছা,প্রভু!!দেখি ট্যাকল করতে পারি কিনা।আপনার স্বর্ণমুদ্রার বস্তাগুলো কোন দিকে??’
গোলমান টুপি পড়ে চুকচুক করে হাত কচলায়, ‘হে হে হুজুর,এত্তগুলি স্বর্ণমুদ্রা নষ্ট করণের ক্যা হে??থাউক না।নু টেনশন।হে হে।’
সেলুকাস চিৎকার করে, ‘চুত্ম্রানির পুলা গোলমান।অফ যা।মানবাধিকার লঙ্ঘন না কি বালছাল আছে।বুঝস কিছু??ট্যাকল দিবার পারবি??’
গোলমান ঘ্যাসঘ্যাস করে হাসে।

আলেকজান্ডারের অঙ্গুলিনির্দেশ দেখে সেলুকাস বোধ হয় স্বর্ণমুদ্রার বস্তার দিকেই যাচ্ছিল।
আলেকজান্ডার আহামরি সুরে পিছু ডাকল ‘সেলুকাস ঘটনা তো এইখানে শেষ না।’
সেলুকাস লাফ দিল, ‘মানে??আর কী করা সম্ভব প্রভু??’
গোলমান মুখ লুকায় হাসে।
আলেকজান্ডার ইতস্তত করতে করতে বলল,‘সেলুকাস,কিছু রমণীর চিৎকার ঘরের বাইরে চলে গিয়েছিল আর তাতেই বিপদ।কয়েকশ পুরুষ কোথা থেকে লাঠি সোঁটা কাস্তে দা নিয়া আমাদের পিছে ধাওয়া দিল।
সেলুকাস থামিয়ে দিল, ‘প্রভু পিলিজ আপনার কসম লাগে।বলেন যে আপনি তাড়া খেয়ে পালায় আসছেন।’
আলেকজান্ডার হাত তুলল, ‘কী যে বলো সেলুকাস!!ভাবতে পারো মহামতি আলেকজান্ডার এর বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ!!’
-‘মানে??’
-‘মানে!! ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যার‍্যা!!ঢ্যার‍্যার‍্যার‍্যার‍্যা!!ব্যাস।’

সেলুকাস কপালের ঘাম মুছিয়া বলিল, ‘এবার কয়টা??’
_____শ খানেক
সেলুকাস অনেক চেষ্টা করেও কিছু বলতে পারল না।
গোলমান মিয়া যথারীতি হাত কচলাইল, ‘হে হে হুজুর,নু টেনশন।হে হে।’
সেলুকাস আর পারল না সামলাইতে, ‘খাঙ্কির পুলা গোলমান,নু টেনশন কস।জেনোসাইড বুঝস??সামলাইতে পারবি এই ঠ্যালা??’
গোলমান খ্যাঁকখ্যাঁক করে হাসি দিয়ে পানের পিক ফেলে।

এমন সময় কোথা থেকে আরেক ভৃত্য এসে জানাইল,‘প্রভু,ওইদিকে ঐ বাগানবাড়ির পিছনের জঙ্গলের দিক থেকে শত শত লোকের মিছিল লাঠি সোটা নিয়ে এইদিকে আসছে।’
আলেকজান্ডার সেলুকাসের দিকে তাকাইল একবার।তারপরেই দৌড় শুরু।
কিন্তু দৌড় শুরু করতে লেট হয়ে গেছে।আলেকজান্ডার সেলুকাস কিছু বুঝে উঠার আগেই মিছিল সশব্দে তাদের সামনে এসে পড়ল।
উপায় বের করার আগেই জনসমুদ্র আরও কাছে এসে পড়ল।আর উপায় নাই।

মিছিল কাছে আসছে।হঠাত আলেকজান্ডার সেলুকাসের দিকে তাকাইল,দেখল সেলুকাস ও অবাক বিস্ময়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে ‘প্রভু,আমি এ কী শুনছি!!’ আলেকজান্ডারের কিছুই বিশ্বাস হয়না।
আলেকজান্ডারের বেশভূষা দেখেই মিছিলের জনতা তাকে চিনতে পেরেছে,আর যায় কোথায়!!

আলেকজান্ডারকে মাথায় তুলে মিছিলরত জনগণ সমস্বরে চেঁচায়,
“মহামতি আলেকজান্ডার,জিন্দাবাদ,জিন্দাবাদ।”
এ কী ভ্রম!!নাকি রসিকতা!!
এমন সময় গোলমান এসে হাত কচলায়, ‘হুজুর কইছিলাম না নু টেনশন!!পাবলিক আপনার লগে।হে হে।’
সেলুকাস আর আলেকজান্ডার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।

গোলমান পানের পিক ফেলে আশ্বস্ত করে, ‘হুজুর আপনার ভিক্টিম সব মালুপাড়ার মাল্লু।হে হে।মানবাধিকার লঙ্ঘন,জেনোসাইড,নারী অধিকার হরণ,গণতান্ত্রিক অধিকার লুণ্ঠন ওইগুলান হে হে, অইগুলান ওগো লগে করলে কুনো দুষ হয় না।হে হে।’

গোলমান খ্যাসখ্যাস করে হাসে,হাত চুলকাতে চুলকাতে জোর গলায় স্লোগান ধরে
‘কোপা মালান,বানা আফগান।’

কাক্কেশ্বর কুচকুচে


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

শিরোনাম এবং উদ্ধৃত লাইনগুলি শামসুর রাহমানের।মূল লেখার সাথে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে।এতসব দেখে শুনে দিনকয়েক ধরেই লাইনগুলি কেবল মাথায় ঘুরে ফিরে আসছে।লেখায় না দিয়ে পারলাম না।যদি মাথা থেকে বেরোয় তো বেরোক।ভাল্লাগেনা।

কাক্কেশ্বর কুচকুচে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক [ মন খারাপ ]

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

এক লহমা এর ছবি

মন খারাপ
চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়বার জন্য ধন্যবাদ হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।