নকল, প্রশ্ন ফাঁস শিক্ষার সর্বনাশ এবং শুধুই শিক্ষকের গলায় ফাঁস : তুলসী পাতা কারা ?

মাহবুবুল হক এর ছবি
লিখেছেন মাহবুবুল হক (তারিখ: মঙ্গল, ০৪/০৪/২০১৭ - ৭:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস নিয়ে আবারও মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে রাখাল রাহার এক উদ্যোগকে কেন্দ্র করে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান অনেক বিস্ময় ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি একবার সরকারের পক্ষ নিয়ে প্রশ্নফাঁসবিরোধী বিবৃতিতে স্বাক্ষর দিতে চাননি, আবার পরে তা অস্বীকার করে বিবেকের দায় মিটিয়েছেন। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করলাম প্রশ্নফাঁসের দায় আবারও শিক্ষকদের কাঁধে চাপানোর সকল আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র-উদ্যোগ-প্রদর্শনী মহাসমারোহে শুরু হয়েছে। আদতে প্রশ্নফাঁস হয়েছে কিনা বিষয়টি জানতে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতায় এই এলান হয়েছিল যে, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তুললেই অভিযোগকারীর শাস্তি আগে। পুলিশের ছুঁচো লেগে যাবে, সেটা গুম পর্যন্তও চলে যেতে পারে। আমাদের জানা আছে আগেও অনেকবার প্রশ্ন ফাঁসের বিপক্ষে বহু সংকীর্তন শেষে উজীর-নাজিরেরা স্বীকার করেছেন যে ‘প্রশ্ন ফাঁস হইলেও হইতে পারে’। কিন্তু আমরা সমাধানের স্থলে শুনেছি সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা , কঠোরতার কথা ইত্যাদি ভাঙা রেকর্ড । কিন্তু আমরা এ যাবত দেখেছি প্রশ্নফাঁস থেকে শুরু করে শিক্ষার মানের অধঃপতন, অব্যবস্থা, কোচিং বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য সবকিছুতে শিক্ষককে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অভ্যাস উজীরে আযম থেকে শুরু করে পাতি-উজীর-নাজির-অমাত্য-সেরেস্তা পর্যন্ত সবার একেবারে খোলামকুচির মত। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাট্টা। প্রশ্ন হল, প্রশ্ন প্রণয়নের সকল ধাপে শিক্ষক ছাড়াও আরও অনেক ধরণের দায়িত্ববান কর্মকর্তা-কর্মচারী যুক্ত থাকেন। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন মূলত ফাঁস হয় আগের রাতে বা একদিন আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটা ছড়িয়ে পড়ে । তাহলে সেই প্রশ্ন কোন স্তর থেকে ফাঁস হয় ? নিশ্চয়ই পরীক্ষার হল থেকে নয়। পরীক্ষার হলে আগের রাতে প্রশ্ন আনার বা রাখার সুযোগ আছে বলে আমার জানা নেই। থানার আইনি এখতিয়ার থেকে পরীক্ষার সকালে এটি কেন্দ্রে আনা হয়, এর ব্যতিক্রম হলে তা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে জ্ঞাতসারেই হয়। তাছাড়া প্রতিটি স্তরে প্রশাসনের লোকজন তাতে নাক-মাথা-হাত সবই গলান। প্রশ্ন আনা থেকে শুরু করে পরীক্ষার খাতা বোর্ডে পাঠানো ও পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট দেয়া পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে খবরদারি করেন পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। যদিও কাজ সবই করতে হয়, কলুর বলদ শিক্ষকদেরকে। এমনকি পরীক্ষার যৎসামান্য সম্মানীতে ভাগ বসানোরে বেলায়ও কেউ কম যান না । অথচ প্রশ্নফাঁসের সকল দায় শিক্ষকের আর সারাদেশের শিক্ষকের অভিভাবক হয়ে মন্ত্রী এই অপমান তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন। আবার তিনি মাঝে মধ্যে শিক্ষকদের সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করে এই তাচ্ছিল্যের আমোদে করুণার আবহও তৈরি করেন। সত্যি সেলুকাস !!

প্রশ্ন ফাঁসের সাথে একশ্রেণির কোচিং সেন্টার জড়িত, এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট। অনেক টাকার লগ্নি হয় এই খাতে। এসব কোচিং সেন্টার কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চলে? কোচিং সেন্টার আর গাইড ব্যবসায়ের কোটি কোটি টাকা যখন লগ্নি হয় টিভি-মিডিয়ার অনুষ্ঠানে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে, বিশ্ববিদ্যালয় বানানোয় তখন সেইসব প্রতিষ্ঠানে কারা পড়ে? কারা সেইসব অনুষ্ঠানে সেজেগুজে হাজির হয়? এসব দেখতে হবে বৈকি !! আমরা দেখেছি প্রশাসনের প্রশ্রয়ে স্কুলগুলোতে কোচিং ব্যবসায় বন্ধ বা সরকার নির্ধারিত ফি-তে ভর্তি করা যাচ্ছে না। প্রত্যেক থানায় স্কুল-কলেজের এসব দুর্নীতি ঠেকাতে ডিসি-ইউএনও-এমপি সমম্বয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে যারা ভর্তি ও কোচিং বাণিজ্য প্রতিরোধ করবে। তারা সক্রিয় থাকলে নিশ্চয়ই স্কুল কলেজের হেডমাস্টার বা প্রিন্সিপাল এই সাহস পেতেন না। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনকে ঠুটোঁ জগন্নাথ মানেন তারা । কারণ যারা ধরবেন তারাই তো ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছেন। তারাই তো মালিক। তারাই গভর্নিং বডি। প্রশ্নফাঁসের সাথে কোচিং সেন্টার জড়িত, ধরাও পড়ছে, কিন্তু যারা ধরা পড়ছে তাদেরকে শিক্ষক বললেতো ব্যবসায় আর শিক্ষকতায় কোন পার্থক্যই থাকে না !! সেই কাল আর নেই যখন শিক্ষকই লজিং, হাউজ টিউটর,ব্যাচ পড়ানো সব করতেন। কোচিং ব্যবসাও শিক্ষকরাই করতেন একসময়, বহু বেকার ছেলের অন্নের সংস্থান করেছে এই ব্যবসা বৈধতার প্রশ্ন আসেনি তখন। তবু যা নীতিবিগর্হিত তা পরিত্যাজ্য। আজকাল অবশ্য বহু আমলা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেন, সুযোগমত সেটা প্রচারও করেন। আমলাদের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রির বন্যা বয়ে যাচ্ছে তার এটাও একটা কারণ ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কয়েকদিনের মাথায় নমনীয় ভাষায় তা সংশোধন করে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতার মৌরসীপাট্টা পাকাপোক্ত করেছেন। এসব নিয়ে আমি আমার ব্লগে একাধিকবার লিখেছিলাম তখন। লেখার মানে তো আসলে নিজের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরটাকে হালকা করার চেষ্টা, এতে যে কী কাজ হয় তা সবাই জানে। তাই কিছু কথা লিখে যাওয়া শুধু । সেটাও যে কতটা নিরাপদ তা নিয়ে সন্দেহ আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে- বছরের প্রথম দিন সারাদেশের সকল স্কুলে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ। শুধুমাত্র এমডিজি অর্জনের জন্য আমাদের মত দরিদ্র দেশে প্রায় ৩৩ কোটি বই বিনামূল্যে সরবরাহ করার কী যু্ক্তি থাকতে পারে যেখানে বই ক্রয় করার মত বহু সম্পন্ন পরিবার রয়েছে। এমনকি ইংরেজি ভার্সনের বইও বিনামূল্যে দেয়া হবে কোন্ কারনে আমি বুঝি না । সন্তানকে যারা ইংরেজি ভার্সনে পড়াবেন তাদের বই কেনার সামর্থ্য নেই এটা কী বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি ? তবু এই অপচয়ের মহোৎসব চলছে। বিনামূল্যে বই বিতরণ না-করার পক্ষে নই আমি; তবে এই বিতরণ পূর্ণ/ অর্ধেক/ বিনা-মূল্য এই তিন ক্যাটাগরিতে হতে পারে। এ বিষয়ে চিন্তাভাবনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

শিক্ষানীতির মধ্যে একমুখী শিক্ষার কথা আপ্তবাক্যের মত বলা হলেও মাদ্রাসা ও ইংরেজি ভার্সন শিক্ষার বিপুল পৃষ্ঠপোষকতা এই নীতিকে হাস্যকর করে তুলেছে। তার ওপর মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার সাথে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার নীতি থাকলেও বাস্তবে ঘটছে বিপরীত - মূলধারার শিক্ষা এখন মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে একীভূত হতে চলেছে। সাম্প্রতিক পাঠ্যক্রম কেলেংকারী এর প্রমাণ । মাদ্রাসা থেকে পাশ করা শিক্ষাথীকে মূলধারায় সুযোগ করে দিতে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে সহজ-শৈথিল্য দেখানো হয়েছে, মূলধারার একজন শিক্ষার্থীকে সে সুযোগ না দেয়ায় স্পষ্টই প্রশ্ন উঠতে পারে এই পক্ষপাত কী সংবিধান-সম্মত? (এ বিষয়ে বোর্ডের ভর্তি নীতিমালা আমি পড়েছিলাম। তবে এ মুহুর্তে কোন লিংক খুঁজে পাচ্ছি না বলে দেয়া গেল না, কারো কাছে উচ্চমাধ্যমিকে (বিষয় পরিবর্তন করে) ভতির নীতিমালার লিংক থাকলে দয়া করে কমেন্টে যোগ করবেন।)

যেখানে নীতি কলুষিত, দুরভিসন্ধিমূলক, প্রতিক্রিয়াশীল; সরকারের নীতিনির্ধারকগণ যেখানে শিক্ষককে অপদস্ত ও হেয় করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত; সেখানে আত্মমর্যাদা রক্ষা তো দূরে থাক্ আত্মরক্ষার উপায় সন্ধানে করতেই শিক্ষকদের নাভিশ্বাস-- তথ্য-উপাত্ত, মেরুদণ্ড, সামাজিক বিবেকের উদাহরণ হাস্যকর। সেখানে আত্মমর্যাদা রক্ষা তো দূরে থাক্ আত্মরক্ষার উপায় সন্ধানে করতেই শিক্ষকদের নাভিশ্বাস-- তথ্য-উপাত্ত, মেরুদণ্ড, সামাজিক বিবেকের উদাহরণ হাস্যকর। সবার অবস্থাই নারায়ণগঞ্জের শ্যামলকান্তির মত। প্রধানমন্ত্রী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তখন তার পেয়াদারা কাপড় খুলে হাতকড়া পরিয়ে নাকে দড়ি দিয়ে ভরা হাটে ঘুরাবে না তো কী ?? তাই আজকাল পত্রিকায় প্রশ্নফাঁস করে ধরা পড়া, হাতে দড়িবাঁধা অধ্যক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দের ছবি দেখলে ক্ষুব্ধ হই না, মুষড়ে পড়ি। ‘গোল্লায় যাক আমার কী’ বলতে পারলে ভাল হতো কিন্তু এটা যে পলায়ন তা-ও বুঝি। আমরা এক আত্মবিধ্বংসী সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ক্রমাগত বর্জনের আর বিসর্জনের ঐতিহ্য সৃষ্টি করছি আমরা। এতে এক সময় আমরা এতটাই নিঃস্ব হবো যে পৃথিবীর কাছে দাস জাতির পরিচয় ছাড়া আর কিছুই আমাদের থাকবে না ।


মন্তব্য

Nazmus Saquib এর ছবি

অসাধারণ লিখেছেন ভাইয়া।

মাহবুবুল হক এর ছবি

ধন্যবাদ

হাসিব এর ছবি

আমার কাছে পোস্টের মূল বিষয়টা ঠিক পরিষ্কার না। শিক্ষামন্ত্রী কী "শুধুই" শিক্ষকেরা এর সাথে জড়িত এরকম কিছু বলেছেন? প্রশ্নপত্র ফাঁস থামানো না গেলেও বিভিন্ন সময়ে লোকজন (যারা শিক্ষক নন) গ্রেফতার হয়েছে। শিক্ষকরাও জড়িত এটা নতুন বেরিয়ে এসেছে। তাদের নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে কারণ একজন সাধারণ লোক যখন এ কাজে জড়িত হন তখন কেউ বিশেষভাবে চিন্তিত হয় না। কিন্তু মানুষ গড়ার কারিগরদের এরকম কাজে জড়িত হতে দেখলে একটু আলোড়ন বেশি হবার কথা আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে সেটাই হয়েছে।

মাহবুবুল হক এর ছবি

অনেকদিন আগে বিজিপ্রেসের কয়েকজন ধরা পড়েছিল ৷ তখনও কোচিং সেন্টার, শিক্ষক এদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছিল ৷ বারবার কোচিং সেন্টার আর শিক্ষককে এক করে দেখা হয়েছে ৷ এই পোস্টে মূলত শিক্ষকদের প্রতি সরকার আর প্রশাসনের একচোখা নীতির দিকটি তুলে ধরা হয়েছে ৷ প্রতিটি অভিযোগের জন্য সমানভাবে প্রশাসনকএ দায়ি করা যায়, দায়িও তারা, অথচ সেদিকে আঙুল তুললেই বিপদ৷

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

হাসিব এর ছবি

 প্রশাসনের উপর আঙ্গুল তো তোলা হচ্ছেই। সবার নামই উল্লেখ করা হয় মিডিয়াতে। কেউ তো বাদ যাচ্ছে না। গতকালের একটা নিউজ এখানে প্রাসঙ্গিক হতে পারে। ওখানে বলা হচ্ছে,

প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল হোতাদের ধরতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরইমধ্যে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারের কর্ণধার ছাড়াও শিক্ষা কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা। আরও কয়েকটি চিহ্নিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্ন ফাঁসচক্রের সিন্ডিকেটে ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২৪টি কোচিং সেন্টার ও ৫০ জন শিক্ষকের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজি প্রেসের কর্মচারী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতারও তথ্য পেয়েছেন তারা। যাদের পর্যায়ক্রমে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ওখানে আরও বলা হচ্ছে,

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মানিকনগর আইডিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল কলোনি হাইস্কুল, শাজাহানপুর রেলওয়ে হাইস্কুল, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইল স্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সাভারের টাঙ্গাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অন্যতম। কোচিং সেন্টারের মধ্যে জ্ঞানকোষ একাডেমি, মানিকগঞ্জ জেলার জয় একাডেমি, গাজীপুর জেলার কোনিয়া কোচিং ও অভিনব কোচিং সেন্টার গোয়েন্দাদের নজরদারিতে রয়েছে।

প্রশ্নফাঁস চক্রের সন্ধানে কাজ করছেন এমন কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত শনিবার সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহরিয়ার মেন্দিসকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজনের মোবাইল ফোনের কললিস্টে তার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। একাধিকবার ওইসব প্রতারকের সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষয়টি কললিস্টেও পাওয়া গেছে। ‘সৃষ্টি শিক্ষা পরিবার’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম রিপনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া আরও এক ডজনেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দুই ডজন কোচিং সেন্টার ও অর্ধশত শিক্ষক-কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

‘সৃষ্টি শিক্ষা পরিবার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়েন্দারা তথ্য পান। সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির ১৫টি শাখা রয়েছে। এরমধ্যে রাজধানী একটি,আশুলিয়া,খুলনা,জামালপুর,গাজীপুর,রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জে একটি করে শাখা এবং টাঙ্গাইল আটটি শাখা রয়েছে।এসব শাখায় অন্তত এক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ও ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সারাদেশে তারা প্রশ্ন ফাঁস করে। গোয়েন্দাদেরকে এই তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা শাখার গ্রেফতার হওয়া শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম ।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, চলমান এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা সাভার, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারী ও দালালদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির ডিভাইস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এসব প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্য পান তারা। এখন সেইসব তথ্য আরও যাচাইবাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান গোয়েন্দারা। শিক্ষকরা কার কাছ থেকে কিভাবে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতেন এবং সেসব প্রশ্নপত্র কোথায় কার কাছে কত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদ নাসের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারের তথ্য পেয়েছি। তদন্ত ও অনুসন্ধানের স্বার্থে এখনও এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না ।

সোর্স

আয়নামতি এর ছবি

প্রতি বছর প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টা কেমন নিয়ম হয়ে গেছে! বিষয়টার সাথে কমবেশি সবাই জড়িত। এ কারণে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে সেটা যেন কিছুই না। মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

যে করেই হউক, যারাই হউক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অভিন্ন প্রশপত্র'র বিষয় আপত্তির মুখে পড়ে বাতিল হল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালের 'গ' ইউনিটের "ঝাপসা দুর্নীতি"র শেষটা এখনও অজানা-রহস্যময় রয়ে গেল। এজন্য বিশেষভাবে কোন গোষ্ঠীকে দায়ী করা যায় না। কাজ না করে বেতন লাভের উপায় খুঁজায় ব্যস্ত জনগনের উদ্ভাবন হচ্ছে- দুর্নীতি। আবার, পড়ালেখা কিংবা পরিক্ষা ছাড়া সনদ আদান-প্রদানের যুগে,উদোর পিন্ডি যারতার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সহজশিক্ষা পাঠ চালু হয়েছে।
লেখককে অজস্র ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রশ্নফাঁস নিয়ে এত কথা হচ্ছে কারণ আমাদের কারো সন্দেহ নেই যে প্রশ্নফাঁসের ফলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমশ একটা ভয়ংকর পরিণতির দিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের মূল আতঙ্কের বিষয় হল শিক্ষা ব্যবস্থা ভবিষ্যৎ। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কি শুধু প্রশ্ন ফাঁসের উপরেই নির্ভর করছে? পরীক্ষার গ্রহণ পদ্ধতি, খাতা মূল্যায়ণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে "ওপেন ক্রাইম" হচ্ছে সেটার কথা কেউ বলছে না। এমনি কি এসব ব্যপারে অনেকে জানেও না। আমি একটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করার সুবাদে কিছু কিছু ভয়ংকর অভীজ্ঞাতা সঞ্চয় করতে পেরেছি। আমি দেখেছি পরীক্ষার হলে কিভাবে শিক্ষকগণ পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করছে, দেখেছি পরীক্ষক খাতা মূল্যায়ণের নাম কিভাবে চোখ বন্ধ করে নম্বর ঢেলে দিচ্ছে। এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে প্রশ্নফাঁস রোধ করে কি লাভ?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।