বুলফাইটঃ বাংলাদেশী স্টাইল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২৬/০৯/২০১৫ - ২:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোটবেলায় ডায়রি লিখতাম। সে ক্লাস নাইনের কথা। আবারও ডায়রি লিখা শুরু করি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর। টানা ৪ বছর ধরে ডায়রি লিখেছি। এরপর কি যেন হয়ে গেল, আর লেখার তাড়না কিংবা প্রেরণা কোনটাই আসে নি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসে পুরাতন বইপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে আচমকা ডায়রি ৩ টা চোখে পড়ল। নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হতে সময় লাগলো না। ডায়রির পাতা উল্টাচ্ছিলাম আর অতীতে ফিরে যাচ্ছিলাম বার বার। ক্লাস নাইনের ডায়রির একদম শেষ পৃষ্ঠায় ইচ্ছাপূরণের মহাকাব্য পুরাতন বলপয়েন্টের কালিতে ঝকঝক করছে। এই ইচ্ছাপূরণের মহাকাব্য হচ্ছে আমার বেশ কিছু শখ যা মৃত্যুর আগে করে যেতে চাই। বেশ কিছু শখ ইতোমধ্যে পূরণ হলেও সিংহভাগই এখনও অপূর্ণ আছে। শখগুলোর মাঝে অন্যতম ছিল স্পেনের বুলফাইট দেখা। ইচ্ছেটা প্রকট হয়েছিল মাসুদ রানা সিরিজের জিপসি বইটা পড়ে। বিশালদর্শন ষাঁড় মাসুদ রানা'কে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়ার জন্য গুঁতো মারছে আর মাসুদ রানা গড়ান দিয়ে কোনক্রমে প্রাণ বাঁচাচ্ছে। সে কি ক্লাইম্যাক্স রে বাবা।

এখনও যেহেতু দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে নি, তাই আদৌ কোনোদিন স্পেন যেতে পারব কি না জানি না। দুধের স্বাদ ঘোলেই মেটানোর জন্য তাই বাংলাদেশী বুলফাইটের গপ্পো শোনাই আপনাদের। এই বুলফাইট আমার নিজের চোখে দেখা। ছবির সাথে সাথে ভিডিও আপলোড করে দিয়েছি যেন পূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করতে আপনাদের অসুবিধা না হয়।

গত রোজার ঈদের কথা। আমার দাদা’র বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল থানার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের আড়াইউড়া গ্রামে। কিশোরগঞ্জ শহরেই বড় হয়েছি। গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় খুব কম। চাকরি নিয়ে ঢাকাবাসী হওয়ার পর থেকে সেই পরিমাণ আরও কমেছে। দুই ঈদে চাচাত ভাইয়েরা বাড়ি আসে বলে সাধারনত ইদেই বাড়ি যাওয়া হয়। ঈদ পরবর্তী গ্রামীণ বিনোদনের অনেক গল্প আমরা শুনে থাকলেও বর্তমান ব্যস্ত সময়ে বিনোদনের প্রতি সাধারণের আগ্রহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। কে চায় বাসায় টেলিভিশন রেখে রোদ বৃষ্টিতে বিনোদনের পিছনে দৌড়াতে। তারপরেও কিছু কিছু অনুষ্ঠান যে একদমই হয় না তা নয়। তবে সেটা যতটুকু না আয়োজন করে, তারথেকেও বেশি হঠাত করে বিনা নোটিশেই হয়। এই যেমন এইবারে ষাঁড়ের লড়াই। দুই বন্ধুর টাকা-পয়সা নিয়ে ঝগড়া, সেখান থেকে বাজি, সেখান থেকে মীমাংসা হল দুইজনের ষাঁড়ের লড়াই হবে। যার ষাঁড় জিতবে সেই টাকা পাবে। ডিনামাইটের স্টিকে আগুন লাগলে সেটা ফাটবেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আশেপাশে রটে গেল এই বাজির কাহিনী। ব্যস, মিনিট বিশেকের মধ্যেই আরও ৩ জন প্রতিযোগীর আগমন ঘটল লড়াইয়ের ময়দানে। আমরাও সোৎসাহে লুঙ্গি কাছা মেরে (আমি লুঙ্গি পড়ি নি, তাই পাঞ্জাবি কাছা মেরে বসে গেলাম বলাটা কি ঠিক হবে?) বসে গেলাম লড়াই দেখতে। স্পেনের বুলফাইট নাই বা দেখতে পারলাম, বাংলাদেশী বুলফাইট দেখেই না হয় আঁশ মেটাই।

প্রথমেই আপনাদের সাথে প্রতিযোগীদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।

প্রথম লড়াইটা হয়েছিল এই দুই ষাঁড়ের মধ্যে। ২ নম্বর ষাঁড়টি লড়াইতে টিকে থাকতে পারে নি। ১ নম্বর ষাঁড়ের মালিক যখন সেইরকম ভাব নিচ্ছিল তখন গাছপালা ভেঙে ৩ নম্বর ষাঁড়ের আগমন।

বীর বিক্রমে সে এগিয়ে চলল লড়াইয়ের ময়দানে। প্রথম লড়াইয়ে বিজয়ী ষাঁড়ও প্রস্তুত। অবশ্য ষাঁড়ের থেকে ষাঁড়ের মালিকের ভাব ছিল বেশি। এমনভাবে সিগারেট ফুঁকছিল যেন সে জেমস বন্ড।

লড়াইয়ের আগে কিছু পরিচর্যা চলছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে দুই মালিককেই দেখলাম ষাঁড়ের কানে কানে কি যেন বলছে। সম্ভবত টিপস দিচ্ছিল কিভাবে লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যায়।

অবশেষে লড়াই হল শুরু।

লড়াই দেখার জন্য দর্শকের অভাব ছিল না। আজকাল সেলফির যুগে কেউ কি আর ছবি তুলতে ছাড়ে? সেই সাথে স্থানীয়ভাবেই বাজি ধরাধরি চলছিল।

লড়াই দুই মিনিটের মত স্থায়ী হয়েছিল। প্রথমবার যেই ষাঁড় বিজয়ী হয়েছিল শেষ লড়াইতে সেটি হেরে যায়। জেমস বন্ড মার্কা চুরুট ফোঁকাও মালিকের বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কত টাকার বাজি ছিল সেটা না জানলেও, পকেট থেকে টাকা খসলে যে কেউই পছন্দ করে না সেটা মালিকের মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম। তার নিজের ষাঁড় যখন হেরে পালাচ্ছিল তখন বেচারার মুখ দিয়ে যে হারে গালিগালাজ বের হচ্ছিল তা শুনলে কবর থেকে মৃত ব্যক্তিও উঠে বসতে বাধ্য।

ষাঁড়ের লড়াই কি আর ছবিতে দেখলে আঁশ মিটে? ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওটা এইখান (বুলফাইটঃ বাংলাদেশী স্টাইল) থেকে দেখে নিন। Bangladeshi Bull Fight লিখে সার্চ দিলে আরও অনেক ভিডিও পাবেন যেগুলোর ভিডিও কোয়ালিটি আমারটা থেকেও ভাল। সেগুলোও দেখতে পারেন। ঈদ আশা করি সবাই ভালই কাটাচ্ছেন। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক


মন্তব্য

সৈকত চৌধুরী  এর ছবি

ষাড়দের দিয়ে লড়াই করানো অত্যন্ত অমানবিক এবং নোংরা একটি কাজ। একে কোনোভাবেই উৎসাহিত করবেন না। ষাড়ের লড়াইয়ে প্রতিটি ষাড় কমবেশি আহত হয়। অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক আহত হয় এমনকি মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সামান্য বিনোদনের জন্য প্রাণীদের সাথে এ আচরণ বিকৃত রুচির পরিচায়ক।

অতিথি লেখক এর ছবি

রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটলে এই পোস্ট আমি দিতাম না। এখানে প্রতিটা লড়াই ১ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ষাঁড়ের মালিকেরা নিজেদের প্রাণীর মঙ্গলের স্বার্থেই লড়াই খুব বেশিদূর এগোতে দেন নি। তাই এখানে বিনোদনের মাত্রাই বেশি ছিল এবং আমি এই বিনোদনটাকেই উপস্থাপন করতে চেয়েছি। আপনি যেটা বলেছেন সেটাও ভুল নয়। তবে আমার পোস্টের মাধ্যমে বুলফাইট উৎসাহিত হবে বলে মনে হয় না। কারণ, এই ষাঁড়ের লড়াই এর আয়োজক স্থানীয় লোকজন, আমরা পাঠকেরা নই। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

মেফিস্টো  এর ছবি

মুশকিল হচ্ছে আপনার ক্ষেত্রে গরুগুলোর কিছু হয়নি। কিন্তু সাধারনত হয়। সুতরাং এই সব থেকে দুরে থাকাই ভালো।

সাফি এর ছবি

এগুলো তো সাধারণ পালিত গরু/ষাড়, এদের দিয়ে যে এরকম লড়াই করায় এইটাই জানতাম না।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি নিজেই সেটা জানতাম না।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

আলতাইর এর ছবি

দুইটা ষাঁড় কিংবা দুইটা পাঁঠা অথবা দুইটা মনুষ্যজাত বলদ একসাথে হইলেই ঠোকাঠুকি লাগবে। এই সব ক্ষেত্রে মুরুব্বীদেরকেই সার্কিট ব্রেকারের দায়িত্ব নিতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা, ভালো বলেছেন।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।