কেন এসেছিলেন এই দেশে?

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ২৭/০২/২০১৫ - ৩:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'আচ্ছা, বন্যাপা, আপনি এই ফেব্রুয়ারি মাসটা বাংলাদেশকে মিস করেন না?'
'হ্যাঁ, ভাই, ভীষণ মিস্‌ করি! আমাদের মেয়ে এতদিন স্কুলে ছিল দেখে এ সময়ে দেশে যেতে পারতাম না।'

২০১২ সালেও এসেছিলেন অভিজিৎ-দা। তখন বন্যাপা ছিলেন না। এরপর তো বন্যাপার ক্যানসার জয়ের গল্প। এরপর দেশে গণজাগরণ। এবং সেই জাগরণের মুখে অস্তিত্ব সংকটে পড়া মৌলবাদীদের প্রধান বলি ব্লগার নামক এক প্রকার জীব, যারা শুধু কলমের নিখুঁত আঁচড়ে জন্ম দিয়েছিল একাত্তরের পরের এ দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পকর্মটির!

মৌলবাদীদের খুশী করতে সরকারও এক সময় ব্লগার নির্যাতন শুরু করলে বাংলা ব্লগস্ফিয়ার যেন হোঁচট খেল, কেউ কেউ নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিল, কিন্তু চলতেই থাকল অভিজিৎ-দার কলম। কখনো কখনো একদম একাই তাকে লড়তে দেখা গেল। দেশে-বিদেশে চলতে লাগল তার বিরামহীন আন্দোলন, সবকিছু শুধু একটি 'মুক্তমনা বাংলাদেশ' দেখে যাবার জন্য!

অভিজিৎ-দা ধর্মের ক্ষতগুলি নিয়ে লিখতেন, কিন্তু 'ধার্মিক-বিদ্বেষী' ছিলেন না। আস্তিক-নাস্তিক সবার প্রতি ছিল তার সীমাহীন ভালবাসা। তিনি তো মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করছেন, তাহলে কেন তিনি একজন মানুষকে ঘৃণা করবেন, হউক না সে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ! তার যুদ্ধ তো মানুষের বিরুদ্ধে নয়, মানুষের উগ্র বিশ্বাস ও তা থেকে জন্ম নেয়া হিংসার বিরুদ্ধে!

অভিজিৎদার যাদুকরী লেখার হাত রাতারাতি তাকে জনপ্রিয় করে তুলল দেশের নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মাঝে! আমেরিকায় ভাল চাকুরী এবং দেশে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লিখে বেশ চালিয়ে নিতে পারতেন তিনি। তবু একটি যুদ্ধ চালিয়ে গেলেন তিনি, মুক্ত বুদ্ধি ও যুক্তির যে আন্দোলন তিনি সূচনা করলেন এই দেশে, তা তৈরী করতে লাগল দলে দলে অনুরাগী, অনুসারী। আর তাতেই পিলে চমকাতে লাগল মৌলবাদীদের!

তো সেই আন্দোলনে কখনো কখনো এক রকম একাই লড়তে হয়েছিল তাকে। এবং তাকে করেছিল মৌলবাদীদের প্রধান টার্গেটে। মৌলবাদীদের একটি ভীষণ গুন রয়েছে, তারা সবসময় অ্যালার্ট দেয়, তারা সংকেত দেয়, অভিজিৎদাকেও দিয়েছিল। একবার নয়, বহুবার।

তাহলে কেন এসেছিলেন তিনি বাংলাদেশে? কেন এসেছিলেন বন্যাদি? এত এত মুক্তমনা মানুষের হত্যা নিয়ে তারাই তো ছিলেন সবচেয়ে সরব, তাহলে কি তারা জানতেন না, তারাও হতে পারেন টার্গেট???

বসন্তের মাতাল হাওয়া, একুশের আকুল আহবান, বইয়ের পাগল করা গন্ধ, প্রিয় মানুষদের সাথে উষ্ণ সময়- এসব তো রয়েছে। কিন্তু তারপরও একটুও কি মাথায় আসেনি টার্গেট হতে পারেন?

আসলে দেশটা ভরে গিয়েছে বদ্ধ-মস্তিষ্কের মানুষে, যারা যেকোনো মৌলবাদী লম্প-ঝম্পেই চিন্তার কবাটে তালা লাগিয়ে বসে থাকেন, সত্যিকারের মুক্তমনা মানুষেরা কখনই যা করেন না। তাহলে অভিজিৎ-দা এত এত মৃত্যু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে এসেছিলেন কি এই শেখাতে যে, আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই, কবাটগুলো এখন খোলার সময় এসেছে, নইলে জীবন্ত কবর হবে সবার, লুপ্ত হবে এই জনপদ, এর সভ্যতা?

'দেশের শিরদাঁড়াটা বেঁকে গেছে,
মানুষ আলো-কে বিদায় দিয়েছে অনেক দিন
এক অদ্ভুত শূন্যতার জালে মানুষ ঢাকা।/
রাস্তার খোয়ায় খোয়ায় শোকের টুকরো।/
কী লিখব? কলমে শুধু অন্ধকার গড়িয়ে পড়ে।' (সত্যের শবযাত্রা, দিনেশ দাস)

।।।।।।।।।।।।।।।
অন্ধকূপ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

এখন আমাদের বের হওয়ার সময়

স্বয়ম

অতিথি লেখক এর ছবি

যারপরনাই মর্মাহত অভিজিতের হত্যয় । একই রকম মর্মাহত ঐ সব অভিজিৎদের জন্য যারা পেট্রোল বোমায় প্রতিদিন নিহত হচ্ছে। অভিজিতের হত্যাকারী পিচাশরা, ঐসব হত্যার পিচাশরা আর সারা বিশ্বব্যাপী প্রগতির উপর আঘাতকারী পিচাশগুলো একই অন্ধকার জগতের বাসিন্দা।
এ শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমরা যদি একটি বড় রকমের প্রতিবাদ করতে পারি, যদি গড়ে তুলতে পারি আগেরটির চেয়ে দ্বিগুন বড় এক গণজাগরণ মঞ্চ তাহলেই অভিজিতের রক্ত স্বার্থক হবে।

- পামাআলে

অতিথি লেখক এর ছবি

অসহ্য লাগছে সবকিছু। আসলেই বন্ধ কবাটগুলো খুলে বেরোনোর সময় এই।

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

টার্গেট তো অভিজিতদা রা না , টার্গেট হলো হুমায়ুন আজাদ। হুমায়ুন আজাদ হাজারো অভিজিত হয়ে জন্ম নেয় আর ওরা ভয়ে খুন করে।এই বুঝি এলো হুমায়ুন আজাদ ,এই বুঝি এলো হুমায়ুন আজাদ ,!

-----------------------
রাধাকান্ত

মেঘলা মানুষ এর ছবি

অনলাইনে ঝড়, চারদিকে উত্তপ্ত আলোচনা -এসবের মাঝে খালি বার বার মনে হয় যারা এই কাজটা করল তাদের মনোজগতটা কেমন? একবারও তাদের মনে হয় নি/ হয় না এটা করা ঠিক না?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।