অপমৃত্যু

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৩/০১/২০১৪ - ৩:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাত তিনটা বেজে গেছে, কিন্তু জাকির তখনো পাচ তলার ছাদে দাঁড়িয়ে আছে, চিন্তা করছে গত সন্ধ্যার কথা। অন্যান্য দিনের মত গত কালও সন্ধ্যার পরে সে জগদীশ রোডের কোণায় বাইক নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। চিন্তা করছিলো জুলহাসের কাছে বাকি পড়া টাকার কথা। গত কয়েক দিনে ছিনতাই করতে পারে নি সে, কিন্তু নেশা তো আর থেমে থাকেনি। বাকি টাকা দিতে না পারলে জুলহাস আর হেরোইন দিবে না বলে দিয়েছে, কিভাবে কি করা যায় চিন্তার সুতো ছিড়ে গিয়েছিল সামনে আসা রিকশাটি দেখে।রাস্তা খালি ছিলো, রিকশায় শুধু এক মহিলা, কোলে বাচ্চা। পাশের ব্যাগটার স্ট্র্যাপে হাত গলিয়ে বসেছিল মহিলা। দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো জাকির, এমন সোজা শিকার আর নাও পাওয়া যেতে পারে। বাইক ঘুরিয়ে রিকশার পিছে যেতে যেতে পিছনে একটা গাড়ির আলো দেখে বাইকের গতি বাড়িয়ে রিকশার পাশে চলে এসে নিপুণ হাতে বাজ পাখির ছো মারার মত ব্যাগটা নিয়ে নিয়েছিলো জাকির। কিন্তু হিসেবে দুইটা ভুল করেছিল সে, মহিলা ব্যাগটা বেশ শক্ত করেই ধরে রেখেছিল, তাই টানের চোটে মহিলা রিকশা থেকে পড়ে গিয়েছিলো। পিছনের গাড়িটাও রাস্তা ফাকা দেখে বেশ জোরেই আসছিলো, জাকিরের বেপরোয়া গতির চেয়ে কম, কিন্তু হতভম্ব মহিলার চিৎকার দিয়ে সরে যাবার জন্য বেশি। অ্যাক্সিডেন্টটা মুহুর্তের মধ্যেই হয়ে গেল। লোকজন কিছু বুঝে উঠার আগেই জাকির পালিয়ে গিয়েছিল।

হাতে সিগারেটের আগুন ছ্যাকা লাগায় হুশ হলো জাকিরের। বিরক্তিতে মুখ বাকালো সে, এতো ঝামেলা করলো যেই কারণে, ব্যাগটায় কিছু জামাকাপড় আর ওষুধ ছাড়া দামী কিছু বলতে গেলে ছিলোই না। বিড়বিড় করে গালি দিতে দিতে ছাদের অসমাপ্ত বাউন্ডারির উপর রাখা সিগারেটের প্যাকেটের দিকে হাত বাড়ালো সে। সিগারেট ধরিয়ে নিচে তাকিয়ে জাকিরের সমস্ত শরীর ভয়ে জমে গেল। পাচ তলা ছাদের কার্নিশে এক মহিলা দাঁড়ানো। মহিলার বিকৃত চেহারা যেটার সাথে গত সন্ধ্যার মহিলার চেহারা হুবহু মিলে যায় সেটা না, জাকিরের চোখ আটকে ছিলো দেয়াল বেয়ে বেয়ে উঠতে থাকা অদ্ভুত প্রাণীটার দিকে। যেটার ছোট ছোট হাত পা একটা শিশুর কথা মনে করিয়ে দেয়, কিন্তু চেহারাটা দেখে বোঝার উপায় নেই এটা একটা মানব শিশু। দেয়াল বেয়ে উঠতে থাকা শিশুটার ঠাণ্ডা হাত জাকিরের হাতের উপর পড়ায় জাকিরের সমস্ত শরীর কেপে উঠলো এক অবর্ণনীয় আতংকে। চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে সরে যাবার আগেই মহিলা হাত বাড়িয়ে জাকিরের গলা খামচে ধরলো। "আমাদের সাথে চল", মাত্র এইটুকুই শুনতে পেল জাকির মহিলার হেচকা টানে নিচে পড়ে যাবার আগে।

দুইদিন পরে পেপারের ভিতরের পাতায় এক কোণায় ছোট করে খবর এলো; "মাদকাসক্ত অবস্থায় ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু"।

আলভী মাহমুদ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো গল্পটা।

---এবিএম।

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

ভালো হয়েছে। আরো লিখুন।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। একরকম হুট করেই লিখেছি। মাথায় চিন্তা আসলো, সচল খোলা ছিলো, লিখে ফেললাম। আবার চিন্তা আসলে আবার লিখবো।

আলভী মাহমুদ

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অন্যকেউ এর ছবি

গল্পের পরিবেশটা পুরোপুরি তৈরি হয়ে ওঠে নাই মনে হোল। চরিত্রগুলো মনে কোনও রকম দাগ কাটা শুরু করার আগেই গল্প শেষ। হুট করে না লিখে বরং আরেকটু সময় নিয়ে ঘষামাজা করে লিখলে আপনারও ভালো লাগবে, আমরাও আরো ভালো গল্প আপনার লেখনী থেকে উপহার পাবো।

লিখতে থাকুন।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

এক লহমা এর ছবি

ভৌতিক গল্প জমানো এমনিতেই কঠিন, অণুগল্পে সেটা মনে হয়, আরো কঠিন হয়ে যায়।
হুট করে না লিখে একটু সময় নিয়ে লিখলে কেমন হয়?
ভাল থাকুন, লিখতে থাকুন।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

গান্ধর্বী এর ছবি

আরো লিখুন।

শুভকামনা

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

দীনহিন এর ছবি

অণুগল্পে যেমন চমক আশা করে পাঠক, তেমন কিন্তু পাওয়া যায়নি। গল্পের গন্তব্য কিছুটা আন্দাজ করা যাচ্ছিল। এতকিছুর পরও গল্পটি একেবারে ঠকায়নি, তার কারণ বোধহয় এর বর্ণনাভঙ্গি! বড় গল্পকারেরা যে ঢংয়ে গল্প বলে থাকেন, আপনিও সেভাবেই বলতে চেয়েছেন বা বলা ভাল, কিছুটা হলেও পেরেছেন।
সামনে নিশ্চয়ই ঢংয়ে-থিমে মিলিয়ে অনবদ্য গল্প আসবে আপনার হাত ধরে।

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।