কার্টুন নিয়ে ক'কথা

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: শুক্র, ২১/০৯/২০০৭ - ২:১৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[লেখাটি আরো আগে ব্লগে দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু 'সচলায়তন'আমার জন্য সচল ছিলো না এখনো নয়। অনেক লেখাই পোস্ট করতে ইচ্ছে হয় কিন্তু সচল না হলে করবো কি করে? আমার রেজিস্টার্ড নামটিই তো ব্যবহার করতে পারছি না। তাই এখন এলোপাতাড়ি চেষ্ট করে যাচ্ছি। -মাহবুবুল হক]

প্রথম আলো পত্রিকার সাপ্তাহিকী ‘আলপিন’ এর একটি কার্টুন নিয়ে সরকার যে অস্বাভাবিক কর্মতৎপরতা দেখিয়েছে তাতে বিস্মিত হতেই হয়। কারণ বাংলাদেশের না খেতে পাওয়া মানুষগুলোর হাড়জিরজিরে শরীরগুলো যখন বানের তোড়ে ভেসে যায়, একবেলা খাবার জোটাতে না পেরে পরিবারের কর্তা যখন আত্মহত্যা করে কিংবা পরিবারের সদস্যগুলো যখন একএক বেলা পালা করে খায় তখন এই অভাগা দেশের সরকার আর তার স্যাঙাতরা ডুগডুগি বাজিয়ে বিদেশ ট্যুর করে দেশের শ্রাদ্ধের পয়সা জোগাড় করতে যায় আর নিজের আখের গোছাতে কোন দেশ সবচেয়ে আরামপ্রদ তার হিসেব কষে আসে? অবাক হলাম এজন্যে যে, আমাদের সরকারের জনস্বার্থ আমল দেয়ার ক্ষেত্রে যে তৎপরতা তা কুম্ভকর্ণের ঘুমের মত কিংবা গন্ডারের চামড়ার মত বলে খ্যাতি আছে অথচ এমন একটি সরকার কী অসামান্য দ্রুততায় পত্রিকাটির সংখ্যা বাজেয়াপ্ত করা থেকে শুরু করে মিটিং সিটিং করে একেবারে হৈচৈ ফেলে দিল। বিষয়টি কি ডেঙ্গু, ডায়রিয়া, বার্ড ফ্লু বা পোলিওর চেয়ে মারাত্মক ? আলফ্রেড সরেন বা চলেশ রিছিলের মৃত্যুর চেয়ে মর্মান্তিক ? কিংবা বখাটেদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে একের পর এক আত্মহত্যা করা কিশোরীর বেঁচে থাকার অধিকারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? নাকি সেই লক্ষ লক্ষ শিশুর রঙীন শৈশব হারিয়ে ফেলার কান্নার চেয়ে বেদনাদায়ক, যাদের হাতে আমরা বই এর বদলে তুলে দিয়েছি উপার্জনের হাতিয়ার।

কার্টুনটি পত্রিকায় ছাপা হবার যোগ্য নয় কোনোভাবেই। এটি কৌতুক হিসেবে লোকমুখে চলছে বহুকাল ধরেই। ওই যে... এক বালককে শিখিয়ে দেয়া হল নামের আগে মোহাম্মদ বলতে হয় অতঃপর সে তার পোষা প্রাণীর নামের আগেও ..... এই মোটাদাগের কৌতুকটি কে না শুনেছে ! কিন্তু পত্রিকায় ছাপামাত্র এর অসামান্যতা টের পাওয়া গেল। মনে হয় এ জাতীয় আরো যেসব কৌতুক ( কোরানের বিভিন্ন আয়াতের সাথে বাংলা উচ্চারণের সাযুজ্য নিয়ে বানানো স্থূল কৌতুক কিংবা স্বর্গ-নরকে রাজনৈতিক নেতাদের আচরণ নিয়ে মজার এবং বৈদগ্ধ্যপূর্ণ কৌতুক ) বহুল প্রচলিত আছে সেগুলো পত্রিকায় ছাপা হলেও একই দশা হবে।

আইন-উপদেষ্টা যথারীতি এর মধ্যেও সরকারকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র টের পেয়েছেন এবং তিনি বাইতুল মোকাররমের খতিব মাওলানা ওবায়দুল কাদের-এর নেতৃত্বে মার্কামারা কয়েকজন ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতার সাথে মিটিং করেছেন যাদের মধ্যে ফজলৃল হক আমিনীর মত মহাভন্ডও আছে যে “ আমরা হব তালেবান বাংলা হবে আফগান” শ্লোগান দিয়ে দেশে প্রকাশ্যে জঙ্গী তৎপরতার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেছিল, ফতোয়া দেয়ার অধিকার নিয়ে যে এখনও সোচ্চার, বাংলাদেশের সংবিধান-আইন-শাসনব্যবস্থায় যে বিশ্বাস করে না অথচ রাজনীতি করে বাংলাদেশেই। আর বাইতুল মোকাররমের পেশ ইমাম তো মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে গড়া স্বাধীন বাংলাদেশের বেতনভুক্ত কর্মচারী হয়েও মুক্তিযোদ্ধাদের বলেছিল Ñ “পাশ্চাত্য শিক্ষিত উদভ্রান্ত তরুণ”Ñ বেশিদিন আগে না, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষ দিকে । তাই ভাবছি আধপেটা খেয়ে না খেয়ে এই অভাগা দেশের মানুষ কিসের জন্য দিনগুজরান করে? একটু ভালো থাকার জন্য, একটু নিরাপদে থাকার জন্য তো ! আর সেই চিরন্তন প্রার্থনা তো সর্বকালের সর্বমানবের Ñ ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে’ এতটুকুই তো চাওয়া । অথচ এই সরল মানুষগুলোর ততোধিক সরল ধর্মানুভূতি নিয়ে আর কত বাণিজ্য হবে? যদি যাচাই করা হয়, মানে ভোটাভুটি হয় যে, দেশের কত ভাগ মানুষ এই কৌতুককে ধর্মানুভূতির জন্য হানিকর মনে করেন তাহলে আমার মনে হয় যারা এ নিয়ে মাতামাতি করছেন তার হতাশ হবেন । যা হোক এভাবে তো আর বিচার করে না সরকার !

আরেকটা বিষয় মাথায় আসছেÑ প্রথম আলো পত্রিকার ওপর দেশের ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষোভ-আক্রোশ অনেকদিনের পুরোনো। তাদের জন্য তো এখন সেই আক্রোশ মেটাবার অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে সন্দেহ নেই । কারণ প্রথম আলোর আলপিন সাপ্তাহিকীটি বেশ জনপ্রিয় এবং পত্রিকাটি এ সময়ের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক। পানি ঘোলা করতে হলে তো এমন জায়গাই উত্তম যেখানে মাছ আছে।

আসলে কী থেকে যে কী হচ্ছে আন্দাজ করা কঠিন। বোধ হয় বিশ্বের সেরা রাজনৈতিক বিশ্লেষকও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হাবুডুবু খাবেন। এ নিয়ে আরো কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু হঠাৎ মনে পড়লো সেই হিন্দু ছেলেটির কথা (নামটি মনে নেই ) ২০০৫ সালে শেখ হাসিনাকে ই-মেইলে হুমকি দেয়ার মিথ্যা অভিযোগে যার ইহকাল পরকাল দুকালই ঝরঝরা করে দিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ। ছেলেটিকে এবং তার পরিবারকেও পঙ্গু করে দেয়ার পর পুলিশ ভুল বুঝলো, মানে বোঝানো হল। হায়রে অভাগা দেশ.......


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লেখাটি সামহোয়্যারইনে প্রকাশিত, তাই প্রথম পাতা থেকে সরানো হল। অনুগ্রহ করে এই লেখাটি দেখুন

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এক ভদ্র মহিলা 'আলাম তারা কাইফা 'র বদলে পাঠ করেন 'তাইন তারা কাইফা' । (তাইন মানে তিনি-সিলেটী ডায়ালেক্ট)
মহিলার স্বামীর নাম আলম । স্বামীর নাম মুখে আনা ইসলামী তরিকা অনুযায়ী বেয়াদবী । তাই এই রুপান্তর ।

***
এই বহুৎ প্রচলিত চুটকী ও তাহলে ব্লাস্ফেমী?

কিংবা 'আল্লাহুম্মা আমীন,ছয় কিয়ার জমিন'-এই সব ফাজলামো শিশু কালে আমরা মসজিদে বসেই করেছি । অবশ্যই নির্দোষ ফাজলামীই ছিলো,ধর্মকে হেয় করার মতো সাহস তখনো হয়নি ।

আজকের বিচারে তাহলে এও ব্লাস্ফেমী?

***
'মোল্লার কল্লা,গৃহস্তের রান
যে মোল্লায় কাটছে,তার কান ধরি আন'

কোরবানীর দিনের এই মজাটা ও তাহলে ধর্মের অবমাননা?

***

যাই কই?

-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।