বিডি-সিএসআইআরটি (সাইবার ক্রাইম বিরোধী সেল) ও তাদের পারফরমেন্স

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: শনি, ০২/১১/২০১৩ - ১২:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পড়ছিলাম বিডিনিউজে "ফেইসবুকে হয়রানি: ‘অসহায়’ নিয়ন্ত্রক সংস্থা" শিরোনামে প্রতিবেদন। সেখানে কেন ফেইসবুক নিয়ন্ত্রনে অসহায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেই বিষয়ে একজন সাইবার ক্রাইম "বিশেষজ্ঞের" কাছে প্রতিবেদক জানতে চেয়েছেন কিছু বিষয়। এই বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন বিটিআরসিতে। সে প্রতিবেদন সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রকদের কার্যক্রমের একটা সার অংশ উঠে এসেছে।

পড়ছিলাম বিডিনিউজে "ফেইসবুকে হয়রানি: ‘অসহায়’ নিয়ন্ত্রক সংস্থা" শিরোনামে প্রতিবেদন। সেখানে কেন ফেইসবুক নিয়ন্ত্রনে অসহায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেই বিষয়ে একজন সাইবার ক্রাইম "বিশেষজ্ঞের" কাছে প্রতিবেদক জানতে চেয়েছেন কিছু বিষয়। এই বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন বিটিআরসিতে।

উনি কিছু ইন্টারেস্টিং পরিসংখ্যান দিয়েছেন। বিটিআরসি এ পর্যন্ত ৩১৭টি ওয়েবসাইট ‘ব্লক’ করেছে এগুলোর মধ্যে ২২২টিই বিভিন্ন পর্নো সাইট। বাকিগুলোর মধ্যে ৬০টি রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছড়ায় এমন সাইট এবং ৩৫টি সাইটের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে রয়েছে।

এই পর্যন্ত ফেইসবুকের কাছে দাবি জানিয়ে একটি মাত্র কেইসের সুরাহা করা গেছে বলে জানিয়েছেন। একজনের অভিযোগ ফেইসবুকে ফরোয়ার্ড করার পর অভিযুক্ত এ্যাকাউন্টের ছবি সরিয়ে ফেলা হয় বলে জানাচ্ছেন ঐ বিশেষজ্ঞ।

ফেইসবুক যারা ব্যবহার করেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে আপত্তিি উত্থাপন করলে ফেইসবুক প্রায় সময়ই ছবি সরিয়ে দেয়। এরজন্য বিটিআরসির দ্বারস্থ হবার প্রয়োজন নেই।

এখানে আরেকটি বিষয়ে খেয়াল করার মতো। ফেইসবুক শুধুমাত্র ছবি সরিয়েছে। কিন্তু ব্যবহারকারির তথ্য বিটিআরসিকে তারা দিয়েছে এরকম দাবি তিনি করেননি।

বিটিআরসির এই বিশেষজ্ঞ কেন ফেইসবুককে বশে আনা যাচ্ছে না সেই সম্পর্কে বলছেন,

ফেইসবুকে যৌন হয়রানির বিষয়টি স্পষ্টতই ‘সাইবার অপরাধ’ হলেও বাংলাদেশের আইনি কাঠামোর জটিলতায় ফেইসবুক কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, সাইবার অপরাধের বিষয়টি ‘আইসিটি অ্যাক্ট’ এর আওতায় পড়ে। টেলিকম আইনে বিষয়টির কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু বিটিআরসি চলে টেলিকম আইনে। ফলে বিটিআরসির ডাকে সাড়া দেয়ার যথেষ্ট আইনি বাধ্যবাধকতা নেই বলে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ মনে করতে পারে।

স্পষ্টত আন্তর্জাতিক আইন কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞের কোন ধারণা নেই। বিদেশে অপারেট করা বিদেশি কোন কোম্পানি বাংলাদেশের জুরিসডিকশনে আসে না। এটা বাংলাদেশের আইনপ্রনেতা তাদের আইনে লিখে রাখলেও আসে না। কারণ বিদেশে গিয়ে আইনটা প্রয়োগ করার মতো চুক্তি বাংলাদেশের সাথে উন্নত বিশ্বের কোন দেশের মধ্যে নেই।

তবে ব্লগার হিসেবে আমার এহেন বিশেষজ্ঞদের ওপর কোন অভিযোগ নেই। বিটিআরসি ভরে যাক এরকম বিশেষজ্ঞে চোখ টিপি

সূত্রঃ

১। বিডিনিউজ লিংক
২। ইমেজ লিংক


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বাঁশের কেল্লার হিন্দি চুলও তো ছিঁড়তে পারে নাই বিশেষজ্ঞসকল। ঐখানে সরাসরি রেললাইন উপড়ানোর পরিকল্পনা দেওয়া হইছিল।

হাসিব এর ছবি

বাঁশের কেল্লা ঘোষণা দিয়ে দেশে সন্ত্রাস করে। তাদের প্রথম গ্রুপটা বাংলাদেশে ব্যান হলেও পরেরটা বহাল তবিয়তে আছে।
তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার মূল কাজ মনে হয় এগুলো না। এদের কাজ হলো কে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননা করলো বা কোন পাগল কোথায় কোন স্ট্যাটাস দিয়ে তাদের সরকারের ভাবমুর্তির বারোটা বাজাইলো।

শিশিরকণা এর ছবি

গতকালকে একটা পেজ রিপোর্ট করার অনুরোধ পেলাম, পেজটাতে চটি গল্প আর মেয়েদের প্রোফাইল থেকে চুরি করা ছবি ছাড়াও কিভাবে মেয়েদের ধর্ষণ করতে হবে, সে ব্যাপারে টিপস এবং ট্রিকস দেয়া হচ্ছিল। মেয়েদের ছবি আর ফোন নাম্বার দিয়ে তাদেরকে ধর্ষণ করতে বলা হচ্ছে এমন পোস্টও রয়েছে। কিন্তু ফেসবুকে রিপোর্ট করে লাভ হয় না, কারণ সবই বাংলায় লেখা, ছবি গুলা সাধারণ প্রোফাইল ছবি, এইসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগ কারী সংস্থার দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নাই। সব ভাষার/সংস্কৃতির মানুষ দিয়ে রিপোর্ট এর গুরুত্ব বিচার করানো ফেসবুকের পক্ষে সম্ভব না। ভালো হয় যদি বি আর টিসির বিশেষজ্ঞ রা এইরকম পেজ গুলা বিষয়ে তদন্ত করে এরপর ফেসবুকের সাথে যোগাযোগ করেন, হয়ত একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান থেকে অভিযোগ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বেশি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ব্যবস্থা নিবে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

হাসিব এর ছবি

তদন্ত করে বাংলাদেশের পক্ষে কিছু বের করা সম্ভব না যদি না ফেইসবুক সহায়তা করে। আর ফেইসবুক সহায়তা করতোও হয়তো যদি বাংলাদেশে তাদের যথেষ্ট পরিমান ব্যবসা থাকতো এবং বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর রেকর্ডটা আরেকটু ভালো হতো। বলাবাহুল্য বর্তমান ব্যবসা পরিস্থিতি বা সরকারি কাজকর্মের নমুনা অদুর ভবিষ্যতে বদলাবার কোন কারণ নেই। অতএব দেশি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ঠুটো জগন্নাথ হয়েই বসে থাকতে হবে।

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

সাইবার ক্রাইমের গন্ডি যে কেবল কিছু ব্লক করার মত সাইটের মাঝেই সীমাবদ্ধ তাও কিন্তু না।
সাইবার অপরাধের আরও দিক আছে, যেমন পাসওয়ার্ড চুরি, ফিশিং, বট-নেট বানিয়ে ফেলা, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নেয়া এসব।
বাংলাদেশের এক জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার সাইটে ট্রোজান বসেছিল অনেকদিন,
অথবা, এরা পাঠকদের কম্পিউটারে অযাচিত কিছু ঢোকানোর চেষ্টা করছিল।

সামনে এসব দিন আসবে, তখন কিছু সাইট ব্লক করে আর ক্রাইম ঠেকানো যাবে না, তখন সাইবার ক্রাইমের পরিধি অন্য দিকে বিস্তার লাভ করবে।

এসবের জন্য প্রস্তুতি কোথায়?

হাসিব এর ছবি

প্রস্তুতি নাই বলেই পেপাল বাংলাদেশে আসে না।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, সাইবার অপরাধের বিষয়টি ‘আইসিটি অ্যাক্ট’ এর আওতায় পড়ে। টেলিকম আইনে বিষয়টির কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু বিটিআরসি চলে টেলিকম আইনে। ফলে বিটিআরসির ডাকে সাড়া দেয়ার যথেষ্ট আইনি বাধ্যবাধকতা নেই বলে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ মনে করতে পারে।

এই অনুচ্ছেদটা পরিষ্কার হলো না। বাংলাদেশের ভেতর এক আইনে কোন কিছু বলা থাকলে তাহলে অন্য আইনে তার উল্লেখের দরকার নেই। উল্লেখ তখনই কেবল করতে হবে যখন দুটো আইনে সাংঘর্ষিক কিছু থাকে অথবা একটার আলোকে প্রদত্ত বিচারের রায় আরেকটার আলোকে নালিফাই বা মিনিমাইজ করা যায়। আর বাংলাদেশের টেলিকম আইনে আইসিটি অ্যাক্টের উল্লেখ থাকলেও বিটিআরসি'র ডাকে সাড়া দিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় না। পরের অনুচ্ছেদে যা বলেছেন সেটা বরং সব হিসেব-নিকেশকেই পরিষ্কার করে দেয়।

বিদেশে অপারেট করা বিদেশি কোন কোম্পানি বাংলাদেশের জুরিসডিকশনে আসে না। এটা বাংলাদেশের আইনপ্রনেতা তাদের আইনে লিখে রাখলেও আসে না। কারণ বিদেশে গিয়ে আইনটা প্রয়োগ করার মতো চুক্তি বাংলাদেশের সাথে উন্নত বিশ্বের কোন দেশের মধ্যে নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

যে আইনবলে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেই আইনটা আসলে ঔপনিবেশিক মানহানি মামলার আধুনিক সংস্করণ। অপরাধ ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পারফর্মেন্স বলতে গেলে শূন্য। যেটাতে একটু সাফল্য আছে সেটা হলো কে কোথায় কোন রাজনীতিক দলের বিরুদ্ধে পচা কথা বললো এবং সেইটার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা মারফত ব্যবস্থা।

এক লহমা এর ছবি

"যেটাতে একটু সাফল্য আছে সেটা হলো কে কোথায় কোন রাজনীতিক দলের বিরুদ্ধে পচা কথা বললো এবং সেইটার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা মারফত ব্যবস্থা।"
চলুক
এই জাতীয় আইনগুলোর প্রকৃত ক্ষমতা আর কার্যকারীতা এত কম হয় যে সারা পৃথিবী জুড়ে নানা দেশে এগুলি শেষ পর্যন্ত হরেক রকমের পীড়নমূলক কাজের অস্ত্রই হ‌য়ে ওঠে। কিন্তু নানা লাভের-লোভের হাতছানিতে অথবা দিশা-খুঁজে-না-পাওয়া-দশা থেকে বেরতে পারার মরীচিকায় এই রকমের আইনগুলোকে বারে বারে সমাদর করা হয়!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

হাসিব এর ছবি

এটা আজকের খবর। যথারীতি এইসব বিষয়ে আইন প্রয়োগকারি সংস্থারা ঠিকমতো কাজ দেখাতে পারেন না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।