শব্দের রসায়ন-১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ০৪/০২/২০১১ - ৯:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Rimbaud এর a season in hell বইটি নরকের ঋতু নামে অনুবাদ করতে শুরু করেছিলাম। শিরোনাম "নরকের ঋতু" বদলে "নরকে পরম ঋতু" করলাম।

Une Saison en Enfer: Délires II: Alchimie du Verbe শিরোনামের ৫ম অধ্যায়টির প্রথম অংশ অনুবাদ করলাম। A. S. Kline এর ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হল।


ঘোর ২-শব্দের রসায়ন

(নরকে পরম ঋতু)

এবার আমার পালা। আমার মূর্খতার ইতিহাস।
আমার দম্ভ, এতগুলো বছরে আমি আয়ত্ত করেছি সম্ভাব্য সব চিত্রকল্প। আর খুঁজে পেয়েছি আধুনিক চিত্রকলা এবং কবিতার সব মহারথীরাই অসার।
আমার ভালো লাগতো বোকা বোকা সব দৃশ্য, ঘুলঘুলি, মঞ্চের নাটকীয়তা, হকার, ব্যাকড্রপ, সাইনবোর্ড, বাসের জানালা দিয়ে ছুড়ে দেয়া লিফলেট, কাঁচা হাতে লেখা অপরিণত সাহিত্য, ভূল বানানে লেখা কুরুচিপূর্ণ বই, দাদীর আমলের পুরোনো উপন্যাস, রুপকথা, ছোটদের রঙচঙে ছবির বই, পুথি পাঠ কিংবা যাত্রাপালা, অদরকারী রহস্যময়তা আর নিচুমানের সংগীত।
আমি স্বপ্নে দেখতাম ক্রুসেড, আবিষ্কার নেশায় মত্ত দুঃসাহসিক সব অভিযান, যার খবর এখনো কেউ জানেনা, নগররাস্ট্র যার কোন ইতিহাস নেই, অবদমিত ধর্মগুলোর সংগ্রাম, নৈতিক বিল্পব,সাইনবোর্ড, গোত্র এবং মহাদেশ সমূহের স্থানান্তর। আমি বিশ্বাস এনেছি সকল মন্ত্রোচ্চারণে।
আমি আবিষ্কার করেছি স্বরবর্ণ গুলোর রঙ, অ-কাল, ই-সাদা, উ-লাল, এ-নীল, ও-সবুজ। আর নিয়ন্ত্রণ করেছি ব্যাঞ্জনসমূহের গতি ও প্রকৃতি। অন্তর্গত এক সুরের উদ্দ্যমে নিজেকে বুঝিয়েছি, আমি উদ্ভাবন করেছি এক নতুন কাব্যভাষা, একদিন যা সব অনুভূতিগুলোর অনুবাদে সক্ষম হবে। যার সত্ব আমার।
এটা প্রথমে ছিলো এক প্রথাগত অনুসন্ধান যদিও। আমি লিখেছি নিরবতা, রাত্রি, যা অপ্রকাশ্য তাকে করেছি প্রকাশ। আমি ব্যাখ্যা করেছি আবর্তনময়তাকে।

* * *

গ্রাম্য বালিকা, পাখি আর পশুপাল থেকে দূরে
হেজেল বন যেখানে আমাকে রেখেছে ঘিরে
নতজানু আমার পানপাত্র পরিপূর্ণ সে কিসে
গোধুলি মায়ায়, শ্যামলিমা আর উঞ্চতা মিশে

তরুণী নদী থেকে কী আর করি পান
নিরব দেবদারু, ফুলহীন উদ্যান আর নিরস আকাশ
প্রাণের কুটির থেকে দূরে কাঠবিড়ালীর গান
সোনালী তরল ঢালে আর ঢালে অমৃত নির্যাস।

সরাইখানার সন্দিহান নামফলক- আবহাওয়া
স্বর্গের পথ ধরে এসো যখন বিকেল
বৃক্ষজল, অক্ষতযোনী বালিতে হারিয়ে যাওয়া
ইশ্বরাক্রান্ত বায়ু আর বরফ জমাট পুকুরে জল

কি করে আর পান করি
যখন ফুফিয়ে কাদে সোনালী তরল

* * *

কোন গ্রীষ্মের ভোর ঠিক চারটায়
ভালবাসার ঘুম তখনো বর্তমান
নৈশভোজের ঘ্রাণ দ্রুত অপসৃয়মান
বাগানবিলাসী ঝোপের কিনারায়

ওখানে নিচে সদা পরিবতর্নশীল
হেসপেরিডিয়ার বাগানে সকাল এলে
তাদের বিশাল কর্মযজ্ঞে সকলে মিলে
ফুল হাতা শার্ট পড়া ছুতারের দল

পেলব মরুভূমির শান্তিময়তায়
তারা বানাচ্ছে বিশাল দামী এক প্যানেল
সমস্ত শহর তাকে রাঙাবে,
প্রহেলিকাময়, চিত্রল

আহা! সব আমুদে শ্রমিকদল
ব্যাবিলনের রাজার গোলাম
তাদের আত্মায় তোমার মুকুট সম্বল
ভেনাস, ছাড়ো এবার তবে প্রেমিকার ঘুম

ওগো, মেষপালকের রাণী
শ্রমিকদেরও দিও সবল মদ
তবেইতো তারা অপেক্ষা করবে জানি
দুপুরের রোদে হওয়ার আগে সমুদ্রে উন্মাদ

* * *

কবিতার পূর্বসুরিতা আমার শব্দের রসায়নের মূল নিয়ামক।
আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি হ্যালুশিনেশনে। একটা ফ্যাক্টোরির জায়গায় আমি দেখি একটা মসজিদ, অপ্সরি মণ্ডিত বাদকদল, হৃদের গভীরে দেখি নাপিতের দোকান, দৈত্য দানো আর প্রহেলিকা। আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ি লোকপালার নিপুণ সন্ত্রাসে।
আমার এই অত্যাশ্চর্য সুফীবাদ আমি প্রকাশ করি ভ্রমাত্বক সব শব্দে!
আমি এই সিদ্ধান্তে আসি যে, আমার এইসব মানসিক বিকার আসলে পবিত্র। আমি ছিলাম নিতান্তই অলস। আর ঈর্ষান্বিত ছিলাম কীটপতঙ্গের সুখে। শুয়োপোকা প্রতীক হয়ে উঠে দোজখ আর বেহেস্তের মধ্যবর্তী স্থানের নিস্পাপতার, ছুচো হয় কুমারীর নিরলস ঘুম!
আমার চরিত্র হয়ে পড়েছিল তিক্ত। পৃথিবী থেকে আমি পরিত্রাণ খুজি কবিতায়।

* * *

উচু মিনারের গান

আসতে দাও আসতে দাও
যে ঋতুতে ভালবাসে সব হৃদয়

অপেক্ষায় কেটেছে কতদিন
ভূলে গেছি কখন কে জানে
সব ভয় আর যাতনা অন্তহীন
উড়িয়েছি স্বর্গপানে
অসুস্থ পিপাসা বুনে
ধমনীতে অন্ধকারের জাল

আসতে দাও আসতে দাও
যে ঋতুতে ভালবাসে সব হৃদয়

উদার তৃণঅঞ্চল
মুক্তি পায় অবহেলায়
অনেক বেশি ফুটে থাকে ফুল
গন্ধভারাতুর আগাছায়
গুঞ্জনে মুখরিত
বদমাস মৌমাছিদল

আসতে দাও আসতে দাও
যে ঋতুতে ভালবাসে সব হৃদয়

* * *

আমি ভালবাসি বন্যতা, জীর্ণ প্রমোদউদ্যান, পলেস্তরা খসে পড়া দোকান, নির্লিপ্ত পানীয়। নিজেকে টেনে নিয়ে যেতে পারি দূর্গন্ধময় সরু গলিগুজির মধ্য দিয়ে, চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিবেদন করতে পারি আগুনের প্রভূ, সূর্যের প্রতি।
"জেনারেল যদি তোমার দূর্গে যদি একটি বন্দুকও অবশিষ্ট থাকে, তবে শুকনো মাটির ঢেলা দিয়ে হলেও আমাদের উপর করো বোমা বর্ষণ, আকর্ষণীয় বিপণীগুলোর জানালা আগুনে ভরিয়ে দিও আর সেলুনগুলাতেও। যতক্ষণ এশহর তার নিজের আবর্জনার আস্বাদ না পায়। বিষাক্ত গ্যাসে ভরিয়ে দিও সুন্দর বক্র দালানগুলো। আর যেন রুবির চূর্নে ভরে থাকে আমাদের মেয়েদের অন্তরঙ্গ কামরা।. . ."
ওহ! পানশালার টয়লেটের মাতাল মাছি, আগাছার প্রেমে নিবেদিত, একটি আলোর রশ্মিও যাকে করতে পারে ভস্মীভূত!

ক্ষুধা

যদি কোন কিছু থাকে সুস্বাদু
তা হলো কংক্রিট আর ধাতু
পাথর, কয়লা, লোহা আর
প্রাতরাশ করি বাতাস দিয়েও

ক্ষুধারা, রুপান্তরিত হয়, ক্ষুধা চড়ে বেড়ায়
শব্দের চরাচর জুড়ে
চুষে খাই বিস্বাদ বিষফেন
আগাছাময় তেপান্তর খুড়ে

খাই যা কিছু ভাঙ্গা, নুড়ি
প্রাচীন ধর্মের পরিত্যক্ত খুদকণা
ধূসর উপত্যকা দেয় রুটি
পাথর সময়ের ভোজবাড়ি

(পরবর্তী পর্বে সমাপ্য)

নরকে পরম ঋতুর অধ্যায় অনুক্রম গুলো এরকম:
আদিকথা
দূষিত রক্ত
নরকে পরম রাত
ঘোর ১: বোকা কুমারী, নারকী জামাই
ঘোর ২: শব্দের রসায়ন
অসম্ভাব্যতা
স্ফুলিঙ্গ
ভোর
বিদায়

-রাখাল বালক

ছবি: 
03/06/2007 - 2:11am

মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাইয়া ভাল লাগল আপনার লেখা পরে।
------------------------------------
sad love stories

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনার ঝরঝরে অনুবাদে র‍্যাবো পড়তে ভালো লাগল।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।