ক্রো ইন্সিডেন্ট

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১১/০৫/২০১৪ - ৩:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সূর্য ওঠার আগেই আমার দিনের শুরু। সকাল থেকেই কা কা করছি। তাই হয়ত মানুষ বলে কাক ডাকা ভোর। সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ীগুলো ডাস্টবিনের ময়লা পরিষ্কার করে শহরময় ময়লা ছড়াতে ছড়াতে ছুটে বেড়াচ্ছে। খাবারের অভাব নেই। তাই আমরা কাকদের আর অন্য ময়লা প্রেমী প্রাণীদের খুশীর সময় হলো এই ভোরবেলা। কুকুর বেড়াল খাবার শেয়ার করলে এতোটা খারাপ লাগেনা। কিন্তু যখন দেখি শালা মানুষের বাচ্চাও আমাদের সাথে খাবার শেয়ার করতে আসে তখন আর মাথা ঠিক থাকেনা। এই বাচ্চাগুলো আমাদের তাড়িয়ে দেয়। ডাস্টবিনের আশেপাশে ঘেষতে দেয়না। কেমনটা লাগে তখন। শালা, পুরা দুনিয়াটাই তোরা খাইলি। ডাস্টবিন আর অন্য আবর্জনা থেকে আমরা খাই, শালারা ওইখানেও ভাগ বসায়। এই জন্যই মানুষ আমি দুইচোখে দেখতে পারিনা।
চারদিন আগে আরামসে একটা টুকরো পাউরুটি খাইতেছিলাম হালিশহরের এক ডাস্টবিনে, এক মানুষ হারামজাদা এসে ঢিল ছুঁড়ে মারলো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। সেইদিন থেকেই মাথা খারাপ। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞাটা করে ফেললাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোনভাবে রেডি হয়ে অফিসে দৌড় লাগালাম। কিছু ডকুমেন্টস নিয়ে যেতে হবে আগ্রাবাদ। ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে এক আর্কিট্যাক্ট ফার্মে। মিটিং শেষ করতে অনেকটা সময় লাগলো। যাই হোক, সাকসেসফুল মিটিং, শেষ করে বন্ধু জেককের সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলতে সঙ্গত কারণেই আগালাম একটা টঙের দোকানের দিকে। দোকানের সামনে প্রচুর ভিড়। তাই একটু বাইরে দাঁড়িয়ে জেককের সাথে কথা বলা শেষ করতে চাইলাম। বলা নেই, কওয়া নেই হঠাত কয়েক ফোটা বৃষ্টি অনুভব করলাম। বিশেষ করে বেশ বড় একটা ফোটা পড়লো কাঁধে। তাকিয়ে দেখি সাদা কালো রঙের বৃষ্টি। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তারের উপর একটা কাক বসা। মনে হলো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। রাগে বন্ধু জেককের মা বাপের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ফোন রেখে মনকে সান্ত্বনা দিলাম, যাক মাথাটাতো বাঁচছে। দোকানির কাছ থেকে একটাকায় একগ্লাস ফিল্টার পানি আর আট টাকায় এক প্যাকেট পকেট টিস্যু কিনে কোনভাবে কাঁধের নোংরা জায়গাটা ধুয়ে নিলাম। একটু হলেও স্বস্তি লাগছিলো, যাক আর দেখা যাচ্ছেনা।

ধুরশালার! একটা মোক্ষম সুযোগের জন্য গত চারদিন ধরে ঘুরতেছি, মানে উড়তেছি। সেইদিন সেই ঢিলের তাড়া খাওয়ার পর থেকেই প্রতিজ্ঞা করছিলাম। শালা, মানুষের বাচ্চার মাথার উপর যদি চারদিনের জমানো হাগা না হাগছি, আমি কাওয়াই না। কিন্তু এই শালার মাথাটা নীচ বরাবর আসতেই ছাড়লাম কিছু, বাতাসে নিয়া ফেললো কাঁধে। শালা, বুঝবার আগেই আবার ছাড়লাম পড়লো পিঠে। লাকটাই খারাপ। চারদিন ধরে জমায় রাখলাম, দুই দুইবার ট্রাই লাগালাম, মাথায় ফেলতে পারলাম না, আফসোস!
কাক সমাজে মানুষের মাথায় হাগার উপর বিশেষ ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে। আমি সেই ট্রেনিং নিছি দুইবার। টাইমিং, পদার্থের পরিমাণ সবকিছু ঠিকই ছিল, শুধু এরো ডায়নামিক হলো না। বাতাসটা ডিস্টার্ব দিলো। না হলে ঠিকই মাথাতেই পড়তো। মানুষের মাথায় হাগার জন্য যে রেংকিং আছে কাক সমাজে সেখানে আমার অবস্থান খুব নিচের দিকে। তাই পরিবার আর বন্ধুদের কাছে সবসময় অপদস্ত হতে হয়। ভাবছিলাম আজকে রেংকিংটা একটু উপর দিকে তুলতে পারবো। হলো না, নেভার মাইন্ড!

সার্টটা কাঁধের দিকে একটু ভিজে আছে। সমস্যা নাই, একটু ভেজা দেখা যাচ্ছে, মানুষ ভাববে ঘাম। টং দোকানে এক কাপ চা খেয়ে সোজা হাঁটা দিলাম। কেমন যেন একটা গন্ধ পাচ্ছি। বুঝতে পারছিনা, কোন জায়গা থেকে আসছে? নাকটা ভেজা কাঁধের দিকে ঘোরালাম। না, গন্ধটা অন্য পাশ থেকে আসছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না, সামনে তিনটা সুন্দরী মেয়ে ছাড়া। পকেট থেকে সানগ্লাসটা বের করে জোরে হাঁটা শুরু করলাম। মেয়েগুলোকে ক্রস করে গেলাম খুব ভাব নিয়ে। কিন্তু যেই মেয়েগুলোর সামনে দিয়ে হাঁটছি, ওরা এমন উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলো, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। মনে মনে ভাবছি, পাগল নাকি মেয়েগুলা?
যাক, সামনেই এ,জে সেন্টারে ঢুকে গেলাম বন্ধু কামরানের সাথে দেখা করবো বলে। যেই লিফটের সামনে গিয়ে লিফটের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি, হঠাত চোখ চলে গেল প্রতিবিম্বে। নিজেকে দেখছিলাম, আর আবিষ্কার করলাম সার্টের পিছনে বিশাল কালোসাদা দাগ। বুঝতে আর বাকি রইলো না বিদঘুটে গন্ধের কারণ, আর তিন সুন্দরীর হাসির রহস্য। বন্ধু কামরানের অফিসে মোটামুটি সার্ট খুলে ধুতে হলো। ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায়। ফেরার পথে ভাবছিলাম একটা কাওয়া এতগুলা কেমনে হাগলো? শালা, চারদিন হাগেনায় মনে হয়। বাসায় ফিরে গোসল করে আর আমার অফিসে যাওয়া হয়নি। একটা কাক আমাকে হাফবেলা অফিস ছুটি দিয়ে দিল।

-mushfix


মন্তব্য

দীনহিন এর ছবি

কিন্তু যখন দেখি শালা মানুষের বাচ্চাও আমাদের সাথে খাবার শেয়ার করতে আসে তখন আর মাথা ঠিক থাকেনা।/শালা, পুরা দুনিয়াটাই তোরা খাইলি।

শক্তিশালী!
'ক্রো ইন্সিডেন্ট' বহুত আচ্ছা হয়েছে!
দারুণ, দারুণ লেগেছে- রম্য, রোমান্স, আর কোইন্সিডেন্স ! যদিও শেষ পর্যন্ত ধরা যায়নি গল্পের এসেন্স!
তবে লেখার স্টাইল আরও এক তারকা সচলের জন্ম বার্তা দিচ্ছে!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ।

সুবোধ অবোধ এর ছবি

লেখার প্যাটার্ন ভাল্লাগছে। চালিয়ে যান। চলুক

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ট্যাগে প্রৌঢ় কেন বুঝলাম না, এই লেখা পড়তে হইলে প্রৌঢ় হইতে হবে?

লেখা চলুক।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই, ট্যাগটা না বুঝে দিছি। এই প্রথম কোন ব্লগে লেখা দিলাম। ক্ষমা করবেন।
ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

এই লাইনটা বেশ পছন্দ হয়েছে---

""কিন্তু যখন দেখি শালা মানুষের বাচ্চাও আমাদের সাথে খাবার শেয়ার করতে আসে তখন আর মাথা ঠিক থাকেনা। এই বাচ্চাগুলো আমাদের তাড়িয়ে দেয়। ডাস্টবিনের আশেপাশে ঘেষতে দেয়না। কেমনটা লাগে তখন। শালা, পুরা দুনিয়াটাই তোরা খাইলি। ডাস্টবিন আর অন্য আবর্জনা থেকে আমরা খাই, শালারা ওইখানেও ভাগ বসায়। এই জন্যই মানুষ আমি দুইচোখে দেখতে পারিনা।""

তবে এ লাইনটায় খটকা লাগল-

"ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায়। ফেরার পথে ভাবছিলাম একটা কাওয়া এতগুলা কেমনে হাগলো? শালা, চারদিন হাগেনায় মনে হয়।"

(লোকটি কি করে অনুমান করল যে কাক মহাশয় চারদিন হাগে না??? লাইনটা এমন হলেও হতে পারত---

''ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায়। ফেরার পথে ভাবলাম একটা কাউয়া হাগে তো হাগে, তাই বইলা এত্তগুলা? কয়দিন ধইরা যে হাগে না শালায়, কে জানে/আল্লাহ মালুম।''

এছাড়াও গল্পে কাল জনিত ভুল লক্ষ করলাম।। যেমন --
*মনে মনে ভাবছি, পাগল নাকি মেয়েগুলা?
কিন্তু, এখানে--

ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায়। ফেরার পথে ভাবছিলাম ।।।

(ভাল লাগল।।। তবে চাহিদা পূরণ হল না) মন খারাপ

কঠিন সমালোচনা আপনার জন্য উপকারী।।। রাগ করবেন না।।। দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------
---- সোহেল মাহামুদ 0অতি ক্ষুদ্র একজন0
-----------------------------------------------

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়ার জন্য এবং কঠিন সমালোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ....

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

কাহিনি চয়ন সুন্দর। তবে লেখার মান আরো ভালো হবে আশা করি। লিখতে থাকুন।

____________________________

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই নতুন লেখা শুরু করেছি, ভুলভ্রান্তি মাফ করবেন। সামনে ভাল লেখার চেষ্টা করব।
ধন্যবাদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।