যেখানে মেঘ করে পাহাড়কে আলিঙ্গন ( কলোরাডোর পথে পথে )

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৮/০১/২০১৪ - ১:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দিনটি ছিল আর দশটা ছুটির দিনের মতই ,পার্থক্য এবার ছুটিটি একটু লম্বা। মজার বিষয় বাংলাদেশে এই ছুটি পালিত হয মে মাসের প্রথম দিন যার উত্পত্তি স্থল আমেরিকার শিকাগো শহর। শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই দিনটি আমেরিকাতে পালিত হয় সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার। লং উইকেন্ড এ পুরো সপ্তাহের জমিয়ে রাখা কাজগুলা শেষ করব ভাবতে ভাবতে মধ্যাহ্ন ভোজ সারছিলাম ,হটাত ভাবলাম কোনো গন্তব্য স্থির না করে কোথাও চলে গেলে কেমন হয়। আমি এবং আমার স্বামী দুজনই ভ্রমনপিপাসু মানুষ, তাই আগেপিছে না ভেবে তখনই প্রয়োজনীয় ছোটখাটো জিনিস নিয়ে শুরু করলাম আমাদের গন্তব্যহীন যাত্রা।
চেনাপরিচিত শহর Colorado Springs এর মিষ্টি রোদকে পেছনে ফেলে আমাদের convertible টি ছুটে চলেছে Denver এর দিকে। Colorado স্টেট এর ক্যাপিটল এই শহরের ডাউনটাউন এর সুউচ্চ অট্টালিকার হাতছানি খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারেনি প্রকৃতিপ্রেমী আমাদেরকে। তাই ডেনভারে সময় নষ্ট না করে ছুটে চলি আমেরিকার অন্যতম সুন্দর হাইওয়ে I-70 ধরে Idaho Springs এর দিকে যেটি Denver থেকে ৩০ মাইল পশ্চিমে । উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে Colorado তে খুঁজে পাওয়া গুপ্ত স্বর্ণখনিকে কেন্দ্র করে ব্যব্সায়িক মানুষকে প্রথম আকৃষ্ট করেছিল ১৮৫৯ সনে প্রতিষ্ট্ঠিত এ শহর । স্বর্ণখনি অনেক আগেই ফুরিয়ে গিয়েছে| কিন্তু শহরটির আবেদন এডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের কাছে এতটুকুও কমেনি এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এখানকার স্রোতশ্বিনী নদীতে কায়াক এবং রাফটিংএর কারণে। এরপর আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৫৩০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ছোট্ট শহর Georgetown এ পৌছলাম।
Idaho Springs এর সমবয়সী এই শহরটি একসময় রুপোর খনির জন্যে ‘Silver queen of Colorado ' নামেও পরিচিত ছিল। মাত্র ১ বর্গমাইল আয়তনের ছবির মত সুন্দর এ শহরটির চারপাশ ঘিরে আছে উচু উচু সবুজের মায়ায় জড়ানো পাহাড় যার পাদদেশে সাজানো অনেকগুলো দেশলাই বাক্সের মত ছোট ছোট বাড়ি। বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট নদী 'Clear creek' । শান্তির খোজে আশা অনেক পর্যটকই এখানে আসেন এমন মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে নদীর ধারে বসে বই পড়ে আর মাছ ধরে অলস সময় কাটিয়ে দেবার জন্যে। এরপর আরো কিছু দূর এগিয়ে আমরা পৌছলাম Rocky Mountain National Park এ ।
এর অসাধারণ প্রকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আমরা গুনগুনিয়ে চললাম John Denver এর সেই বিখ্যাত গান এর লাইন
'But the colorado rocky mountain high
I've seen it rainin' fire in the sky
the shadow from the starlight is softer than a lullaby
rocky mountain high.'
Rocky mountain এর সৌন্দর্যের আবেশ মন থেকে যাবার আগেই আবার যে শহরটি মুগ্ধ করলো তার নাম Breckenridge। শহরটি শীতকালে স্কিইং এবং অন্যান্য সময় হাইকিং, রাফটিং, ফ্লাই ফিশিং, পাহাড়ে বাইকিং এর জন্য বিখ্যাত । ৯৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত শহরটির সৌন্দর্য ও দেখার মত। আমরা যখন এ শহরে পৌছলাম তখন আকাশে চলছে মেঘ আর সুর্যের লুকোচুরি খেলা,ফলাফল দূরের পাহাড়ে গা থেকে উঠে আসা সাতরঙ্গা ধনূ। নিচে বয়ে চলেছে ‘Blue River' এর নীল ঢেউ। সবুজ, নীল এবং রঙ্ধনূর মাঝে সদ্য বৃষ্টিতে ভেজা প্রকৃতি - আমাদের চারপাশে সে এক মায়াবী পরিবেশ। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে আমরা রওনা দিলাম আরেকটি সুন্দর শহর Vail এর পথে। এ শহর ঘিরে আছে White River National Forest । প্রতিবছর এখানে ভিড় জমান হাইকিং এবং স্কীং প্রেমী পর্যটকেরা। শহরটির বৈশিষ্ট হলো এটি পাহাড়ের বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত। সব চেয়ে উচু পাহাড়ের উচ্চতা ১১৫৭০ ফুট! এরপর Edwards নামক আরেকটি শহরে আমরা যাত্রাবিরতি দিলাম খাওয়াদাওয়া সেরে নেয়ার জন্যে। আমার প্রিয় ভিয়েতনামিস খাবার দিয়ে পেটপূজো সেরে আমরা যখন Grand Junction শহরটির পথে ছুটে চলেছি তখন চারিদিক আধারে ছেয়ে গিয়েছে। আমার তখন ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে। কিন্তু চারপাশে অদ্ভূত এক ভৌতিক পরিবেশ। রাস্তায় নেই কোনো আলো,অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার,আশেপাশে নেই একটিও গাড়ি। হাইওয়ের দুপাশে কালো কালো অনেক উচুতে উঠে যাওয়া পাহাড়ের ছায়াগুলো অশরীরি কোনো অস্তিত্ব মনে হচ্ছিলো। সিদ্ধান্ত হলো আজকের রাতটি এ শহরের কোনো হোটেলেই থেকে যাব। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরেই বেরিয়ে পড়লাম শহরটি ঘুরে দেখতে। এটি পশ্চিম কলোরাডোর সবচেয়ে বড়ো শহর। প্রতি বছর দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর বাইকার এখানে আসেন পাহাড়ে বাইকিং এর জন্যে। সকালের স্নিগ্ধ আলোতে দেখলাম রাতের আঁধারে যা দেখিনি-শহরের চারপাশে যে পাহাড়গুলো আছে যার নাম Grand Valley তা অন্যান্য পাহাড়ের তুলনায় একটু বেশী সুন্দর। দূর থেকে দেখলে মনে হয় কোন বাচ্চা মেয়ের পরে থাকা ফ্রক এর ঝুল। বাদামি রং এর এই পাহাড়ে কোনো গাছপালা নেই।

অবশেষে বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম। আস্তে আস্তে কিভাবে পাহাড়গুলো তার রং বদলাতে থাকে তা ছিলো দেখার মতো। বাদামি ফ্রক এর ঝুল কিভাবে যেনো একসময় সবুজ রং এর ফ্রক হয়ে গেলো। ওদিকে প্রকৃতি খেলে চলেছে আরেক লীলাখেলা। অনেক দূর থেকে দেখে মনে হয় রাস্তায় পানি জমে আছে, যতই কাছে যাই পানি আর পাওয়া যায় না। বুঝলাম সূর্যের তাপে রাস্তায় মরিচীকা দেখতে পাচ্ছি । ফেরার পথে Glenwood Springs নামের আরেকটি শহরে থামলাম। শহরটি ঘুরে বুঝলাম কেন ২০১১ সনে একে 'most fun town of America' এর খেতাব দেয়া হয়েছিলো। এ শহরে আছে স্কীং,বাইকিং,ফিশিং,রাফটিং,কায়াকিং,জীপ লাইনিং,গল্ফ খেলার সুব্যবস্থা। শহরের ৭ মাইল পূর্বে আছে 'Hanging Lake' যা পর্যটকদের কাছে খুব আকর্ষনীয় জায়গা।
ফেরার পথে চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছিলাম শুধু সবুজ আর সবুজ। কিন্তু এই সবুজ ছিলো আমার দেশ এর সবুজ। বৃষ্টি ভেজা জানালার কাচ নামিয়ে ঘ্রাণ নেবার চেষ্টা করলাম। যদি আমার প্রিয় দেশের বৃষ্টি ভেজা সোদা মাটির ঘ্রাণ পাওয়া যায়! চোখ মেললে ঘোর কাটে। নাহ! আমিতো তের হাজার কিলোমিটার দূরে, পৃথিবীর আরেক প্রান্তে। অসহায় দৃষ্টি চলে যায় অনেক দূরে যেখানে আকাশ নেমে এসে আলিঙ্গন করেছে সবুজ ফ্রক পরা মেয়েটিকে । মাথায় ঘুরতে থাকে প্রিয় গান এর সুর-
'আমারো দেশেরও মাটিরো গন্ধে ভরে আছে সারা মন
শ্যামলো কোমলো পরশো ছাড়া যে নেই কিছু প্রয়োজন' ...

shormin

ছবি: 
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন
24/08/2007 - 2:03পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাহ, কলোরাডোতে আরো দুইজন প্রকৃতিপ্রেমি পাওয়া গেলে তাহলে!

লেখাটা কিন্তু খুবই ছোট হয়ে গিয়েছে। এত তাড়াহুড়া না করলেও হতো। প্রত্যেকটি জায়গা নিয়েই হতে পারে একটি করে লেখা। সাথে ছবি।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ভ্রমণ কাহিনীর সাথে মাত্র দুটি ছবি! খুব বেশি কম হয়ে গেল!

শুভেচ্ছা হাসি

গৃহবাসী বাউল এর ছবি

১।
আপনাদের কনভার্টিবল আছে? অ্যাঁ ইয়াল্লা, আপ্নারা এত্তগুলা বড়লোক অ্যাঁ ?
২।
এত্তবড় রকি মাঊন্টেন নিয়ে এত্তটুকু ছোট্ট পোস্ট দিলে কি চলে?

৩।
আর ছবি মাত্র দুইটা? এইডা কিছু অইল?
৪।
সবকিছু নিয়ে এত তাড়াহুড়া কেন? এইটা তো আর থিসিস না যে কন্সাইজ করে লিখতে হবে মাগার ভিত্রে সব থাকতে হবে। যাত্রার মজাই তো পথে। আপনার চোখে দেখতে চাই আপনার যাত্রা এবং জার্নিকে।
৫।
সচলে স্বাগতম। আশাকরি নিয়মিত হবেন এবং ভ্রমন ছাড়াও আরো মজার মজার বিষয় নিয়ে লেখা দিবেন
৬।
রকি'স নিয়ে আরো দুই চারটি পর্ব ঝেড়ে ফেলুন দেখি। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

বাউল ভাইয়ের কমেন্টের সাথে পয়েন্টে পয়েন্টে একমত। হাসি

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

এক লহমা এর ছবি

উপরের সব কটি মন্তব্যের সাথে একমত। আর, বানান-এর দিকেও আরো নজর রাখতে অনুরোধ রাখছি। পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

সুন্দর কিন্তু ছোট লেখা। আরও কয়েকটা ছবি থাকলে দারুন লাগতো , আরেকটু কলোরাডো দেখা হত ।

মোহাম্মদ আনোয়ার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।