স্বপ্নবড়ি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১২/০৮/২০১৬ - ৪:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এটা একটা ঘুমে পাওয়া গল্প; স্বপ্নে পাওয়া বলবনা কারণ সেরাতে ঘুম আর স্বপ্নের মাঝে আমি একটা রেলপথ বিছানো রাস্তা দেখেছিলাম, চারিদিকে পাথর ঘেরা। এই রেলপথে যে ট্রেনটা চলে সেটা দেখতে অনেকটা শাহবাগের শিশু পার্কের দু’পাশ খোলা ট্রেনের মত যাতে লম্বা প্লাস্টিকের বেঞ্চ বসানো থাকে। আমি দেখলাম যে স্বপ্নের ট্রেনের জন্য আমি অপেক্ষা করছি প্ল্যাটফর্মে। ট্রেন ছাড়ার সময় পার হয়ে গেছে বেশ অনেক্ষণ কিন্তু ট্রেনের দেখা নেই। আশেপাশের অন্যান্য অপেক্ষমান যাত্রীদের মধ্যে বিরক্তির গুঞ্জন। একজন সিনিয়র সিটিজেন অপেক্ষা করছেন একজন অল্পবয়েসী তরুণীকে সাথে নিয়ে। বিরক্তিতে ফোঁস ফোঁস শব্দ করার সময় তাঁর ভুঁড়ি হাল্কাভাবে কেঁপে ঊঠছে কিছুক্ষণ পর পর। তিনি তরুণীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই তোমার ড্রীমট্রেন? দেরী যে হচ্ছে তার কোন এ্যানাউন্সমেন্ট পর্যন্ত নেই।” আমি মুখ ঘুরিয়ে উল্টো দিকে তাকাই। অনেক দূর পর্যন্ত ট্রেন লাইন বিছিয়ে আছে লম্বা মইয়ের মত; যেন কেউ মই উঁচিয়ে আকাশে উঠতে গিয়ে তাল হারিয়ে পড়ে গ্যাছে-মইটা এলোমেলো পড়ে আছে টুকরো টুকরো চুনাপাথর চারপাশে ছড়িয়ে।

যেদিকে তাকিয়ে আছি তার উল্টো দিক থেকে কেউ একজন হেঁটে আসার শব্দ পেলাম। মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই একটা লোক লম্বা কুর্ণিস করল। লোকটা দেখতে অনেকটা সার্কাসের ভাঁড়ের মতঃ ঢোলা রাম্পার স্যুট, মাথায় রঙিন কোঁকড়ানো চুল, রং মাখানো পাতলা ঠোঁট, রক্তাভ চেরী ফলের মত নিখুঁত জ্যামিতিক নাক। গালের উপর পোলকা ডটেড টোলটা আরও বিস্তৃত করে সে বলে, “জনাব যাওয়ার আগে একটা স্বপ্নবড়ি লইয়া যান। দাম মাত্র দশ টাকা।“
“স্বপ্নবড়ি মানে?”
“আপনে তো কবি। কবিতা লিখতে পারতেসেন না কয়দিন ধইরা। লইয়া যান একখান স্বপ্নবড়ি। বৃষ্টির পানি দিয়া খাইলে উপকার বেশী পাইবেন। বড়ির লগে পানি ফিরি।”
স্বাভাবিকভাবেই বেশ অবাক হলামঃ আমার সম্পর্কে এই ভাঁড় এত কথা জানল কীভাবে? বিষ্ময় চেপে বললাম-
“স্বপ্নবড়ি কী সেটা কিন্তু বললেন না। আর আপনিই বা কে?”
“এইটা জনাব খাঁটি জিনিষ। কাঁচা চান্দের আলো আর সাতরকম ফুলের বাস দিয়া এই বড়ি তৈয়ার হয়। এত সস্তায় এই বড়ি পাইবেন না জনাব। একটা নিয়া খাইয়া দ্যাখেন।
“কী! চাঁদের আলো আর ফুলের গন্ধ দিয়ে তৈরী মানে কী? ফাইজলামি করেন?”
“ফাইজলামি করিনা জনাব। আপনে কবি। চিন্তা কইরা দ্যাখেন আপনি যদি শব্দ দিয়া কবিতা ল্যাখেন আর সেইটারে বই বানাইয়া বাজারে বেচেন। তাইলে আমি চান্দের আলো আর ফুলের বাস দিয়া বড়ি বানাইয়া বেচতে পারুম না ক্যান, জনাব?
“কিন্তু আপনার ব্যবহার করা কাঁচামাল তো বিমূর্ত মানে ধরা যায় না”
“জনাব শব্দও তো একোই ব্যাপার। শব্দ হাত দিয়া ধইরা কেউ কচকচ কইরা খাইসে এইডা হুনছেন কোনদিন?”
আমি বেশ ভড়কে গেলাম। যা বলছে কথা ঠিক। চাঁদের আলো, ফুলের গন্ধ আর শব্দ সবই তো বিমূর্ত। শেষেরটাকে যদি কাগজে ধরা যায় তাহলে প্রথম দুইটাকে বড়ি আকারে কেন যাবে না? মাই গড! এই ব্যাটা নিশ্চয়ই ছদ্মবেশী যাদুকর।
আমি আমার বিষ্ময় চেপে ঘোড়েল ক্রেতার মত বললাম, “কিন্তু দশ টাকা তো অনেক বেশী। পাঁচ টাকায় হলে...
“জনাব এক দাম” ভাবলেশহীন মুখে বলল স্বপ্নবড়িওয়ালা।
দাম মিটিয়ে বড়িটা নাড়াচাড়া করতে থাকি। জিনিষটা দেখতে দারুণ, রাস্তার ধারে বিক্রি করা বড় বিদেশী বাদামগুলোর মত যেগুলোতে ৩ থেথে ৪ টা বাদাম থাকে। কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে মাঝখানে চাপ দিতেই ‘ট্রিপ’ শব্দ করে খোসাটা দুই পাশে সরে গেল। ভেতরে দুইটা গোল বেয়ারিং বলের মত জিনিষ। নীলাভ সাদা রং। খাওয়ার নিয়মাবলী জানতে মুখ তুলে দেখি বড়িওয়ালা নেই। হঠাৎ চোখে পড়ল আমার ব্যাগের পাশে একটা অদ্ভুত কাঠের বোতল। হাতে নিয়ে দেখি পেন্সিল দিয়ে লেখা, “বিশুদ্ধ বৃষ্টিজল”। চকিতে মনে পড়ল যে বড়িওয়ালা আমাকে বড়িটা বৃষ্টির পানি দিয়ে খেতে বলেছিল।
এদিকে যাত্রীরা ট্রেনে ওঠা নিয়ে ধুন্দুমার লাগিয়ে দিয়েছে। নির্দিষ্ট কোন ওঠার জায়গা বা দরজা না থাকায় যে যেখান দিয়ে পারছে উঠছে। হঠাৎ দেখলাম সেই সিনিয়র সিটিজেনের সাথের তরুণীটি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কাছে এসে সে খুব সাবলীল ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কী ড্রীমট্রেনের যাত্রী?” আমি কোন উত্তর দেবার আগেই তরুণী দ্রুত বলে গেল, “আপনি প্লীজ আমার হাসব্যাণ্ডের পাশের সীটে বসবেন। সীট রাখা আছে।”
“কিন্তু কেন? আর তাছাড়া আপনি তাহলে কোথায় বসবেন?”
“আমি আসলে যাচ্ছিনা ওর সাথে। তবে...এটা ও এখনো জানে না”
কথোপকথনের এই পর্যায়ে সুঠামদেহী দীর্ঘ এক যুবকের উদয়; যেন আকাশ ফুঁড়ে হাল্কাভাবে মাটিতে পা রেখেই তরুণীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আসা মাত্রই সে তাড়া দিল, “কী হল চলো। আমার উইন্ডকার দাঁড়িয়ে আছে। ড্রাইভার তাড়া দিচ্ছে। ভাড়ার গাড়ী তো”।
তরুণী যুবকটিকে দেখিয়ে বলল, “আমরা চলে যাচ্ছি আকাশের ওপারের একটা স্টেশনে। ঐ বুড়ো ভামটা আমাকে টাকার জোরে বিয়ে করেছে। আমিও রাজি হয়েছি; ভেবেছি বাকীটা জীবন খুব স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যাবে। কিন্তু একটা বুড়োর সাথে আসলে...”
এ সময় ট্রেনের হুইসেল বেজে ওঠে। ওরা হাত ধরাধরি করে চলে গেল। সিনিয়র সিটিজেনের জন্য আমার করুণা, মমতা, রাগ আর দীর্ঘশ্বাস মাখা একটা মিশ্র অনুভূতি হল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে উনার পাশে বসব না। আর এই সিদ্ধান্তের সাথে সাথে ড্রীমট্রেনে চড়ার ইচ্ছেটাই মরে গেল-একটা দমকা বাতাসের মত প্রবল অনুৎসাহ গ্রাস করল আমাকে।
দুলে উঠল ড্রীমট্রেন। সিনিয়র সিটিজেন ভদ্রলোক তাঁর আসন থেকে উঠে অসহায় ভাবে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন। নিশ্চয়ই তাঁর স্ত্রীকে খুঁজছেন। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
ট্রেনটা চলতে শুরু করেছে। যাত্রীদের মধ্যে একটা হুল্লোড় ছড়িয়ে পড়ল-শেষ পর্যন্ত তাঁরা যাচ্ছেন স্বপ্ন নগরীতে। ঠিক কেন ট্রেনে উঠলাম না সেটা নিজের কাছে পরিষ্কার করতে না পারার অস্বস্তি নিয়ে প্ল্যাটফর্মে উদ্দেশ্যহীনভাবে পায়চারি শুরু করলাম। কাঠের পানির বোতলটা থেকে পানি মুখে দিয়ে বড়ি দুইটা মুখের ভেতরে ছুঁড়ে দিলাম। মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠল। ঘুম আর জাগরণের মাঝামাঝি একটা তন্দ্রাবস্থায় দেখলাম একটা হাল্কা সোনালী আলোর ভেতরে ছোট ছোট লুডুর ছক্কার মত কিছু জিনিষ ভেসে ভেসে এঁকে বেঁকে সামনের দিকে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝলাম ওগুলো শব্দ কিন্তু পড়তে পারলাম না। একটা অচেনা ফুলের মিষ্টি গন্ধ আসছে। কেন জানি মনে হল গন্ধটা আসছে মাটির গভীর থেকে । কিন্তু পায়ের নীচে কোন মাটি খুঁজে পেলাম না। মনে হল মহাকাশে ভেসে আছি।
হঠাৎ আবিষ্কার করলাম যে শব্দগুলো বেরিয়ে আসছে আমারই শরীরের নানা জায়গা থেকেঃ নখের নীচ থেকে, কানের ছিদ্র থেকে, চোখের কোনা থেকে, এমনকি নাভির গভীর থেকেও। মনে হল এরা যেন হাওয়ার ভেতরে বাক্য আঁকতে চেষ্টা করছে। সেসব বাক্যের যেমন নানা রং তেমনি তাদের বাহারি মেজাজঃ বাদামী অভিমানী বাক্য, শুভ্র প্রশান্ত বাক্য, লাল যৌবন-থরথর বাক্য। শব্দগুলো যেন বহুদিন আমার শরীরে বন্দী থাকার পর ছাড়া পেয়েই ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসছে, একে অন্যের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে। ধীরে ধীরে নিজেকে ভারমুক্ত একটা স্থিতাবস্থায় আবিষ্কার করি।
মনে পড়ল সুইস ভাষাবিদ ফার্ডিন্যান্ড ডি সস্যুরের কথা যিনি বলেছেন ভাষা শুধুই একটা ফর্ম যার কোন সাবস্টেন্স নেই। তিনি দাবাখেলার গুটির উপমা দিয়ে দেখিয়েছেন যে দাবার একটি রাজা যা দিয়েই তৈরী হোক না কেন তাতে সেই রাজার দাবার বোর্ডে চলাচলের নিয়ম একটুও বদলায় না। যেমন দাবার বোর্ডে একটি তামার তৈরী রাজাকে সরিয়ে যদি সোনার তৈরী রাজা বসানো হয় তাতে রাজার ক্ষমতা বিন্দুমাত্র বৃদ্ধি পায় না বা কমেও যায় না। অর্থাৎ ভাষা শুধুই একটি বাহ্য আকার, আভ্যন্তরীণ কোন পদার্থ নয়। কাজেই কোন আন্ত-পদার্থ ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। ভাষাকে চেনা যায় তার বাইরের ফর্ম দিয়েই। কী মারাত্মক উপমা! ভাষাকে ধরা-ছোঁয়া যায় না অথচ এই ধরা-ছোঁয়ার জগতের প্রায় প্রতিটি বস্তু/অবস্তুকে ভাষার ধ্বনি-শব্দ-বাক্যে ধরা যায় বা অন্ততঃ ধরার চেষ্টা করা যায়। অর্থাৎ একটি অবস্তু ধারণ করছে বস্তুকে। আমার মনে পড়ে যায় স্বপ্নবড়িওয়ালার সেই যাদুকরী তুলনা-যদি বিমূর্ত শব্দে কবিতা লিখে তাকে কাগজে মূর্ত করে বাজারে বেচা যায় তাহলে একটি মূর্ত স্বপ্নবড়ি কেন বিমূর্ত স্বপ্ন তৈরী করতে পারবে না?
আমার সামনে ভাসতে থাকা বাক্যগুলো ভাসতে ভাসতে অনেকদূর চলে যায়। ওদেরকে অনুসরণ করে বেশ কিছু দূর গিয়ে হঠাৎই দেখি বাক্যগুলো থেকে দু’টো মানব শরীর লতিয়ে উঠছে। আস্তে আস্তে অবয়ব দুইটা সম্পূর্ণ হলে চিনতে পারি ওদের-ড্রীমট্রেনে স্বামীর সাথে না উঠে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটা আর তার প্রেমিক। তারা কথা বলছে। আমি তাদের শরীরের ভেতরটা দেখতে পাচ্ছি পরিস্কার। তারা যে শব্দগুলো মুখ দিয়ে ছুঁড়ছে আর যেগুলো তাদের শরীর-বন্দী হয়ে আছে সেগুলোর প্রকৃতি একদমই আলাদা। মুখে তারা বলছে ‘ভালোবাসা’, ‘সুখ’, ‘পরিত্রাণ’, ‘আনন্দ’ আর ভেতরের শব্দগুলো যেগুলো পড়া যাছে সেগুলো হল ‘দীর্ঘশ্বাস’, ‘ঘৃণা’, ‘অতৃপ্তি’ আর ‘বিনাশ’।
এ পর্যায়ে আমার ঘুমটা পাতলা সরের মত কেটে যায়। চোখ খুলে দেখলাম নিজের বিছানায় শুয়ে আছি। জানালার বাইরে বিকেলটাও মেঘলা। হঠাৎ ডোরবেল বেজে উঠল। কাজের ছেলেটা এসে বলল কে একজন আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। বসার ঘরে গিয়ে দেখি ধোপদুরস্ত এক মাঝবয়েসী মানুষ। চেহারাটা চেনা হলেও ঠিক মনে করতে পারছি না যে কোথায় দেখেছি। ঊনি উঠে দাঁড়িয়ে বল্লেন, “আমি আপনার একজন পাঠক। আপনার একটা কবিতা নিয়ে একটু কথা বলতে এসেছি।”
“বসুন”
“আপনার একটা কবিতা আছে ভাষা নিয়ে”
“কোন কবিতাটা বলেন তো ?”
“কবিতাটা আপনি এখনো লেখেন নি। ইন ফ্যাক্ট এই কবিতার ধারণাটা আপনি পেয়েছেন কিছুক্ষণ আগে, ঘুমের মধ্যে।”
আমার হতবাক দৃষ্টি পুরোপুরি উপেক্ষা করে উনি বলে চললেন, “এই কবিতা বলবে যে ভাষা গর্ভবতী হয় ও তার পেট চিরে কবিতা বেরোয়”
“কিন্তু আপনি কী করে...”
“সেটা পরে বলছি। আগে বলুন এই উপমা কি আপনি বিশ্বাস করেন যে ভাষার শরীর থেকে কিছুর জন্ম হওয়া সম্ভব?”
“দেখুন ভাষা একটা সপ্রাণ ব্যাপার এটা আমার সবসময়ই মনে হয়েছে। এটা শুধুই ব্যবহৃত হওয়ার জন্য নয়। আপনি চা-কফি কিছু খাবেন?”
“কফি। ব্ল্যাক।”
কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা। ভদ্রলোকের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা গেল। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “আপনি নিশ্চয়ই সুইস ভাষাবিদ ফার্ডিন্যান্ড ডি সস্যুরের নাম শুনেছেন। বিশ শতকের এই প্রধান ভাষাবিদ বলেছেন যে ভাষা ফর্ম, সাবস্টেন্স নয়। কিন্তু আপনি বলছেন...
“হ্যাঁ, সস্যুরের সাথে আমার এই ব্যাপারে দ্বিমত আছে। আমি মনে করি সাবস্টেন্স ছাড়া ভাষার ফর্মই থাকে না। আর তাই ভাষা যদি শুধুই একটা ফর্মও হয়েও থাকে সাবস্টেন্স ছাড়া এর কোন মূল্যই নেই।”
“আপনাদের কবিদের নিয়ে এটাই সমস্যা। আপনারা সবসময় আবেগতাড়িত হয়ে সবকিছু দেখেন। বৈজ্ঞানিক একটা পর্যবেক্ষণকে ঘোলা করতে আপনাদের জুড়ি নেই” এটা বলে উনি ঘড়ির দিকে তাকালেন।
এর মধ্যে কফি চলে এলো।
“আপনার এই কবিতাটা কি ছাপতেই হবে?” উনি কফিতে চুমুক দিয়ে বেশ অস্থিরভাবে বললেন।
“এখনো তো লিখিই নি...”
“লেখেন কিন্তু ছাপায়েন না। মানুষ বিভ্রান্ত হবে। ভাষা নিয়ে অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ আবিষ্কার প্রশ্নবিদ্ধ হবে।” বলেই উনি উঠে দাঁড়ালেন। আমি দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে যেতে যেতে উনি সিড়ির ল্যান্ডিং এ পৌঁছে গেছেন। অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে হাঁটছেন ভদ্রলোক। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে গলা উঁচু করে বললাম, “আপনার পরিচয় কিন্তু বললেন না, অন্ততঃ নামটা...”

সিঁড়ির শেষ মাথা থেকে ঠান্ডা গলায় উত্তর এলো, “সস্যুর। ফার্ডিন্যান্ড ডি সস্যুর।”

রাজিব মাহমুদ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটি অতিথির কীর্তিকলাপে দেখি দুসপ্তাহ আগে। তারপর থেকে প্রতিদিন অপেক্ষা করেছি কবে প্রকাশিত হবে তার জন্য। দারুণ শক্তিশালী গদ্য আপনার রাজীব মাহমুদ। যেমন শব্দ নির্বাচন তেমনই বাক্যের গঠন। ক্ষুদ্র পরিসরে এত চমৎকার বর্ণনাও অনেকদিন চোখে পড়েনি। মুগ্ধ হয়েছি সংলাপে। আর আপনার কল্পনাশক্তি, আহা!!

---মোখলেস হোসেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, মোখলেস হোসেন। আমি আসলে এ জাতীয় একটা গল্প লিখতে চাচ্ছিলাম অনেকদিন ধরে। কিন্তু ঠিক কীভাবে সাজাবো বুঝতে পারছিলাম না। আপনার ভালো লেগেছে জেনে অনেক উৎসাহ পেলাম। আর কীর্তিকলাপের বিষয়টা নিয়ে আমি খানিকটা কনফিউজড। নিয়মানুযায়ী আমি জানতাম যে অতিথি লেখকের লেখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রকাশিত না হলে তা আর প্রকাশিত হয়না। তাই যখন দেখলাম যে ২৪ ঘ্ন্টা পরে সেটা প্রকাশিত হয়নি তখন ভাবলাম এটা আর প্রকাশিত হবে না কিন্তু আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম যে লেখাটা দিনের পর দিন "প্রকাশিত না" স্ট্যাটাস নিয়ে কীর্তিকলাপে দেখাচ্ছে। সাধারণতঃ অপ্রকাশিত লেখা অল্প সময় পরে সরিয়ে ফেলা হয়। সেটাও সরানো হলনা। শেষ র্যন্ত লেখাটা প্রকাশিত হল প্রায় ১৭ দিন পর। আমি যার পর নাই অবাক। সচলে কি অতিথি লেখকদের লেখা প্রকাশিত হওয়ার সময় কি বাড়ানো হয়েছে? কিন্তু নীতিমালাতে দেখলাম ২৪ ঘন্টার কথাই লেখা আছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। রাজিব মাহমুদ।

কর্ণজয় এর ছবি

ভালো লাগলো। কাহিনী, কাহিনীর বিন্যাস এবং ভাষার ব্যবহার।।।।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, কর্ণজয়। বেশী উৎসাহ পেলাম ঠিক কী কী ভালো লেগেছে সেটা জানানোর জন্য। এরকম মন্তব্য থেকে আসলে অনেক শেখার আছে। ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম লিখতে ভুলে গেছি। উপরের মন্তব্যটা আমার ছিল। ধন্যবাদ। রাজিব মাহমুদ।

কর্ণজয় এর ছবি

দুবার পোস্ট হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়টি মুছতে পারছি না।-

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি কিন্তু একবারই দেখছি। পরে নিশ্চয়ই মুছতে পেরেছিলেন হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম লিখতে ভুলে গেছি। উপরের মন্তব্যটা আমার ছিল। ধন্যবাদ। রাজিব মাহমুদ।

সোহেল ইমাম এর ছবি

ম্যাজিক, ছোট্ট লেখাটির মধ্যে এতখানি যাদুর সঞ্চার বিস্ময়কর প্রতিভার স্বাক্ষর। আরো কয়েকটা স্বপ্নবড়ি গড়িয়ে দিনতো আমাদের দিকে।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

অতিথি লেখক এর ছবি

হা হা হা। অনেক বেশী উৎসাহিত হলাম। দেখি আপনার জন্য কিছু স্বপ্নবড়ি তৈরী করা যায় কিনা হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

নাম লিখতে ভুলে গেছি। উপরের মন্তব্যটা আমার ছিল। ধন্যবাদ। রাজিব মাহমুদ।

দেবদ্যুতি এর ছবি

দারুণ! এক কথায় দারুণ!

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ, দেবদ্যুতি। সময় করে পড়ার ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। রাজিব মাহমুদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।