ইমরুল হাসান এর যে মন্তব্য পোষ্ট হয়ে উঠার দাবী রাখে

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বুধ, ১১/০৭/২০০৭ - ৫:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

''
ইমরুল হাসান | সোম, ২০০৭-০৭-০৯ ১০:২৮

আপনার কবিতা সবগুলি পড়ছি, পড়ি। কিন্তু মন্তব্য করা হয় নাই। যদি বলি, কবিতাগুলি ভালো লাগে নাই, তাইলে ভুল বলা হবে। কারণ বেশ কয়েকবার পড়ছি, ভালো লাগা না থাকলে এইটা হয়তো সম্ভব হৈতো না। আবার যদি বলি, ভালো লাগছে, তাইলেও ভুল বলা হবে। কারণ আমার মনে হৈছে যে, যারে বলে কবিত্ব-শক্তি সেইটা আপনার আছে। মানে আপনি কবিতা লিখতে পারেন। কিন্তু মনে হয়, কেন আপনি সবসময় কবিতা লেখেন না।

কবিতার বিবেচনা বিষয়ে আমার পুরানো একটা লেখা ছিল। সেইটা আপনার সাথে শেয়ার করি।

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .. . . .

কবিতা বিষয়ে

‘ম্যাটোনিমিক্যাল’ বিষয়ে ভাবি, বিশেষত যখন কোনো কবি বা কবিতা বিষয়ে ভাবতে আগ্রহী হয়ে উঠি; বর্তমানে কম করে হলেও অন্তত হাজার খানেক মানুষ বাংলা ভাষায় কবিতা (অর্থাৎ কবিতা ও অ-কবিতা) লিখছেন, তাদেরকে যারা পড়ছেন, পাঠক; তাদের বাছাইপ্রμিয়া আছে, এর সাধারণ নিয়মও বর্তমান, যার ভিতর দিয়ে একটা সময়ের ২০-৩০ বছর পর সেই সময়ের ২-৩ জনের কবিতা, পাঠক বাছাই প্রμিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করেন, আবার তার সবটাও আসে না, এভাবে ‘ম্যাটোনিমিক্যাল’ কবি ও কবিতা উহ্য হতে হতে হারিয়েই যান, অন্য কবি ও কবিতার ভিতর; আর আমার আগ্রহ তৈরি হয় এই বিষয়ে যে, সমকালীন কবি
ও কবিতায় কীভাবে আমরা এই ফ্যাক্টরগুলিকে চিহ্নিত করে সংশয়ী হয়ে উঠি। কী করে আলাদা করি কবিতাকে আর ভাবি প্রত্যেকের বিভিন্নতা বিষয়ে যার মধ্যে দিয়ে তারা স্ফুটনন্মোখ আর একে অন্যের গায়ে প্রবলভাবে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো, পাঠক হিসাবে আমার বিহ্বলতা আমি উপলব্ধি করি আর তা μমশঃ কাটতে থাকে, হয়তো তা এমনই স্পষ্টতায় আলোকিত না যে, বোঝানো সম্ভব, সময়ের দোদুল্যমান পর্দা ছিড়ে। এইক্ষেত্রে যতটুকু স্পষ্টতা আমি উপলদ্ধি করি হয়তো তা বলা সম্ভব:

ক্স বিনোদন পণ্য ও সাহিত্য সামগ্রী
ক্স ব্যক্তিগত রচনা ও শিল্পচর্চা
ক্স সমসাময়িকতা ও চিরন্তন প্রবাহ

সাহিত্যের বিচারে এইরকম কিছু দ্বন্দ্ব মৌলিকভাবেই রয়ে গেছে, একটি সার্বিক অনন্যতাও এর পাশাপাশি বিদ্যমান, যা বিরোধের নিষ্পত্তি করে। এদের পৃথকীকরণ ও ঐক্যবিন্দু শনাক্ত করা জরুরি। জরুরি কেননা, যে কোনো মিশেলে এরা একীভূত হয়ে দৃষ্টিবিভ্রম জাগাতে পারে। সার্বিক যে অনন্যতা তার অবস্থান অনুভবযোগ্য, হয়তো উদ্দেশ্যের ঝোঁক তাকে সাহায্য করে এ সমাধানে। উদ্দেশ্য যা আর্দশের আকারে উপস্থিত হয়, তা সর্বশেষ গন্তব্যভূমি, সবকিছুকে কূলে পৌঁছে দিয়ে তার ভ্রমণ সম্পূর্ণ করে।

ক্স অর্থ উপার্জন ও সৃষ্টির আনন্দ
ক্স ব্যক্তিদ্বন্দ্বের সমাধান ও আত্মার যোগাযোগ
ক্স প্রতিμিয়া জ্ঞাপন ও সময় প্রগতির ধারাকে আত্মস্থ করা

এরা প্রতি জোড়ায় পরস্পর বিরোধে আবদ্ধ আর প্রμিয়ার স্বাভাবিক পথে লেখকের নিজ সিদ্ধান্তে পরিস্ফুট হয়। এই দ্বন্দ্বগুলির সমাধান প্রত্যেকেই করে, তাদের নির্দিষ্টকরণের একটি একটি রকম আছে; একটি সাধারণও অবশ্যই বর্তমান, তা না হলে সাহিত্য গোলকধাঁধা তৈরি করতো, আর একজন নিশ্চিতভাবেই জানেন সাহিত্য একটি উপায়। উপায় এই হিসাবে যে, এলিয়ট যেমনটা বলতে চেয়েছেন বলে আমি বুঝতে পেরেছি যে, কবিতা নিজেকে স্বচ্ছ করে দেখাবে সে যা বলতে চাইছে তার দিকে; কাব্যিকতা তো নয়ই, কবিতাও নয় তার নিজের অন্বিষ্ট; বরং উদ্দেশ্যকেন্দ্রিকতা তার মহত্ত্বকে সূচিত করে। তাই কবিতার যে স্বতঃসিদ্ধ ভূমিকা, সম্পূর্ণ রূপ লাভ করে বিষয়ের আশ্রয়ে, নিজের স্বচ্ছতার কাছে প্রত্যেক বস্তু বিষয় ভাবনাকে স্পষ্ট করে তোলার মাধ্যমে।

কোনো বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে কবিতা জন্ম নেয় না, আরো বেশি করে বললে, গভীর সংযোগের আবেগই এর বিষয়।

কবিতার সামগ্রিক আলোচনাকে একটা ধারণার অধীন করে ভাবতে পারলে, তার শাখাপ্রশাখার যে বিস্তৃতি একটি শেকড়ের রূপ থেকে উদ্বোধন, তা অনুধাবন করা যায়। তাই যেমন করে সময় ও স্থানের অভিজ্ঞতা কবিতার আলোচ্য, তেমনি করে তার প্রকাশনার ভঙ্গিটাও বাদ যায় না। অনন্যতা একটা সম্পূর্ণতারই রূপ।

এইখানে দ্বন্দ্ব ও বিষাদ; একত্রিত করা ও ছড়িয়ে দিতে পারা, সমান জরুরি।

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

এইটা বেশ আগের চিন্তা। অনেক অস্পষ্টতা আছে। যদি ভুল কিছু বুঝে থাকি, বলবেন।
''

-----------------------------------------

সহব্লগার ইমরুল হাসান এই মন্তব্য করেছিলেন আমার এই লেখায় ।
মনে হলো, মন্তব্যটা নিজেই একটা পোষ্ট হয়ে উঠার দাবী রাখে । আমার জন্য না হলেও কবিতা নিয়ে যারা আলোচনায় আগ্রহী তাদের জন্য রসদ আছে এখানে ।

আমার জন্য নয় কেনো?
সবিনয়ে বলি, কবিতা নিয়ে আমার কিছুটা সংবেদনশীলতা আছে । এটা সেই কৈশোরের প্রথম প্রেমে পড়ার মতো ভীষন রকম ব্যক্তিগত, অনুভূতিময় ও ব্যখ্যাতীত । যেমন সেই প্রেম ভেংগে যাবার পর প্রকাশ্য স্মৃতিচারনে দারুন আপত্তি অথচ হৃদয় খুঁড়ে খুঁড়ে বেদনা জেগে উঠেই ।

প্রেমে কি পড়িনা এখনো? পড়ি তো । কিন্তু এখনের প্রেমের কার্যকারন খুঁজে পাই । কেনো ভালো লাগছে,কেনো বিপন্ন বোধ করছি,কেনো জড়িয়ে ধরতে চাইছি-ব্যখ্যা দুরাতীত নয় এখন আর । হয়তো তেমন করে চাইলে সেই রহস্যময়তা সেই কৈশোরের পোষ্টমর্টেম ও ব্যখ্যাতীত নয় এখন আর ।
কিন্তু কি হবে? থাক না কিছু 'if...else' র কাঠামোর বাইরে ।

কবিতা নিয়ে আলোচনায় আমি তাই সহজ নই । কবিতায় গুটিয়ে থাকি । নেশার মতো কবিতা পড়ি । দ্যাটস ইট । মাঝে মাঝে বিস্ময়ের মতো দু চারটে লাইন ধরা দেয় । আমি তার ব্যখ্যা বিবরন থেকে দূরে থাকি । এলো তো এলো... না ও যদি আসে কোনো সন্তাপ নেই ।

ইমরুল হাসান,সবিনয় কৃতজ্ঞতা আবারো ঋদ্ধ মন্তব্যের জন্য ।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কবিতার ক্লাস শুরু হোক। ব্যারোমিটার-ন্যানোমিটারের নির্মাণ-বিনির্মাণ হবে কি!

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি আলোচনা হইতে শতহস্ত দূরে হাসি

ভালো কথা, জলিল ভাইয়ের মেইল আই ডি আছে কারো কাছে ?এই লোকটা কে দরকার ।
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কী যে বলেন, মোরশেদ ভাই! এইটা কী আর ' সাধারণ পরিবহন সমগ্র বাংলাদেশ ৫ টন' যে শত হাত দূরে থাকবেন? থাকেন, 'স্যার'-রা কী আলোচনা করেন ঐটা থেকে যদি কিছু শিখতে পারি, ক্ষতি কী?

swi-এ জলিল ভাইয়ের পোস্টে আমার ই-মেইল আইডি দিয়ে বলেছিলাম, মেইল করতে। এখনো কোনো মেইল পাই নাই।

ঝরাপাতা এর ছবি

জলিল ভাইয়ের মেইল এড্রেস - .
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।